somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

স্বপ্নিল অণুকাব্য
মনের ক্যানভাসে কিছু দৃশ্যপট আঁকাআঁকি করি ।কীবোর্ডে চাপাচাপি করে তা দৃশ্যমান করার একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস।এই নামটা আমার প্রিয়,তাই দেয়া।আমার স্বনামেও লিখাগুলো ফেসবুকে প্রকাশ করি ।

তুমি তোমার মত-শেষ পর্ব

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তোমার বাবার নামে একটা অপবাদ বেরিয়েছিল।অপবাদ টা হচ্ছে নিজের গর্ভবতী স্ত্রীকে কাছে না পেয়ে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছেন।অসংখ্য পুরুষ আছে যারা নিজেদের এই সময়টা স্ত্রীর পাশে না কাটিয়ে নিজের ব্যাক্তিগত চাহিদাকে দমাতে পারে না।তোমার বাবার নামেও এরকম না দমার অপবাদ উঠছিল।আর তার পেছনের নারীটা হচ্ছি আমি।খালা পরদিন সকালে এভাবেই বলা শুরু করলেন।
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম,কি বলে এই মহিলা!
আমি বললাম,আপনি কি বলছেন এসব?
খালা বললেন , তোমার মায়ের পেটে তখন তুমি।সে সময়টায় আমাকে বুবুর কাছে থাকার জন্য তোমার নানী পাঠায়।কারণ তোমার দাদার বাড়িতে তোমার মাকে দেখার জন্য কাছের কেউ ছিল না।তোমার নানী আমাকে বলে তুই যেতে পারবি ? কয়টা মাস ওর পাশে থাকলে ভালো হয়।আমি না করতে পারি নি ।কারণ বুবুর মানে তোমার মায়ের আমার চেয়ে আপন কোন বান্ধবী ছিল না ।আমি যতটুকু না তার বান্ধবী ছিলাম তার চেয়ে আপন ছিলাম বোন হিসেবে, যদিও বয়সে আমি উনার চেয়ে ছোট ছিলাম।আমরা আপন বোন না সত্য তবে কখনো তোমার মাকে আমার পর মনে হয় নি।
আমি বললাম,আমি সেটা জানি, আপনি মা'র কত আপন।
খালা বললেন,জানলে তুমি নিশিকে বিয়ে করতে চাইছো না কেন?
আমি বললাম ,আপনি এখন যা বলার কথা তা বলুন।নিশির কথা আমরা পরেও আলোচনা করতে পারব।
খালা বললেন,নিশিকে কেন বিয়ে দিতে চাই তোমার কাছে জানো তো ?
আমি বললাম,জানি না ।তবে আন্দাজ করতে পারছি।
খালা বললেন ,কি আন্দাজ করলে?
আমি বললাম,খালা,এটা নিয়ে আমরা পরে কথা বলি?
খালা বলেন,তোমার কাছে তোমার বাবার গল্পটা জানা জরুরী,আমার কাছে নিশির বিষয়ে কথা বলা জরুরি।তুমি আগে এটা বলো তুমি কি আন্দাজ করলে?
আমি বললাম,নিশি আপনার মেয়ে না।আপনি কোথাও থেকে নিশিকে এনেছেন।মানে দত্তক নিয়েছেন।এখন চাইছেন এই মেয়ের জন্য একজন সুপাত্র এনে দিতে যার কাছে আপনি আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে তুলে দিতে পারেন। নিশি ছাড়া আপনার খুব আপন কেউ আছে বলে আমি জানি না।
খালা বলেন ,হয়েছে,অনেকটা এমনই।আর কিছু?
আমি বললাম ,আপনি যা বলা শুরু করেছিলেন তা বলুন আগে।
খালা বললেন,আচ্ছা।

খালা বলা শুরু করলেন এমন সময় মিহরিমা কল দিচ্ছিল। মিহরিমার কলটা এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না।আমি মিহরিমার কল কেটে দিলাম।তারপর খালাকে বললাম ,এক মিনিট পর আসছি। পাশের রুমে গিয়ে আমি মিহরিমাকে কল দিলাম।

-কিছু বলবে?
-না।তোমার কোন খোঁজ খবর নাই কেন?
-বলব। ফিরে বলি ?
-আচ্ছা।
-ঠিক আছে।
-শুনো।
-হ্যা,বলো।
-আমাদের বিয়ের কথা এখন কিছু বলার দরকার নাই।আগে তোমার ঝামেলা শেষ হোক।
-দেখি কি করা যায়। রাখছি এখন।
-আচ্ছা।

