পর্ব ১২
কানাডা’র নতুন বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্টদের জন্যে ধারাবাহিকভাবে লেখা ১-১২ সিরিজটির আজকের পর্বে আমরা কানাডায় প্রফেশনাল/ ভলান্টিয়ার জব ইন্টারভিউ -এর রিয়েলটাইম প্রশ্ন এবং তার সম্ভাব্য উত্তরগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। আজকের আলোচ্য বিষয়গুলো বইয়ের লিখিত ভাষার কথা নয় বরং কানাডাতে আমার নিজের চাকুরীর ইন্টারভিউ-এর অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, আজকের প্রশ্নগুলোর উত্তরসমূহ টরন্টোর রায়েরসন ইউনিভার্সিটির ক্যারিয়ার স্পেশালিস্টদের অভিজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে লিখিত।
গত পর্বে আলোচনা করেছিলাম যে, জব ইন্টারভিউয়ের প্রশ্নগুলো প্রধানত: দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
১. বিহেভিয়রাল প্রশ্ন
২. টেকনিক্যাল প্রশ্ন
যেহেতু টেকনিক্যাল প্রশ্ন এবং উত্তরগুলো বিভিন্ন পেশাজীবি ব্যাক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন, সুতরাং এই বিষয়টি এই পর্বে আলোচনা করা হলোনা। আর আজকের আলোচ্য বিহেভিয়রাল প্রশ্নগুলো পাঠক আপনি কমবেশি সব ধরনের জব ইন্টারভিউতেই পাবেন। এই বিহেভিয়রাল প্রশ্নগুলোর উত্তরে আপনি কোন কোন বিষয়ে ফোকাস করবেন, সেগুলো আমি কিছু প্রশ্নে সংক্ষেপে আলোচনা করবো। আর পাঠক, আপনার নির্দিষ্ট কোন প্রশ্ন থাকলে সেটি অবশ্যই করুন। আমি চেষ্টা করবো সেটির যথাযথ উত্তর প্রদান করতে।
তিনটি কথা শুরুতেই মনে রাখতে হবে:
১. ইন্টারভিউ বোর্ডে কোন অবস্থাতেই মিথ্যা বলা যাবেনা।
২. প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের উত্তরে আপনি কখনোই একই কথার পুনরাবৃত্তি করবেননা।
৩. যেকোন বিহেভিয়রাল প্রশ্নের উত্তরে আপনি চেষ্টা করবেন আপনার ব্যাক্তিগত জীবন থেকে নেয়া উদাহরণসহ প্রশ্নটির উত্তর দিতে।
প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের উদাহরণে নিচের চারটি বিষয় উল্লেখ করার চেষ্টা করুন:
(STAR)
১. Situation
২. Task
৩. Action
৪. Result/ Response
ক. কি ঘটনা ঘটেছিল?
খ. সেই ঘটনার দরুন আপনার প্রতিক্রিয়া কি ছিল?
গ. আপনি সেই ঘটনাটিকে কিভাবে হ্যাণ্ডেল করেছিলেন?
ঘ. আপনি সেই ঘটনাটি থেকে কি শিখেছেন?
ইন্টারভিউ বোর্ডের রিয়েলটাইম একটি উদাহরণ দিয়ে আর একটু ক্লিয়ার করা যাক:
ধরাযাক, প্রশ্নকর্তা আপনাকে একটি কনফ্লিক্ট প্রশ্ন করে বসলেন, ”ওয়েল, মি. কামাল, আপনার কলিগের সাথে যদি কর্মক্ষেত্রে আপনার মতের মিল না হয়, তাহলে কি করবেন?
