somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাঁওতালী ভাষার কিছু বৈশিষ্ট্য

১২ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতে প্রচলিত ভাষাগুলি চারটি ভাষাবংশে ছড়ানো। সেগুলি হল - ১) অষ্ট্রিক ২) দ্রাবিড় ৩) ভোট চিনীয় বা সিনো টিবেটান ৪) ইন্দো ইউরোপীয়ান । এই ভাষাবংশগুলির মোট ভাষার সংখ্যা অবশ্য অসংখ্য, যার অধিকাংশই ভারতে প্রচলিত নয়।
অস্ট্রিক – অস্ট্রিক ভাষাবংশের ভাষাগুলি পৃথিবীর একটি বিস্তৃর্ণ অঞ্চল জুড়ে প্রচলিত। এর বেশ কয়েকটি শাখা আছে। ভারতের আদিম অধিবাসী, যাদের আমরা আদিবাসী বলে জানি, তারা এরকম এক শাখার কয়েকটি ভাষায় কথা বলে। সাঁওতাল, মুণ্ডারী, হো, শবরদের ভাষা অস্ট্রিক ভাষাবংশের অন্তর্ভূক্ত।
অস্ট্রিক ভাষাবংশের প্রধান দুই শাখা হল অস্ট্রোনেশীয় (বা মালয়ী-পলিনেশীয়) এবং অস্ট্রো এশিয়াটিক। বর্তমান ভাষাবিদদের অনেকে অবশ্য এই দুই শাখাকে আলাদা ভাষাবংশ বলেই গণ্য করতে চান। অস্ট্রোনেশীয় (বা মালয়ী লিনেশীয়) শাখাটির ভাষাগুলির মধ্যে আছে বহির্ভারতের কিছু ভাষা – ইন্দোনেশীয়, মেলানেশীয়, মাইক্রোনেশীয়, পলিনেশীয়। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় প্রচলিত মালয় ভাষা, জাভার ভাষা, তাইওয়ানের ফরমোসান ভাষাগুলি এর উদাহরণ। মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলি জুড়ে এই শাখার ভাষাগুলি ছড়িয়ে আছে। অস্ট্রো এশিয়াটিক শাখার মধ্যে আছে তিনটি উপশাখা। ১) মুণ্ডা/কোল শাখা ২) মোন খমের শাখা ৩) আন্নামী মু অঙ শাখা।
আন্নামী মু অঙ শাখার ভাষা ভারতে পাওয়া যায় না। মোন খমের শাখার ভাষাগুলির মধ্যে ভারতে মূলত দুটি ভাষা প্রচলিত - ১) খাসি -  আসাম মেঘালয় অঞ্চলে প্রচলিত। খাসির একটি উপভাষা হল জৈন্তিয়া। এই খাসি ভাষা আগে বাংলা হরফে লেখা হত, এখন রোমান হরফে লেখা হয়। ২) নিকোবরী – আন্দামান নিকোবর এর নিকোবরী দ্বীপপুঞ্জে প্রচলিত।
মুণ্ডা বা কোল শাখার ভাষাগুলির মধ্যে আছে – ১) সাঁওতালী ২) মুণ্ডারী ৩) হো ৪) শবর ৫) ভূমিজ ৬) কোরা ৭) কোরকু ৮) আসুরী ৯) খাড়িয়া ১০) গদবা। মূলত ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে, ঝাড়খণ্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রে এদের বাস। মনে রাখার বিষয় হল আরেকটি পরিচিত আদিবাসী সম্প্রদায় ওঁরাওদের বাস এই অঞ্চলে হলেও তাদের ভাষা অস্ট্রিক গোষ্ঠীর নয়, ভোট চিনীয় গোষ্ঠীর।