খুব ব্যস্ত থাকলেও একটু কথা বলে নিলে যে মানুষটা আপনার খোঁজ নেয়ার জন্য ব্যস্ততা দেখায় তাকে সম্মান দেয়া হয়। আপনি একটা কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন তবে কেউ একজন আপনার জন্য ব্যস্ত এটা ভুলে গেলে একদিন দুই পক্ষের ব্যস্ততাই হারাবেন।এজন্য আমি মিহরিমার সাথে একটু কথা বলে নিলাম।মিহরিমা,আমার সাবেক সিনিয়র আপু। বর্তমানে আমার সবকিছু না হলেও অনেককিছু ।এক মিনিটও লাগল না।আজকাল দেখা যায় ব্যস্ততার জন্য অনেকে তাদের প্রিয় মানুষটার জন্য এক মিনিট সময়ও হয় না।

আমি খালার কাছে গেলাম আবার।খালাকে গিয়ে বললাম,সরি একটু লেট হয়ে গেলো।
খালা বললেন,ঠিক আছে।
আমি বললাম, আপনাকে নানী মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন।তারপর বলুন।
খালা বললেন,মনে আছে দেখি!
আমি বললাম,কিছু জিনিস ভোলা যায় না।
খালা একটু হাসি দিয়ে বলা শুরু করলেন, তোমার নানীর কথায় হোক আর বুবুর প্রতি ভালোবাসার জন্য হোক আমি তোমাদের বাসায় আসি ।তারপর তোমার মায়ের সেবা করা শুরু করি ।তোমাদের সংসার দেখাশোনা করা শুরু করি।তোমার বাবা আমাকে নিজের বোনের মত দেখত।কখনো আমার দিকে কুনজর তো দেয়া দূরে থাক এমন কিছু আমি খুঁজি পাই নি কখনো।তিনি তখন বাসায় আসার সুযোগ পেতেন খুব কম।এমনও হতো দেশের বাহিরে চলে যেতেন মাঝেমধ্যে।খুব জরুরী প্রয়োজনে উনার খুব কাছের এক বন্ধুকে পাঠাতেন।আর সেটাই কাল হলো আমার জন্য।তোমার মা তো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।মাঝে মধ্যে আমার সাথে কথা হতো।আর একজন মানুষের সাথে সারাক্ষণ কথা বলে কাটিয়ে দেয়াও কষ্টকর।তোমার বাবার বন্ধু ছিল অবিবাহিত।আমার মত সুন্দরী মেয়ে দেখে তার লোভ সামলানো কষ্টকর ছিল।লোভ বলতে প্রেমে পরে গেছেন তিনি আমার। আমিও মোটামুটি সুদর্শন একজন পুরুষ পেয়ে তার সাথে মেশা শুরু করলাম। আমিও তার প্রেমে পরে যায়।

আমি তাকে থামিয়ে বললাম,বাবার ওই বন্ধুর নাম কি ছিল?
খালা বললেন,আনিস।
আমি বললাম,আনিস আংকেল তো বিয়ে করেছেন।উনার একটা ছেলেও আছে।
খালা একটু রাগত স্বরে বললেন,আমাকে আগে শেষ করতে দাও।কথার মাঝখানে এভাবে কথা বলবে না।
আমি একটু লজ্জিত হয়ে বললাম,সরি।

খালা বলা শুরু করলেন আবার।আনিস বিয়ে করেছে পরে।আমার সর্বনাশ করার পর।তার একটা ছেলেও আছে। আমাদের মেলামেশা খুব গভীর হয়ে গিয়েছিল তখন।একবার তোমার বাবা থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন দশদিনের জন্য। তখন তোমার মায়ের অবস্থাও ভালো না।তোমার বাবা তার বন্ধুকে বলে গিয়েছিলেন মাঝে মধ্যে এসে এখানে থাকতে।আমাদের সম্পর্ক ও তখন প্রায় গাঢ় হয়ে গেছে। মাত্র একমাসে একটা সম্পর্ক গাঢ় হয়ে গেছে হাস্যকর না?

