বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রামাণ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য এবং পূর্ণদের্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এত বেশিসংখ্যক চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে যে, দেশের বাইরেও তা প্রশংসা কুড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হেরাল্ড ট্রিবিউন পত্রিকার ভাষায় ‘আগামী প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে গৌরব, গর্ব আর বেদনাগাথা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পালন করে যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। দেশটির জন্য সত্যিই এটি আশা ও অহঙ্কারের বিষয়’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এক বছরের মধ্যেই ১৯৭২ সালে মুক্তি পায় চারটি চলচ্চিত্র। এগুলো হলো_ চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’, সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগি্নসাক্ষী’, মমতাজ আলীর ‘রক্তাক্ত বাংলা’ এবং আনন্দের ‘বাঘা বাঙ্গালী’। এর পর ৪১ বছরে নির্মিত হয়েছে প্রায় দেড় ডজন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে_ আলমগীর কবিরের ‘ধীর বহে মেঘনা’ (১৯৭৩), চাষী নজরুল ইসলামের ‘সংগ্রাম’ (১৯৭৪), আলমগীর কুমকুমের ‘আমার জন্মভূমি’ (১৯৭৪), হারুণর রশীদের ‘মেঘের অনেক রং’ (১৯৭৬), শহীদুল হক খানের ‘কলমী লতা’ (১৯৮১), নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর ‘৭১-এর যীশু’ (১৯৯৩), হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’ (১৯৯৪), তারেক মাসুদের ‘মুক্তির গান’ (১৯৯৫), চাষী নজরুলের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ (১৯৯৭), হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’ (২০০৫), তৌকীর আহমেদের ‘জয় যাত্রা’ (২০০৮), চাষী নজরুলের ‘ধ্রুবতারা’ (২০০৯) এবং নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর ‘গেরিলা’ (২০১১)।
তিতাস একটি নদীর নাম
বাঙালি ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচিত বিখ্যাত উপন্যাস তিতাস একটি নদীর নাম অবলম্বনে ঋত্বিক ঘটক মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এ চলচিত্রটি নির্মান করেন ১৯৭৩ সালে। এ ছবিতে অভিনয় করেন গোলাম মুস্তাফা, কবরী চৌধুরী, রোজী সামাদ, প্রবীর মিত্র প্রমুখ।
জীবন থেকে নেওয়া - জহির রায়হান :
একটি বাংলা চলচ্চিত্র। জহির রায়হান এর নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি ১৯৭০ সালের এপ্রিল মুক্তি পায়। সামাজিক এই চলচ্চিত্রে তৎকালীন বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনকে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, সুচন্দা, রোজী সামাদ , খান আতাউর রহমান, রওশন জামিল,আনোয়ার হোসেন, প্রমুখ। এই ছবিতে আমার সোনার বাংলা গানটি চিত্রায়িত হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে।
ওরা ১১ জন — চাষী নজরুল ইসলাম
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম এই চলচ্চিত্রটি। মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি পটভূমি ও একশন নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্র বাঙালির মরণপণ মুক্তি সংগ্রামের প্রতীক হয়ে ওঠে। এতে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার ১৯৭২ সালের ১৩ আগস্ট মুক্তি পায় ‘ওরা ১১ জন’। চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন চরিত্রে অভিনয় করেন ১১ মুক্তিযোদ্ধা। যারা পেশাদার শিল্পী ছিলেন না। এরা হলেন_ খসরু, মঞ্জু, হেলাল, ওলীন, আবু, আতা, নান্টু, বেবী, আলতাফ, মুরাদ ও ফিরোজ। ১১ দফার ছাত্র আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরকে মাথায় রেখে প্রতীকী অর্থে এ চলচ্চিত্রের নামকরণ করা হয় ‘ওরা ১১ জন’। চলচ্চিত্রের শুরুতে টাইটেলে ছয়টি কামানের গোলার শব্দ শোনা যায়। নির্মাতার মতে, এ ছয়টি শব্দ হচ্ছে ছয়দফা দাবির প্রতীকী শব্দ। এই চলচ্চিত্রে যে অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ব্যবহার হয়েছিল সবই ছিল সত্যিকারের। ‘ওরা ১১ জন’ মস্কো, ইংল্যান্ড, জামশেদপুর, রাচী, কলকাতা ও বোম্বেতে প্রদর্শিত হয়েছিল। বলিউডের প্রখ্যাত নির্মাতা রাজকাপুর চলচ্চিত্রটি দেখে এ চলচ্চিত্রের নির্মাতাকে প্রশ্ন করেছিলেন ‘হাউ- ইট পসিবল’, সদ্য স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এমন জীবন্ত চলচ্চিত্র নির্মাণ কীভাবে সম্ভব। তিনি বলেন, বলিউডে আমরা এ ধরনের বিষয় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে সাহস পাইনি’। এ চলচ্চিত্রের প্রযোজক মাসুদ পারভেজ (অভিনেতা সোহেল রানা) বলেন, ‘এটি আসলে শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিলও বটে’। চল্লিশ বছর পূর্বে নির্মিত এই অসাধারণ ছবিটি স্বাধীনতার চার দশক পরেও চলচ্চিত্রটির আবেদন একটুও কমেনি; বরং স্বাধীনতাউত্তর প্রজন্মের কাছে চলচ্চিত্রের আলোচনা ও সমালোচনা ভিন্ন আঙ্গিকে ও নবতর মাত্রায় বিবেচিত হচ্ছে, যার রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য।
অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী (১৯৭২) — সুভাষ দত্ত
সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭২ সালে। এ চলচ্চিত্রের ঘটনা মূলত এক চিত্র অভিনেতার মুক্তিযুদ্ধকালের অভিজ্ঞতাকে ঘিরেই। যিনি যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে রক্ষা পেতে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যান এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিবেকের দংশনে দংশিত হতে থাকেন। এ চরিত্রে অভিনয় করেন আনোয়ার হোসেন। অন্যদিকে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে নারীর সম্ভ্রমহানির ঘটনাগুলো মর্মস্পর্শীভাবে উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। সুভাষ দত্তের পাণ্ডুলিপি ও নিজের পরিচালনায় এ চলচ্চিত্রে ববিতা বীরাঙ্গনার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেন। তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে বিষয়বস্তুগত দিক দিয়ে এ চলচ্চিত্রটিকে একেবারেই অন্যরকম বলে মন্তব্য করেছিলেন বুদ্ধিজীবীরা।
ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩) — আলমগীর কবির
এটি ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। ছবিটি পরিচালনা করছেন চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির। এবং এটি তাঁর পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈঘ্য চলচ্চিত্র। এটি ১৯৭১ সালের পটভূমিতে নির্মিত তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র। ছবিতে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বুলবুল আহমেদ, ববিতা ও আনোয়ার হোসেন।
সংগ্রাম (১৯৭৩) — চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত
আবার তোরা মানুষ হ (১৯৭৩) — খান আতাউর রহমান
আবার তোরা মানুষ হ ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। ১৯৭১ এ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম।
আলোর মিছিল (১৯৭৪) — নারয়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত
দেশ স্বাধীন হবার পর দেশে কী ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো তারই এক বাস্তবচিত্র হলো এই আলোর মিছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে শ্রেণী বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করে। ধনীরা আরো ধনী এবং দরিদ্ররা আরো যেন দরিদ্র হতে শুরু করে। যেখানে যুদ্ধের আগে মানুষ পঞ্চাশ পয়সা সের চাল খেতো সেই দেশের মানুষ যুদ্ধের পর যখন দেখে যে তিন টাকা সের চাল কিনতে হবে তখন যেন চারিদিকে হাহাকার পড়ে যায়। আর এই সুযোগে কিছু সুবিধাভোগী মুনাফা লোভী মানুষ চাল ও চালের মত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন ওষুধপত্র মজুদ করতে শুরু করে এবং এই সব জিনিসপত্রের সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে তারা বিপুল পরিমাণে মুনাফা হাতিয়ে নেয়। যুদ্ধের পরে বেশ কিছু মানুষ এই অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে বলতে গেলে রাতারাতি ধনী হয়ে যায়। আর কিছু মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত যুবক সেটা রুখে দাঁড়ানোর জন্য দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নেমে পড়ে।
মেঘের অনেক রঙ (১৯৭৬) — হারুন-উর-রশিদ
১৯৭৯ সালে হারুনুর রশীদ নির্মাণ করেন ‘মেঘের অনেক রং’। এ চলচ্চিত্রের পুরো কাহিনী উঠে এসেছে একটি শিশুর দৃষ্টিকোণ থেকে। সদ্যবোধসম্পন্ন যে ছেলেটি তার মাকে খুঁজে বেড়ায়। এরই ফাঁকে চলে আসে যুদ্ধের কথা। যুদ্ধে তার মা পাক বাহিনীর লাঞ্ছনার শিকার হয়ে আত্দহত্যার পথ বেছে নেয়। এতে অভিনয় করেন রওশন আরা, ওমর এলাহী মাথিন ও মাস্টার আদনান। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে এটি জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে। একই সঙ্গে বাচসাস ও আন্তর্জাতিক নানা স্বীকৃতিতে ভূষিত হয় এবং কাব্যিকধর্মী চলচ্চিত্র হিসেবে সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়।