মোন খমের শাখার ভাষা আর মুণ্ডারী শাখার ভাষার আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক আছে। গীয়ার্সন তাঁর লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অব ইন্ডিয়া লেখার সময় এই বিতর্ক সামনে এনেছিলেন খাসী ভাষার আলোচনার সময়। খাসী ভাষা একটি মোন খমের শাখার ভাষা। এটি মূলত মেঘালয়ের শিলং ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এবং বাংলাদেশের সিলেট ও কাছাড় অঞ্চলে প্রচলিত। এর সাথে মুণ্ডা ভাষাগুলির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য তিনি লক্ষ্য করেছিলেন। যেমন মোন খমের ভাষাগুলি মূলত মনোসিলেবিক বা এক দল বিশিষ্ট। অন্যদিকে মুণ্ডারী ভাষাগুলি পলিসিলেবিক বা বহুদল বিশিষ্ট। আবার মুণ্ডা ভাষাগুলির বাক্যগঠনে অন্বয় বা সিনট্যাক্স হল কর্তা - কর্ম – ক্রিয়া (বাংলার মতো, আমি বাড়ি যাই)। অন্যদিকে মোন খামের ভাষাগুলির বাক্যগঠনে অন্বয় বা সিনট্যাক্স হল কর্তা - ক্রিয়া - কর্ম (ইংরাজীর মতো, আই গো হোম)।
মুণ্ডারী ভাষাগুলির মধ্যে সাঁওতালি ভাষাতেই সবথেকে বেশি মানুষ কথা বলেন। প্রায় ষাট লক্ষ সাঁওতাল ভাষাভাষী ভারতে এবং বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছেন। বাংলা ভাষাভাষীদের পাশে থাকায় এই দুই ভাষা পরস্পরকে অনেকটাই প্রভাবিত করেছে। অনেকে মনে করেছেন বাংলার দলবৃত্ত ছন্দ সাঁওতাল ইত্যাদি মূণ্ডা গোত্রের ভাষার প্রভাবেই এসেছে। এ নিয়ে আগ্রহীরা সুহৃদকুমার ভৌমিকের বাঙলা ভাষার গঠন বলে বইটি পড়তে পারেন। এর প্রথম প্রবন্ধ 'বাঙলা ভাষা গঠনে প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ভূমিকা'তে এই নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা রয়েছে। আর এই প্রসঙ্গে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য সুকুমার সেন এর নির্দেশনায় সম্পন্ন স্বর্গত ড। ব্যোমকেশ চক্রবর্তীর 'আ কম্পারেটিভ স্টাডি অব সান্তালি অ্যান্ড বেঙ্গলি' নামক গবেষণাটি।
এখন দেখা যাক সাঁওতালী ভাষার মৌলিক কিছু বৈশিষ্ট্য।

সাঁওতালি ভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য

১) কোনও শব্দ আলাদা করে কোনও পদ (বিশেষ্য/বিশেষণ/ক্রিয়া)কে নির্দেশ করে না। ব্যবহার অনুযায়ী যে কোনও পদই হতে পারে। সমস্ত পদই ক্রিয়াপদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
২) লিঙ্গভেদ সাধারণভাবে নেই। অর্থ অনুসারে কখনো কখনো লিঙ্গ বোঝা হয়। যেমনে হেড়েল (পুং), মায়েজিউ (স্ত্রী)
৩) এক, দ্বি, বহু - তিনরকম বচন আছে। কিন প্রয়োগে দ্বি এবং কো প্রয়োগে বহুবচন করা হয়। যেমন - সদম (একটি বাড়ি)। সদমকিন (দুটি বাড়ি)। সদমকো (অনেক বাড়ি)।
৪) বিশেষণ বিশেষ্যের আগে বসে। যেমন - বোগে হর (ভালো মানুষ)। যে কোনও স্বরান্ত শব্দের শেষ ন যোগ করে তাকে বিশেষণে পরিণত করা যায়। যেমন - কাদাওয়া(ন) হর (কাদাওয়া মোষ, কাদাওয়ান হর - মোষ আছে এমন মানুষ।
৫) তুলনা বোঝাতে খোম ব্যবহৃত হয়। যেমন – আম খোম মারান (আমি তোমার চেয়ে বড়)।