আমি বললাম,হাস্যকর কেন হবে?
খালা বললেন,তোমাদের এই যুগের ছেলেমেয়েদের কাছে হাস্যকর না।কারণ তোমরা মাত্র একদিনেই একটা সম্পর্ক করে ফেলতে পারো।মনে রাখবে কোন কিছু গড়ার জন্য যত বেশি সময় নিয়ে গড়া হবে সে জিনিস তত মজবুত হবে।সে জিনিস সহজে ভাঙবে না।
আমি চিন্তা করে দেখলাম উনার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে।আমি বললাম,আপনার কথা সত্য ধরে নিলাম।
খালা উপহাসের হাসি দিয়ে বললেন,সে যুগে এটা সম্ভব ছিল না।কিন্তু তারপরও হয়েছে।কারণ কি জানো ?
আমি বললাম, কি ?
খালা বললেন, এক ছাদের নীচে এক জোড়া কপোত-কপোতী বসবাস করলে কোন একটা সময় তারা কাছে আসতে চাইবে।এটা প্রকৃতির চাওয়া।আমরা প্রকৃতিকে অস্বীকার করতে পারি না।আমরা যেটা পারি তা হচ্ছে প্রকৃতির স্রষ্টা মানে আমাদেরও স্রষ্টা আমাদের একটা ব্রেন দিয়েছেন সেটাকে আমরা কাজে লাগাতে পারি।
আমি বললাম,আপনি কাজে লাগালেন না কেন?
খালা বললেন,আমি কাজে লাগিয়েছি নাকি লাগাই নি সেটা কি তোমাকে এখনো বলেছি?
আমি আমতা আমতা করে বললাম ,না মানে আপনি যেভাবে বলছেন!
খালা বললেন, বেশি বুঝো না।যা ভাবছো তা তো মিথ্যাও হতে পারে।
আমি বলুন,আচ্ছা সরি, তারপর বলুন।
খালা বললেন,তারপর আর কি তোমার বাবার বন্ধু আমাকে গর্ভবতী করে গেছেন।
আমি অবাক সুরে বললাম,গেছেন মানে?
খালা বললেন, সে যখন কয়দিন পর বুঝল আমি কনসিভ করেছি তখন সে কেটে পড়ল ।এটা সে আগে খেয়াল করে নি।কিন্তু সে কেটে পড়ার পর তখন আশে পাশের কয়জন ব্যাপারটা কিভাবে যেন জেনে গেলো।আমার মনে হয় এটা আনিসই করেছে।তারা সবাই তোমার বাবাকে দোষ দেয়া শুরু করল।ওই যে বললাম ওই অপবাদটা যে নিজের গর্ভবতী স্ত্রীকে কাছে না পেয়ে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছেন।

তোমার বাবাকে অপবাদ দেয় নি শুধু একজন।সে একজন তোমার মা।কারণ উনাকে আমি সব বলেছি।এমনকি যে রাতে আনিসের সাথে আমি মিলে গিয়েছিলাম তারপর দিন সকালে আমি তোমার মাকে সব বলি। তোমার মা আমাকে তেমন কিছু বলেন নি সেদিন।কিন্তু যখন বুঝতে পারলেন তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তোমার বাবা যখন দেখলেন আমার জন্য তিনি অনেক বড় বিপদে পড়ে গেছেন তখন অল্পদিনের মধ্যেই বাসা পাল্টালেন। আমাকে কিছু টাকা দিয়ে বললেন নিজের পাপটা নিজেই সরিয়ে ফেলবে। একটা জিনিস চিন্তা করে দেখেছো?
আমি বললাম,কি ?
খালা বললেন,পাপ করলাম আমি।আর আমার পাপী হচ্ছে আমার পেটের সন্তান?
আমি বললাম,এবরশন করালেন?আপনি তারপর কি করলেন?
আমি কি করব?আমি পাপী আর শাস্তি দিবো আমার ভেতরের নিষ্পাপ মানুষটাকে? না আমি তা পারলাম না। আমি অন্য কোথাও চলে গেলাম।একজনকে ধরে তার বাসায় থাকলাম।সে আমার বান্ধবী।তাকে বললাম,আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।আমি এখন কোথাও যেতে পারব না। আমার পাপ বলা হচ্ছে যাকে আমি তাকে দুনিয়াতে নিয়ে আসলাম।খালা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন।

