আমি বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাসে বসে আছি।মনটা কেন জানি ভালো নাই।মিহরিমার কথা মনে পড়ছে বারবার ।কি বাজে দৃশ্য! বাবা মাকে হত্যা করে এখন আবার মেয়ের কাছে আসছে।মেয়েও না পারছে বাবার কাছে যেতে ।না পারছে বাবাকে ডাকতে।পৃথিবীতে যে অল্প কয়টা কষ্টকে ভয়ানক কষ্ট বলা যায় তার মধ্যে একটা হচ্ছে
বাবা ডাকতে না পারা।সেখানে বাবা থাকতেও বাবাকে বাবা না ডাকাটা কতটা কষ্টের! মেয়েটার জীবন এমন কেন হলো? তার বাবা কেনই বা তার মাকে হত্যা করল? আমার এটা জানার আগ্রহ বেড়ে গেলো খুব।আমার ঢাকায় ফিরেই মিহরিমার কাছ থেকে সব জানতে হবে।মিহরিমার একটা কথা মনে পড়ছে খুব। অন্যায়কারী নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেক কথা বলে। আমার নিশির কথাও মনে হচ্ছে।আচ্ছা বাবা কেন আমাকে না করে গিয়েছিল নিশির মা থেকে দূরে থাকতে?এমনও তো হতে পারে নিশির মা নির্দোষ। দোষী আমার বাবা।যেহেতু নিশির মা এখনো যথেষ্ট সুন্দরী সেহেতু জোয়ান বয়সে তিনি অসম্ভব রুপবতী ছিলেন ধরে নেয়া যায়।দেখা গেছে আমার বাবাই তার পিছে পিছে ঘুরেছেন। নিজের বিবাহিত স্ত্রী রেখে তিনি স্ত্রীর সুন্দরী বোনদের দিকে নজর দেয়া মোটামুটি কমন ঘটনা। কে কতটুকু খারাপ হতে পারে সেটা তখন দেখা যায়। দেখা গেছে আমার বাবাই নিশির মা'র চরিত্র নষ্ট করতে চেয়েছিলেন।পারেন নি ।তারপর ব্যর্থ হয়ে তাকে হারানোর জন্য নিজের ছেলেকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করছেন।
পৃথিবীর বেশিরভাগ বাবাই তাঁদের সন্তানের কাছে আইডল। আইডলের কোন দোষ- ত্রুটি থাকবে না।আইডল মানব সমাজের সাধারণ গুণাবলির অনেক উপরে থাকবেন।বাবা কি অন্যায় করেছেন নাকি নিশির মা অন্যায় করেছেন সেটা আমার জানা দরকার।একপক্ষের কথা শুনে রায় দিয়ে দিতে পারি না আমি। কি ভাবছি এসব! তবে আমাকে এটা খুঁজে বের করতে হবে।কিন্তু আমি এটা খুঁজব কেন? আপাতত উত্তর জানি না।তবে আমাকে এই রহস্যের একটা কিনারা করতে হবে।বাড়ি গিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়?মাকে কেন জিজ্ঞেস করব মা তো জানেনই না কিছু
বাড়িতে গিয়েই দেখি নিশির মা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।ময়দান একদম প্রস্তুত।আমি চিন্তা করলাম আমি সরাসরি উনাকেই জিজ্ঞেস করব।আগে ঠিক ঠাক ফ্রেশ হয়ে নিই আমি ।তারপর আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করব।
আমার খালা মানে নিশির মা আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করল ,কি জামাই কি খবর ?
আমি বললাম, এইতো খালা ভালো আছি ।আপনি কেমন আছেন ?
উনি বলল,এই বয়সে আর ভালো!আল্লাহ তাও ভালোই রাখসে।তা বাবা কয়দিন থাকবা? নিশিরে আসতে বলব?
আমি বললাম, খালা নিশি আসবে নাকি আসবে না আমাকে জিজ্ঞেস করার দরকার কি ? আপনি ভালো করেই জানেন আমি নিশিকে পছন্দ করি না। বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না ।এমনকি আমি এটা ভাবিও না।
কড়া কথা শুনে উনার মুখটা কালো হয়ে গেলো।আমি ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হতে লাগলাম।আমি খুবই চিন্তিত।উনাকে কি জিজ্ঞেস করব? ধুর উনার সাথে খারাপ ব্যাবহার না করলেও হতো। উনাকে আমার এখন প্রয়োজন।
আমি উনাকে জিজ্ঞেস করার জন্য প্রশ্নের একটা লিস্ট করার চেষ্টা করছি।আমি একটা শংকায় পড়ে গেছি।আমি কি উনাকে বর্ণনামূলক প্রশ্ন করব ? যেটার উত্তর উনি গরুর রচনার মত বলতে থাকবেন ?তিনি বলা শুরু করবেন এরপর বলতেই থাকবেন।মাঝখান দিয়ে আমি তারপর তারপর বলে তার গল্পের বেগ বাড়াতে থাকব।আমি বলব বুঝলাম খালা ,তারপর বাবা কি করলো আপনার সাথে ?নাকি আমি তাকে এম সি কিউ টাইপ প্রশ্ন শুরু করব? এমসি কিউর ধরণ কেমন হবে? নাকি বল্আবপনি কি আমার বাবার সাথে কিছু করেছেন? উত্তর হবে ,হ্যাঁ /না ।মানে বাইনারি। এক অথবা শূন্য।
মিহরিমা কল দিচ্ছে।আমি রিসিভ করলাম।
- কখন পৌঁছালে ?
