মহানবী (সাঃ) বলেছেন, বনি ইসরাঈলরা হয়েছে বাহাত্তর কাতার, তাঁর উম্মত হবে তিহাত্তর কাতার এর মধ্যে এক কাতার জান্নাতি আর বাহাত্তর কাতার জাহান্নামী। জান্নাতি তারা, যারা তিনি ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের অনুসারী। মহানবি (সাঃ) বলেছেন, যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল সে যেন জান্নাতে প্রবেশ করল।সব মুসলমান ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে সে জন্য এক মুসলমান বলল, সব মুসলমান জান্নাতি কাতারে; অমুসলমান বাহাত্তর কাতার জাহান্নামী কাতারে। মহানবী (সাঃ) বিশ্বনবী হিসেবে সবাই তাঁর উম্মত। মুসলমান অমুসলমান সব তাঁর উম্মত। তবে মুসলমান তাঁর অনুসারী উম্মত। অমুসলমান তাঁর অনুসারী উম্মত নয়।আল্লাহ বলেছেন, ‘অমা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামিন- আমরা আপনাকে জগৎ সমূহের জন্য রহমত ভিন্ন প্রেরণ করিনি’। আয়াত অনুযায়ী মহানবী (সাঃ) যদি সবার জন্য রহমত হয়ে থাকেন তবে আয়াত অনুযায়ী সবাই তাঁর উম্মত। মুসলমান অমুসলমান সবাই তাঁর উম্মত।কাজেই জান্নাতি-জাহান্নামী হিসেবে সব মুসলমান জান্নাতি এবং সবাই জান্নাতি কাতারে; জাহান্নামী বাহাত্তর কাতার অমুসলীম।যদি মোনাফেক না হয় তবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠকারী কি দায়েমী জাহান্নামী হবে? যদি না হয় তবে সব ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠকারী জান্নাতি।
সব মুসলমান মহানবির (সাঃ) অনুসারী, তবে সাহাবায়ে কেরামের (রাঃ)ক্ষেত্রে তাদের কথা হলো তাঁরা পরস্পর যুদ্ধ করেছেন। এমনকি তাবেয়ী সাহাবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন; আর কোরআনের আদেশ অনুযায়ী তাদের যুদ্ধর অনুসরন করে পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া যাবে না।কাজেই সাহাবার অনুসরন হবে তাঁরা যে হাদিস বলেছেন সে হাদীসের অনুসরন। আবার হাদিস যদি কয়েক রকম হয় তবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ সাহাবার বলা হাদিসের অনুসরন হবে, কম গুরুত্বপূর্ণ সাহাবার বলা হাদিসের অনুসরন হবে না। হবে না যেমন একই বিষয়ে হজরত আবু বকর (রাঃ) ও সাধারণ সাহাবা যদি ভিন্ন রকম হাদিস বলেন তবে আবু বকরের (রাঃ) হাদিস গ্রহণ করা হবে অন্য হাদিস বাদ যাবে।
কেউ যদি অহেতুক কোন সাহাবার বলা হাদিস প্রত্যাখ্যান করে তবে সে সাহাবার অনুসারী নয়। হাদিসের আমল না করা আর আমল করতে অস্বীকার করা এক কথা নয়।সংগত কারণে যদি কেউ কোন হাদিসকে জাল মনে করে তবে সে হাদিস অস্বীকারের কাতারে পড়ে না।আর কোরআনের সূত্রে কোন হাদিস কেউ অস্বীকার করলেও তা অস্বীকারের কাতারে পড়বে না।যেমন হজরত ফাতেমা (রাঃ) বলেছেন মহানবি (সাঃ) তাঁকে মহানবির (সাঃ) খেজুর বাগান দান করেছেন। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে হজরত আবু বকর (রাঃ) হজরত ফাতেমার (রাঃ) হাদিস গ্রহণ করেননি। অন্যদিকে শীয়ারা তাঁকে হাদিস অস্বীকারকারীর কাতারে ফেলে দিল।আবার হজরত আলীকে (রাঃ) মহানবি (সাঃ) উত্তরাধীকারী মনোনয়ন করেছেন, এ সংক্রান্ত এক ব্যক্তির হাদিস হজরত আবু বকর (রাঃ), ওমর (রাঃ) ও ওসমান (রাঃ)গ্রহণ না করায় তাঁদেরকেও তারা হাদিস অস্বীকারকারী বলে।শীয়ারা আবু বকর(রাঃ), ওমর(রাঃ) ও ওসমানের(রাঃ) নাম তাদের সন্তানের নাম রাখে না।সাহাবায়ে কেরামকে (রাঃ) কাফির ফতোয়া প্রদানের কারণে শীয়া ও খারেজীদের অনেকে মুসলীম স্বীকার করে না।কিন্তু তাদের এ কান্ডকে আল্লাহ যদি ভুল হিসেবে সাব্যস্ত করে তাদেরকে ক্ষমা করে দেন তবে তারাও জান্নাতি কাতারে শামিল হতে পারে।আবার কেউ আল্লাহর কিছু গুণ স্বীকার বা অস্বীকার করে। যেমন কেউ বলে আল্লাহর আকার আছে, আর কেউ বলে আল্লাহর আকার নেই।কেউ বলে মহানবি (সাঃ) গায়েব জানেন, কেউ বলে মহানবি (সাঃ) গায়েব জানেন না। মহানবি (সাঃ) গায়েব জানেন এমন আকিদাকে কেউ আবার শিরক মনে করে। এসব বিষয় যদি আল্লাহ ভুল হিসেবে গণ্য করেন এবং নিয়তের উপর প্রাধান্য দিয়ে এদের ক্ষমা করেন তবে এরাও জান্নাতি কাতারে গণ্য হবে।
এখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা লোক যদি দায়েমী জাহান্নামী না হয় তবে সব ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা লোক জান্নাতি কাতারে সামিল হবে। কাজেই সব ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা লোক এক কাতার আর সব ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ না বলা লোক বাহাত্তর কাতার সাব্যস্ত হবে।
তা’ছাড়া মহানবি (সাঃ)মুসলীম তিহাত্তর কাতার বলেননি।এখন উম্মত ও মুসলীম একই বিষয় সাব্যস্ত না হওয়ায় এটা বলার উপায় নেই যে মুসলীম তিহাত্তর কাতার হবে। কারণ মুসলীম শব্দের অর্থ আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পণ করা। তো একজনের ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পণকারী সব একদল হওয়ার কথা বহুদল হওয়ার কথা নয়। কিন্তু উম্মত মানে দল। তো দল বিদল উপদল মিলে বহুদল হতে পারে। যেমন নিজ দল না হলেও সব জনগণ প্রধানমন্ত্রীর দল এবং প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন না করলেও সব জনগনের একজন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে জনগণের যেমন আলাদা দল থাকে তেমনি প্রধানমন্ত্রীর নিজ দল থাকে।
বনি ইসরাঈল বাহাত্তর কাতার তারা সব এক গোত্রের। কিন্তু মহানবীর (সাঃ) উম্মত শুধু কুরাইশ নামক এক গোত্রের নয়। বরং এতে বহুগোত্র রয়েছে। আবার বনি ইসরাঈলের বাহাত্তর কাতারে কয় কাতার জাহান্নমী সেটা বলা হয়নি। কাজেই বনি ইসরাঈল আর মুসলমান এক কথা নয়। কারণ মুসলমান কোন গোত্র নয়।উম্মতও কোন গোত্র নয় এখানে শুধু বহু কাতার হওয়ার কথা বুঝানো হয়েছে।
এখন করনীয় হলো যারা সাহাবা স্বীকৃত। যাঁদের সাহাবা না হওয়ার কোন প্রমাণ নেই। তাঁদের সবার বর্ণীত হাদিসকে হাদিস স্বীকার করতে হবে। আর কোরআন হাদিস বিরোধী আকিদা থেকে দুরে থাকতে হবে। তাহলে জাহান্নামে পড়লেও মুক্তির উপায় থাকবে।
তথাপি একদল বলবে মুসলমানই তিহাত্তর কাতার হবে যদিও তাদের কথার স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই। আল্লাহ যদি তাঁর বান্দাদেরকে মুসলীম স্বীকৃতি দিয়ে জান্নাতে দাখিল করেন তাতে কারো কিচ্ছু করার নেই। আল্লাহর ইচ্ছার বিপরীতে আল্লাহর বান্দাকে কে কি মূল্যায়ন করলো তা’মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ডঃ মরিস বুকাইলি বলেছেন, তওরাত যারা লিখেছেন তারা হজরত মুছা (আঃ) থেকে শুনে তওরাত লিখেননি। তারা তওরাত লিখেছেন লোক মুখে শুনে। যবুর যারা লিখেছেন তারা দাউদ (আঃ) থেকে শুনে যবুর লিখেননি। তাঁরা যবুর লিখেছেন লোক মুখে শুনে। ইঞ্জিল যারা লিখেছেন তারা ইছা (আঃ) থেকে শুনে ইঞ্জিল লিখেননি। তাঁরা ইঞ্জিল লিখেছেন লোক মুখে শুনে। হাদিসের কিতাব যারা লিখেছেন তাঁরা মোহাম্মদ (সাঃ) থেকে শুনে হাদিস গ্রন্থ লিখেননি তারা হাদিস গ্রন্থ লিখেছেন লোক মখে শুনে। তৌরাত যবুর ইঞ্জিল ও হাদিস গ্রন্থ সমূহের সাথে কোরআনের গ্রন্থ সংকলনগত দিকের মৌলিক পার্থক্য হলো কোরআন যিনি সংকলন করেছেন তিনি মোহাম্মদ (সাঃ) থেকে সরাসরি কোরআন শুনে মুখস্ত করেছেন। সেই সাথে অন্য যারা কোরআন মোহাম্মদ (সাঃ) থেকে শুনে মুখস্ত করেছেন তিনি তাঁদের সহায়তা গ্রহণ করেছেন। তা’ছাড়া তখন কোরআনের সূরা সমূহের লিখিত কপিও ছিল। তিনি লোক মুখে শুনা কথা লিখেননি।
কিন্তু কোরআন ছাড়া অন্য সব আশমানী কিতাব ও হাদীস লোক মুখে শুনা কথা। এখন লোক যদি মোহাম্মদের (সাঃ) নামে ভুল কথা বলে তবে হাদিসের কিতাবে ভুল থাকতে পারে যার দায় মোহাম্মদের (সাঃ) বা হাদিসের কিতাব লেখকের নয়। তা’ছাড়া মহানবী (সাঃ) নিজেও তাঁর নামে হাদিস বানিয়ে প্রচার করার সম্ভাবনার কথা বলেছেন। এখন তিহাত্তর কাতার সংক্রান্ত হাদিস যদি তেমন কিছু হয় তবে মুসলমানরা একে অপরকে জাহান্নামী বলার বেকার প্রতিযোগিতা করছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:৩১