মাত্রই শেষ হল অমর একুশে বইমেলা। আমরা অনেকেই মেলায় ঘুরে পছন্দের বই কিনেছি।বই কিনে আমরা অনেকেই পড়ার পর সেটা কাউকে দিয়ে দেই বা বিক্রি করে দেই। আবার অনেকেই যে ধরনের বইই হোক না কেন কখনো সেটা হাতছাড়া করি না। বছরের বছর জমাতে থাকি। এভাবে জমাতে জমাতে বইয়ের যে বিশাল সংগ্রহ তৈরি হয় সেটা সামলানো এক ঝক্কির ব্যাপার। আর বই কিনলেই কি সব শেষ হয়ে গেল বইয়ের যত্ন ও সংরক্ষন করাওতো চাই। বইয়ের ঠিকমতো যত্ন না নিলে বা সংরক্ষণ না করলে এত শখের/ মূল্যবান বই নস্ট হয়ে যেতে পারে অথবা পোঁকায় খেয়ে নিতে পারে।
দীর্ঘদিন পর তাক থেকে কোন বই নামিয়ে মন খারাপ হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় বইয়ের প্রধান শত্রু পোকা।
ব্যক্তিগত বই ঠিকমত সংরক্ষণ করতে কিংবা ব্যক্তিগত পাঠাগার গড়ে তুলতে কিছু নিয়ম মেনে চললে ভালো।
স্থান নির্বাচন
ঘরের যে কোন জায়গায় বই রাখা গেলেও নিরিবিলি এবং শান্ত পরিবেশ রয়েছে এমন স্থান নির্বাচনের চেষ্টা করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় পাঠাগারের জন্য আলাদা এটি কক্ষের ব্যবস্থা করতে পারলে। সেখানে যাতে বসে পড়ার ব্যবস্থা থাকে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
বই রাখা
• বই রাখতে আলমারি বা বুক শেলফ তো লাগবেই। বড় তাকে ছোট বই রাখলে জায়গার অনেক অপচয় হয় তাই বইয়ের ধরন বুঝে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বুক শেলফের ব্যবস্থা করতে হবে।
• সরাসরি সূর্যের আলো বা তীব্র আলো ব্লিচিং বা বিরঞ্জন ক্রিয়ার জন্য দায়ী। কাজেই বইয়ে সংগ্রহশালাটি উজ্জ্বল আলো থেকে দূরে রাখতে হবে।
• ধূলাবালি এড়ানোর জন্য বেশি খোলামেলা কক্ষ পরিহার করা দরকার। প্রয়োজনে আলো ও ধূলাবালি এড়ানোর জন্য জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
• পোকামাকড় এড়ানোর জন্য নিমপাতা, ন্যাপথালিনসহ অন্য কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে আঙ্গুলে লালা লাগিয়ে পাতা উল্টানো যাবে না।
বই সাজানো
বই পাগল পাঠকদের বই সাজাতে হয় না। বই যত বিশৃঙ্খলভাবেই থাকুক না কেন কোন বইটি কোথায় সেটা ঠিকমত জানা থাকে তার। তবু বই সাজিয়ে রাখলে ভালো। বিশেষ করে অন্যদের সুবিধা।
• বই বিষয়ভিত্তিকভাবে সাজানো যেতে পারে। আবার সংগ্রহের সময় বা লেখকের নামানুসারে সাজানো যেতে পারে।
• বইয়ে সংগ্রহটা বড় হয়ে গেলে ক্যাটালগিং পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। ক্যাটালগিং এর সফটওয়্যার ছাড়াও কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে এ ধরনের সেবা বিনে পয়সায় পাওয়া যায়। এরকরম কয়েকটি সাইট:http://www.librarything.com , http://www.shelfari.com ,http://www.reader2.com
তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা
তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রী সে. এর ওপরে এবং আর্দ্রতা ৬৫% এর বেশি হলে ছত্রাক আক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। আবার আর্দ্রতা খুব কম হলে বইয়ের পাতা মচমচে হয়ে ভেঙ্গে যেতে পারে। যে কক্ষে বই রাখা হচ্ছে সে কক্ষের তাপমাত্রা ১৬-২১ ডিগ্রী সে. এর মধ্যে থাকা উচিত। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থাকলে ভালো।
বইয়ের যত্ন
• আমাদের অনেকেরই বইয়ের পাতা মোড়ানো বা ভাঁজ করার অভ্যাস আছে, এটা ক্ষতিকর। বাজারে আঠাযুক্ত বুকমার্ক কিনতে পাওয়া যায়, এগুলো কিংবা কাগজের টুকরো ব্যবহার করা যেতে পারে।
• বিছানায় শুয়ে বা আধা শোয়া অবস্থায় বই পড়লে যাতে বাঁধাই এর কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বই পড়া
• পুরো কক্ষে উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা না করে কেবল টেবিলে টেবিল ল্যাম্পের ব্যবস্থা করলে বইয়ের ক্ষতি কম হবে।
• আরামদায়ক পাঠের জন্য চেয়ার-টেবিলের উচ্চতার অনুপাত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য উচ্চতা পরিবর্তন করা যায় এমন চেয়ার হলে ভালো।
পোকা আক্রান্ত হলে
• পোকা আক্রান্ত বই দ্রুত আলাদা করতে হবে যাতে অন্য বই আক্রান্ত না হয়।
• আক্রান্ত বইটি রোদে দিয়ে পোকামুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। প্লাস্টিক প্যাকেটে মুড়ে ডিপ ফ্রিজে রাখলেও পোকা মরে যায়।
তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১২