আমি বললাম,তাহলে মা যে বলল নিশি আপনার মেয়ে না?
খালা বললেন,তোমার মা জানে নিশি আমারই মেয়ে।কিন্তু যে মেয়ের বাবা নাই তাকে মেয়ে বলতে পারব আমি ? এজন্য সবাই এটা জানে।তারা জানে আমি এখনো বিয়ে করি নি ।আমি কখনো বিয়ে করব না। কিভাবে করব? আমি একটা পাপের বোঝা নিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারব কিন্তু দুইটা পাপ একসাথে করতে পারতাম না।আমি হত্যার দায়টা নিতে পারতাম না। নিশিকে বাঁচিয়ে রেখে আমি ওকে নিয়েই ভালো থাকতে চেয়েছি।
আমি বললাম, আপনি এভাবে আমার বাবার চরিত্র নষ্ট করতে চেয়েছিলেন তাহলে।
খালা লজ্জার স্বরে বললেন, হ্যা।তোমার বাবার কোন দোষ ছিল না। একটা দোষ আছে সেটা হচ্ছে নিজের গর্ববতী স্ত্রীর পাশে না থাকতে পারা। প্রতিটা পুরুষের উচিত গর্ভাবস্থায় স্ত্রীর পাশে থাকা।স্ত্রীর পাশে না হোক নিজের অনাগত সন্তানের জন্য হলেও পাশে থাকে। অমুক তমুক কে পাশে রাখতে গেলে আসলে তেমন কোন লাভ হয় না।অমুক তমুক গুরুত্ব বুঝবে না।তারা উল্টো ঝামেলা পাকাবে আমার মত।

আমি একটু চুপ থেকে বললাম,আনিস আংকেল আপনাকে বিয়ে করেনি কেন?
খালা বললেন,আমি নাকি চরিত্রহীনা!আমি একাই চরিত্রহীনা সে ভালো।
আমি বললাম ,সরি খালা।
খালা বললেন,সরি বলতে হবে না।তুমি নিশিকে বিয়ে করলে হবে।
আমি বললাম,সেটা সম্ভব না।কারণ আমি একজনকে কথা দিয়েছি।
খালা বলেন,এমন কথা তোমরা কতজনকেই তো দাও।
আমি বললাম,আগে জানলে হয়তো আমি নিশিকেই বিয়ে করতাম।
খালা বললেন ,তুমি এখনো নিশিকেই বিয়ে করবে।
আমি বললাম,সম্ভব না।
তোমার বাবার নামে একটা অপবাদ বেরিয়েছিল।অপবাদ টা হচ্ছে নিজের গর্ভবতী স্ত্রীকে কাছে না পেয়ে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছেন।অসংখ্য পুরুষ আছে যারা নিজেদের এই সময়টা স্ত্রীর পাশে না কাটিয়ে নিজের ব্যাক্তিগত চাহিদাকে দমাতে পারে না।তোমার বাবার নামেও এরকম না দমার অপবাদ উঠছিল।আর তার পেছনের নারীটা হচ্ছি আমি।খালা পরদিন সকালে এভাবেই বলা শুরু করলেন।
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম,কি বলে এই মহিলা!
আমি বললাম,আপনি কি বলছেন এসব?
খালা বললেন , তোমার মায়ের পেটে তখন তুমি।সে সময়টায় আমাকে বুবুর কাছে থাকার জন্য তোমার নানী পাঠায়।কারণ তোমার দাদার বাড়িতে তোমার মাকে দেখার জন্য কাছের কেউ ছিল না।তোমার নানী আমাকে বলে তুই যেতে পারবি ? কয়টা মাস ওর পাশে থাকলে ভালো হয়।আমি না করতে পারি নি ।কারণ বুবুর মানে তোমার মায়ের আমার চেয়ে আপন কোন বান্ধবী ছিল না ।আমি যতটুকু না তার বান্ধবী ছিলাম তার চেয়ে আপন ছিলাম বোন হিসেবে, যদিও বয়সে আমি উনার চেয়ে ছোট ছিলাম।আমরা আপন বোন না সত্য তবে কখনো তোমার মাকে আমার পর মনে হয় নি।
আমি বললাম,আমি সেটা জানি, আপনি মা'র কত আপন।
খালা বললেন,জানলে তুমি নিশিকে বিয়ে করতে চাইছো না কেন?
আমি বললাম ,আপনি এখন যা বলার কথা তা বলুন।নিশির কথা আমরা পরেও আলোচনা করতে পারব।
খালা বললেন,নিশিকে কেন বিয়ে দিতে চাই তোমার কাছে জানো তো ?
আমি বললাম,জানি না ।তবে আন্দাজ করতে পারছি।
খালা বললেন ,কি আন্দাজ করলে?
আমি বললাম,খালা,এটা নিয়ে আমরা পরে কথা বলি?
খালা বলেন,তোমার কাছে তোমার বাবার গল্পটা জানা জরুরী,আমার কাছে নিশির বিষয়ে কথা বলা জরুরি।তুমি আগে এটা বলো তুমি কি আন্দাজ করলে?
আমি বললাম,নিশি আপনার মেয়ে না।আপনি কোথাও থেকে নিশিকে এনেছেন।মানে দত্তক নিয়েছেন।এখন চাইছেন এই মেয়ের জন্য একজন সুপাত্র এনে দিতে যার কাছে আপনি আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে তুলে দিতে পারেন। নিশি ছাড়া আপনার খুব আপন কেউ আছে বলে আমি জানি না।
খালা বলেন ,হয়েছে,অনেকটা এমনই।আর কিছু?
আমি বললাম ,আপনি যা বলা শুরু করেছিলেন তা বলুন আগে।
খালা বললেন,আচ্ছা।