৬) এক থেকে দশ সংখ্যা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় – মিট (১), বার (২), পে (৩), পোন (৪), মোরে (৫), তুরুই (৬), ইয়াই (৭), ইরাল (৮), আরে (৯), গেল (দশ)। এগারো বোঝাতে গেল মিট অর্থাৎ দশ এক, কুড়ি বোঝাতে বার গেল অর্থাৎ দুই দশ ব্যবহৃত হয়।
৭) সান্তালী ক্রিয়াপদ এ শব্দমূল ও ধাতুমূল এর সঙ্গে প্রত্যয়সংযোগ প্রক্রিয়া দেখা যায়। ক্রিয়ার কাল ও ভাব অনুযায়ী প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন আপু(ন) থেন(ইন) [থেনিন] চালাকা (আমি বাবার কাছে যাব)।
৮) না বাচক শব্দ বোঝাতে 'বা' উপসর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন - বাকো আতাংলেদিয়া (তারা তাকে নেয় নি।)

বাংলার ওপর সাঁওতালির প্রভাব

বিভিন্ন জটিল বিমিশ্রনের মধ্য দিয়ে আমরা যখন অষ্ট্রিক থেকে ক্রমে ক্রমে প্রোটো বাঙ্গালি বা আদি বাঙ্গালিতে রুপান্তরিত হলাম, ততদিনে আমাদের অষ্ট্রিক ভাষায় ভোট-বর্মী, দ্রাবির ও সংস্কৃত-প্রাকৃত বহু শব্দ যুক্ত হয়ে গেছে। পরবর্তীতে যতই আমরা বাঙ্গালি হয়েছি, আমাদের বাংলা ভাষায় অষ্ট্রিক সাঁওতালি শব্দাবলী ততই সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। তার পরও বহু শব্দ এখনও আমরা বাংলায় ব্যবহার করি, যা মূলগত ভাবে সাঁওতালি শব্দ। পরিহাসের বিষয় হলো সাঁওতাল শব্দটি নিজেই সংস্কৃতজাত, সাঁওতালদের নিজেদের আখ্যা হলো খেরওয়াল বা খেরওয়ার। বৃহত্তর মুন্ডা জাতিগোষ্ঠীই আসলে খেরওয়ার বা খেরওয়াল জাতি, আর্যদের ভারতে আগমনের আগে তারা মধ্য, পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ন অঞ্চল জুরে বসবাস করতো। জেনেটিক নৃ-তত্বের বিচারে বর্তমান বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর ভিত্তিমূল হলো খেরওয়াল জাতিগোষ্ঠী।
বাংলা ভাষার কিছু রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য (ক্রিয়াপদের লিঙ্গহীনতা, শব্দদ্বৈত ইত্যাদি) মুণ্ডা ভাষাজাত বলে ভাষাবিজ্ঞানীগণ মনে করেন। রূপতাত্ত্বিক দিক থেকে ‘মুণ্ডা’ ভাষার কিছু বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করেছেন পরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য- ‘আকৃতিগত দিক থেকে মুণ্ডা ভাষা প্রত্যয় যুক্ত হয়ে থাকে, যেমন আ, ই, উ, টা, তে ইত্যাদি। করা, খাওয়া, যাওয়া, শোওয়া এবং চলতে, বলতে, খেলতে, ঘরেতে, নদীতে, ছেলেটা, মেয়েটা, গরুটা, ইত্যাদি প্রত্যয়যুক্ত শব্দগুলো সাঁওতালি রীতি প্রভাবিত। শব্দে গুরুত্ব আরোপের জন্য শব্দদ্বিত্বের প্রয়োগ বহুল প্রচলিত। বাংলা ভাষায় অনেক সাঁওতালি শব্দ অবিকৃত ভাবে বিদ্যমান, বেশ কিছু শব্দ আংশিক পরিবর্তিত হয়েছে। আবার কিছু দ্বৈত শব্দ কিংবা ইডিয়ম সংস্কৃতজাত শব্দের সাথে মিশ্র আকারে ব্যবহৃত হয়।