-এইতো একটু আগে।
-আন্টি কেমন আছেন?
-হ্যাঁ ,ভালোই আছেন। আচ্ছা একটা কথা বলো তো।
-কি কথা?
-তোমার বাবা কি দুশ্চরিত্র ছিলেন?
-মানে? হঠাত এই প্রশ্ন কেন?
-জানতে ইচ্ছে হলো।দুশ্চরিত্র না হলে তিনি এত দ্রুত কিভাবে আবার বিয়ে করলেন?
-আবিদ,আমি ঠিক জানি না।তবে আমি আন্দাজ করছি উনার জন্যই আমার মাকে মারা হয়েছে।
-মিহরিমা।
-হ্যাঁ বলো।
-তুমি তোমার বাবার গল্পটা আমাকে না বললেও পারতে।
-কি হয়েছে আবিদ? আমাকে বলো।
-ফিরে বলি?
-আচ্ছা।
-আচ্ছা কোন মানুষ যদি বলে যান যে এই মানুষটা খারাপ তার থেকে দূরে থাকবে।আমার কি করা উচিত?
-আবিদ ,আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ।
-আমার বাবা আমাকে একজন মহিলা থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।যিনি তার একমাত্র মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন।আমি ঘরে ঢুকতেই সেই মহিলাকে দেখি।
-ও আচ্ছা!তো তার মেয়ে আছেন সাথে ?
-সে কেন থাকবে?
-না এমন ও তো হতে পারে তুমি হঠাত করে বিয়ে করতে বাড়িতে গিয়েছো।হা হা হা হা ।
-মিহরিমা, পাগলের মত বকবে না।
-আচ্ছা সরি । আচ্ছা এসব নিয়ে এত ভেবো না।তোমার বাবা হয়তো তোমার ভালোর জন্যই বলে গেছেন।
-আমাকে খুঁজে বের করতে হবে রহস্য।
মিহরিমা কথা ঘোরানোর জন্য বলল, আন্টিকে আমাদের বিয়ের কথা কি বললে?
আমি বললাম, কিছুই বলি নি ।
ও হাসি দিয়ে বলল, আচ্ছা বলতে হবে না ।
আমি তারপর বিরক্ত স্বরে বললাম, আমি রাখছি এখন ।মা ডাকছে।
মিহরিমা বলল, আচ্ছা ঠিক আছে।
আসলে মাডাকছেন না ।এই মুহূর্তে আমার কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না। আমি শুধু এখন একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি।মানুষ যখন কোন কিছু খুঁজতে থাকে তখন সে অন্য কোন কিছু ভাবতে পারে না কেন?এখন আমি মিহরিমার আর আমার বিয়ের কথাও ভাবতে পারছি না। কি অদ্ভুত! হঠাত তখন মা আমার রুমে হাজির।আমি মাকে দেখেই প্রশ্ন শুরু করে দিলাম।
-আচ্ছা মা।নিশির মা তোমার কি হন?
-আমার পাশের বাড়ির বোন।
-উনি কি অনেক সুন্দরী ছিলেন আগে?
-কেন রে?
-এমনি মা।
-হ্যা।ও অনেক সুন্দরী ছিল।আমাদের আশে পাশের কয়েক গ্রামের মধ্যে ওর মত সুন্দরী কেউ ছিল না।
-তাহলে বাবা উনাকে বিয়ে না করে তোমাকে করলেন কেন?
-কি বলছিস এসব ,বাবা?
-আরে মজা করছিলাম মা।হা হা হা ।
-তুই তো দেখি ভার্সিটিতে গিয়ে ভালোই দুষ্ট হলি ।
আমি ঠাট্টা থামিয়ে বললাম,-আচ্ছা মা নিশির বাবা কই?
মা বলতে গিয়ে আমতা আমতা করছেন,নিশির বাবা! ওহ হ্যাঁ।
আমি বললাম মা কি হয়েছে বলো আমাকে। নিশির বাবা কোথায় ?
