ঢের গড়িয়ে গেছে, চার দেয়ালের সকল দরজা জানালা রুদ্ধ করে দিয়েছি । আমার কোন ভয় নেই, শঙ্কা নেই। ওরা আমাকে কখনো দেখে নি, হয়তো আর কখনো দেখবে না, ওদের ভেতরের বিষাক্ত রক্ত টগবগিয়ে উঠবে না, সে সুযোগ তারা কখনো আর পাবে না। আমি ফিরবো না, লিখেছি হৃদয়ে এক অলিখিত পণ। দৈনন্দিন রৌদ এসে কড়া নেড়ে যায়, সন্ধ্যা ফিসফিসিয়ে কী যেন যায় বলে, জোনাক জ্বলা জোসনা নিরাশ হয়ে নীরবে করে প্রস্থান।
'ছুঁড়ে ফেলে দিলাম তোমাদের এইসব অহেতুক আবদার ! তোমাদের এতসব সৌন্দর্যে আমার কী আসে যায়, যেখানে আমি হই বিবর্জিত, নিষিদ্ধ নগরীতে নিক্ষিপ্ত ? এর থেকে ভালো, তোমাদের সৌন্দর্যে তোমরা একাকী ডুবে মরো, আত্মাহীন বিভ্রান্তিতে ।'
অথচ নীরবে আমি কাঁদি, দেয়ালের রঙে আঁকি ওদের প্রতিচ্ছবি, নানান ঢংয়ে। দেয়ালের রং খসে পড়ে । ওরা তা জানে না, ওদের আমি কতটুকু ভালোবাসি সমস্ত হৃদয় জুড়ে, আফসুসের নেশা খুন করে আমাকে প্রতিটি ক্ষণ। ইচ্ছে হয়, নিজেকে চিবিয়ে নিজে খেয়ে ফেলি- দেহের প্রতিটি ভাঁজ, জাগতিক আকর্ষর্নিয়া। এরপর সকল দরজা জানালা খুলে দেব, সঁপে দেব নিজেকে প্রকৃতির কাছে । সকল নিষেধাজ্ঞারোপ তুলে নেব, নির্দেশিকাহীন অযাচিত প্রবেশ ঘটুক ক্ষণে ক্ষণে। কিন্তু, অদেহ জুড়ে যে অচ্ছুৎ ঘৃণা? সে নিষ্পাপে বিশ্বাসী, নির্লজ্জ কখনো তাকে স্পর্শ করে নি, সে কখনো চায় না তার বিশুদ্ধ জলে কারো অবাধ্য ডুব । সে এতোটা অস্পর্শিয়া ! এই অদেহ ।
ওপারের প্রকৃতি সদা অভিমানে মরে, আঁধারে কেন আমার মিথ্যে আলো নিয়ে এতো মাখামাখি! আমার এই অবুঝ বুকে কতকাল আসে নি ধমকা হাওয়া, শীতল শিহরণ, কোমল হৃদয়ের প্রেম ! আমি তা বেমালুম ভুলে গেছি, এ বক্ষ পরাণে নিক্ষিপ্ত হয়েছে । আজ এই লাল পাথরে লিখি না আমি শুধু পৃথিবীর নাম, লিখি অন্যসব। কারণ ওরা দেয় না আমাকে বিস্বাদী কলঙ্ক, বস্তুত ওখানে মাংসল কোন কঙ্কাল নেই । আমি নির্দ্বিধায় পাখা মেলে উড়ে বেড়াই ওদের বুকে। আর ওদেরকে দীক্ষা দেই, তোমার বুকে মানুষ জন্ম দিও না, কারণ তুমি বুঝতেই পারবে না ওরা কখন যে অমানুষ হয়ে গেছে ! বিশ্বাস করো, ওপারের দরজা জানালা ঘূণে ধরার আপ্রাণ চেষ্টায় মগ্ন, ওপারের ঘূণও হয়েছে বিশ্বাসঘাতক, সন্ধ্যা হলেই কিলবিলিয়ে বের হয় দরজা ভাঙতে। আমি এখনোও লজ্জার সুরক্ষায় অপ্রতিরোধ্য, সর্বদা নীল হই, পুড়ি, জল তো সেই কবে শুকিয়ে গেছে।
এই ঘরে কোন আকাশ নেই, কোন পাখি নেই, মেঘ নেই, বৃষ্টি নেই, বৃক্ষ নেই, চন্দ্র নেই, প্রেম নেই, আবেগ নেই, যন্ত্রণা নেই- সুখ নেই। এই যৌবন ভরা দেহে ঘামহীন লোমকূপ, পরিচ্ছন্ন ইতিহাস, ছায়াহীন অবয়ব। হৃদয় নামে এক সন্ধ্যা আছে, যেখানে সূর্যাস্তের কোন প্রমাণ মেলে না । মায়াবী দু'চোখ আছে, দৃষ্টিতে দৃষ্টিহীন । অদৃশ্য একজোড়া ওষ্ঠ আছে, শ্রুতিহীন অনুভব । সমস্ত দেহ অধরা এক অদ্ভুত কিংবদন্তী!
এমনি এক আবাস আমার। তবুও প্রকৃতিকে আমি হৃদয় দিয়ে বলেছি, আমি ফিরবো, যদি তুমি হতে পারো সোচ্চার, যদি তুমি করতে পার কলঙ্কমাখা সমস্ত সজ্জার বিনাশ । আবারও কথা দিলাম, তুমি জাগ্রত হলে আমি বিশ্বাসী হবো, আমি ফিরবো, এমনি আমার মতো, ঠিক যেন আমি অজস্র নির্ঘুম অপেক্ষায়.....
অঙ্গনা- নারী ।
লেখাটার অন্তর্নিহিত আলাপনঃ
[এই লেখাটা সমসাময়িক সামাজিক অবস্থানের উপর লেখা । প্রতিদিন পত্রিকা বা নিউজ চ্যানেল খুললেই নারী নির্যাতন, ধর্ষন, এভনরমাল এবিউজ এসবের খবর পাওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার । যেন এগুলো ঘটাই স্বাভাবিক । কিন্তু তা নয়, তাই এই লেখায় একজন নারী পৃথিবী থেকে নিজেকে আলাদা করে বন্দি করে নিয়েছে, তার ভেতরের বেদনার কথা বলেছে, সে পৃথিবীর প্রকৃতি থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে মানুষনামক অমানুষগুলোর জন্য। শেষে সে ফিরে আসার কথাও বলেছে, যদি প্রকৃতি নিজস্ব শক্তিতে এসব অমানুষদের শেষ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে তবেই সে ফিরে আসবে, তার মত আরো অনেক নারী ফিরে আসবে । সে পৃথিবীর মানুষদের তৈরী ন্যায় নীতির উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে । তাই সে নিরুপায়, তাই সে প্রকৃতির সাহায্য কামনা করে । এটি একটি কাল্পনিক দৃশ্যপট । ]
ছবি বন্ধু- নেট ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৩৪