সভ্যতার ইঞ্জিন হচ্ছে বিজ্ঞান। আর বিজ্ঞানের একটি বাহন হচ্ছে বই। যুগে যুগে এমন কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে, যা মুহুর্তে পাল্টে দিয়েছে মানুষের চিন্তা-চেতনা, তেমনি কালজয়ী ও কালকে বদলে দেয়া ২৫টি বইয়ের তালিকা তৈরী করেছে ডিসকভারী ম্যাগাজিন। তা থেকে ১৫টি বইয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হল-
১. দ্য অরিজিন অব স্পিসিজ :
১৮৪৫সালে প্রকাশিত চালর্স ডারউইনের বইটিকে সর্বকালের সেরা বিজ্ঞান বই বলবেন যে কেউ। বইটিতে প্রথম বিবর্তন বাদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ডারউইন।
২. দ্য ভয়েজ অব দ্য বিগল :
এই বইটিও ডারউইনের । ১৮৩১-১৮৩৬ সময় কালে দক্ষিণ আমেরিকা, গালাপোগোস দ্বীপপুঞ্জ ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ইংল্যান্ডে ফিরে বইটি লেখেন ডারউইন । বলা হয, এ ভ্রমনের পরই ডারউইন জীবজগৎ সম্পর্কে তার প্রচলিত ধারনা বদলে ফেলেন।
৩. ম্যাথম্যাটিকাল প্রিন্সিপালস অব ন্যাচারাল ফিলসফি :
১৬৮৭সালে প্রকাশিত স্যার্ আইজ্যাক নিউটনের বইটির সূচনা। নিউটনের গতির তিনটি সূত্র এই বইটিতেই প্রথম লেখা হয়েছে। তবে এতে বিভিন্ন সূত্র ও গনিত থাকলেও মাধ্যমিক স্তরের যে কেউ বইটি পড়ে বুঝতে পারবে।
৪. ডায়লগ কনসানিং দু টু চিফ ওয়ার্ল্ড সিস্টেম :
১৬৩২ সালে বইট লেখেন গ্যালিলিও গ্যালিলি । পোপ আরবান অষ্টম গ্যালিলিওকে দায়িত্ব দিলেন কোপার্নিকাসের 'সূর্যই সৌর মন্ডলের কেন্দ্র ' তত্ত্বটির ওপর একটি বই লেখার জন্য। তিনটি কাল্পনিক চরিত্রের কথোপকথন নিয়ে বইটি লেখেন গ্যালিলিও গ্যালিলি । প্রথম চরিত্রটি একজন আইন প্রনেতার এবং যে কিনা কোপার্নিকাসের তত্ত্বের সমর্থক। দ্বিতীয় জন আ্যারিস্টটলের সমর্থক এবং তৃতীয় জন এমন একজন যে না বুঝেই প্রশ্ন করে। মূলত এটি ছিল চার্চের আ্যারিস্টটল সমর্থনের প্রতি একটি বড় আঘাত।
৫. অন দ্য রেভলিউশন অব হেভেনলি ষ্ফিয়ার্স :
কোপার্নিকাসের লেখা বইটি প্রকাশিত হয় ১৫৪৩ সালে । কোপার্নিকাসের চাননি বইটি তার মৃত্যুর আগে প্রকাশিত হোক। আর এর কারনটিও পরিষ্কার। জীবিত অবস্থায় তিনি কোনোভাবেই চার্চকে রাগাতে চান নি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো মতাদর্শের বাইরে হলেও বইটিতে তেমন গুরুত্বই দেয়নি চার্চ ।
৬. ফিজিকা :
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩০ সালে এই বইটি লিখেছিলেন অ্যারিস্টটল । সৌর মন্ডলের উপর লেখা এটিই প্রথম বই। এই বইতে তিনি পৃথিবীকে সৌরজগতের কেন্দ্র হিসাবে তুলে ধরেন। তার এ মতবাদটি বহু বছর টিকে ছিল। বিষ্ময়কর হলো এখনও অনেকে তার মতবাদটি বিশ্বাস করে।
৭. অন দ্য ফেব্রিক অব হিউম্যান বডি :
১৫৪৩ সালে প্রকাশিত হয পূর্ণাঙ্গ ছবিসহ বিশ্বের প্রথম এনাটমি বই অন [link|http://দ্য ফেব্রিক অব হিউম্যান বডি , লেখক আন্দ্রেয়াস ভেসিলাস । এই বইটির আগে মানব দেহের ব্যবচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর জন্য প্রাচীন গ্রিক লেখার উপরই ভরসা করতে হত। ভেসিলাস যে ধারনা পাল্টে থেকে সরে নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বইটি লেখেন।
৮. রিলেটিভিটি দি স্পেশাল অ্যান্ড জেনারেল থিউরি :
