বন্য কুকুর, শেয়াল, হায়েনা শ্রেণীর প্রাণী নাকি যখন দলবদ্ধভাবে থাকা নিরীহ প্রাণীদের শিকার করার সাহস পায় না তখন ওরা ওদের চেয়ে নৃশংস প্রাণীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে নিরীহ প্রাণী শিকারে। তারপর ঐ শিকারের উচ্ছিষ্টাংশ খেয়ে জীবনধারণ করে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে জামায়াতে ইসলামী নামক রাজনৈতিক দলটির ভূমিকা সেই কুকুর, শেয়াল, হায়েনাদের মত যারা রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস্ বেশে একাত্তরে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে পথ দেখিয়ে এনেছিল মুক্তিবাহিনী ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে। একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনী পরাজিত হয় ঠিকই, কিন্তু কুচক্রী, মেরুদন্ডহীন রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস্রা আগাছা হিসেবে থেকে যায় এই মাটির বুকেই। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবর রহমান দেশের লাখো নারী-পুরুষ, মেধাবী সন্তানদের মৃত্যুর জন্য দায়ী রাজাকারদের তাৎক্ষণিক ও উপযুক্ত বিচারে ব্যর্থ হন। আর এই লুন্ঠন ও হত্যাকারীরা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামক রাজনৈতিক দল গঠন করে বাংলাদেশের মাটিতে পুর্নবাসিত হয়।
জামায়াতের শীর্ষ নেতারা আজ পর্যন্ত তাদের কৃতকর্মের জন্য বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত হয়নি, ক্ষমা প্রার্থনা তো দূরের কথা। এমনকি তারা স্বীকারই করে না যে একাত্তরে তারা কোন ভুল করেছে। বরং প্রায়ই তারা দম্ভোক্তি করে, যা করেছে ঠিকই করেছে, পাকিস্তান ভাঙ্গা উচিত হয়নি ইত্যাদি। জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে নাবালক কর্মী পর্যন্ত একাত্তর সম্পর্কে, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। এমন একটি গোষ্ঠী এখনও স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে বিচরণ করে একটাই কারণে- সেটা হল এরা এদেশের অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত কিন্তু ধর্মপ্রাণ বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে ইসলামের রক্ষকের ভূমিকায় অবর্তীণ হয়ে আছে। অথচ আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যদি যথেষ্ঠ শিক্ষিত হত, একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখত- তাহলে দেখতে পেত এই জামায়াতে ইসলামী আসলে কোন ইসলামী দল নয়, বরং মোনাফেকের দল। এদের একটাই উদ্দেশ্য- দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে একাত্তরে হারের প্রতিশোধ নেয়া।
জামায়াতে ইসলামী কেন মোনাফিকের দল তার অজস্র উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। তবে এদের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডগুলো খেয়াল করলে আমার মত অনেকেই ক্রোধে জ্বলে উঠবেন কিভাবে এরা ইসলামের নামে ধর্মবিরোধী কাজে লিপ্ত-
• যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির গত ৫ দিন ধরে হরতাল তান্ডব চালাচ্ছে। গাড়ী ভাঙছে, ককটেল ফাটাচ্ছে, রাস্তায় আগুন ধরাচ্ছে, পুলিশের উপর হামলা করছে। অন্য সময় হলে এটা রাজনৈতিক কর্মকান্ড হিসেবে তারা জায়েজ করতে পারত- কিন্তু আশ্চর্য হই তখনি যখন চিন্তা করি এটা রমযান মাস। এই মাসটি মুসলিমদের জন্য সম্পূর্ণই ইবাদত-বন্দিগীর মাস। আমাদের ইসলাম ধর্মে এই মাসে সমস্ত অনৈসলামিক কর্মকান্ড থেকে বিরত থেকে শুধু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ের চেষ্টা করার কথা। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী এমনই এক বর্বর, মোনাফেকের দল যারা এই মাসে তাদের কুলাঙ্গার নেতাদের বাঁচাতে সহিংসতার জন্ম দিয়ে অনেক তাজা প্রাণের মৃত্যুর উপলক্ষ তৈরি করেছে, সারা দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এদেশে লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষ আছেন যারা প্রতিদিনের রোজগারে সংসার চলে। লাখো রোজাদার আছেন যাদের প্রতিদিনের আয় থেকে সেহরী, ইফতার ও সংসারের অন্যান্য খরচ বহন করতে হয়। টানা ৪ দিন হরতালের কারণে বিশেষ করে শহরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো কিভাবে রোযা রাখছে সেটা ঐ মোনাফেকের দল কখনও চিন্তা করে দেখেছে?
