M:1901
পানিতে ঝাপসা হয়ে যাওয়া চোখে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গোলাপটিকে এখন আর দেখতে পাচ্ছে না নাঈম।
আজ ভালবাসা দিবস। কিন্তু তাতে কি আসে যায় নাঈমের? তার কাছে সব দিবসই সমান। সকালে পাখির ডাকে ঘুম থেকে উঠে চটের বস্তাটা কাধে নিয়ে বের হয়ে যাওয়া আর সারাদিন প্লাস্টিক, কাগজ আর ফেলনা জিনিস কুড়িয়ে তা কোন গ্যারেজে জমা দিয়ে বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়াটাই তার মূল রুটিন। এখানে কোন দিবস স্থান পায় না। তবুও তার হাতে আজ গোলাপ ছিল একটা। সকাল সকাল বের হয়ে দেখে পাশের সুমন চাচারর দোকানে অনেক গোলাপ। দেখে ভাল লাগে নাঈমের। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে আজ ভালবাসা দিবস। মানুষ তার ভালবাসার মানুষকে ফুল দেয়।
নাঈম ভাবে তার ভালবাসার মানুষের কথা। আর কেই বা হবে? মা ছাড়া তার জীবনে কেও নেই। এক্সিডেন্ট এ রিক্সাওয়ালা বাবার মৃত্যু আর কলেরায় বোনের মৃত্যুর পর ১৪ বছরের নাঈমের জীবনে একমাত্র মা ই তার সব। মায়ের কথা মনে পড়তেই নাঈমের মনটা খারাপ হয়ে যায়। মা অসুস্থ।
সে অনেক কষ্ট করে মায়ের জন্যে ঔষধ কিনেছে। তাতেও অসুখ সারছে না।
ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসতে হয় তাকে। সারাদিন অনেক কাজ করতে হবে। সুমন চাচাকে বলে একটা গোলাপ তার জন্যে রেখে দিতে।
বিকেল,
আজ মহাজনকে বলে ২০টাকা বেশি নিয়েছে। আজ মা কে ফুল দিবে নাঈম। তার ভালবাসার মানুষকে। সুমন চাচার কাছ থেকে ফুল নিয়ে বাড়ির দিকে হাটতে থাকে নাঈম। বাড়ি বললে ভুল হবে। ঝুপড়ি বলা যায়। কাছাকাছি আসতে লোকের ভীড় দেখে থমকে দাঁড়ায় নাঈম। কি ব্যপারা, করিম চাচা, রহিমা খালাম্মা সব দেখি তার ঝুপড়ির ওঠানে। কেমন যেন একটা নিরব পরিবেশ। উঠানে একটা বিছানা পাতা। তাতে শুয়ে আছে নাঈমের মা। গায়ে একটা সাদা চাদর। ১৪বছরেই জীবন চিনে ফেলা নাঈমের চিনতে বাকী থাকে না মৃত্য।
বুকের যন্ত্রণা হাতের গোলাপে গিয়ে প্রকাশ পায়। পরক্ষণেই দুমড়ে যাওয়া গোলাপ লুটিয়ে পড়ে ঝুপড়ির স্যাঁতসেঁতে উঠানে। আর ঝাপসা হয়ে উঠে নাঈমের চোখ। সেই চোখ আর দুমড়ে যাওয়া গোলাপ দেখতে পারে না।
"পৃথিবীর সকল ভালবাসা হোক মায়ের জন্যে"
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:১৯