somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

স্বপ্নিল অণুকাব্য
মনের ক্যানভাসে কিছু দৃশ্যপট আঁকাআঁকি করি ।কীবোর্ডে চাপাচাপি করে তা দৃশ্যমান করার একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস।এই নামটা আমার প্রিয়,তাই দেয়া।আমার স্বনামেও লিখাগুলো ফেসবুকে প্রকাশ করি ।

গল্প: গহীনে

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গহীনে কান পেতে শব্দ শোনার অভ্যাসটা আমার আর গেল না। সব কিছু ছেড়ে আসার পরও আমি কোন কিছু ছাড়তে পারি নি ।আজ অর্পিতার বিয়ে ।এদিনটি দেখার জন্যই আমি এতদিন বেঁচে ছিলাম।আজকে আমি নিশ্চিন্তে মরে যেতে পারব ।অর্পিতাকে আমি বলেছিলাম তার বিয়ের প্রথম ছবিটা যাতে আমি পাই । অর্পিতা বিয়ের সাথে সাথেই আমাকে ছবিটা পাঠাল ।

বিয়ের মোটামুটি আনুষ্ঠানিকতা সেরেই অর্পিতা আমাকে ছবিটা পাঠিয়েছে আমি জানি।মেয়েটা আমাকে না জানিয়ে গত এক বছর কিছুই করেনি । আজকেও করবে না আমি জানতাম।আমি জানি সে আমাকে ছবিটা পাঠাবেই ।আমাকে বলতে মুহিবকে ।সে যখন আমাকে ছবিটা পাঠায় তখনও জানে যে আমি মুহিব ইসলাম ।এখনো তাই জানে ।মুহিব ইসলাম কখনো মিনার আহমেদ হয়ে তার সামনে যেতে পারবে না ।কিংবা মিনার আহমেদ কখনো যাবে না।মিনার আহমদে জানে “ অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার ধরিয়া রাখার মত বিড়ম্বনা আর হয় না

মুহিব ইসলাম তার গত এক মাসের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ।যদিও তাদের মধ্যে কখনো দেখা হয় নি ।এই ইন্টারনেটের যুগে দেখা হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ না। অর্পিতার কাছ থেকে মিনার আহমেদের বিদায় নেয়ার পর এই মুহিবই অর্পিতার সুখ দুঃখের বন্ধু ।এক বছরেই মুহিব হয়ে ওঠে অর্পিতার অন্যতম কাছের বন্ধু ।আমি ছাড়া অর্পিতার আর তেমন কোন বন্ধু ছিল না ।চারটি বছর আমাকে সে সময় দিয়েছে।আমি দেই নাই কি ?এই সময়ে অর্পিতা কারো সাথে খেতে গিয়েছে কিনা আমি জানি না। সম্ভবত যায় নি ।গেলে সে মুহিব ইসলাম নাম ধারী আমাকে কখনো জিজ্ঞেস করত না সব কিছু ।আমি এখন শুধু তার অনলাইনে আসার অপেক্ষা করি । কখনো সে আসে, কখনো আসে না ।



আমি চলে যাওয়ার পর আমাকেই আমার অভাব পূরণ করতে হলো। আমি বিশ্বাস করি কোন নির্দিষ্ট মানুষের অভাব শুধু ওই মানুষটাই পূরণ করতে পারে ।ধরা যাক একজন মানুষের খুব প্রিয় মানুষ মারা গেল । এখন তাকে তো কবর থেকে তুলে এনে আবার জীবিত করা যাবে না । এখন হয় কি তার সাথে স্বপ্নে দেখা হয় সে মানুষটার । এই ব্যাবস্থাটা উপরওয়ালা করে দেন। এই স্বপ্নের অল্প কিছু সময় সে মানুষটাকে খুঁজে পায় কিছু সময়ের জন্য ।এরপর ঘুম ভেঙে যায় । মানুষটা ভাবে ঘুম কেন ভেঙে যায় ?অনন্তকাল কি স্বপ্ন দেখা যায় না ? অনন্তকাল কি ঘুমানো যায় না ? মানে কি ! সে কি নিজেও তখন পরপারের বাসিন্দা হতে চায় ! হুম সেটাই হয় সম্ভবত ।তবু এরপর নতুন দিন শুরু হয় ।নতুন সময় ।সব ভুলে আবার বেঁচে থাকা হয় ।কি অদ্ভুত বেঁচে থাকা! বেঁচে থাকার আনন্দটা মরে যাওয়ার আনন্দের(!) চেয়ে অনেক সুখের ।

