‘বাজ ণাব পাড়ী পঁউলা খালে বাহিউ
আদঅ দঙ্গালে দেশ লুড়িউ
আমি ভুসু বঙ্গালী ভইলী...।’
হাজার বছর আগে রচিত সিদ্ধাচার্য ভুসুক পা এর চর্যাপদ পাঠ করলে বুঝা যায়, বাঙ্গালী জাতি অতি প্রাচীন, প্রাচীন তার রীতি-নীতি-আচার অনুষ্ঠান। বহু বছর আগে থেকে বাঙ্গালী জাতির বর্ষবরণ প্রথা প্রচলিত থাকলেও ১৮৬১-৬২ সালে সামাজিকভাবে বাংলা নববর্ষ উৎযাপন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ছায়ানটের নানা উৎসব এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা আয়োজিত মেলা নববর্ষ উৎসবকে আজ এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ বাংলাদেশ এবং ভারত বর্ষের একটি ঐতিহ্যমন্ডিত সৌরপঞ্জিকা ভিত্তিক বর্ষপঞ্জি। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সৌরদিন গণনা শুরু হয়। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে মোট ৩৬৫ দিন কয়েক ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়, এই সময়টাই এক সৌর বছর। গ্রেগরিয়ান সনের মতো বাংলা সনেও মোট ১২ মাস। এগুলো হল বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র। আকাশে রাশি-লিপিতে সূর্যের অবস্থানের ভিত্তিতে বঙ্গাব্দের মাসের হিসাব হয়ে থাকে। , যে সময় সূর্য মেষ রাশিতে থাকে সে মাসের নাম বৈশাখ। বাংলাদেশ এবং পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা অঞ্চলে এই বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হয়। বাংলা সন শুরু হয় বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে যে দিনটি ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪/১৫ এপ্রিল।
সপ্তম শতাব্দীর প্রারম্ভে শশাঙ্ক (৫৯০-৬২৫ খৃষ্টাব্দ) প্রাচীন বঙ্গদেশের(গৌড়) রাজা ছিলেন৷ ভারতের বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার অধিকাংশ এলাকা তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল৷ শশাঙ্কের শাসনামলে বঙ্গাব্দের অনুরূপ সন চালু ছিলো। তবে বর্তমানে যে ক্যালেন্ডারটি আমরা ব্যবহার করি তার প্রচলক হিসাবে ধরা হয় অবাঙালী সম্রাট আকবরকে। ভারতবর্ষে ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরী পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বৎসর সৌর বৎসরের চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। সে সময় দেশের মূল অর্থনীতি ছিলো কৃষি নির্ভর। চাষাবাদ ছাড়াও আরো অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। তাই ক্ষমতাসীন সম্রাট আকবর ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরী চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। আমির ফতুল্লাহ্ শিরাজির সুপারিশে পারস্যে প্রচলিত সৌর বর্ষপঞ্জীর অনুকরণ ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবার হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ৯৬৩ হিজরী সালকে বাংলা ৯৬৩ সাল ধরে গণনা প্রচলিত করা হয়। ১৫৫৭ সালে সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত (তারিখ-ই-ইলাহী/সন-ই-ইলাহী) মাসের নামগুলি প্রচলিত ছিল পারসি ভাষায়, যথা: ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিযার, আবান, আযুর, দাই, বহম এবং ইসক্নদার মিজ। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্চির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্ত ৯৬৩ হিজরী সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস ধরা হয়।মূলত: কৃষকের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বাংলা সনের আবিষ্কার হয়েছে বলে মনে করা হয়। ১৫৬৩ সালে আকবরের সভাসদ আবুল ফজল ও আমির সিরাজী বৈশাখের প্রথম দিনটি খাজনা আদায়ের জন্য ধার্য করেন। কৃষকরা এই সময় আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল থাকে, ধার -দেনা শোধ করেন। ব্যবসায়ীরা হিসাবের খাতা হালনাগাদ করে। হালনাগাতের এই হালখাতাকে ঘিরেই উৎসবে রুপান্তরিত হয় পহেলা বৈশাখ। এদিন সকালে সনাতন ধর্মের প্রতি বাড়িতে বিন্নি ধানের খই, দই, চিড়া, মুড়ি, মিষ্টি বিভিন্ন খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। ব্যবসায়ীরা বৈশাখের দিনে ক্রেতাদের /দেনাদারদের মিষ্টিদ্রব্য দিয়ে আপ্যায়ন করে।
বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণ করা হযেছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ "সূর্যসিদ্ধান্ত" থেকে এই নাম সমূহ গৃহীত হয়েছে । বাংলা মাসের এই নামগুলি হচ্ছে বৈশাখ -- বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, জ্যৈষ্ঠ -- জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, আষাঢ় - -উত্তর ও পূর্ব আষাঢ় নক্ষত্রের নাম অনুসারে, শ্রাবণ - -শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, ভাদ্র- -উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুসারে, আশ্বিন -- অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে, কার্তিক --কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, অগ্রহায়ণ(মার্গশীর্ষ) -- মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, পৌষ - -পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, মাঘ -- মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, ফাল্গুন - -উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে, চৈত্র -- চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে।
অঙ্গ-বঙ্গ-পুন্ড্রু-সমতট-গৌড়ি-হরিকেল রাজ্যগুলোতে বঙ্গাব্দ, মৌযাব্দ, হুনান্দ, কনিষ্কান্দ, ত্রিপুরাব্দ, হর্ষাব্দ, হোসনি অব্দ (সুলতান হুসেন শাহ), চৈতন্যব্দ, বৈষ্ণাব্দ, দানেশমন্দ সন--আরো কত কত অব্দ অবিষ্কার হয়েছিল, বেশিরভাগ হারিয়েও গেছে। কেউ কেউ মনে করেন, রাজা শশাংকের বনানো তখনকার চলতি বঙ্গাব্দকেই আকবরের সভাসদেরা গ্রহণ করেছিলেন ।
দক্ষিণ ভারতে এই একই দিনে নববর্ষ উৎযাপিত হয়। সুদূর পাঞ্জাবে ‘নয়া সাল’ বা ‘বিছাখী’ উৎসব অনেকটা আমাদের মতই? ওদের মাসগুলোর নাম-- বিছাগ ( বৈশাখ), জেঠ ( জৈষ্ঠ), আ’ঢ় ( আষাঢ়),শাওন (শ্রাবণ), ভাদো ( ভাদ্র), আশুন (আশ্বিন),কাত্তাক ( কার্তিক), মা’আঘর ( অগ্রহায়ণ), পো’হ (পৌষ), মাঘ (মাঘ),. ফাগুন (ফাল্গুন),চেত ( চৈত্র)। কি আশ্চর্য মিল! মনে হয়, একই নববর্ষের উৎসব হয় পাঞ্জাব থেকে আসাম পর্যন্ত।
যে কারণেই হোক পরবর্তীতে বৈশাখকে প্রথম মাস ধরে সরকারীভাবে ১লা তারিখে বাংলা নববর্ষ উৎসব চালু হয়। কিন্ত বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে গ্রাম বাংলায় এর একদিন পর বাংলা নববর্ষ শুরু হয়। রাজধানী-বিভাগীয় শহর-জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-গ্রাম--এমনকি জাত-ধর্ম নির্বিশেষে বাংলার ঘরে ঘরে পান্তা উৎসব তথা নববর্ষ উৎযাপিত হয়। দেশের পার্বত্য তিন জেলায় তিন দিন ব্যাপী বর্ষ বরণ ‘বৈসাবী’ উৎসব পালিত হয়।
লোকগবেষক আতোয়ার রহমান 'বৈশাখ' শীর্ষক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, 'বৈশাখ তার নামের জন্য বৈশাখ নক্ষত্রের কাছে ঋণী। পুরাণের মতে বিশাখা চন্দ্রের সপ্তবিংশ পতদীর অন্যতম। হিন্দু মিথ অনুযায়ি, ‘মাস হিসেবে বৈশাখের একটা স্বতন্ত্র পরিচয় আছে, যা প্রকৃতিতে ও মানবজীবনে প্রত্যক্ষ করা যায়--খররৌদ্র, দাবদাহ, ধু-ধু মাঠ, জলাভাব, কালবৈশাখীর ঝড় ইত্যাদি। এ সকল অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য হিন্দুরা মঙ্গল শোভাযাত্রা করতো ও মঙ্গলদীপ জ্বালাত। হিন্দু ব্যবসায়ীরা হালখাতা খুলত।
গ্রামে দেখা যেত এই দিনে বকেয়া আদায় করা হতো। রান্না হতো ১৩/২১ ধরণের শাক মিশিয়ে একটা তরকারী, বিভিন্ন ভর্তা, গরম ভাত, সজনে ডাল, বিভিন্ন দেশী মাছ আর ডাল সাথে বাজার হতে আনা মিষ্টি/দই। ইতিহাসের দিকে আলোকপাত করলে বাঙালির বৈশাখ উৎসবে হাল আমলে যুক্ত হওয়া রমনার পান্তা ইলিশের অস্তিত্ব নেই।
চৈত্রসংক্রান্তির দিনে (পহেলা বৈশাখ এর আগের দিন) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে তৈলবিহীন নিরামিষ তরকারী রান্না করার রীতিরও প্রচলন ছিল। দ্রাবিড়দের মধ্যে ফসল কেটে নবান্ন উৎসব পালনের কথা পাওয়া যায়। এছাড়া ইবনে বতুতা তার ভ্রমন বিবরণিতে ফসল কাটার উৎসব এর কথা উল্লেখ করেছেন। চর্যাপদের বিভিন্ন পদেও নতুন ফসল কাটার উৎসবের বর্ণনা পাওয়া যায়।