সাঁওতালি বাংলা সমশব্দ

অধ্যাপক ক্ষুদিরাম দাস "সাঁওতালি-বাংলা সমশব্দ অভিধান" নামে একটি গ্রন্থ লিখেছেন। এ বইটিতে কয়েক হাজার শব্দ ঠাঁই পেয়েছে, যা সাঁওতালি এবং বাংলা উভয় ভাষাতেই ব্যবহৃত হয়। এর অধিকাংশই মূলগত ভাবে সাঁওতালি, কিছু কিছু শব্দ বাংলা, হিন্দি, প্রাকৃত বা সংস্কৃত থেকে সাঁওতালি ভাষায় গৃহীত হয়েছে।
অজ্ = নিরেট, পুরোপুরি, পূর্নমাত্রায়, সব দিক থেকে। সুতরাং "অজ্ পাড়াগাঁ" এর অর্থ হলো "নিরেট গ্রাম"। পাড়া শব্দটিও সাঁওতালি, এর অর্থ গ্রামের খন্ডিত অংশ। গাঁ শব্দটি অবশ্য সংস্কৃত জাত। মজার ব্যাপার হল অজ পাড়াগাঁ শব্দটির সাথে আগে সর্ব স্তরের বাঙ্গালীর পরিচয় ছিল না, ১৯৩০ সালে কাজী নজরুল ইসলাম সর্ব প্রথম তাঁর রচিত সাহিত্যে অজ পাড়াগাঁ শব্দটি ব্যবহার করেন, তারপরই এটি ধীরে ধীরে বাংলা ভাষায় ব্যপকতা লাভ করে। এর আগে এটি ছিল বর্ধমান, বাঁকুড়া অঞ্চলের একটি আঞ্চলিক বাংলা শব্দ।
স্থানের নামবাচক শব্দঃ শব্দের শেষে "ইল" যুক্ত করে স্থানের নাম যেমন টাঙ্গাইল, ঘাটাইল, পূবাইল, নড়াইল, এসব মুন্ডা রীতির। নামের শেষে কোল এবং কোলা যেমন শিয়ালকোল, শ্রীকোলা, পাড়কোলা এবং বাড়ী বা বাড়ীয়া যেমন ফুলবাড়ী, উলুবাড়িয়া মুন্ডা রীতি। নামের শেষে তা যেমন জামিরতা, কামতা, রুপতা এসবও মুন্ডা রীতি। শব্দের শেষে টোলা যুক্ত করে (যেমন- নয়াটোলা, করাতিটোলা) নামকরনও মূলগত ভাবে সাঁওতালি রীতি।
কৃষিজাত শব্দঃ আটা, আমড়া, আম (শব্দটির মূলগত সাঁওতালি শব্দ আমড়া, যা সংস্কৃতে পরিবর্তিত হয়ে আম্রাতক>আম্র(টক), পরবর্তীতে প্রাকৃত হয়ে বাংলায় আম)। কচু, কদলী, কম্ব্লা(কমলা), কান্দাল(কলাগাছের কান্ড), কলা, কদম, কুঁচ, কাণঠার(কাঁঠাল), খই, খেসারি, গাব, গুড়(গুড়ের জন্য প্রশিদ্ধ অঞ্চল হেতু গৌড়), ঘাঁস, চাওলে(চাউল), চুন, জাম্বুরা, ঝিঙা, ডাল, ডিম, ডালিম, ঢ্যাপ, বেগুন, তাল, তিল, তিসি, তাম্বুল, নারিকেল, পুদিনা, বুট, মটর, লেবু, রসুন, রুটি, লঙ্কা(মরিচ)।
প্রানীবাচক শব্দঃ আঁড়িয়া(এঁড়ে গরু), ইকুন(উকুন), ইচা(চিংড়ি), ইলসা(ইলিশ), কাতলা, কাছিম, কেন্না(কেন্নো), বাদুড়, ব্যাঙ, জঁক(জোঁক), ডাহুক, মশা, ইন্দুর, বক, ভেড়া, কটাস(খাটাশ), ট্যাংরা, খইলসা, গোচই, চিতল, জিওল(সিঙ মাছ), ডারকা(মাছ), পুঁটি, হলাহল(মূল অর্থ সাপ), ময়ুর, ঘুঘু, ময়না, মাছ, মকর, শুয়াপোকা।
সম্পর্কবাচক শব্দঃ খোকা, খুকি, বারুই(পানচাষী), মামা, মামি, মাসি, বেটা, বিটি(বড় লোকের বিটি লো)। কাকা-কাকি(সাঁওতালি শব্দ, তবে চাচা-চাচীর বদলে খালু-খালা অর্থে ব্যবহৃত হয়)।
