প্রথম পর্ব এখানে
চা(Tea):
পড়তে বসে বা অফিসে কাজের সময় চোখ ঢুলুঢুলু করছে?এক কাপ চা পান করলেই মুহুর্তে চাঙ্গা হয়ে যাবেন আপনি।২য় পর্ব শুরু করছি অপরিহার্য পানির পরেই আমার প্রথম পছন্দের পানীয় চা দিয়ে।চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস (Camellia sinensis)।ছেঁটে ঝোপের আকার করে রাখা হলেও এটা আসলে বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ।এর উতপত্তি স্থল চীন।একটা লিজেন্ডে বলা হয় একজন বুদ্ধ গুরু ধর্ম প্রচারের জন্য চীন দেশে যান।তিনি অনেক মেডিটেশন করতেন।একদিন তিনি ধ্যান করতে করতে ঘুমিয়ে যান।জেগে উঠে উনি নিজের উপর ভীষন রাগান্বিত হয়ে চোখের দুই পাতা কেটে ফেলেন যাতে আর ঘুমিয়ে পড়তে না হয়।তিনি যেখানে চোখের পাতা ফেলেছিলেন সেখানে গজিয়ে উঠে প্রথম চা গাছ যার যাদুকরি প্রভাবে ঘুম কেটে যায়।
শেনং নামক ব্যাক্তি যাকে চাইনিজ এগ্রিকালচার এর জনক বলা হয় তার মাথায়ই রয়েছে পানীয় হিসাবে চা আবিষ্কার এর তাজ।কথিত আছে তিনি একটি চা বৃক্ষের নীচে ঘুমানোর আয়োজন করেন সেই সাথে একটি পাত্রে কিছু পানি ফুটতে দেন।পানিতে গাছের কিছু পাতা পড়ে সেদ্ধ হয়ে যায়।ঘুম থেকে উঠে শেনং সুগন্ধি পানীয়র প্রতি আকৃষ্ট হয়ে চুমুক দেন এবং খুব ফ্রেশ অনুভব করেন।এভাবেই শুরু হয় পানীয় হিসাবে চায়ের যাত্রা।তবে আগে মেডিসিন হিসাবেই এটা বেশি চলত।চীনে চায়ের বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় দুই হাজার বছর আগে হান ডাইনেস্টির সময়।
চায়ের আবিষ্কার নিশ্চিতভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।ফ্রেশ অনুভুতি দেয়,স্নায়ুকে উত্তেজিত করেনা তবে একই সাথে শান্ত এবং সতর্ক করে,চা ছাড়া এত গুন আর কোন পানীয়ের আছে?চা তাই দুনিয়াজুড়ে মানুষের এক নম্বর পছন্দের পানীয়।এশিয়ান ও ইউরোপীয় কালচারের সাথে এটা এত গভীরভাবে জড়িয়ে আছে যে একটি সন্ধ্যাও চা ছাড়া কল্পনা করা যায় না।
ইন্ডিয়াতে চা চাষ শুরু হয় ১৮১৮এর দিকে।১৮৫৫ সালে ব্রিটিশরা সিলেটে চা গাছ আবিষ্কার করে ও ১৮৫৭ সালে মালনীছড়ায় চা চাষ শুরু হয়।চা নিয়ে আরো অনেক কথা বলার ইচ্ছা করলেও আজ এখানেই থামছি।শুধু চা নিয়ে একটি পোস্ট কোনো একসময় দেব বলে আশা রাখি।
চা গাছ
চা গাছে এমন চমৎকার ফুল হয় চীনের একটা চা বাগান
আমাদের চায়ের স্বর্গ সিলেট
আঁখ(Sugarcane) :
মানুষের মুখে নিমেষে হাসি এনে দিতে পারে যে খাবারগুলি সেগুলো হচ্ছে চকলেট,মিষ্টি,পিঠা,কেক,পেস্ট্রি,আইসক্রিম ইত্যাদি।আর এই খাবার গুলো কল্পনা করাও সম্ভব নয় যে জিনিসটি ছাড়া সেটি হচ্ছে চিনি।প্রতিদিন আমাদের খুশির মূহুর্তগুলি মিষ্টি স্বাদে যে জিনিসটি আরো মধুময় করে তুলছে আসুন জেনে নিই তার ইতিহাস।