কৃষি আবিষ্কারে নারীই পথিকৃত, ফলে নারীতান্ত্রিক সমাজের স্মৃতিচিহ্নবাহী ‘আমান’ নামক মেয়েলি উৎসব প্রাচীনকাল থেকেই বছরের শুরুতে প্রচলিত ছিল। সমাজে শত্রুনিধনের আচার পালন করার রীতি ছিল বছরের প্রথম দিনে। গ্রাম-বাংলার মানুষের বিশ্বাস ছিল, এতে সারা বছর শত্রুর আক্রমণ ও অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। বিগত বছরের গ্লানি মুছে ফেলার কামনায় নববর্ষের সঙ্গে উদযাপন করা হতো কিছু আচার-অনুষ্ঠানও। চৈত্রসংক্রান্তি বা পহেলা বৈশাখের দিনে গাজন বা চড়ক অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নতুন বছরের শুভ কামনা। মানুষের ধারনা চড়কের বাণফোঁড়ের কষ্টের মধ্য দিয়ে বিগত বছরের পাপক্ষয় হবে।
বাংলা নববর্ষের উৎসব এখন বাংলা বর্ষপঞ্জির বোশেখ মাসের প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত হয়। বহু আগে নববর্ষ অন্য সময়ে হতো। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি বলেছেন, 'প্রাচীনকালে ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে নববর্ষের উৎসব হতো। দোলযাত্রা বা হোলি সেই উৎসবেরই চিহৃ বহন করে।' মধ্যযুগের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কবিতায় অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে লেখা ছিল এরকম, 'ধন্য অগ্রহায়ণ মাস, ধন্য অগ্রহায়ণ মাস। বিফল জনম তার, নাই যার চাষ।' ভারতচন্দ্রের সময়ে বৈশাখে নববর্ষ পালিত হত বলে মনে করা হয় । তার কবিতায়-- 'বৈশাখে এ দেশে বড় সুখের সময়। নানা ফুল গন্ধে মন্দ গন্ধবহ হয়।' কীভাবে বৈশাখ মাসে নববর্ষ উদযাপন শুরু হলো সে তথ্য আজও পাওয়া যায়নি।
চৈত্র সংক্রান্তি আর ১ লা বৈশাখ যেন এক সাথে গাঁথা এক পদ্য। একটাকে এড়িয়ে আরেকটা নিয়ে লেখা সম্ভব নয়। চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান উৎসব চড়ক পূজা, সঙ্গে চলে গাজনের মেলা। এই গাজনের মেলা চৈত্র সংক্রান্তি থেকে শুরু করে আষাঢ়ী পূর্ণিমা পর্যন্ত চলে। চৈত্র সংক্রান্তির মেলা সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি উৎসব। শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে এইদিনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মকে পূণ্য বলে মনে করা হয়। চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান উৎসব চড়ক। এই উপলক্ষে একগ্রামের শিবতলা থেকে শোভাযাত্রা শুরু করে অন্য শিবতলায় নিয়ে যাওয়া হয়, আবার কোন স্থানে দেখা যায়, প্রতিটি সনাতন হিন্দু ঘরের উঠানে শিব-গৌড়ী নেচে নেচে চাল-ডাল-ফল-অর্থ সংগ্রহ করে। একজন শিব ও একজন গৌরী সেজে নৃত্য করে এবং তার সাথে অন্য ভক্তরা নন্দি, ভৃঙ্গী, ভূত-প্রেত, দৈত্যদানব প্রভৃতি সেজে শিব-গৌরীর সঙ্গে নেচে চলে। চৈত্র সংক্রান্তির মেলাতে সাধারণত শূলফোঁড়া, বানফোঁড়া ও বড়শিগাঁথা অবস্থায় চড়কগাছের ঘোরা, আগুনে হাঁটা প্রভৃতি সব ভয়ঙ্কর ও কষ্টসাধ্য দৈহিক কলাকৌশল দেখানো হতো। এখনও কিছুটা গ্রামের মেলায় দেখা যায়। চৈত্র সংক্রান্তির মেলায় বাঁশ, বেত, প্লাস্টিক, মাটি ও ধাতুর তৈরী বিভিন্ন ধরণের তৈজসপত্র ও খেলনা, বিভিন্ন রকমের ফল-ফলাদি ও মিষ্টি ক্রয়-বিক্রয় হয়। বায়াস্কোপ, সার্কাস, পুতুলনাচ, ঘুড়ি ওড়ানো ইত্যাদি চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা থাকে।
১৯৫৪ সালের পূর্ব বাংলার সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগ উৎখাত হলে যুক্তফ্রন্ট সরকার ও তার মুখ্যমন্ত্রী একে ফজলুল হক বাংলা নববর্ষে ছুটি ঘোষণা করে। এটা বাঙালির জাতিগঠন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে একটি সুস্পষ্ট পথনির্দেশ দান করেন এবং সে বছর বিপুল উৎসাহে বাঙালি তার নববর্ষ উদযাপন করে। ঢাকায় পহেলা বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট তাদের গানের মাধ্যমে নতুন বছরের সূর্যকে আহবান করে। পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মিলত কন্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান। ১৯৬৭ সাল থেকে এ আচার শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার বের হয়।