somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাবেয়া রাহীম
কস্তুরী খুঁজে ফিরে তার সুবাস..হায় মৃগ, যদি জানত গন্ধ কার! পাখিও খুঁজে ফিরে শিস--হায়, যদি সে জানত! সুর থাকে ভেতরে, অন্তরে.। চুপটি করে এই তো এখনো ডাকে, ব্যকুল হয়ে - ডাকে আর ডাকে ।।

আবহমানকাল (১ম পর্ব )

১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজশাহী জেলা স্কুলের সীমানা প্রাচীরের গা ঘেঁষে পাকা উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা টিনের একচালা বাড়ীগুলো শিক্ষকদের কোয়ার্টার বাড়ীগুলো বহু পুরাতন ।

প্রতিটা বাড়ির সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে চারপাশে পাতা বাহারের গাছ লাগিয়ে । সেই সাথে বেশ কিছু ঝাউ গাছ।

এই স্কুলের সহকারি শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম এক কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। তিনি বড় কন্যাটির নাম ফুলের নামে রাখেন করবী।

তিনি স্ত্রী- ও তিন সন্তান নিয়ে কুমিল্লার একটি সরকারি স্কুলে সহকারি শিক্ষক হিসেবে ১০ বছর শিক্ষকতা করেছেন। এই স্কুলে বদলি হয়ে এসেছেন প্রায় দুই মাস।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করার পর তিনি তার অতি আদরের বড় কন্যাটিকে জেলা কলেজেই স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি করিয়ে দেন।

কিশোরী উত্তর সময়ের বাহারী দিনগুলো এখন করবীর। কলেজ থেকে ফিরে বাড়ীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মার দুরন্ত বাতাসে গাছের পাতা ছুঁয়ে শো শো শব্দ মুগ্ধতা নিয়ে শুনতে ভীষণ পছন্দ তার। অবাক ঘোর লাগা সময়।

সে বেশ শান্ত স্বভাবের হলেও স্কুল ফেরত সময়টুকু কিন্তু যথেস্ট দস্যিপনায় ভরপুর থাকে। বাবার আদরে দস্যিপনা কখনো কিছুটা বেড়ে গেলেও ফলাফল মায়ের বকুনি।

শিক্ষকদের কোয়ার্টার যেখানে শেষ হয়েছে তার থেকে প্রায় ২০ মিটার আগে পিচ ঢালা রাস্তাটির শেষ বা মুল শহরে যেতে শুরুও বলা যায়।

রাস্তাটির পাশ ঘেঁষে কিছু কুলিন হিন্দু ঘরের বসতি বহু বছর আগে থেকে। হিন্দু মুসলমানের বসতি পাশাপাশি হলেও সংস্কার বা মন্দির-মসজিদের পার্থক্য এই এলাকাতে কখনো হয়নি।

এলাকাবাসীর হৃদ্যতা ও সহিষ্ণুতা এই এলাকাটির প্রাণ বলা যায়। প্রতিদিন কলেজ থেকে আসার পথে হিন্দু প্রধান এলাকার বাড়িগুলি করবীকে বেশ আকৃষ্ট করে।

প্রায় প্রতিটি বাড়িতে সবুজ পাতার ঝোপে ফুটে থাকা কেশর দোলানো রক্ত লাল জবা ফুল তাকে মোহগ্রস্থ করে রাখে ।

জয়দীপ চক্রবর্তী রাজশাহী জেলা কোর্টের পেশকার হিসেবে আছেন দীর্ঘ বছর। সেই সাথে শহর থেকে অদুরে গ্রামের বাড়ীতে উত্তরাধিকার সূত্রে বিশাল জায়গা-জমির মালিক তিনি ।

পেশকারের চাকরির সুবাদে শহরের অনেক মান্যগন্য লোকের সাথে তার উঠাবসা। এলাকাতে তার বেশ প্রভাব। জয়দীপ চক্রবর্তীর তিনটি কন্যা সন্তানের পর দুই পুত্র সন্তান আতুর ঘরেই মারা যায়।