কলমীলতা (১৯৮১) — শহীদুল হক খান
সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার শহীদুল হক খান সরকারি অনুদানে ১৯৮১ সালে নির্মাণ করেন ‘কলমিলতা’। এতে মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পাকসেনার বিরুদ্ধে দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প উঠে এসেছে। বাচসাসসহ নানা সংগঠনের পুরস্কার ও প্রশংসা অর্জন করে চলচ্চিত্রটি। এতে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেন সোহেল রানা ও সুচরিতা।
একাত্তরের যীশু (১৯৯৩) — নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু
মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু নিজের পাণ্ডুলিপি নিয়ে ১৯৯৩ সালে নির্মাণ করেন ‘৭১-এর যীশু’। এতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সব পেশা ও শ্রেণীর মানুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের চিত্রের পাশাপাশি বাঙালি জাতির ওপর পাক বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের চিত্র মর্মস্পর্শী রূপে ফুটে উঠেছে। পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করার পথ বেছে নেয়। তাই গল্পকার ক্রুশবিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের যীশুর সঙ্গে তুলনা করে চলচ্চিত্রের নামকরণ করেছেন ‘৭১-এর যীশু’। এর মূল দুটি ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও হুমায়ুন ফরীদি। জাতীয় ও বাচসাসসহ দেশে-বিদেশে পুরস্কার এবং প্রশংসা অর্জন করে এ চলচ্চিত্রটি।
নদীর নাম মধুমতি (১৯৯৪) — তানভীর মোকাম্মেল
আগুনের পরশমণি (১৯৯৫) — হুমায়ুন আহমেদ
১৯৯৫ সালে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নিজের লেখা গল্পে নির্মাণ করলেন ‘আগুনের পরশমণি’। যুদ্ধকালীন একটি পরিবারের দুঃখ, ভয় ও প্রাপ্তির স্বপ্নঘেরা গল্পে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল চলচ্চিত্রটি। ঢাকায় বসবাস করা নিতান্ত সাধারণ একটি পরিবার। পরিবারের কর্তা পাকবাহিনীর ভয়ে তটস্থ থাকলেও তার স্ত্রী ও কন্যা মুক্তিযোদ্ধা জেনেও এক যুবককে তাদের বাড়িতে আশ্রয় দেয়। সহযোগিতা করে। এক সময় সেই যুবকের প্রতি কন্যাটি দুর্বল হয়ে পড়ে। যুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু এবং স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের মধ্য দিয়ে গল্পের সমাপ্তি ঘটে। এর প্রধান অভিনয়শিল্পীরা হলেন_ আবুল হায়াত, ডলি জহুর, বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর প্রমুখ। চলচ্চিত্রটি ১৯৯৮ সালে ৮ টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পায়। যথাঃশ্রেষ্ঠ কাহিনিকার: হুমায়ূন আহমেদ,শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা: হুমায়ূন আহমেদ,শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী: বিপাশা হায়াত,শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক: সত্য সাহা,শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: মফিজুল হক,শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী: শিলা আহমেদ, শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার: হোসনে আরা পুতুল
মুক্তির গান (১৯৯৫) — তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ
মুক্তিযুদ্ধকালীন আমেরিকান সাংবাদিক লিয়ার লেভিন সেখানকার এক টেলিভিশন কোম্পানির জন্য মুক্তিযুদ্ধে শিল্পীরা কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন এর ওপর ছবি তোলেন। স্বাধীনতার ২২ বছর পর সেই ছবি উদ্ধার এবং বাছাই করে তরুণ চলচ্চিত্রনির্মাতা তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ একটি চমৎকার চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রের শিরোনাম দেন ‘মুক্তির গান’। এটি ১৯৯৫ সালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।
হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড (১৯৯৭) — চাষী নজরুল ইসলাম