• জামায়াত-শিবির নিজেরা আন্দোলন করে এই সরকারের অবস্থান বিন্দুমাত্র টলাতে না পেরে এখন নানা ভয়াবহ কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। শিশুদের ভিটামিন খাওয়ানো নিয়ে গুজব সৃষ্টি করছে, চাঁদে সাঈদীর মুখ দেখা গেছে বলে সহজ, সরল মানুষদের প্রতারিত করছে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের উপর আক্রমণের জন্য মসজিদের মাইকে মিথ্যা কথা বলে সাধারণ জনগণকে উত্তেজিত করে তুলছে। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হল যে হেফাজতে ইসলাম অর্থাৎ কওমীদের সাথে জামায়াতের দা-কুমড়া সম্পর্ক ছিল সেই রাজনীতিকে অনভিজ্ঞ কওমী আলেম ও ছাত্রদের ভুল বুঝিয়ে রাজনীতির মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। যার ফলে অনেক তরুণ প্রাণ অকালে ঝরে গেছে, সারাদেশে একটা ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংস কর্মকান্ড করেছে জামায়াত-শিবির ও আওয়ামীলীগ কর্মীরা, অথচ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে নিরীহ কওমী আলেম ও ছাত্ররা। ৫ মে গভীর রাতে পুলিশী অভিযানে দুই থেকে আড়াই হাজার হেফাজতে ইসলামীর কর্মীর মৃত্যু উদ্ভট গুজব ছড়িয়ে মানুষকে যেমন ভয়াবহ আতঙ্কিত করেছে, তেমনি পরবতীর্তে সেটা প্রমাণ করতে না পেরে বিএনপির শীর্ষ নেতারাও জাতির কাছে অপদস্ত হয়েছেন।
• জামায়াত-শিবির তাদের শীর্ষ নেতাদের বাঁচাতে এমন কোন কাজ নেই যেটা করতে পারে না। শত শত মানুষ নিহত হওয়ার পরও যখন যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় আটকানো যাচ্ছে না, তখন জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করবে সেটা অবিশ্বাস করার কারণ নেই। যার ফলে সরকারের এক উপদেষ্টার সাথে জামায়াতের আইনজীবীর বৈঠকের খবর ইতিমধ্যেই মিডিয়ায় এসেছে। আগামী নির্বাচনের আগে জামায়াত আরও কত খেলা দেখাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। এমনকি বিএনপিকে ছাড়াই জামায়াত আওয়ামীলীগের সাথে আতাঁতের নির্বাচনে অংশ নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
• এদেশে জামায়াত-শিবির বিষবৃক্ষ। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের নামে প্রকাশ্য দুর্নীতির অভিযোগ নেই ঠিকই, কিন্তু ব্যাংক, শিল্প-প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে ইসলামের দোহাই দিয়ে অর্জিত অর্থে জামায়াত নেতারা প্রায় প্রত্যেকেই বিলাসী জীবন যাপন করেন। এদের সন্তানরা পড়াশোন করে ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন উন্নত দেশে। দেশের এই সহিংসতা, হানাহানি কিছুই তাদের স্পর্শ করে না। অথচ ডেসটিনির মত এদেশের হাজারো তরুণ, যুবকদের সামান্য আর্থিক সুবিধা দিয়ে শিবিরের ছত্রছায়ায় জামায়াত নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পূরণ করছেন। শিবিরের ব্রেইনওয়াশড তরুণরা বুঝতেও পারে না- কিভাবে তাদের রক্তের বিনিময়ে জামায়াত নেতারা আখের গুছিয়ে নিচ্ছে।
পবিত্র রমযান মাসে গত কয়েকদিনে যত রক্তপাত, প্রাণহানি ঘটেছে তার মূল কারণ হল জামায়াত-শিবিরের হরতাল। বিএনপি যদি জামায়াতের ঘৃণ্য কৌশলকে অবলম্বন করে সামনে এগোতে চায়, তবে সেটা হবে চরম ভুল। মানুষ অচিরেই জামায়াতে থুথু দিবে, সেই থুথু থেকে বিএনপিও বাঁচতে পারবে না, মাঝখান থেকে লাভবান হবে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৭