*******************************************************************

আমজাদ সাহেবের আশ্চর্য রকমের একটা পাওয়ার আছে। মাঝে মাঝে আমজাদ সাহেব নিজেকে সুপার হিউম্যানও মনে করেন তার এই পাওয়ারের জন্য। ঘুমের মধ্যে যে স্বপ্ন দেখেন তা তৎখনাত লিখে রাখেন। একদিকে চলে স্বপ্ন দেখা অন্যদিকে চলে ডায়রীতে লিখে রাখা। ঘুমের মধ্যে উঠে বসেন আমজাদ সাহেব। তারপর পাশের টেবিলে রাখা ডায়রীটা হাতে নেন। এরপর চোখ বন্ধ অবস্থায় হাতরিয়ে হাতরিয়ে কলমটা খুঁজে নেন। তারপর একদিকে চলে স্বপ্ন দেখা আর অন্য দিকে চলে সেই স্বপ্ন লিখে রাখা।
স্ত্রী রুনাকেও কখনোই এই ক্ষমতার কথা জানাননি তিনি। রুনা বিষয়টি জানতে পারল গতকাল রাতে। গতাকাল রাতে যা হয়েছে তার জন্য অবশ্য আমজাদ সাহেব রুনার কাছে বেশ লজ্জিত। অনেকবার দু:খিত বলেও কোন কুল কিনারা পাচ্ছেননা তিনি। গত রাতে আমজাদ সাহেব দেখছিলেন একটা হাত এগিয়ে আসছে তার দিকে। অন্ধকারের মধ্যে চকচকে ছুড়িটা ছাড়া শরীরের আর কোন অংশ দেখা যাচ্ছেনা। হাতের মধ্যে একটা বিদেশী ঘরি। আমজাদ সাহেব এই ঘরিটাই মনোযোগ দিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তার স্ত্রী বারবার তাকে ডাকছিল। আর এতেই আমজাদ সাহেবের স্বপ্ন দেখায় ব্যাঘাত ঘটে। রুনা প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারেনি। সে ঘুমের ঘোরে বিছানা হাতরিয়ে দেখে আমজাদ নেই। তারপর চোখ খুলে দেখে আমজাদ বিছানার এক কোণে বসে ডায়রীতে কি যেন লিখছে। আমজাদ সাহেবের চোখ বন্ধ, শরীর ঘামছে। রুনা কিছুটা আপসেট হয়ে যায়। তারপর আমজাদের ঘারে হাত দিয়ে ডাক দেয়। আমজাদ সাহেব প্রথম দুই বার হাত সরিয়ে দেয়। স্বপ্ন দেখায় ব্যাঘাত ঘটছে তার। তৃতীয় বারের বেলায় আমজাদ সাহেব চিৎকার করে রুনার গলা টিপে ধরে। রুনা অনেক্ষন ধরে চেষ্টা করে তারপর ছাড়া পায়।
আজ সকাল থেকেই রুনার মন খারাপ। বাপের বাড়ি চলে যাবার জন্য ভোর থেকেই কাপড় গোছানো শুরু করেছে রুনা। আমজাদ বার বার করে বলছে ভুল হয়ে গেছে, এটা ইচ্ছাকৃত করিনি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। রুনার কান্না থামছেইনা। ২ বছরের বিবাহিত জীবনে একটি বারের জন্য যে মানুষটি রুনাকে উচ্চস্বরে কথা বলেনি সেই মানুষটিই কিনা গতকাল রাতে তার গলা টিপে ধরেছিল। এটা ভাবতেই কান্না বেড়ে যায় রুনার। আমজাদ এগিয়ে আসে। একটা কিছু বোঝাতে যাবে এমন সময় তার চোখ যায় দড়জার দিকে। আশ্চর্য হয়ে যায়। দেখে দড়জার পাশে একটা ঘড়ি পরে আছে। ঘড়িটা ভালো করে দেখে, খুব চেনা মনে হয়। একা একা বির বির করতে থাকে। রুনা তাকায় আমজাদের দিকে। বুঝতে পারেনা কিছু। আমজাদ চেচিয়ে ওঠে, আরে এটাতো সেই ঘরিটা।
রুনা বুঝতে পারেনা কোন ঘরিটা। আমজাদ খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে ঘরিটা। এই ঘরিটাই কাল রাতে আমি দেখেছি, বলে আমজাদ।
রুনা: কোথায় দেখেছো?
আমজাদ: কাল রাতে তুমি যখন আমাকে ডাকছিলে তখন আমি এই ঘরিটাই মনোযোগ দিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলাম।
রুনা: কি বলছ এসব? তখনতো তুমি চোখ বন্ধ করে কি যেন লিখছিলে।
আমজাদ: হ্যা হ্যা। আমি এই ঘরিটার কথাই লিখছিলাম।
আমজাদ ছুটে যায় বেডরুমের দিকে। তারপর ওয়াল কর্ণারে রাখা ডায়রীটা হাতে নেয়। পৃষ্ঠা উল্টায় দ্রুত।
আমজাদ: এই যে এই খানে। এই যে একটা লোক। হাতটা দেখা যাচ্ছে। হাতে চকচকে একটা ছুড়ি। কাকে যেন খুন করবে। চকচকে ছুড়ির মাথায় হাতের কব্জীতে একটা স্টীলের ফ্রেমের ঘরি। এই যে এই ঘরিটা।
রুনা: আশ্চর্য। এটা কিভাবে সম্ভব? আর এই ঘরিটাই বা কার?
