এক জন্মান্ধ কবি আর কি লিখতে পারে অন্ধকারের বৃত্ত ভ্রমণ ছাড়া?
কেমন করে লিখবে সে, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠে যাওয়া খাঁড়া পথ কতটা উচ্চতা ছুঁয়েছে!
কেমন করে লিখবে কবি, সমুদ্র যে রোদনে গর্জন করে উঠে, তা কতটা গভীর থেকে উঠে আসে সৈকতে..
কোন উপায়ে জানবে কবি, ঊষার প্রথম সূর্য-কিরণ বলাকার ডানায় কতটা নেচে যায়,কি ছন্দ তার?
অথবা গোধূলীতে আকাশ কোন রঙের কতটা অনুপাতে, জলরঙে শূণ্য ক্যানভাস ভরে চলে নিত্য অজানা গল্পে..
অথবা সায়ংকালে পল্লী মাঝি, নদীর কোন রূপে মজে গিয়ে উদাসী হয়, গেয়ে উঠে,'মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে আমি আর বাইতে পারলাম না!''
না! দৃশ্যত জীবনের কোন উদাসীনতাই অন্ধ কবির কবিতায় উঠে আসবে না! আসা হয়তো সম্ভবপর নয়; তবু অন্ধ কবি জানতে চায়, বুঝতে চায়, শুনতে চায়, পাহাড়-নদীতে, ঊষা আর গোধূলী কতটা রং প্রতিফলিত করে; ভোরের পাখির গানে কতটা উচাটন ভোরে নেয় তাদের চঞ্চল ডানা? কবি জানতে চায় কেমন করে কেন সংসার দাপানো মানুষ নদীর টানে বাউল হয়? অথবা কৃষাণীর ধান চালার কুলায়, ছন্দ তোলার কালে তার কোন আঙুলের অবস্থান কোথায় থাকে,কতটা উঠানামা করে। জানতে চায় সমুদ্র গর্জন কতটা গভীর থেকে এসে পৌঁছায় তীরের কানে। আরো কত কি যে জানতে চায় অন্ধ কবি, তার হিসেব আছে কি আদতে তার কাছেও? তবু কবি অন্ধকারের বৃত্ত সম্বল করে কবিতাকে জীবন্ত করতে চায়, দৃষ্টি দিতে চায়, স্রষ্টার মত সৃষ্টিতে বুদ্ধীন্দ্রিয় সংযোগে কবিতাকে মাংসের ঘ্রাণে ভাসাতে চায়!
জন্মান্ধ কবিকে আমি স্পর্শ বিদ্যা শেখাই, নারীর শরীর ছুঁইয়ে দিয়ে বোঝাই পাহাড় কতটা উচ্চতা ধারণ করে থাকে।কামজ্বরে কেঁপে গেলে নারীর অধর তাতে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালে কবির জানা হয় পাখির ডানায় কতটা অস্থিরতা প্রদর্শিত থাকে।গাঢ় আলিঙ্গনে নিঃশব্দ রাত্রি নারী হৃৎপিণ্ডে ডমরু বাজিয়ে চললে কবি সমুদ্র গর্জনের গভীরতা বোঝে... এই রূপ স্পর্শ বিদ্যায় আরো একটু পারদর্শী হলে কবি জানতে চায় আনীল আকাশের কথা।আমি তাকে আরো একটি রাতের অপেক্ষায় রেখে বলি,যে রাতে তুমি কুমারীর প্রথম লজ্জা ভেঙে দেবে তোমার উদ্ধত শ্বাসে-ঠোঁটে আর আঙুলের স্পর্শে..তোমার আকাশ ভ্রমণ হবে।এবং ভ্রমণ আরো সুখপ্রদ হলে রাত্রির হৃৎপিণ্ডে যখন মিশে যাবে ডবকা রক্তের শেষ ঝাপটা তখন তোমার নিষ্কল মহাশূণ্যতার জ্ঞান লাভ হবে।
এভাবে একদিন পাহাড়-নদী, সমুদ্র-আকাশ এবং মহাশূণ্য'তার সম্যক জ্ঞান হলে কবিকে গোরে শুইয়ে দিয়ে তার আত্মীয়েরা গৃহে ফিরে শোক সভায় বসে। তখন আমি কবির সমাধি পাশে হাঁটু গেড়ে বসি। একমুঠো রক্ত-গাদা রাখি তার সমাধি শিয়রে।পকেট থেকে আমার বসন্ত মোড়ানো দিন পঞ্জি বের করে তাতে লিখি আমার খুনের ইতিহাসে "সমাপ্ত" শব্দটি'কে।
০৮/০৩/১১
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১১ রাত ২:০৭