চিনি তৈরি হয় একধরনের বৃহদাকৃতি ঘাসের রসকে প্রক্রিয়াজাত করে যার নাম আঁখ।আঁখের বৈজ্ঞানিক নাম স্যাক্কারাম অফিসিনারাম(Saccharum officinarum)।৬-১৯ ফুট লম্বা এই ঘাসের কান্ডে ভরা থাকে সুক্রোজবহুল মিষ্টি রস।কাশের মত সুন্দর সাদা ফুল হয় এতে আর কান্ড ছোট করে কেটে লাগিয়ে দিলেই হয় নতুন গাছ।এটি নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল এর উদ্ভিদ এবং এর আদি বাসস্থান হচ্ছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া।বহু আগে থেকেই ভারতবর্ষ আঁখের মিষ্টি রসের সাথে পরিচিত ছিল।তখন চিবিয়ে খাওয়া হত বা রস জ্বাল দিয়ে ঘন সিরাপ করে রস ব্যবহার করা হতো।প্রথম দানাদার চিনি তৈরির প্রক্রিয়াও আবিষ্কার হয় এ অঞ্চলে।সে সময়টা ছিল গুপ্ত যুগ এবং তখনই বড় আকারে এর চাষ শুরু হয় বানিজ্যিক ভাবে।দানাদার চিনিকে বলা হত খন্ড বা khanda সেখান থেকেই ক্যান্ডি candy শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। দানাদার চিনি বহন ও সংরক্ষন সহজ তাই তখন থেকে বিভিন্ন পর্যটক,বুদ্ধ মুনিঋষি ও ঔপনিবেশিকের হাত ধরে এই অমৃত পরিচিতি পায় পৃথিবীবাসির কাছে।
আঁখ গাছ
আঁখের চমৎকার ফুল
আঁখের রস বা চিনি যতই মিষ্টি হোক তার সাথে মানবসভ্যতার ইতিহাস এর যে বেদনাদায়ক রূপ জড়িয়ে আছে তা কিন্ত মোটেও মিষ্টি নয়।ইউরোপবাসি আঁখের সাথে মোটেও পরিচিত ছিলনা যেহেতু এটা এশিয়াতেই জন্মাত।পর্যটকদের গাছে এটি ছিল বিষয় বা 'মধুভরা কান্ডের গাছ'।ক্রিস্টোফার কলম্বাসের সাথে ১৪৯২ তে এটি নতুন বিশ্বের দিকে যাত্রা শুরু করে।তার হাত ধরে আঁখ পৌঁছায় ডোমিনিকান রিপাবলিকে সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ব্রিটিশ কলোনিতে।
আজকে ব্রাজিলে সবচেয়ে বেশি চিনি উৎপাদিত হয় কিন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার সেখানে আঁখ আগে কখনো ছিলই না।ব্রিটিশদের কাছে চিনির ব্যাপক কদর ছিল তাই একে বয়া হতো হোয়াইট গোল্ড।তারা নতুন বিশ্ব আমেরিকার উপনিবেশগুলোতে ব্যাপকহারে আঁখ চাষ শুরু করে।একে একে স্পেন,ফ্রান্স,ডাচ,পর্তুগিজ উপনিবেশেও ছড়িয়ে পরে আঁখ চাষ।দক্ষিন আমেরিকার চমৎকার পরিবেশে দারুন ভাবে খাপ খেয়ে যায় এই বৃহদাকার মধুময় ঘাস।শুধু তো চিনিই নয় গুড়,রাম,ইথানল এসব ববাই প্রোডাক্ট পাওয়া যেত আঁখ থেকে।তাই বাড়তে থাকে চাষের পরিধি।একসময় ঔপনিবেশিকরা উপলব্ধি করে যে আঁখ চাষের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল তাদের নেই।তখন থেকে ভয়ানক হারে শুরু হয় দাস ব্যাবসা।
সুগারকেন প্লান্টেশনকে বিবেচনা করা দাস ব্যবসার ইঞ্জিন হিসাবে।কারন তখন থেকে আমেরিকার চিনির খামারে কাজ করার জন্য প্রচুর লোককে ধরে আনা হতো।তাদের উপর চলত অমানুষিক অত্যাচার।ইতিহাসে এটা ক্যারিবিয়ান স্লেভারি নামে পরিচিতি লাভ করেছে।তখন দাসদের তৈরি চিনি ইউরোপে বিক্রি করে যে টাকা হতো তা খরচ করা হতো আরো দাস ধরে আনার জন্য।ইতিহাসজ্ঞদের কাছে এটা পরিচিত The slave triangle বা দাসচক্র হিসাবে।১৫০৫ প্রথম জাহাজ কৃতদাস নিয়ে সাগরে ভেসেছিল এবং এই যাত্রা অবিরত ছিল পরবর্তি ৩০০ বছর ধরে।
সে সময় চিনির শক্তি এত বেশি ছিল যে ধারনা করা হয় আমেরিকা এই প্রচুর চিনি উৎপাদনের ফলে শক্তিশালী হয়েছে এবং এই ক্ষমতা দিয়েই ব্রিটিশদের হাত থেকে নিস্তার লাভ করেছে অর্থাৎ আমেরিকার স্বাধীনতা লাভের পেছন রয়েছে চিনির ভূমিকা।একটা জিনিস কি জানেন পৃথিবীতে মাত্র দুইটা দেশ আগে ঘোষনা দিয়ে স্বাধীন হয়েছে তার একটি হলো আমেরিকা আর অন্যটি??অন্যটি হচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।