মৃত্যুর পর মুখাগ্নি" ব্যাপারটা তাকে বেশ ভাবিয়ে তোলে। একটি পুত্র সন্তান দরকার। পুত্র সন্তানের আকাংখায় সারাদিন অভুক্ত থেকে খালি পায়ে মন্দির প্রদক্ষিন , পুজাপাঠ, যজ্ঞ কিছুই বাদ রাখেননি তিনি।

অবশেষে শিবের করুনায় তিনি একটি পুত্র সন্তান লাভ করেন। পুরো গ্রামের লোককে ভূরিভোজ করিয়ে সন্তানের নাম রাখেন সুদীপ চক্রবর্তী ।

সুদীপ তার খুব আশা ভরসার জায়গা। সুদিপের মুখের দিকে চেয়ে তিনি সব কিছুই ভুলে যান। শিবের অসিম কৃপায় তিনি এই সন্তানের মুখ দেখেছেন।

সুদীপ চক্রবর্তী জয়দেব চক্রবর্তীর একমাত্র পুত্র সন্তান । এলাকার স্কুল থেকে এস এস সি পাশ করে জেলা কলেজেই উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে সুদীপ। উচচমাধ্যমিকে আশাতীত রেজাল্ট করে সে।

১৯৮০ সালের জানুয়ারির শুরু। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে তখনো উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন লাগেনি। গ্রামের ঘরে ঘরে ইলেক্ট্রিসিটি যায়নি। কেরোসিনের আলোই ছিল ভরসা। মফস্বল শহরগুলোতেও গ্রামের ছোঁয়া থেকে যায়।

এই এলাকাটি তখনো এতোটা বিস্তৃত হয়নি। জয়দীপ এর সুপ্ত ইচ্ছা ছিলো তার ছেলেটিকে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়তে পাঠাবেন কিন্তু আদরের দুলালকে চোখের আড়াল করতে সাহস হয় না তাঁর।

সুদীপ যখন নিজে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য আবদার করে তিনি নিষেধ করে ছেলের মনে দুঃখ দেওয়ার কথা ভাবতে পারেননি। রাজী হয়ে যান।

চোখের পানিতে জয়দেব ও তার স্ত্রী আরতি সুদীপ কে বিদায় জানায় ঢাকার উদ্দেশ্যে।

মফস্বল শহরে তখন টেলিফোন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি। এখন যেমন হাতে হাতে মুঠো ফোন হাতের সৌন্দর্য বাড়িয়ে সগৌরবে নিজের অস্তিত্ব জানিয়ে চলছে তখন এমন করে কল্পনায় কেউ ভেবেছে কিনা জানা নেই।

হয়ত পুরো এলাকা জুড়ে একটি বাড়িতেই টিএন্ডটির কানেকশান থাকতো । সেই বাড়ীর ফোন নাম্বার আশেপাশে সবার জন্য নির্ধারিত ছিল অনির্ধারিত নিয়মে। তবে ডাকবিভাগ খুব সচল ছিল সেই সময়ে। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত ডাক পিয়নের আনাগোনা চোখে পড়তো।

মঙ্গলবার সপ্তাহের শুভদিন। জয়দীপ চক্রবর্তী নিয়ম করে প্রতি মঙ্গলবার পুত্রকে চিঠি লিখেন। যদিও এই এলাকার একমাত্র টেলিফোনের স্বত্বাধিকারী তিনিই।

তবে খুব প্রয়োজন ছাড়া ইউনিভার্সিটি হলের প্রোক্টরের অফিস থেকে ফোন করা বারন ছিল সুদীপের জন্য।

যমুনা সেতুর অস্তিত্ব তখন শুধু ফাইল পত্রেই ছিল। সে কারনে ঢাকা থেকে রাজশাহী যেতে ফেরিঘাট পার হয়ে প্রায় একদিন বা দুইদিনের বেশী সময় লেগে যেত।

ইংরেজী নতুন বছরের শুরুতে বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শীতের ছুটি শুরু হয়েছে। জয়দীপ ও আরতি ছেলের আগমনের দিন গুনতে থাকেন। খেজুর গাছে রসের হাড়ি ভালো করে ধুয়ে বাঁধতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