খালা বলা শুরু করলেন এমন সময় মিহরিমা কল দিচ্ছিল। মিহরিমার কলটা এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না।আমি মিহরিমার কল কেটে দিলাম।তারপর খালাকে বললাম ,এক মিনিট পর আসছি। পাশের রুমে গিয়ে আমি মিহরিমাকে কল দিলাম।

-কিছু বলবে?
-না।তোমার কোন খোঁজ খবর নাই কেন?
-বলব। ফিরে বলি ?
-আচ্ছা।
-ঠিক আছে।
-শুনো।
-হ্যা,বলো।
-আমাদের বিয়ের কথা এখন কিছু বলার দরকার নাই।আগে তোমার ঝামেলা শেষ হোক।
-দেখি কি করা যায়। রাখছি এখন।
-আচ্ছা।

খুব ব্যস্ত থাকলেও একটু কথা বলে নিলে যে মানুষটা আপনার খোঁজ নেয়ার জন্য ব্যস্ততা দেখায় তাকে সম্মান দেয়া হয়। আপনি একটা কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন তবে কেউ একজন আপনার জন্য ব্যস্ত এটা ভুলে গেলে একদিন দুই পক্ষের ব্যস্ততাই হারাবেন।এজন্য আমি মিহরিমার সাথে একটু কথা বলে নিলাম।মিহরিমা,আমার সাবেক সিনিয়র আপু। বর্তমানে আমার সবকিছু না হলেও অনেককিছু ।এক মিনিটও লাগল না।আজকাল দেখা যায় ব্যস্ততার জন্য অনেকে তাদের প্রিয় মানুষটার জন্য এক মিনিট সময়ও হয় না।

আমি খালার কাছে গেলাম আবার।খালাকে গিয়ে বললাম,সরি একটু লেট হয়ে গেলো।
খালা বললেন,ঠিক আছে।
আমি বললাম, আপনাকে নানী মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন।তারপর বলুন।
খালা বললেন,মনে আছে দেখি!
আমি বললাম,কিছু জিনিস ভোলা যায় না।
খালা একটু হাসি দিয়ে বলা শুরু করলেন, তোমার নানীর কথায় হোক আর বুবুর প্রতি ভালোবাসার জন্য হোক আমি তোমাদের বাসায় আসি ।তারপর তোমার মায়ের সেবা করা শুরু করি ।তোমাদের সংসার দেখাশোনা করা শুরু করি।তোমার বাবা আমাকে নিজের বোনের মত দেখত।কখনো আমার দিকে কুনজর তো দেয়া দূরে থাক এমন কিছু আমি খুঁজি পাই নি কখনো।তিনি তখন বাসায় আসার সুযোগ পেতেন খুব কম।এমনও হতো দেশের বাহিরে চলে যেতেন মাঝেমধ্যে।খুব জরুরী প্রয়োজনে উনার খুব কাছের এক বন্ধুকে পাঠাতেন।আর সেটাই কাল হলো আমার জন্য।তোমার মা তো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।মাঝে মধ্যে আমার সাথে কথা হতো।আর একজন মানুষের সাথে সারাক্ষণ কথা বলে কাটিয়ে দেয়াও কষ্টকর।তোমার বাবার বন্ধু ছিল অবিবাহিত।আমার মত সুন্দরী মেয়ে দেখে তার লোভ সামলানো কষ্টকর ছিল।লোভ বলতে প্রেমে পরে গেছেন তিনি আমার। আমিও মোটামুটি সুদর্শন একজন পুরুষ পেয়ে তার সাথে মেশা শুরু করলাম। আমিও তার প্রেমে পরে যায়।

