বর্তমানের কথা
ঝকঝকে নীল আকাশ আর নির্মল বাতাসের পৃথিবী। শান্ত সমুদ্রের তীরে গড়ে ওঠা চমৎকার শহর।শহরের চারিদিকে চমৎকার সব তরুবীথি সবুজে শ্যামলে লাবন্যময়। একটু পরেই বিকাল হবে। বর্ষীয়ান মিস্টার নিক্সন দেয়ালের রিডিং স্ক্রিনের সুইচ বন্ধ করে।জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলেন।কিছুক্ষণ পরেই বেজে উঠল অপার্থিব এক সুর। অতি ধীর লয়ে শুরু হয়ে একসময় আকাশ বাতাস ভরিয়ে তুলল সেই সুরের মূর্ছনা। প্রতিটি অফিস এবং বাড়ি থেকে মানুষ বের হয়ে আসতে লাগল। দলে দলে মানুষ ধীর পায়ে সাগর তীরের দিকে এগিয়ে চলতে লাগল।একসময় সকলেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল সমুদ্রতীরে এবং অন্যসব ফাঁকা জায়গায়।চোখ বন্ধ করে সূর্যের দিকে মুখ করে সূর্যস্নানে মগ্ন হয়ে গেল সবাই।কিশোর- কিশোরী, তরুন -তরুণী এবং বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষই রয়েছে।শুধু শিশুরা কেউ এখানে নেই।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিটি শিশু থাকে স্কুলিং হোমে।মিস্টার নিক্সন কল্পনায় দেখার চেষ্টা করলেন স্কুল হোমের খোলা প্রাঙ্গণে সব বয়সের শিশুরাও এসময় হাত ধরাধরি করে সূর্যস্নানে নিমগ্ন।
মিস্টার নিক্সন এত দূর থেকেও সূর্যস্নানরত মানুষগুলোর মুখের শান্ত ভাব দেখে এক ধরনের আনন্দ লাভ করতে লাগলেন।বিকালবেলার নরম সূর্যের আলো মেখে মানুষগুলোর নানা বর্নের দেহ চমকিত হচ্ছে।ভোরে সূর্যদয়ের পর আর সূর্যাস্তের আগে প্রতিদিন পৃথিবীর মানুষগুলো সুরের মূর্ছনায় ডুবে সূর্যস্নানে আসে।নির্দিষ্ট সময় পর যে যার কাজে ফিরে যায়। হোমো পিগমেনটিয়েনসিস দের দেহকোষে উদ্ভিদের মত সালোকসংশ্লেষনকারী নানা বর্নের রঞ্জক কনিকা রয়েছে।তাই তাদের শরীরের রং হয় বিচিত্র। নানা ধরনের সবুজ রংই বেশি দেখা যায়,কমলা, হলুদ বা লালও একেবারে কম নেই।আজকাল তরুন তরুণীদের মধ্যে একই দেহে কৃত্রিমভাবে নানা রং করার ফ্যাশনও দেখা যাচ্ছে।
হোমো পিগমেনটিয়েনসিস রা গায়ের চামড়া দিয়ে উদ্ভিদের মতই শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করতে পারে।তাই তাদের শর্করা খাদ্য খাওয়ার প্রয়োজন হয়না।দিনে দুইবার সূর্যস্নান করে তারা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে নেয়।প্রোটিন আর অন্যান্য খাদ্য উপাদান তৈরি হয় বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে ল্যাবরেটরিতে। যে যার প্রয়োজন মত তা খেয়ে নেয়।খাবারের জন্য মানুষ আর প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল নয়।গায়ের রং আর খাবার তৈরির ক্ষমতা ছাড়া হোমো সেপিয়েন্স দের থেকে হোমো পিগমেনটিয়েনসিস দের তেমন কোনো অমিল নেই।