আমজাদ: আমার মনে হয় আমরা কোন একটা বিপদে আছি। কেউ আমাদের মারতে এসেছিল কাল রাতে।
রুনা: মারতে আসবে কেন?
আমজাদ: সেটা জানতে হলে এখন আমাকে ঘুমোতে হবে।
রুনা: ঘুমোতে হবে কেন?
আমজাদ: ঘুমিয়ে আবার স্বপ্ন দেখতে হবে। দেখতে হবে এর পর কি হবে। স্বপ্নটা শেষ না করা পর্যন্ত ঘুম থেকে ওঠা যাবেনা। তুমি এক কাজ কর। তুমি তোমাদের বাড়িতে চলে যাও। আমার মনে হয় তোমার এখন এই বাড়িতে না থাকাই ভালো হবে।
রুনা: কি বলছ এসব? আমি থাকলে ক্ষতি কি?
আমজাদ: দেখ এখানে থাকাটা রিস্ক হয়ে যাবে। কেউ এখানে একটা বিপদ ঘটাতে চাচ্ছে। প্লিজ আর কোন কথা বলোনা। আমি ঘুমোবো, তুমি যাও।
রুনা: তোমাকে রেখে যাব কিভাবে? যদি তোমার কিছু হয়?
আমজাদ: ভরসা রাখো, আমার কিছু হবেনা।
রুনা: আমরা না হয় পুলিশে খবর দেই।
আমজাদ: না না । পুলিশে খবর দেয়ার দরকার নেই। আমি জানতে দেখতে চাই কি হতে চলেছে।
রুনা হয়ত বাপের বাড়িতে চলে যেতনা। কিন্তু আমজাদের প্রচন্ড পিড়াপিড়িতে চলে গেল বাপের বাড়ি। আমজাদ সাহেব তরিঘরি করে ঘুমানোর আয়োজন করতে লাগল। তার আগে অবশ্য একটু সতর্কতা অবলম্বন করল। রান্নাঘর থেকে একটা কাটার নিয়ে এসে বিছানার নিচে রাখল। তারপর দড়জা জানালা ভালো করে লাগিয়ে ঘুমানোর জন্য বিছানায় গেল। কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে চোখ দুটো বন্ধ করল। স্বপ্নটা দেখার চেষ্টা করতে লাগল আমজাদ। নাহ্, কিছুতেই ঘুম আসছেনা। অনেক চেষ্টা করে আবছা আবছা করেও স্বপ্নটা দেখতে পেলনা আমজাদ। বিছানা ছেড়ে উঠে বসল। তারপর ঐ ঘরিটা হাতে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করল। গত রাতে আর কিছু দেখেছে কিনা তা মনে করার চেষ্টা করল। নাহ্, নতুন কিছু মনে পড়ছেনা আর। মোবাইলটা হাতে নিল। রুনাকে একটা কল করা দরকার। মেয়েটা একা একা চলে গেল, পৌছালো কি না। ভাবতে না ভাবতেই রুনার কলে বেজে উঠল মোবাইলটা।
রুনা: কি কর তুমি? ঘুমাওনি?
আমজাদ: না, ঘুম আসছেনা। তুমি কোথায়? পৌছাওনি?
রুনা: এই মাত্র টেক্সি থেকে নামলাম। বাসায় ঢুকছি।
আমজাদ: ঠিক আছে, একটু সাবধানে থেকো। আর হ্যা কোন কিছু মনে হলে আমাকে ফোন দিও সাথে সাথে।
রুনা: আচ্ছা। তুমিও সাবধানে থেকো।
বড় লাগেজটা হাতে নিয়ে খটখট করে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল রুনা। রুনাদের বাড়িটা বেশ চকচকে। মনে হয় যেন একটা স্বর্গ। আর এতটাই শুনশান যে, একটা পিন পড়ে গেলেও তার শব্দ বোঝা যায়।

তাই রুনা যখন পাঁচতলায় উঠছিল তখন থপাস থপাস শব্দ মাঝে মাঝে রুনাকেও ভয় পাইয়ে দিচ্ছিল। রুনা বারবার পেছনের দিকে তাকিয়ে নিজের দড়জার সামেনে গিয়ে কলিংবেল টিপ দিল। ঘর থেকে কেউ আসছেনা দেখে ভয় পাচ্ছিল রুনা। জোড়ে জোড়ে দড়জায় কড়া নাড়তে লাগল। রুনার মা এসে দড়জা খুলে দিল।
মা: কিরে এত হাপাচ্ছিস কেন, কি হয়েছে?
রুনা: না মা তেমন কিছু নয়। ভেতরে চল সব বলছি।
রুনা ভেতরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে পানি খায়। তারপর চেয়ারে ধপাস করে বসে পরে।
মা: কিরে কি হয়েছে?
রুনা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল এমন সময় রান্না ঘর থেকে একটা বিকট আওয়াজ এলো। রুনা প্রচন্ড ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল।
মা: আরে এত ভয় পাচ্ছিস কেন। দ্বারা দেখি কি হল।
................................চলবে
দ্বিতীয় অংশে শেষ হবে।