আমি তাকে থামিয়ে বললাম,বাবার ওই বন্ধুর নাম কি ছিল?
খালা বললেন,আনিস।
আমি বললাম,আনিস আংকেল তো বিয়ে করেছেন।উনার একটা ছেলেও আছে।
খালা একটু রাগত স্বরে বললেন,আমাকে আগে শেষ করতে দাও।কথার মাঝখানে এভাবে কথা বলবে না।
আমি একটু লজ্জিত হয়ে বললাম,সরি।

খালা বলা শুরু করলেন আবার।আনিস বিয়ে করেছে পরে।আমার সর্বনাশ করার পর।তার একটা ছেলেও আছে। আমাদের মেলামেশা খুব গভীর হয়ে গিয়েছিল তখন।একবার তোমার বাবা থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন দশদিনের জন্য। তখন তোমার মায়ের অবস্থাও ভালো না।তোমার বাবা তার বন্ধুকে বলে গিয়েছিলেন মাঝে মধ্যে এসে এখানে থাকতে।আমাদের সম্পর্ক ও তখন প্রায় গাঢ় হয়ে গেছে। মাত্র একমাসে একটা সম্পর্ক গাঢ় হয়ে গেছে হাস্যকর না?

আমি বললাম,হাস্যকর কেন হবে?
খালা বললেন,তোমাদের এই যুগের ছেলেমেয়েদের কাছে হাস্যকর না।কারণ তোমরা মাত্র একদিনেই একটা সম্পর্ক করে ফেলতে পারো।মনে রাখবে কোন কিছু গড়ার জন্য যত বেশি সময় নিয়ে গড়া হবে সে জিনিস তত মজবুত হবে।সে জিনিস সহজে ভাঙবে না।
আমি চিন্তা করে দেখলাম উনার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে।আমি বললাম,আপনার কথা সত্য ধরে নিলাম।
খালা উপহাসের হাসি দিয়ে বললেন,সে যুগে এটা সম্ভব ছিল না।কিন্তু তারপরও হয়েছে।কারণ কি জানো ?
আমি বললাম, কি ?
খালা বললেন, এক ছাদের নীচে এক জোড়া কপোত-কপোতী বসবাস করলে কোন একটা সময় তারা কাছে আসতে চাইবে।এটা প্রকৃতির চাওয়া।আমরা প্রকৃতিকে অস্বীকার করতে পারি না।আমরা যেটা পারি তা হচ্ছে প্রকৃতির স্রষ্টা মানে আমাদেরও স্রষ্টা আমাদের একটা ব্রেন দিয়েছেন সেটাকে আমরা কাজে লাগাতে পারি।
আমি বললাম,আপনি কাজে লাগালেন না কেন?
খালা বললেন,আমি কাজে লাগিয়েছি নাকি লাগাই নি সেটা কি তোমাকে এখনো বলেছি?
আমি আমতা আমতা করে বললাম ,না মানে আপনি যেভাবে বলছেন!
খালা বললেন, বেশি বুঝো না।যা ভাবছো তা তো মিথ্যাও হতে পারে।
আমি বলুন,আচ্ছা সরি, তারপর বলুন।
খালা বললেন,তারপর আর কি তোমার বাবার বন্ধু আমাকে গর্ভবতী করে গেছেন।
আমি অবাক সুরে বললাম,গেছেন মানে?
খালা বললেন, সে যখন কয়দিন পর বুঝল আমি কনসিভ করেছি তখন সে কেটে পড়ল ।এটা সে আগে খেয়াল করে নি।কিন্তু সে কেটে পড়ার পর তখন আশে পাশের কয়জন ব্যাপারটা কিভাবে যেন জেনে গেলো।আমার মনে হয় এটা আনিসই করেছে।তারা সবাই তোমার বাবাকে দোষ দেয়া শুরু করল।ওই যে বললাম ওই অপবাদটা যে নিজের গর্ভবতী স্ত্রীকে কাছে না পেয়ে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছেন।