মা ধীর স্বরে বললেন,আসলে নিশির মায়ের বিয়েই হয় নি ।
আমি বললাম,কি বলো মা !তাহলে নিশি আসল কিভাবে!
মা বললেন ,তা বাবা অনেক কাহিনী। এসব অনেকদিনের কথা। সবাই ভুলে গেছে এখন সব।এখন আবার এসব মনে করিয়ে দিয়ে নতুন সমস্যা বাঁধাতে চাই না রে বাবা।
আমি বললাম, আম্মা,আমার জানা দরকার।
মা বললেন,কেন ? কেউ কি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছে?
আমি বললাম,না মা,এমন কিছু না। আমার জানা দরকার।
মা বললেন ,তোকে বলা দরকার এমন কিছুই আমি গোপন করব না।এটা জেনে তোর কোন কাজ নাই।তবে আমি বলব এটা তোর জানার দরকার নাই।
আমি বললাম,মা ,একটা কথা বলো শুধু ।
মা বললেন ,কি ?
আমি বললাম ,বাবার সাথে কি উনি কোন কিছুতে জড়িত?
মা বললেন ,কি বলছিস এসব ?
আমি বললাম ,বলো আম্মা।
মা কিছু লুকানোর ছলে বললেন , তোর বাবার সাথে কোন কিছু থাকবে কেন?
আমি বললাম ,আচ্ছা মা বাদ দাও ।
একথা বলে আমি বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে ।আমার কেন জানি সন্দেহ হচ্ছে । আমাকে এর রহস্য খুঁজে বের করতে হবে । নিশির মায়ের বিয়ে হয় নি নিশি আসলো কোথা থেকে ? সেটা আসতে পারে । নিশির মা তাকে দত্তক আনতে পারে । কিন্তু বিয়ে না হলে তিনি বাচ্চা পালতে যাবেন কেন? আমি ঠিক করলাম আমি উনাকেই সরাসরি জিজ্ঞেস করব ।
মিহরিমার কথা মনে হচ্ছে।এখন তার সাথে আমার প্রেম বা অন্যকিছু কিছুই মাথায় আসছে না । আমার মাথায় আসছে তার বাবা তার মাকে হত্যা করেছেন। এরপর আরেকজনকে বিয়ে করেছেন।তার মানে উনার জন্যই হয়ত তার মা খুন হয়েছেন।আমার বাবার কি সম্পর্ক ছিল নিশির মায়ের সাথে ? খারাপ কিছু থাকলে তো মা তাকে আমাদের বাড়িতেই আসতে দিত না।মেয়েরা আর যাই করুক তাঁদের স্বামীর ভাগ দিতে চায় না। আমি কি তাহলে আমার বাবাকে নিয়ে ভুল ভাবছি ? আমাকে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে ।আমার বাবা একজন ভালো মানুষ ছিলেন আমি জানি। তার সাথে নিশির মায়ের কোন সম্পর্ক ছিল না ।আর থাকলেও আমি তা মেনে নিবো না ।আমার বাবা আমার বাবার মত।আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ,বাবা,তুমি তোমার মত ।তুমি যেমন আমি সেটাই মেনে নিবো ।
নিশির মাকে আমার মা কিছু বলেছেন ।তিনি আমার আশে পাশে ঘুরছেন এতক্ষণ ।আমি ততক্ষণে আমার সব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি ।কাজেই উনার সাথে কথা বলার বিষয় আসছে না আর। তাও উনি দেখি আমার পাশে এসে বসলেন ।
আমাকে বললেন, আবিদ।
আমি বললাম,জী খালা।
উনি বললেন ,তোর বাবার সাথে আমার কি সম্পর্ক ছিল জানতে চাও
?
আমি বললাম,এখন আর চাই না ।
উনি বললেন ,তোমার মনে যখন একটা প্রশ্ন এসেছে তোমার জানা দরকার।
আমি বললাম ,বলুন তাহলে।
উনি বললেন ,তুমি কি সেটা জানার পর নিশিকে বিয়ে করবে?
আমি বললাম ,অবশ্যই না ।আমি একজনকে ভালোবাসি।আমি তাকেই বিয়ে করব ।
উনি বললেন ,আমি তোমার পিছু ছাড়ছি না ।
আমি বললাম,আপনি বলুন কি হয়েছে ।
তিনি বললেন ,আজকে না ।আগামীকাল বলব।
আমি বললাম,আজকে না কেন?
উনি বললেন,তুমি অপেক্ষায় থাকবে এটা জানার জন্য ।অপেক্ষা হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম কঠিন একটা কাজ।আমি তোমার পরীক্ষা নিবো ।
আমি একটু বিরক্ত স্বরে বললাম,আচ্ছা।
*চলবে.........
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