দাসদের দিয়ে আঁখ চাষের কিছু দৃশ্য
আলু(Potato):
আলু শুধু পৃথিবীর চতুর্থ প্রধান খাদ্যসশ্যই নয় বরং সবচেয়ে জনপ্রিয় সবজি।আলুর আদিনিবাস আন্দিজ পর্বতমালার কাছে আমেরিকায়।এসব অঞ্চলে অনেক ধরনের বুনো আলু জন্মাত তবে পেরুতে প্রথম চাষ শুরু হয়।আলুর বৈজ্ঞানিক নাম সোলানাম টিউবারোসাম (Solanum tuberosum)।এটি এক বর্ষজীবী স্টার্চে ভরা রূপান্তরিত মূল বা টিউবার।আমাদের দেশে আলুর ফুল হয়না কিন্ত শীতপ্রধান দেশে আলু গাছে চমৎকার ফুল হয়।
আলু গাছ
দেখে নিন আলুর ফুল
এই সুস্বাদু সবজিটির সাথে জড়িয়ে আছে ইতিহাসে সবচাইতে বড় দুর্ভিক্ষ(Great Irish potato femine)। আয়ারল্যান্ড তখন ছিল ৮মিলিয়ন লোকের গরিব একটি দেশ।এই দুর্ভিক্ষের ফলে এক মিলিয়ন লোকের মৃত্যু হয় এবং আরো এক মিলিয়ন লোক আমেরিকায় মাইগ্রেশন করে।১৮৪৫ থেকে ছয় বছর ধরে চলা এই মহা দুর্ভিক্ষ আয়ারল্যান্ড এর জনসংখ্যা ২৫ ভাগ কমিয়েই দেয়নি বরং জাতীয়,রাজনৈতিক, সামাজিক ও কাঠামোগত পট পরিবর্তন করে দিয়েছে চিরতরে।
আয়ারল্যান্ড এর গরিব চাষিরা মাটির ঘরে পোষা প্রানীর সাথে একত্রে পুরো পরিবার নিয়ে বাস করত।১৫০০ সালের পর ব্রিটিশদের কল্যানে সেদেশে আলু আসে।ভেজা ও ঠান্ডা আবহাওয়াতে ভীষণ ভাল ফলন হয় বলে সেদেশে আলু খুব জনপ্রিয় হয়ে গেল।প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ শুধু আলু আর পানি খেয়ে বেঁচে থাকত।তাতে পেটও ভরত স্বাস্থ্যও ভাল থাকত।অবস্থা এমন ছিল যে বছর শেষে আলু ফুরিয়ে গেলে বেশিরভাগ পরিবার আধাপেটা খেয়ে বাঁচত নতুন ফসল আশার আগ পর্যন্ত।কিন্ত ১৮৪৫ সালে হঠাত আলুর গাছগুলোর পাতা কালো হয়ে কুঁকড়ে যেতে লাগল।এই ভয়াবহ মড়ক আগুনের বেগে ছড়িয়ে পড়তে লাগল সব ক্ষেতে।এই রোগটির নাম লেট ব্লাইট অফ পটাটো।দায়ী এক ধরনের ছত্রাক যা ভেজা ও ঠান্ডা আবহাওয়াতে মড়কের মত ছড়ায়।গাছ তো নষ্ট করেই আলুও কালো হয়ে পচে যায় আর ছড়ায় বিকট গন্ধ।
লেট ব্লাইট আক্রান্ত আলু
এ রোগের সাথে সেদেশের লোক পরিচিত ছিলনা।তাই প্রায় অর্ধেক ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শুরু হলো দুর্ভিক্ষ।পরের বছর রোগসহ আলু রোপনের ফলে সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে গেল।দুর্বিসহ হয়ে উঠল দুর্ভিক্ষ,মানুষ মরতে লাগল না খেয়ে,টাইফাস,ডায়রিয়া,জ্বর ইত্যাদিতে।ব্রিটিশ সরকার সে সময় অনেক রকম নীতি নিয়েছে মানুষকে বাঁচানোর কিন্ত কোনোটাই তেমন কাজের ছিল না।অনেকগুলো ছিল হাস্যকর।পৃথিবীজুড়ে হয়েছে সমালোচনা এগিয়ে এসেছে অনেক সেচ্ছাসেবী সংগঠন কিন্ত কিছুই এই দুর্ভিক্ষ আঁটকাতে পারেনি।পরে খুবই নিন্মমানের জাহাজ তৈরি করে সেখানে মৃতপ্রায় অনেক পরিবারকে বহন করে রেখে আসা হয়েছে উত্তর আমেরিকায়।ব্রিটিশ সরকারের এই জাহাজগুলোর নামই হয়ে গিয়েছিল কফিন শিপ যা এক মিলিয়নের বেশি মানুষকে আমেরিকায় বহন করেছিল।অল্প কথায় সেই মহাদুর্ভিক্ষের কাহিনী বলা আমার পক্ষে সম্ভব না।দীর্ঘ ছয়টি বছর ধরে মানুষের না খেয়ে মরার কষ্টের কিছু আভাস পাওয়া যাবে নিচের ছবি গুলোতে।