উপকরন বিষয়ক শব্দঃ ইন্দারা(পাকা কুয়া), কল(যন্ত্র), কাঠা(পাত্রবিশেষ), কান্থা(কাঁথা, সাঁওতালি থেকে সংস্কৃত হয়ে বাংলায়), কানপাশা, কুঠরি(কক্ষ), খুন্তি, খালুই(মাছ রাখার পাত্র), গদি, গাড়ি, ঘুড়ি, ঘানি(তেলের ঘানি), চারা(ছোট গাছ), চাল(ঘড়ের ছাউনি), চাল(রীতি), চাস(চাষ), বাণ, লাঙ্গল, কম্বল, অঙ্গার, কাঠা(বেত বা বাঁশের পাত্র বিশেষ), করাত, দা, বটি, ডোল(বাঁশ নির্মিত শস্য রাখার বড় পাত্র), ডুলি(পাল্কি বিশেষ), মাকু, মাচা, মাদুলি, টিকলি, লোটা, বালি, শন, সাবল, হাল(নৌকার), হুড়কা।
শারীরিক অঙ্গ বিষয়ক শব্দঃ গোড়ালী(পায়ের), ঠ্যাঙ, ঠোঁট, মোচ(গোঁফ), ঘাড়, গলা, পেট, খোস(পাঁচরা)।
সংখ্যা বাচক শব্দঃ কাঠা(জমির মাপ), কুড়ি(বিশ), কাহন, গন্ডা, পোন, ছটাক(মাপের পরিমান), মন।
বিবিধ বিষয়ক শব্দঃ আড়া(জঙ্গল), আড়াআড়ি, আনাড়ি, আপনি, আরকি( সে আমার ভাই আরকি), আহা(সুখ, আনন্দ জ্ঞাপক শব্দ), ইনি(এই ব্যক্তি), উনি(ঐ ব্যক্তি), উমুক(অমুক ব্যক্তি), ইয়া( ইয়ে মানে..), ইস(দুঃখবোধক শব্দ), উজাড়(গ্রাম উজাড়), উল্টা, উলট পালট, এ(এ গ্রামে আমার বাস, এ মা! এ কি?), এহ্, (এহ্ এটা কি করলে?), এ্যা(এ্যাই যে), ও(ওঃ, তুমি সেই লোক?), কচি, কনকন(কনকনে শীত), কাটাও(সময় কাটানো), কাঠি, কালি(দেবী বিশেষ), কাঁচা, কাঙ্গলা(কাঙ্গাল), কাবিল(দক্ষ), কামাই(উপার্জন), কালা(বধির), কাহিল(কাতর), কিত্ কিত্(খেলা বিশেষ), কিরিয়া(কিরা- শপথ), কিল(কিলায়ে কাঁঠাল পাকানো), কিস্তি(নৌকা), কুলি(শ্রমিক), কোঠিন(কঠিন), কুণ্ড(সীতাকুণ্ড, মাধবকুণ্ড), খণ্ড, খাড়ি(খাল), খাচা(খাঁচা), খাট(বেঁটে), খাটা(পরিশ্রম করা), খাড়া(লম্বালম্বি), খাতির(নিমিত্তার্থে), খাল, খামচি, খালি, খিজুর(খেজুর), খিল(অনুর্বর জমি- খিলক্ষেত), খিলি(খিলিপান), খুঁটি, খুচরা, খুড়া(কাকা), খেদ(খেদিয়ে দেয়া), খেপ(খেপ মারা), খ্যাপা, খোঁজ, খোদাই, খন্দক, গঙ্গা(গঙ্গা নদী), গছাও(গছিয়ে দেয়া), গড়(দুর্গ), গড়গড়া(হুক্কা), গবর(গোবর), গলা(কন্ঠস্বর), গোলা(গলা/কন্ঠা), গহনা(নৌকা অর্থে), গাদা(খড়ের গাদা), গিরা(গিঠ), গুতা, গুল(গোলাকৃতি), গোজা(কাঠে পেরেক, খোপায় ফুল), গোটা(সমগ্র), চট(জলদি), চমক, চরকা, চাখা(আস্বাদ নেয়া), চাঙ্গা, চাটা, চাপা(এক বস্তুর উপর অন্য বস্তু), চাহি(চাই), চেঙড়া/চেঙড়ি(বালক/বালিকা), চিমটা, চুটকি(ছোট), চুড়ি, চেঁড়ে(চিড়িয়া), চেলা, চেহারা, চোঙগা, চোপা, ছলক, ছাতি(বুকের), ছাকা(চালুনি দ্বারা), ছাপ, ছাল, ছালা, ছুকরি(সাঁওতালি অর্থ সাজুগুজু করা তরুণী, এ শব্দটি বাংলায় গৃহীত হওয়ার পর বাংলায় এর পুরুষবাচক ছোকরা শব্দের উৎপত্তি হয়েছে, যা সাঁওতালি ভাষায় নেই), জট(চুলের), জড়িবুটি, জমা(জমে দই), জাঃ(এই যাঃ ভুলে গেছি), জিরান(বিশ্রাম), জুড়ি(জুটি), জোট, জোত(জমি), ঝড়না, ঝাঁক, ঝাঁকা, ঝাঁটা, ঝাড়, ঝাঁপ, ঝানু, ঝাপসা, ঝাল, ঝিল, ঝুটি, ঝুড়ি, ঝগড়া, টলা(নড়বড়), টিকলি, টিপ, টুকরা, টুকু(এইটুকু, এতটুকু), টুপি(মাথার