"শেষ ঘুমটা ঘুমানোর ইচ্ছে ছিল তার মায়ের কোলে। বড্ড ঘুম পাচ্ছিল মেয়েটার। পাকস্থলীর যন্ত্রণা আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পরছিল তার পুরো শরীরে। তারপরও ঘুম পাচ্ছিল তার।
অবুঝ, অবোধ আর অবাধ্য একটি সম্পর্ক ধীরেধীরে সব সম্পর্ক নষ্ট করে দিয়েছিল, আর যা ছিল। যাকে বিশ্বাস করে নাড়ীর টান ছিঁড়েছিল, সেও আজ কেমন যেন হয়ে গিয়েছে। তার আর কোন খোঁজ রাখেনা তার সেই বিশ্বাস। তার সেই বিশ্বাস আজ তার সাথেই প্রতারণা করেছে।
এত কিছুর মাঝে আস্তে আস্তে সে অন্ধকারকে ভালবাসতে শুরু করে। তাই এই আলোকময় পৃথিবী ভালো লাগেনা আর। এই মধ্য রাতে অন্ধকারের কাছে যাত্রা শুরু। আস্তে আস্তে বিষ তার কাজ শুরু করে দিয়েছে কয়েকদিনের অভুক্ত পাকস্থলীতে। তীব্র যন্ত্রণা। এত যন্ত্রণার পরও তার মায়ের কোলে ফিরে যাবার ততোধিক তীব্র চাওয়া।
কিন্তু মা আর আসেন না। মেয়ের প্রতি প্রচণ্ড অভিমান তার। হয়তো মা আসতেন। তিনি হয়তো জানতেই পারেন নাই মেয়ে তার শেষ ঘুমের প্রস্তুতি নিয়েছে।
পৃথিবীর আলো থেকে মেয়েটা হারিয়ে গেল। চির অন্ধকারের অতল গহ্বরে। তাকে ঘিরে অমীয় সব সম্ভাবনার দ্বার রুদ্ধ হয়ে গেল।"
গল্পটা কাল্পনিক না। একটা মেয়ের যে খুব সুন্দর লিখতে পারতো। বেঁচে থাকলে হয়তো কখনো লেখক হিসাবে খুব নাম করতে পারতো। তার লেখার একটা নমুনা দেই নিচে ঃ
"একদিন-
তপ্তদুপুরে, কোন এক নির্জন পথের বাঁকে
জীবন থেমে যাবে।
বহুদিন ধরে লাগাতার হেটে চলা ধুলোমাটির পথে-
আমার পদচিহ্নের উচ্ছেদ হবে।
এই শহরের আলপথ ধরে,
বাবার সাথে গুটিগুটি পায়ে হেটে যাওয়ার গল্প
থেমে যাবে।
ঐ বারান্দায় দাঁড়িয়ে,
একজোড়া নতুন জুতোর জন্য মায়ের সাথে তুমুল
ঝগড়ার কথা ভুলে যাবো।
ভুলে যাবো-
ঐ গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে,
একদল বখাটের সাথে ভাগাভাগি করে এক প্লেট
ফুসকা খাওয়ার গল্প।
.
দু'হাতে ইচ্ছামৃত্যুরর তাজাফুল নিয়ে,
প্রতিশ্রুতিরর স্ট্যাম্প পেপারে আমার একটা জীবন
লিখে দিব-মৃত্যুর নামে।
তারপর মৃত্যুর অবিশ্বাস্য ভালোবাসায়
আমি ভুলে যাব সমস্ত জাগতিক অভিলাষ।
.
অবশেষে এক নিপুণ প্রক্রিয়ায় সমাপ্ত হবে আমার
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া!
এবং আমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনবদ্য মধুর কম্পনে,
গাঢ় অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া পৃথিবী ফের জাগ্রত
হবে।
.
তারপর-
আমার বিনাশপ্রাপ্ত শব ভস্ম পৃথিবীকে বিদায় জানাতে
গিয়ে,
সুমুদ্র পিঠে সুতীব্র উল্লাসে একজোড়া
শঙ্খচিলের উড়াউড়ি দেখে আবার প্রবেশ করবে
পৃথিবীমুখে।
পরিবর্তিত রুপ নিয়ে!
একটা সতেজ বৃক্ষ,
অথবা শহুরে আলপথ
কিংবা একজোড়া শঙ্খচিল হয়ে।
.
|| প্রত্যাবর্তন || "
অদ্ভুত না তার লেখার ধরণ? সে দেখতেও যেমন সুন্দর তার লেখাগুলিও তারচেয়ে সুন্দর।
যাকে নিয়ে আমার লেখা তাকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে চিনিনা। হঠাৎ কয়েকদিন আগে ফেসবুকের একটি পোস্ট পড়তে গিয়ে মূলত তার লেখার সাথে পরিচয়। অদ্ভূত ভাল লিখতো মেয়েটা। পরক্ষণেই জানতে পারলাম সে নেই। আত্মহত্যা করেছে সে।
আচ্ছা মানুষ কি খুব বেশী বিষণ্ণ হলে ভাল লেখে? তবে বিষণ্ণতা নিয়ে কেন সে বেঁচে থাকেনা? কেন আত্মহনন তার সর্বশেষ কথা হয়?
আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। লড়াই করে বেঁচে থাকার মাঝেই সার্থকতা বেশী। মানুষ নিজেও জানেনা যে সে কি অমীয় ক্ষমতার অধিকারী।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৩