এখানে, কি ঘটেছিল? = কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর সাথে মতের অমিল
সেই ঘটনার দরুন আপনার প্রতিক্রিয়া কি ছিল? = সেই ঘটনায় অবশ্যই আপনি এবং আপনার সহকর্মী দু’জনেরই মন খারাপ হয়েছিল
আপনি সেই ঘটনাটিকে কিভাবে হ্যাণ্ডেল করেছিলেন? = আপনি ঘটনাটিকে এমনভাবে হ্যাণ্ডেল করলেন যেন আপনার এবং আপনার সহকর্মীর মাঝে কোন ধরনের কনফ্লিক্ট তৈরি না হয় এবং বন্ধুসুলভ একটি সমাধান হয়
আপনি সেই ঘটনাটি থেকে কি শিখেছেন? = আপনি শিখেছেন কিভাবে পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের কনফ্লিক্ট তৈরি হলে তা হ্যাণ্ডেল করতে হয়
এবার প্রশ্নকর্তাকে আপনার উত্তরটি হওয়া উচিত নিম্নরূপ:
”এ ধরনের দ্বি-মত কর্মক্ষেত্রে হওয়াটা স্বাভাবিক। আমার ক্ষেত্রেও এরকমটি একবার ঘটেছিল। আমি সেবার ’সানশাইন’ প্রতিষ্ঠানে একজন সেলস পারসন ট্রেইনার হিসেবে কর্মরত ছিলাম। একবার আমাদের নতুন কর্মীদের জন্যে একটি ট্রেইনিং-এর আয়োজন করা হলো। প্রধান ট্রেইনার হিসেবে আমি ছিলাম এবং আমার সহকর্মী জনাব ফারুক-ও ছিলেন সাহায্যকারী হিসেবে। ট্রেইনিং শুরুর আগের একটি প্রস্তুতিমূলক মিটিং-এ আমি প্রস্তাবনা দিলাম যে, যারা ট্রেইনিং করবেন, তাদেরকে আমাদের অফিসরুমে ট্রেইনিং না করিয়ে বরং বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের একটি রুম ভাড়া করে ট্রেইনিং দিলে ভালো হয়। আমার বক্তব্যে জনাব ফারুক অসন্তুষ্ট হলেন এবং দ্বি-মত পোষণ করে জানালেন যে, তিনি আমাদের গুলশানের অফিসেই ট্রেইনিংটি করাতে চান। আমারও একটু মন খারাপ হলো এ বিষয়ে।
ট্রেইনিং-এর প্রস্তুতিমূলক মিটিংটি শেষ হতেই আমি নিজে জনাব ফারুকের সাথে দেখা করলাম। তাঁকে জানালাম যে, আজ আমরা একসাথে দুপুরে লাঞ্চ করবো। তিনি রাজী হলেন। লাঞ্চ-এর ফাঁকে আমি ট্রেইনিং ভেন্যু -এর প্রসঙ্গটি আবার তুললাম। তাঁর মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তাঁকে বোঝালাম যে, আমাদের গুলশান অফিসে ট্রেইনিংটা করলে মন্দ হয়না। কিন্তু অফিসের রুমটা ছোট যা ৫০ জন মানুষের জন্যে যথোপযুক্ত নয়। তার ওপরে ট্রেইনিং এর সম্ভাব্য দিনগুলোতে অফিসের অন্যান্য রুমগুলো আগে থেকেই বুকড। এমতাবস্থায় আমরা যদি কোন কনভেনশন সেন্টার-এর রুম ভাড়া করে ট্রেইনিংটা করাই, তাহলে সবার জন্যেই সেটা ভালো হয়।
জনাব ফারুক আমার কথা মন দিয়ে শুনলেন। তারপর তিনি বললেন যে, আমার কথাটি যৌক্তিক। তবে পান্থপথের বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে ট্রেইনিং না করিয়ে আমাদের অফিসের কাছের যে নতুন কনভেনশন সেন্টারটি হয়েছে, সেটিতে করালেও খারাপ হয়না। আমি ভেবে দেখলাম, জনাব ফারুকের কথাতেও যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। অবশেষে আমরা দ্বৈত সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে, আমাদের গুলশানের অফিসের পাশের নতুন কনভেনশন সেন্টারটি-ই হবে ট্রেনিং ভেন্যু।
