ছেলেটা আশাকে বলল,আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আশা প্রথমে কিছু বলল না।আশাকে ভালোবাসার মত এই পৃথিবীতে মানুষের অভাব ছিল না কখনো ।এই ভালোবাসা সে সেই ছোটবেলা থেকে পেয়ে আসছে। আশার তার জন্মের সময়কার কথা মনে পড়ে। সে তো আর দেখে নি , শুনেছে।
আশার জন্মের সময় তার চেয়ে সুন্দর কোন কিছু স্রষ্টা সৃষ্টি করেন নি সম্ভবত। আশাকে প্রথম প্রথম দেখে মানুষ বলত,আল্লাহ! কি সুন্দর ।একদম পুতুলের মত। আশার মা হাসত।আশাকে কেউ কেউ চাঁদের সাথে তুলনা করে ফেলত। আশার মা তখন তা মানতে চাইত না। এই মানতে না চাওয়ার পিছনে একটা কারণ আছে । সেটা হচ্ছে চাঁদের কলঙ্ক । আশার মা ভয়ে ভয়ে থাকতেন যদি আশা চাঁদ হয় তবে তার কলঙ্কিত হওয়ার সুযোগ আছে।চাঁদ থাকলে সেখানে কলঙ্কও থাকবে।জীবন থাকলে সেখানে মরণও থাকবে।
আশা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে শুরু করল। প্রথমে বালিকা তারপর কিশোরী।কিশোরী মানে একদম ষোড়শী কিশোরী। যৌবনের শুরুর কাল বলে যাকে। আশা এমন একটা মেয়ে ছিল যে মানুষের মনে খুব সহজেই জায়গা করে নিতে পারত। মানুষকে আপন করে নেয়ার এক আলৌকিক শক্তি ছিল আশার মধ্যে। আশা যার কাছে যেত তাকেই এক মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখত।মেয়েটা এত আদুরে ছিল যে তার কথায় ,কাজে মুগ্ধ হতে যে কেউ। আশা ধীরে ধীরে সবার মধ্যে প্রভাব ফেলতে শুরু করল ।
এরপর কিশোরী আশা আস্তে আস্তে যুবতী হয়।দীঘল কালো চুলের মায়ায় আশা তখন যেকোন যুবকের মনেই হানা দিতে পারত।আশাকে তখন বলা যেত সদা লাস্যময়ী অসম্ভব রুপবতী এক যুবতী।কে না জানে?যুবতীর ধারে ধারে কত শত যুবক ঘুরে? যুবক নাকি হায়েনা? নাকি আশার যৌবনকে কলঙ্কিত করার ধান্ধা?
আশা একটা ভয়ে থাকত। তবে সর্বশেষ যে ছেলেটা আশাকে ভালোবাসি বলেছে আশা তাকে বিশ্বাস করতে শুরু করল । আশা খুব চিন্তিত ছিল তাকে নিয়ে। যাক শেষমেশ আশা ছেলেটিকে হ্যাঁ বলে দিলো।আশার ভাবল তার জীবনে সত্যিকারের ভালোবাসা এসে গেছে। আশা ভাবতে শুরু করল তার এই নতুন ভালোবাসাকে নিয়ে।তাঁরা দুইজন গল্প করত এক সাথে।এক সাথে হাসত,এক সাথে গাইত। কিন্তু এই হাসির মধ্যে কোন কিছু লুকিয়ে ছিল। আশার ভালোবাসার ছেলেটি ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করল। শুরুতে আশাকে অনেক আশা আর ভালোবাসা দেখিয়ে শুরু হলেও সেখানে অন্য কিছু রয়েছে।কারণ এমন আশারা যেখানেই থাকে তাদের ঘিরে হতাশারা ডালপালা দ্রুতই ডানা মেলতে থাকে। হতাশারা মাঝে মধ্যে আশার চেয়েও বড় কিছু রুপে ধরনা দেয় আশার কাছে।
ঐ যে বললাম যৌবনে কত শত যুবক প্রথমে প্রেমিক হয়ে আসলেও পরে হায়েনা রূপ ধারণ করে। আশার জীবনেও তাই ঘটল। ছেলেটি আশার সব অহংকার, সব গর্ব মাটিতে মিশিয়ে দিলো ।আশার মায়ের ভয়ের কথা মনে আছে ? চাঁদ আশা সত্যি সত্যিই কলঙ্কিত হলো।আশাকে কলঙ্কিত করল প্রেমিক রুপী সেই হায়েনা শুয়োরের বাচ্চা।
এই কলঙ্কটা আশাকে শেষ করে দিতে চাইছিল।কিন্তু আশা শেষ হতে চায় নি ।আশা ভাবল যে ভালোবাসে নি তার জন্য সে কেন তার নিজেকে শেষ করে দিবে? এক দিকে আশার বেঁচে থাকার আশা অন্যদিকে তার কলঙ্ক। আশা ভাবল পৃথিবীতে হাজারটা খারাপ মানুষের ভীড়ে একজন হলেও ভালো মানুষ আছে। আবার হাজারটা ভালো মানুষের ভীড়েও একজন হলেও খারাপ মানুষ আছে। আশা সে ভালো মানুষটার আশায় বেঁচে থাকতে চাইল ।আশা আশা ছাড়েনি কারণ আশারা মরে গেলে কলঙ্করা স্থায়ী আসন গেড়ে বসে থাকবে।
সাদা কালো মিলিয়েই তো জীবন। কালোর জন্য আর কখনো আলো জ্বালানো হবে না তা হতে পারে না।আশা তার সামনের ভালবাসার আশায় বেঁচে থাকল।ঐ যে কবি বলেছিলেন,আশাই জীবন, জীবনের শ্রী।
মূলগল্পঃ এ টেল অব হোপ
লেখিকাঃ ভেলেকা জিওরজিবা
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:১৩