আবরন অর্থে), ঠ্যাটা, ঠক(ঠগ), ঠোঁট, ঠাহর, ঠাকুর, ঠাট্টা, ঠিক, ঠেকা, ঠেলা, ডাল(গাছের), ডাক(আহবান), ডাকু, ডাঙ্গা, ডোঙ্গা, ডালা, ঢল, ঢাক, ঢাকনা, ঢাল, ঢালু, ঢিমা, তাড়ি, তোড়া(টাকার, ফুলের), থলি, থুতনি, দৌড়, দাই, দাদা(বড় ভাই), দান(খেলার), দেদার(অজস্র), ধমক, নাড়ী, নাম(অবতরন), নিঝুম, নিরালা, নুনু(শিস্ন), পগার, পাগল, পাঁঠা, পাল্কি, পাল(গরুর পাল), পেট, পঁচা, ফালতু, ফুঁ(ফুঁ দেওয়া), বাবু, বালি, বিঘা, ভাণ্ড, ভিটা, ভিড়, ভোটকা/ভুটকি(বেঁটে মোটা), ভুঁড়ি, ভুল, মুদি, মেটা(মিটে যাওয়া), মেলা(অনেক), ময়লা, মোচড়, মোট(সব), মোট(কুলি), মোটা, রগড়, নড়া, লাগা(পিছে লাগা, কলহ করা), লুচ্চা, সড়ক, সারা, সিধা, সিঁদ, সুবিধা, সে(সে তো বোঝাই যাচ্ছে, সে আমি বুঝেছি),
শব্দদ্বৈতঃ খুটখাট, খাটাখাটি, খোলাখুলি, গম্ গম্, গালগল্প(গাল শব্দটি সাঁওতালি, এর অর্থ গল্প), গিজগিজ, ঘ্যানঘ্যান, চকমক, চটপট, চমচম(সাঁওতালি অর্থ দ্রুতগতিতে, এই নামের মিষ্টান্নের নামকরনের কারন হলো তা দ্রুতগতিতে খাওয়ার আগহ জন্মে), চাপচুপ(ঈষৎ পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় চুপচাপ), চিপাচিপি, চুরমার, ছপছপ, ছিছি, জবজব, জানে তানে(যেন তেন), ঝনঝন, ঝমঝম, ঝরঝর, ঝলমল, ঝিকিমিকি, ঝুমুর ঝুমুর, টলমল, টুকরা টাকরা, টানাটানি, টিপটিপ, ঠকঠক, ঠনঠন, ঠাস ঠাস, ঠিকঠাক, ডগমগ, ডলাই মলাই, ডামাডোল, তড়িঘুড়ি, তরি তরকারি, থরথর, ধকধক, ধরফর, ধমকাধমকি, মোটামুটি, রগড়া রগড়ি, রঙ বেরঙ, সুরসুর।
উল্লিখিত সকল শব্দই প্রমিত বাংলায় ব্যবহৃত সাঁওতালি শব্দ। অধ্যাপক ক্ষুদিরাম দাসের অভিমত অনুযায়ী বাংলা ভাষায় এখনও যে সকল সাঁওতালি শব্দরাজি ব্যবহৃত হয়, তার সংখ্যা কম করে হলেও দশ-বার হাজার, তবে তার অধিকাংশই ব্যবহৃত হয় আঞ্চলিক বাংলায়। আমাদের অগ্রজ শব্দসৈনিকেরা বাংলা সাহিত্যে সংস্কৃতজাত শব্দসমূহকে অতি মাত্রায় অগ্রাধিকার দিতে যেয়ে আঞ্চলিক বাংলার শব্দসমূহকে অকাতরে বিসর্জন দিয়েছেন, ফলে এ ভাষার মূলগত অনেক শব্দই হারিয়ে গেছে চিরতরে। এখনও যে গুলো টিকে আছে বৃহত্তর বাংলার বিভিন্ন প্রান্তরে, সে সবও ক্রমে ক্রমে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:২৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানব সভ্যতা চিরতরে ধ্বংস হবে কি করে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৬



সে এক বড় অদ্ভুত বিষয়।
চিন্তা করে দেখুন এত দিনের চেনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল বিশাল ইমারত ভেঙ্গে যাবে, গুড়িয়ে যাবে। মানুষ গুহা থেকে বেরিয়ে আজকের আধুনিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×