তালিকার অস্টম স্থানে হলেও আলবার্ট আইনষ্টাইনের বইটি পদার্থ বিজ্ঞানের চেহারাই বদলে দিয়েছিল। ১৯১৬ সালে প্রকাশিত হয় এ বইটি । বইটি প্রকাশের সাথে সাথে গতি , সময় ও স্পেস নিয়ে দীর্ঘ দিনের সব ধারনাকে বদলে দিয়েছিল আগাগোরা।
৯. দ্য সেলফিস জিন :
১৯৭৬ সালে প্রকাশিত বইটির রচয়িতা রিচার্ড ডকিন্স । রিচার্ডের মতে, আমাদের জিন আমাদের বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করছেনা। বরং আমরাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জিন রক্ষা করে চলেছি।
১০. ওয়ান, টু, থ্রি...ইনফিনিটি :
বইটি লিখেছেন বিখ্যাত রুশ পদার্থ বিজ্ঞানী জর্জ গ্যাগো । ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত বইটিতে বিগ ব্যাং থেকে শুরু করে স্পেসের বক্রতা এবং মানব শরীরের জটিলতর রহস্যময় উপাদান (তখনো ডিএনএ আবিষ্কার হয়নি) পর্যন্ত সবই এসেছে। অন্তত এই বইটি পড়লে কেউ বিজ্ঞান নীরস বলবেন না।
১১. দ্য ডাবল হেলিক্স :
একাদশ স্থানে রয়েছে ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত জেমস ডি ওয়াটসনের এ বইটি। ডিএনএ আবিষ্কার নিয়ে লেখা এই বইটিতে কখনো অন্য গবেষকদের প্রতি লেখকের রাগও প্রকাশ পেয়েছে। তবে বিজ্ঞান নিয়ে যে কোনো সময়ের অন্যতম সেরা বই হিসেবে এটিকে ধরা হয়। এটি প্রকাশের পরপরই সবাই জানতেন জেমস ডি ওয়াটসনেরও তার সহযোগী ফ্রান্সিস ব্লাক নোবেল পুরষ্কার পেতে যাচ্ছেন।
১২. হোয়াট ইজ লাইফ : ১৯৪৪ সারৈ প্রকাশিত হয় আরউইন শ্রিডিঙ্গারের বইটি। জীবিত কোষ কিভাবে নিষ্প্রাণ বস্তু থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখে বইটিতে তার বিশদ ব্যাখা দিয়েছেন নোবেল বিজয়ী এ পদার্থবিদ। বলা হয়, এই বইটিই ফ্রান্সিস ক্রিকসহ অনেককে জীববিদ্যা গবেষনা করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
১৩. দ্য কসমিক কানেকশন :
১৯৭৩ সালে বইটি লেখেন কার্ল সাগান । নাসা যখন এ্যাপোলো মিশন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ঠিক তখন নাসার বিজ্ঞানী কার্ল সাগান জনগনকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিলেন সৌরজগতের সঙ্গে। বইটিতে ভিনগ্রহের প্রাণী , ভিন্ত সৌরমন্ডল ও গ্রহের সম্ভাবনা নিয়েও লিখেছেন। এ বই অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে জনপ্রিয় টিভি সিরিজ 'কসমস '।
১৪. দ্য ইনসেক্ট সোসাইটিজ :
১৯৭১ সালে প্রকাশিত এডওয়ার্ড ও উইলসনের লেখা বইট তালিকার ১৪ তম । ৫০০ পৃষ্টার বইটিতে কীট পতঙ্গের জীবন বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে পিপড়া, উইপোকা ,|মৌমাছি , ভিমরুল সহ আরো কয়েক প্রজাতির পতঙ্গের জীবন প্রবাহ আকর্ষনীয় করে উপস্থাপন করা হয়েছে।
১৫. দ্য ফার্স্ট থ্রি মিনিটস :
১৯৭৭ সালে বইটি লেখেন স্টিভেন ওয়েইনবার্গ । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন অনেক দেশেরই রাডার গবেষকরা মিথ ও কল্পকাহিনীকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য স্টিভেন ওয়েইনবার্গ বিশ্বাস যোগ্য প্রমাণসহ প্রথমবারের মতো বিগ ব্যাং থিউরিকে জন সমক্ষে নিয়ে আসেন। এই বইটির মাধ্যমে ঠিক দুই বছর পর তিনি পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার পান।
তথ্যসূত্র : বিভিন্ত দৈনিক পত্রিকা, উইকিপিডিয়া, গুগল, অর্ন্তজাল