মিনার নামটাকে দূরে ফেলে তাই মুহিব সেজে এই এক বছর আমিই অর্পিতার পাশে ছিলাম ।মুহিবের এই চাকুরিটা আমিই দিয়েছি । কেন দিয়েছি সেটা আমার ব্যক্তিগত বিষয় ।আমার ব্যক্তিগত কিছু আমি আপাতত জানাতে আগ্রহী নই ।অর্পিতার সাথে নতুন করে পরিচয় নিয়ে কথা বলা যাক ।

অর্পিতাকে নতুন একটা আইডি খুলে প্রথমদিন মেসেজ দিলাম ফেসবুকে ।মেসেজটা ছিল অনেকটা এরকম -

“আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনার সাথে পরিচিত হওয়া উচিত ।আমার কাছে মনে হচ্ছে আপনার সাথে পরিচয় না হলে আমার জীবনের কিছু ভালো সময় থেকে আমি বঞ্চিত হব ।“

অর্পিতা আমার মেসেজ রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করল । আমাকে বলল কেন আপনার মনে হলো এমন ? আমি বললাম তেমন কিছু না ।মনের ইচ্ছে হলো ইচ্ছে পূরণ করলাম মেসেজ দিয়ে। আজ বাদে কাল মরে গেলে এসব ইচ্ছা আমাকে ভূত হয়ে আমারই ঘাড় ভাঙবে ।মৃত মানুষ মৃত মানুষের ঘাড় ভাঙবে! হা হা হা ।আপনাকে ধন্যবাদ ইচ্ছাটা বড় করে পূরণ করে দিয়েছেন তাই।অর্পিতা আমার কথায় বেশ মজা পেল ।

এরপর থেকেই ওর সাথে আমার আবার আগের মত কথা বার্তা চলছে । বার্তাই চলছে শুধু ।কারণ একদিন সে কথা বলতে চাইল ।আমি বললাম আমি কথা বলতে পারি না ।মানে বোবা । আমার খুব ইচ্ছে করছিল ওর সাথে কথা বলি । কিন্তু যে কন্ঠ সে শুনতে প্রতিদিন সকালে আমাকে ফোন দিত সে কন্ঠের প্রতিটা উচ্চারণও তার মুখস্ত।আমার মুহিবকে বিপদে ফেলার কোন ইচ্ছা নাই । মুহিব বিপদে পড়লে মিনার বিপদে পড়বে ।এরপর আমার বাকী দিনগুলোতে অর্পিতা বিহীন কাটাতে হবে।

আমি ওর বিয়ের ছবিটা দেখছি । অর্পিতাকে বেশ লাগছে দেখতে । পাশের ভদ্রলোক শুধু একজন বউ পাবে কিন্তু অর্পিতাকে কখনো পাবে না ।অর্পিতা শুধু আমার । মুহিবের সাথে পরিচয়ের দিনে অর্পিতা বার বার আমার কথাই বলেছে ।মেয়েটা কি অদ্ভুতভাবে আমাকে ভালোবেসেছিল। বেসেছিল বললে ভুল হবে অর্পিতা এখনো আমাকেই ভালবাসে।

আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়ার দিনে অর্পিতা খুব কেঁদেছিল । আমি কিছুই করি নি ।আমার তেমন কোন অনুভুতিই ছিল না তখন । অর্পিতা যখন বারবার আমার হাত ধরে রাখছিল তখন আমি কিভাবে কত দ্রুত তাকে ছেড়ে আসা যায় সেটা ভাবছিলাম । আমি ঠিকঠাকই অর্পিতাকে ছেড়ে আসতে পেরেছিলাম । আসলে কি ছেড়ে আসতে পেরেছি ? কে জানে ।আমি জানি না ।আমি জানি আমার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে । আমাকে হারিয়ে যেতে হচ্ছে । আমি হারিয়ে যাব ।আবার হয়তো স্বপ্নে দেখা করে যাব অর্পিতার সাথে ।আচ্ছা, যে স্বপ্ন দেখে সে যে একটা অনুভুতি পায় যে স্বপ্নে আসে তার কি কোন অনুভুতি পাওয়ার অধিকার আছে ?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৩:১৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×