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের গল্প অবলম্বনে ১৯৯৭ সালে চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’। মুক্তিযুদ্ধের সময় এক স্নেহময়ী মা মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষা করতে গিয়ে তার প্রতিবন্ধী পুত্রকে তুলে দেন পাক সেনাদের হাতে। তারা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মা নিজের পুত্রের চেয়েও দেশকে বড় করে দেখেছিলেন। এমন মর্মস্পর্শী ত্যাগের গল্পের এই চলচ্চিত্রটি শুধু প্রশংসাই পায়নি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করে। এতে অভিনয় করেছেন সোহেল রানা, সুচরিতাসহ অনেকে।
মুক্তির কথা (১৯৯৯) — তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত
মাটির ময়না (২০০২) — তারেক মাসুদ পরিচালিত
জয়যাত্রা (২০০৪) — তৌকির আহমেদ পরিচালিত
ডাউনলোড লিংক :
১ম অংশ
২য় অংশ
৩য় অংশ
শ্যামল ছায়া (২০০৪) — হুমায়ুন আহমেদ
জনপ্রিয় সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ুন আহমেদ তার নিজের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন “শ্যমল ছায়া” চলচ্চিত্রটি। এই ছবিটি ২০০৬ সালে "সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র" বিভাগে মনোনয়ন পায়। ছবির বিশেষত্ব হচ্ছে, সরাসরি যুদ্ধের দৃশ্য না দেখিয়েও এতে যুদ্ধের আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। চলচ্চিত্রের ভাষায় তিনি তুলে ধরেছেন ১৯৭১ সালের কিছু মুক্তিকামী মানুষের কথা ও চেতনা , তাদের মর্মস্পর্শী জীবনকাহিনী, তাদের আনন্দ-বেদনা,হাসি-কান্না , দুঃখবোধ এবং আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস । ২৫শে মার্চের কালরাত্রিতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন একদল মানুষ ছুটে চলছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে । নৌকায় করে তারা যাচ্ছে মুক্তাঞ্চলের খোঁজে । ঠিকানাবিহীন গন্তব্য, বেচেঁ অনিশ্চিত সম্ভাবনা তবু মানুষগুলো নৌকায় পাড়ি দিয়ে খুঁজছে মুক্তির আলো । যেখানে নি:শ্বাস নিতে পারবে প্রাণভরে । গায়েনের দলের ছদ্মবেশে সেই নৌকাতেই আশ্রয় নেয় স্বাধীনতাকামী একদল মুক্তিযোদ্ধা । যুদ্ধভয়ে পালিয়ে যেতে থাকা সাধারণ মানুষগুলোও জড়িয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা দলের সাথে । ১১০ মিনিটের এই চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের পরিবেশ , সময়কে তুলে ধরে যুদ্ধের করুণতম মর্মস্পর্শী সময়কে যেন দারুণভাবে জানান দিয়েছে ছবির প্রতিটি মুহূর্ত ।
এখনো অনেক রাত
খেলাঘর (২০০৬) — মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত
খন্ড গল্প ১৯৭১
আমার বন্ধু রাশেদ - মোরশেদুল ইসলাম
গেরিলা - নাসিরুদ্দিন ইউসুফ
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ লোবান’ অবলম্বনে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও চলচ্চিত্রকার নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ২০১১ সালে নির্মাণ করেন ‘গেরিলা’। যুদ্ধকালীন পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের ঘৃণিত তৎপরতা ও বর্বরতা এ চলচ্চিত্রে মর্মস্পর্শীভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। পাক সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তার পৈশাচিক রূপ এবং এক সাংবাদিকের স্ত্রীর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার দিকটি মূলত এ চলচ্চিত্রের মূল উপজীব্য। গেরিলা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কার ও প্রশংসা অর্জন করেছে। ২০১১ সালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, পরিচালকসহ বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে এই চলচ্চিত্রকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, ফেরদৌস, শতাব্দী ওয়াদুদ প্রমুখ।
মেহেরজান - রুবাইয়াত হোসেন
অন্যান্য
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
রাবেয়া, পরিচালক: তানভীর মোকাম্মেল
স্টপ জেনোসাইড, পরিচালক: জহির রায়হান
পিতা -
পোস্টটি ১৬ ডিসেম্বরে দেয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু কাজের ব্যস্ততা পাশাপাশি মুভি তথ্য ও লিংক খুজেঁ বের করতে করতে দেরী হেয় গেল। তারপরও সব ছবির লিংক ও তথ্য দিতে পারিনি। তাই মনে একটু অপূর্নতা রয়ে গেল। অপূর্নতা ঘুচানোর জন্য ধীরে ধীরে সময় করে সব মুক্তিযুদ্ধের সব ছবির তথ্য দেয়ার চেষ্টা করব। যে কেউ তথ্য বা ছবির ডাউনলোড লিংক দিয়ে আমাকে সাহায্য করতে পারেন। করলে কৃতজ্ঞ থাকব।
বি:দ্র: পোস্ট আপডেট চলবে...............................................................
তথ্যসুত্র : অল বিডি মুভি.কম , উইকিপিডিয়া, ছবি-গুগল এবং ইন্টারনেট ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:১০