এই ঘটনা থেকে আমি শিখলাম যে, কর্মক্ষেত্রে কিভাবে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে কোনপ্রকার কনফ্লিক্ট ছাড়াই যেকোন ইস্যুতে একমতে পৌঁছানো যায়।"
এবার তাহলে শুরু করা যাক জব ইন্টারভিউ বোর্ডের রিয়েলটাবইম বিহেভিয়রাল প্রশ্নগুলোর ব্যবচ্ছেদ।
শুরুতেই কিছু সাধারন প্রশ্নাবলি:
১. আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন/ আপনার রিজিউমিতে যা লিখেছেন, তার ব্যাপারে কিছু বলুন/ আমরা আপনার ব্যাপারে যা জানিনা, সেই সম্পর্কে কিছু বলুন।
অনেক প্রশ্ন কর্তা ব্যস্ততার কারণে হয়তো আপনার রিজিউমি ঠিকমতো পড়েননাই। সুতরাং, আপনার নিজের রিজিউমিতে যা লিখেছেন, সেই কথাগুলো সংক্ষেপে বলা শুরু করুন। নিজের সম্পর্কে কিছু বলার ব্যাপারে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
- আপনার নাম, বেড়ে ওঠা
- এডুকেশন
- পেশাগত অভিজ্ঞতার সংক্ষেপ
- কোন কোন বিষয়ে আপনার আগ্রহ (ইন্টারেস্ট) রয়েছে
নিজের ব্যাপারে বলার সময় যদি প্রশ্নকর্তা আপনাকে থামিয়ে দেন, তাহলে থামুন। অন্যথায় বলতে থাকুন।
২. নিজের স্ট্রেংথগুলো বলুন:
আমি জানি যে, নিজের গুণগান করতে বললে সেই লিস্ট শেষ হবেনা কখনো। কিন্তু জব ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনাকে খুব সুনির্দিষ্ট কিছু ভাষা/ শব্দ প্রয়োগ করতে হবে যেগুলো প্রশ্নকর্তা শুনতে চান। নিজেকে বড় জাহির করার থেকে আপনার কণ্ঠে বিনয় থাকাটা জরুরী। আপনার প্রশ্নের উত্তরে নিচের শব্দগুলোতে ফোকাস করুন, কাজে দেবে:
- Leadership
- Teamwork
- I love to travel
- Ready to work under pressure
- Ready to work independently and with a team
উপরিউক্ত শব্দগুলো পয়েন্ট আকারে বলুন। সুযোগ পেলে আপনার পূর্ববর্তী কাজের উদাহরণ টানুন। যেমন, পূর্ববর্তী কোন কাজে আপনি Leadership দেখিয়ে থাকলে সেই উদাহরণটি বর্ণনা করুন।
এই পর্বটি শেষ করার আগে কয়েকটি রিয়েলটাইম প্রশ্ন সবার জন্যে। আপনাদের উত্তরগুলো জানিয়ে দিন আমাদের সবাইকে।
১. আপনি আপনার সুপারভাইজারকে কিভাবে দেখতে চান?
২. কোন কাস্টমার আপনার সাথে খুব বাজে ব্যবহার করলে কি করবেন?
৩. আপনি কত বেতন চান?
পরবর্তী পর্বে বাকী প্রশ্নগুলো নিয়ে আসছি আপনাদের জন্যে। সবাইকে শুভেচ্ছা।
(ছবিসূত্র: ইন্টারনেট)
লক্ষ্য করুন:
*কানাডা'র ইমিগ্রেশন বিষয়ক আপনার সুনির্দিষ্ট কোন প্রশ্ন থাকলে [email protected] -এই ইমেইল-এ প্রশ্নগুলো পাঠিয়ে দিন।
*কানাডা'র নতুন অভিবাসী/ ইমিগ্র্যান্ট বিষয়ক কোন প্রশ্ন থাকলে [email protected] -এই ইমেইল-এপ্রশ্নগুলো পাঠিয়ে দিন।
*ফেসবুক পেজেও আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নটি করতে পারেন: Facebook page: Click This Link
Email: [email protected]
আপনি কি কানাডা’র নতুন অভিবাসী হয়ে আসছেন? তাহলে এই লেখাটি আপনারই জন্যে - পর্ব ১৪
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:১০