সুদিপের মা আরতি দেবী নানান খাবারের আয়োজনের যোগাড়ে লেগে যান। ছেলের সাথে কিছু শুকনো খাবার সব সময় বেঁধে দেন । এবার কি কি দেওয়া হবে তারও হিসাব করে রেখেছেন তিনি। প্রায় দুই মাস পর সুদীপ বাড়ি ফিরে।

খুব ভোরে অকারণে ঘুম ভেঙে যায় ঘুমকাতুরে করবীর। আজ সরকারি ছুটির দিন । সিরাজুল ইসলাম ঘরেই আছেন। করবীর কলেজেও শীতের ছুটি। হোম ওয়ার্কের চাপ নেই। কি কারনে ঘুম ভেংগে গেলো এক মুহুর্ত ভেবে নেয় সে।

আপন মনেই হেসে ফেলে "এই যাহ"! সেই সন্ধ্যা থেকেই ঘুমাচ্ছে সে --গা ঝাড়া দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় ।

একবার বাবা মায়ের ঘরের দিকে উকি দেয়! বাবা ফজরের নামাজ শেষ করে হাতে তসবিহ নিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন। আর থেকে থেকে মা কে উঠার তাগিদ দিচ্ছেন । মা বাবার ডাকে তেমন সাড়া দিচ্ছেন না। ফজরের নামাজের জন্য বাবার যতটা আগ্রহ নিয়ে ঘুম ভাংগে মা ততটাই অনাগ্রহ নিয়ে পাশ ফিরে শোয়---করবী হাসে। এটা রোজকার এক চিত্র।

আজ বেশ শীত । পদ্মা থেকে ধেয়ে আসা বাতাসে শীত আরও তীব্র হয়েছে । নতুন কেনা ওলের শাল গায়ে জড়িয়ে বাড়ির মুল দরজার কাছে এসে সুদীপ কে দেখে অবাক হয় ।

সুদিপের শান্ত সৌম্য বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা তাকে আকর্ষণ করে ভীষণভাবে । নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটে ।

আপন মনেই বলে উঠে-- "আগে কখনো দেখিনি তো এই এলাকায়"! "কে হতে পারে"?

বাদামী রংয়ের শাল গায়ে জড়িয়ে সুদীপ সূর্যের দিকে মুখ করে আছে । তার দুচোখ বন্ধ । সুদীপের এমন সৌম্য চেহারা করবীকে আন্দোলিত করে ভীষণভাবে।

অলস পায়ে এগোয় খানিক, খানিক পেছায়। এদিক ওদিক তাকায়। ঠিক বুঝতে পারেনা তার কি করা উচিত। বাড়ী ফিরে যাবে ? না কিছুক্ষণ হাঁটবে রাস্তা ধরে।

ইতস্ততভাবেই ঠিক করে --- "পাশ কাটিয়েই চলে যাই"।

সুদিপের পাশ দিয়ে চলে যায় সে । ঠিক সে সময় চোখ মেলে তাকায় সুদিপ । অবাক হয়ে যায় করবীর স্নিগ্ধ সতেজ সৌন্দর্যে!!

মুগ্ধ চার চোখ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।

সুদীপও বিস্মিত হয়ে ভাবে-- "আগে দেখিনিতো শিক্ষকদের কোয়ারটারে "!

কিছু একটা বলতে চায় সে। ততক্ষণ করবী বেশ খানিকটা দূর চলে গেছে। এখন কথা বলতে গেলে চিৎকার করে বলতে হবে।

স্বভাবে শান্ত সুদীপ চুপ হয়ে যায়। নামটাও জানা হয়নি।
কে তুমি?
দেখা হবে আবার?

কেমন যেন এক ভাল লাগায় মন ভরে যায়!

ততক্ষন জয়দীপ সকালের পুজা পাঠ শেষ করে ছেলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন । সুদীপ বাড়ী থাকলে সকালের এই সময়টা পিতা পুত্রের এক সাথেই কাটে নাস্তা করা পর্যন্ত ।

সুদিপের সাথে করবীর ভাগ্য জড়িয়ে বেশ অদ্ভুতভাবেই।

(২য় পর্ব এখনো শেষ করিনি)

(ছবি গুগল থেকে নেওয়া)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩১
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×