somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট : অভিমুখ সমাজতন্ত্র ?

০১ লা জুলাই, ২০১২ সকাল ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

• মার্কস পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যেই একটা অন্তর্নিহিত সঙ্কটের দিক চিহ্নিত করেছিলেন – অতি উৎপাদনের সঙ্কট।
• এই সঙ্কট থেকে পুঁজিবাদ নানা প্রক্রিয়ায় পরিত্রাণ পেতে চেয়েছে –কখনো যুদ্ধ, কখনো নতুন নতুন বাজার দখল, প্রযুক্তির বিকাশ এসব এর মধ্যে রয়েছে।
• উৎপাদন নির্ভর অর্থনীতি ক্রমশ সরে গেছে অন্যদিকে। একে বলা হয় ফায়ার অ্যান্ড আইস ইকনমি। ফিনান্স, ইন্সুরেন্স, রিয়েল এস্টেট এবং ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন, এন্টারটেনমেন্ট –এগুলিই অর্থনীতির বড় ভিত্তি হয়ে উঠেছে। অর্থনীতিতে ফাটকা ব্যবস্থা বড় হয়ে উঠেছে, শেয়ার ও অন্যান্য ঋণপত্র, ডেরিভেটিভ [অর্থাৎ ঋণপত্রের নানা মিশ্রিত প্যাকেজ, যার নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই, যা অন্য কিছু থেকে ডিরাইভ করা হয়, অর্থাৎ যা অন্য কিছু থেকে রসদ সংগ্রহ করে] – ইত্যাদি গুরূত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
• সাম্প্রতিককালে প্রথমে আমেরিকায় ও পরে ইউরোপে যে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে তাতে বড় ভূমিকা থেকেছে একটা ফাটকা বুদবুদের বিস্ফোরণের, যা হাউজিং বাবল বিস্ফোরণ নামে খ্যাত। সরকারগুলো ঘড়বাড়ির বাজারকে করছাড় ইত্যাদি দিয়ে ফুলিয়ে তুলেছে, ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা আছে কিনা তা না দেখেই ঋণ দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকি বেড়েছে, বেড়ে যাওয়া ঝুঁকিকে মিলিয়ে তারা ডেরিভেটিভে পরিণত করেছে। ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা সীমার বাইরে যাওয়ার পর যাবতীয় ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ একসাথে অনাদায়ী হয়ে পড়েছে, ব্যাঙ্কগুলোর পতনের সাথে সাথে সামগ্রিক অর্থনীতি সঙ্কটে পড়েছে।
• ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারী ঋণ অত্যন্ত বেড়ে যাওয়াটাকেই সাম্প্রতিক ইউরো জোন ক্রাইসিস বলা হচ্ছে। জিডিপির তুলনায় এটা এত বেড়ে গেছে যে তা অপরিশোধ্য জায়গায় চলে গেছে। জিডিপির তুলনায় গ্রীসের ঋণ ১৪০ শতাংশ, আইসল্যাণ্ডে ১২৩ শতাংশ, ইতালিতে ১১৯ শতাংশ, আয়ারল্যান্ডে ৯৫ শতাংশ, পোর্তুগালে ৯৩ শতাংশ, জার্মানি ও ফ্রান্সে ৮৩ শতাংশ করে, স্পেনে ৬০ শতাংশ।
• এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের অর্থনীতি এই বিশ্ব ব্যবস্থায় অঙ্গাঙ্গী যুক্ত হওয়ায় এক দেশের সঙ্কট অন্য দেশে সহজে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন -২০১১ তে ফরাসী ব্যাঙ্ক থেকে ইতালীয় গ্রাহকরা ৩৬৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিলে ও তারপর সেই ঋণ শোধ দিতে না পারলে ফরাসী অর্থনীতি সরাসরি সঙ্কটগ্রস্থ হয়।
• বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ঝুঁকি নিয়ে যে সঙ্কট ডেকে এনেছে তা থেকে মুক্তি দিতে সরকার বেল আউট প্যাকেজ ঘোষণা করে। বিপুল বেল আউট প্যাকেজের ফলে বাজেট ঘাটতি দেখা যায়। ২০০৭ এ ই ইউ দেশগুলির যে গড় বাজেট ঘাটতি ছিল ০.৬ শতাংশ, তা আর্থিক সঙ্কটের পর দাঁড়ায় ৭ শতাংশ তে। গড় সরকারী ঋণ জিডিপির ৬৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৪ শতাংশ হয়।
• আর্থিক সঙ্কটের প্রেক্ষিতে ইউরোপের শাসক দলগুলি ব্যয় সঙ্কোচের নীতি নেয়। এর দুটি দিক – ১) মানুষের ওপর সরকারের বেশি বেশি কর চাপানো, ২) বিভিন্ন সরকারী ব্যয়বরাদ্দ কমানো, ভরতুকি কমানো বা বন্ধ করা।
• এর ভিত্তিতে ব্যাপক সামাজিক প্রতিক্রিয়া হয়, ব্যয়বরাদ্দ হ্রাসের কারণে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিভিন্ন নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ে। ফ্রান্সে ফাঁসোয়া ওলাঁদ ক্ষমতায় আসেন ধনীদের ওপর ব্যাপক কর বসানো, সেই টাকায় ৬০,০০০ শিক্ষক নিয়োগ করা, অল্প আয়ের মানুষদের জন্য বিদ্যুতের ব্যয়ে ভরতুকি দেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে। যে জার্মানী ও তার প্রেসিডেন্ট মার্কেল ব্যয়সঙ্কোচের প্রবক্তা সেখানেও দুটি প্রদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনে ব্য্যসঙ্কোচের বিরোধিতার ভিত্তিতে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং গ্রীন পার্টি বিজয়ী হয়েছে। গ্রীসের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর পরাজিত হলেও সিরিজা এবং বামেদের বিপুল সমর্থনভিত্তি লাভ সেখানে একটা বড় ঘটনা। ই ইউ থেকে বেরিয়ে গেলে গ্রীস বেতন পেনসন দিতে পারবে না এই ভয়ঙ্কর আর্থিক অবস্থার কারণে, এই ভয় দেখিয়ে বুর্জোয়া মিডিয়া শাসক নিউ ডেমোক্রেসি ও প্যাসক জোটকে বিজয়ী হতে সাহায্য করে। কিন্তু বামপন্থীদের বিপুল সাফল্য সাম্প্রতিক ইতিহাসের প্রেক্ষিতে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। এই ঘটনাগুলির সঙ্গে আমেরিকার সাম্প্রতিক আর্থিক সঙ্কট পরবর্তী ঘটনার তফাৎ মূলত রাজনৈতিক। আমেরিকার আর্থিক সঙ্কট শাসক শ্রেণির মধ্যেকার ক্ষমতা বদলের মধ্যে দিয়েই পলিটিক্যাল বেল আউট করতে পেরেছে, বুশের জায়গায় এসেছেন ওবামা। কিন্তু ইউরোপে বামপন্থীদের জয় বা বিপুল সমর্থন শাসক শ্রেণির রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ দুর্বল হয়ে আসার ইঙ্গিৎ। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের শক্তি ছিল শাসকের নিজেদের মধ্যেই ক্ষমতা বদলের মধ্যে দিয়ে শাসন চালিয়ে যাবার নিশ্চিন্ত পদ্ধতি। সেই নিশ্চিন্ততা এবার কিছুটা হলেও সঙ্কটের মুখে। বামপন্থী, সমাজতান্ত্রিকরা অনেকদিন পর আবার বুর্জোয়াদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছে। আগামী দিনের পরিস্থিতি বদলের দিকে আমাদের সাগ্রহ অপেক্ষা থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১২ সকাল ১১:০৩
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×