বর্গী নিকসমাজের কথা বলছিলাম, এরা এদের মতাদর্শ দিয়ে পরিচিত। এভাবে একদঙ্গল নিকের বিরূদ্ধে আরেক দঙ্গল নিক, ইডিওলজি ওয়ারফেয়ার। এরা হাঙরের মত দল বেঁধে চলে, ঝাঁকে ঝাঁকে মাইনাস দেয়, জুতা রেটিং করে, গালির তুবড়ি ছোটায়। এটা শত্রুশিবিরে। আর মিত্রশিবিরে এরা মিষ্টভাষী অনুমোদক, অনলবর্ষী সমর্থক, মিত্রশিবিরের আকাশে এরা পুষ্পকরথ সমেত টহল দিয়ে বেড়ায়। ক্ষণে ক্ষণে পুষ্পবৃষ্টি ঘটায়। পাড়ায় যে নতুন, তাকে এরা নানান প্রক্রিয়ায় যাচাই বাছাই করে। তাদের বাছাই পদ্ধতি দ্বিমাত্রিক: ফলে দুইমাত্রার বাইরের কেউ হলে তার ভয়াবহ বিপদ। হয় মাত্রা রিডিউস করতে হবে, না হয় দুই শিবিরেরই সন্দেহভাজন এবং অপ্রিয়ভাজন হয়ে থাকতে হবে।
ব্রাত্য রাইসুর ক্ষেত্রে ঘটেছে তাই। মাহবুব মোর্শেদের ক্ষেত্রেও। "রাইসু এক্সপ্রেস" ছুটেছে খানাখন্দ ডোবাজংলা দিয়ে একেবেঁকে, যেসব ষ্টেশন আন্তঃনগর ট্রেনের অবজ্ঞা নিয়ে দীর্ঘদিন সাপের মত রেললাইন পাহারা দেয়, রাইসু থেমেছে সেসব ষ্টেশনে। গোপন উত্তেজনা নিয়ে আমরা তাই রাইসুর বয়ান শুনেছি.... মরিচা-ধরা অকশনে-ওঠা লোহাকে শাণ দিয়ে দিয়ে সে ঝা চকচকে রেলবগি করে হাজির করেছে আমাদের সামনে। ফলে অপরাহ্নের ছোট্ট গঙ্গাসাগর রেলষ্টেশন ক্ষণিকের জন্য হলেও তার দৃশ্যমূল্যের বাইরে গন্তব্যমূল্য দাবি করতে শুরু করেছে। তার সাহসকে সম্বল করেই আমরা চেন টেনে নেমে পড়েছি ট্রেন থেকে, প্রায়ান্ধকার গঙ্গাসাগরে, কোন কোন অপরূপ মুহূর্তে।
পলেমিকসের এই অচলিত প্রয়োগ কখনই স্বস্তি দেয়নি আমাদের দুইমাত্রার নিকসমাজকে। চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার হয়েছে রাইসুর, মাহবুব মোর্শেদেরও। মাহবুব তবু কিছুদিন সমানে সমানে লড়েছে, রাইসু স্রেফ গালি খেয়েই গেছে বোধ হয়। গালি খেয়েছে, জুতা খেয়েছে, সেই জুতা যখন সে শিরোধার্য করল, তখনই হবুচন্দ্র রাজার ঘুম ভাঙল। রাষ্ট্রনীতির অপমান খুঁজে পেল রাজা! টাইমিং বটে!
আজ রাইসুর পাতায় যখন যাই, সেখানে হেমন্ত ঋতু, ধান-কাটা ধু ধু মাঠের উপরে নিঃস্ব রিক্ত চাঁদ। মাহবুব মোর্শেদের পাতায় দেখছিলাম লেখা আছে "এইখানে ব্লগিং বন্ধ। জরুরি স্থানান্তর চলছে"। আজ দেখলাম সেই মাঠও খালি, শুধু এপিটাফসদৃশ "গুডবাই সামহোয়ারইন"! রাইসু এখন ফেসবুকে, মাহবুব মোর্শেদ "মডারেশন" হয়ে গেলেন!
এরা হয়তো আর সামহোয়ারইনে লিখবেন না। আমি মিস করবো এদের। অনেকেই করবেন হয়তো। এদের ব্লগিং এর ইতিহাস তাই বলে।
কিন্তু পোস্টমডার্ন মিডিয়া বলে কথা! ফ্র্যাগমেন্টেশন হতে থাকে আমাদের স্মৃতির ভেতর। মিডিয়া এবং মতাদর্শের প্রপাগান্ডা আমাদের স্মৃতিহরণ করতে থাকে, আমরা মুহূর্তের ভেতর বাঁচি, স্বল্পস্থায়ী এবং ভাঙা ভাঙা এপিসোড দিয়ে দিয়ে আমাদের ব্যক্তিত্ব তৈরি হতে থাকে। ব্লগমিডিয়ার অভিধানে "অমরত্ব" বলে কিছু নেই, তুমি ততদিনই বর্তমান যতদিন তুমি প্রথম পাতায়, তুমি ততদিনই অমর যতদিন তুমি স্টিকি! পিংকি পিংকি, হীরা জ্বলছে অনিদ্রার!!
সামহোয়ারনামা ১