সংগীতের সুর ধীর হতে শুরু করতেই মিস্টার নিক্সন গরম জামাটা গায়ে চাপিয়ে বাইরে বের হয়ে আসেন।তার চারপাশে সকলেই কলরব করতে করতে যার যার কাজে ফিরছে।দুএকজন হাসিমুখে তাকে অভিবাদন জানিয়ে যায়।কিছুদূর হেটে গেলেই শহরের প্রান্তে প্রাকৃতিক অরন্য।সেখানে এক পাল হরিণ এসেছে কিছুদিন হলো।বনে পশুপাখির অবাধ বিচরণ দেখতে তার বড় ভাল লাগে।তাছাড়া অরন্যে গাছ আলো করে ধরে থাকা তরতাজা আপেল ছাড়া তার রাতের খাওয়াটা ভাল জমে না।তিনিই এই শহরের শেষ হোমো সেপিয়েন্স। প্রাকৃতিক খাবারের স্বাদ তিনি বড় ভালোবাসেন।
বর্তমানের আগে
নিউ হোপ ফার্টিলিটি সেন্টারের দুজন তরুন ডাক্তার তাদের রুটিন কাজগুলি শেষ করার ফাঁকে
ফাঁকে আলাপে মগ্ন ছিল।
রবার্ট- নিহা তুমি দেখেছ আজ কেস 3800 এর পেশেন্ট কত খুশি ছিল?
নিহা- খুশিত হবেই।অনেক চেষ্টার পর তার কৃত্রিম প্রেগন্যান্সি সফল হয়েছে।
রবার্ট- আমিতো বুঝিনা এত কষ্ট করার কি আছে একটা বাচ্চার জন্য তাও আবার এই যুগে।বেবি ফার্ম থেকে পছন্দমতো একটা বাচ্চা এডপ্ট করলেই কিন্ত হয়।
নিহা- তবুও নিজের জীন থেকে নিজের একটা বাচ্চা।এটার গুরুত্ব অন্যরকম। শুনেছি এই দম্পতি অনেকদিন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।তবে ডক্টর টেরেসা এই বাচ্চার ভ্রণটি নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন।
রবার্ট -কেন?উনিইতো এই ফার্মের সব চেয়ে যোগ্য আর অভিজ্ঞ ডাক্তার তাইনা?
নিহা- হ্যাঁ তা তো অবশ্যই। কিন্ত গত সপ্তাহের দূর্ঘটনার পর উনার ইউনিটের অনেক স্যাম্পলই নষ্ট হয়ে গেছে।কেস 3800 এর একটি ভ্রুনই ভাল অবস্থায় ছিল।সেটিই পেশেন্ট এর শরীরে স্থাপন করা হয়েছে।
রবার্ট- তাতে কি?সফল হলেতো একটাই যথেষ্ট। তাছাড়া কে জানত এই যুগে এসেও মাটির নিচের বায়ু শীতলকারী যন্ত্রটি এভাবে বিস্ফোরিত হয়ে চারিদিকে রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়বে।
নিহা-সেটাই ভাবছি।ভাগ্য ভাল তখন কেউ আশেপাশে কর্মরত ছিল না।তাছাড়া উনার সহ আশেপাশের ইউনিটগুলিতে খুব বেশি স্যাম্পলও ছিল না।তাই অল্পের উপর দিয়ে গেছে।তবে উনি বলছিলেন কেস 3800 এর ভ্রুনের কিছু কোষে উনি একটু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছেন।
রবার্ট- তাহলে তো সমস্যা।পেশেন্ট নিশ্চয়ই সব জানেন।
নিহা--তা তো অবশ্যই। সব জেনেই পেশেন্ট রাজি হয়েছেন।যেহেতু কি ধরনের সমস্যা তা আগে থেকে বলা যাচ্ছে না তাই ডাক্তারও আপত্তি করেননি।
রবার্ট- আশা করি সব ভালই হবে।আমার কাজ শেষ আমি লাঞ্চে যাচ্ছি তুমি কাজ শেষ করে চলে এস।
(চলবে)
পরের পর্ব এখানে
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১২