বিকেল বেলায় বাচ্চাদেরকে ডে-কেয়ার থেকে নিয়ে আসার সময় করিম সাহেবের মোবাইলে একটা কল এলো।
"মিসেস করিম আছেন?"
উত্তরে করিম সাহেব বললেন, "উনি নেই, আপনার তাকে কী প্রয়োজন, সেটি আমাকে জানাতে পারেন।"
ওপাশ থেকে ভারী কণ্ঠস্বর জানালো যে, মিসেস করিমের নামে 'ফেডএক্স' থেকে একটি পার্সেল এসেছে। তারা আধা ঘন্টার মধ্যেই পার্সেল ডেলিভারী করতে জনাব করিমের বাসায় আসছেন। সুতরাং করিম সাহেব যেন বাসাতেই থাকেন। আর যেহেতু করিম সাহেবের সহধর্মিনীর কাছে পার্সেল ডেলিভারী হবে, কাজেই করিম সাহেবের থেকে টেলিফোনের ভদ্রলোক মিসেস করিমের ফোন নম্বরটিসহ আরও কিছু তথ্য নিয়ে নিলেন। করিম সাহেবও সরল মনে টেলিফোনের লোকটিকে তথ্য দিলেন।
বন্ধুরা, আপনাদেরকে কানাডা'র টরন্টো শহরের এমন একটি সত্যি গল্প বলছি যা সম্প্রতি আমার পরিচিত এক বড় ভাই এবং ভাবীর সাথে ঘটে গিয়েছে।
ফেডএক্স থেকে পার্সেল কে পাঠাবে? এই কথা চিন্তা করতে করতেই করিম সাহেব ফোনের লোকের কথা মতো অপেক্ষা করতে থাকলেন। কিন্তু সেইদিন আর কেউ এলোনা।
পরদিন করিম সাহেবের কাছে আবারও অপরিচিত নম্বর থেকে কল এলো। অন্য এক ব্যক্তি করিম সাহেবকে গত দিনের সেই ফেডএক্স-এর লোকের কথাগুলো আবারও জানালেন এবং এটিও বললেন যে, আধা ঘন্টার মধ্যে ফেডএক্স-এর লোক তার বাসায় যাচ্ছে। কাজেই তিনি যেন শীঘ্রই বাসায় চলে যান।
করিম সাহেব জানালেন যে, তিনি কাজে এবং বাসায় বিকাল চারটের আগে পৌঁছতে পারবেননা। এই বলে ফোনটা রেখে দেবার পরেও বার বার অপরিচিত বিভিন্ন নম্বর থেকে তার কাছে কল আসতেই থাকলো।
ওদিকে করিম সাহেবের সহধর্মিনী তখন ক্লাসে। তার কাছে করিম সাহেবের নম্বর থেকেই কল এলো। ফোনের ওপ্রান্তের ভারী কণ্ঠস্বর তাকে জানালো যে, সে টরন্টো পুলিশ থেকে কথা বলছে এবং তার (মিসেস করিমের) স্বামীকে রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করার জন্যে অ্যারেস্ট করা হয়েছে। তিনি এই মুহূর্তে তার হাজব্যাণ্ডের সাথে কথা বলতে পারবেননা। কিন্তু তার স্বামীকে জামিনে মুক্ত করতে হলে মিসেস করিমকে অনতিবিলম্বে থানায় যেতে হবে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই মিসেস করিম নার্ভাস হয়ে গেলেন।
ফোনের সেই পুলিশ অফিসার দাবীদার ব্যক্তি যখন মিসেস করিমের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আরও তথ্য জিজ্ঞেস করা শুরু করলো, ঠিক সেই মুহূর্তে করিম সাহেবের নম্বর থেকে আর একটি কল এলো। এটি করিম সাহেব নিজেই।
এরপর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথোপকথনে এতটুকু পরিষ্কার হলো যে, করিম সাহেবের নম্বর থেকে মিসেস করিমকে ফোন করাটা এখনকার টেকনলজীর যুগে নতুন না এবং যারা ফোন করে এসব করছে, তারা সত্যি বলছেনা, তাদের উদ্দেশ্য খারাপ এবং তারা ফ্রড।
হ্যাঁ বন্ধুরা। কানাডায় এটি নতুন ঘটনা নয়। হয়তো হঠাৎ একদিন একটি ফোন আসবে আপনার কাছে। বলবে যে, কানাডিয়ান রেভিনিউ এজেন্সি থেকে কল করেছে। আপনার অপরাধ হয়েছে এবং একটি নির্দিষ্ট অংকের ডলার ফাইন দিতে হবে। এরপর তারা আপনার কাছে আপনার ক্রেডিট কার্ড নম্বরটি জানাতে চাইবে। অথবা ফোন করে বলবে, আপনি এক মিলিয়ন ডলার জিতে গিয়েছেন। সেই টাকা পেতে হলে আপনাকে আপনার ক্রেডিট ইনফরমেশন দিতে হবে ইত্যাদি।
খুব পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, কানাডা'র পুলিশ কিংবা রেভিনিউ এজেন্সি কোনদিনও ফোন করে এ ধরণের কথা বলবেনা। তারা আপনাকে ইমেইল অথবা চিঠি পাঠাবে। সুতরাং আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাবলি অথবা ব্যাংকের তথ্যসমূহ বিশেষত: ক্রেডিট ইনফরমেশন উপরিউক্ত ঘটনার কারও সাথে শেয়ার করার প্রশ্নই ওঠেনা। শেয়ার করেছেন তো আপনার ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করে ফ্রড মানুষগুলো আপনার বিশাল অংকের টাকা তুলে নিবে এবং পরবর্তীতে আপনাকে হেনস্থা হতে হবে।
ফ্রডালিটি এবং ফ্রড মানুষগুলোর চেহারা এবং টেকনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিত্য নতুনভাবে আপনার সামনে এসে দাঁড়াতে পারে। তখন পাজলড হয়ে যাবেননা। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে এদের সাথে কথা না বাড়িয়ে, কোন প্রকার তথ্য এদেরকে না দিয়ে ফোন রেখে দিন। আর বিশেষ প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য নিন।
স্মার্ট মানুষজনকে ডিল করতে হলে আপনাকেও স্মার্ট হতে হবে, তাইনা?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৮ ভোর ৬:৩২