তোমার বাবাকে অপবাদ দেয় নি শুধু একজন।সে একজন তোমার মা।কারণ উনাকে আমি সব বলেছি।এমনকি যে রাতে আনিসের সাথে আমি মিলে গিয়েছিলাম তারপর দিন সকালে আমি তোমার মাকে সব বলি। তোমার মা আমাকে তেমন কিছু বলেন নি সেদিন।কিন্তু যখন বুঝতে পারলেন তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তোমার বাবা যখন দেখলেন আমার জন্য তিনি অনেক বড় বিপদে পড়ে গেছেন তখন অল্পদিনের মধ্যেই বাসা পাল্টালেন। আমাকে কিছু টাকা দিয়ে বললেন নিজের পাপটা নিজেই সরিয়ে ফেলবে। একটা জিনিস চিন্তা করে দেখেছো?
আমি বললাম,কি ?
খালা বললেন,পাপ করলাম আমি।আর আমার পাপী হচ্ছে আমার পেটের সন্তান?
আমি বললাম,এবরশন করালেন?আপনি তারপর কি করলেন?
আমি কি করব?আমি পাপী আর শাস্তি দিবো আমার ভেতরের নিষ্পাপ মানুষটাকে? না আমি তা পারলাম না। আমি অন্য কোথাও চলে গেলাম।একজনকে ধরে তার বাসায় থাকলাম।সে আমার বান্ধবী।তাকে বললাম,আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।আমি এখন কোথাও যেতে পারব না। আমার পাপ বলা হচ্ছে যাকে আমি তাকে দুনিয়াতে নিয়ে আসলাম।খালা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন।

আমি বললাম,তাহলে মা যে বলল নিশি আপনার মেয়ে না?
খালা বললেন,তোমার মা জানে নিশি আমারই মেয়ে।কিন্তু যে মেয়ের বাবা নাই তাকে মেয়ে বলতে পারব আমি ? এজন্য সবাই এটা জানে।তারা জানে আমি এখনো বিয়ে করি নি ।আমি কখনো বিয়ে করব না। কিভাবে করব? আমি একটা পাপের বোঝা নিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারব কিন্তু দুইটা পাপ একসাথে করতে পারতাম না।আমি হত্যার দায়টা নিতে পারতাম না। নিশিকে বাঁচিয়ে রেখে আমি ওকে নিয়েই ভালো থাকতে চেয়েছি।
আমি বললাম, আপনি এভাবে আমার বাবার চরিত্র নষ্ট করতে চেয়েছিলেন তাহলে।
খালা লজ্জার স্বরে বললেন, হ্যা।তোমার বাবার কোন দোষ ছিল না। একটা দোষ আছে সেটা হচ্ছে নিজের গর্ববতী স্ত্রীর পাশে না থাকতে পারা। প্রতিটা পুরুষের উচিত গর্ভাবস্থায় স্ত্রীর পাশে থাকা।স্ত্রীর পাশে না হোক নিজের অনাগত সন্তানের জন্য হলেও পাশে থাকে। অমুক তমুক কে পাশে রাখতে গেলে আসলে তেমন কোন লাভ হয় না।অমুক তমুক গুরুত্ব বুঝবে না।তারা উল্টো ঝামেলা পাকাবে আমার মত।

আমি একটু চুপ থেকে বললাম,আনিস আংকেল আপনাকে বিয়ে করেনি কেন?
খালা বললেন,আমি নাকি চরিত্রহীনা!আমি একাই চরিত্রহীনা সে ভালো।
আমি বললাম ,সরি খালা।
খালা বললেন,সরি বলতে হবে না।তুমি নিশিকে বিয়ে করলে হবে।
আমি বললাম,সেটা সম্ভব না।কারণ আমি একজনকে কথা দিয়েছি।
খালা বলেন,এমন কথা তোমরা কতজনকেই তো দাও।
আমি বললাম,আগে জানলে হয়তো আমি নিশিকেই বিয়ে করতাম।
খালা বললেন ,তুমি এখনো নিশিকেই বিয়ে করবে।
আমি বললাম,সম্ভব না।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫১
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×