সেই মহা দুর্ভিক্ষের স্মরনে তৈরি কিছু ভাস্কর্য
আঙুর (Grape):
এই লোভনীয় ফলটি পছন্দ করেনা এমন লোক কমই আছে।রসে টসটসে ফলটি মুখে দিলেই যেন পাওয়া যায় অমৃতের স্বাদ।এই আঙুর দিয়েই অতি প্রাচীনকাল থেকে তৈরি হতো ওয়াইন।আজ থেকে ৮০০০ বছর আগেও ওয়াইন তৈরি হতো বলে জর্জিয়ার এক প্রত্নস্থানে প্রমান পাওয়া গেছে।আর্মেনিয়ার ৪০০০ বছর আগের নিদর্শনে পাওয়া গেছে ওয়াইনের কারখানা।মিসরেও ওয়াইনের ব্যবহার ছিল বলে প্রমান আছে।
আঙুর বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠল কান্ডের লতানো উদ্ভিদ।এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ভিটিস ভিনিফেরা(Vitis vinifera)।এই আঙুরের রস দিয়ে ওয়াইন তৈরির সাথে সম্পর্কিত রয়েছে উল্লেখযোগ্য এক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার।
আঙুরের মিষ্টি রসে ইস্ট নামক ছত্রাক যোগ করলে গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় ইথাইল এলকোহল।এভাবে ওয়াইন তৈরি করে কাঠের পিপেতে ভরে তা রখা হত সংরক্ষনের জন্য।কিন্ত ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে এলকোহল থেকে এসিটিক এসিড তৈরি হয়ে যেত বলে ওয়াইনের স্বাদ হয়ে যেত টক।
ওয়াইনের এমন নষ্ট হওয়া ঠেকাতে বহু বিজ্ঞানী গবেষণা করতেন।১৮৬৪ সালে লুই পাস্তুর আবিষ্কার করেন পিপা সিল করার পর যদি ওয়াইনকে ফুটিয়ে নেয়া হয় তবে সব ব্যাক্টেরিয়া মরে যাওয়ার ফলে ওয়াইন আর নষ্ট হয়না।এর জন্য তিনি তিনটা জারে মাংসের ঝোল নিয়ে গরম করেন।প্রথম যার মুখবন্ধ করে গরম করা হয়,২য় জারে গরম করার পর মুখ বন্ধ করা হয়,৩য় জার গরম করার পর মুখ খুলে দেয়া হয়।কিছুদিন রাখার পর প্রথমটি বাদে বাকি দুটোর ঝোলই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা নষ্ট হয়ে যায়।
ভাবলে অবাক লাগে এই সাধারন জিনিসটি তখন মানুষ জানতো না।তার এই সহজ কিন্ত যুগান্তকারী আবিষ্কার খাদ্য সংরক্ষনে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল।তার সম্মানে পানীয় ফুটিয়ে সংরক্ষনের পদ্ধতির নাম রাখা হয় পাস্তরাইজেশন।পাস্তুরিত দুধ,ক্যান ফুড ইত্যাদি খাদ্য জগতে এক বড় বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিল।আমরা এখনও সেই আবিষ্কারের ফল ভোগ করছি।
আঙুর
লুই পাস্তরের পরীক্ষা
এবার সংক্ষেপে এমন কিছু গাছের কথা উল্লেখ করব যা বিখ্যাত হয়ে আছে কিছু যুগান্তকারী মূহুর্তের জন্য--
আপেল(Apple):
মহামতি নিউটনের মাথায় যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সূত্র এসেছিল তার পেছনে অবদান ছিল একটি আপেল গাছের।এই গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ম্যালাস ডোমেস্টিকা (Malus domestica)।
আসলেই তিনি ছিলেন জিনিয়াস কারন আমার মাথায় আপেল পড়লে আমি সেটা তুলে খাওয়া শুরু করতাম।এই ছবিটি কিন্ত বেশ মজার।
লেবু(Lemon):
আগেকার দিনে নাবিকদের মাসের পর মাস সমুদ্রে থাকতে হতো।যেহেতু তাজা শাক সবজি বা ফল বেশিদিন সংরক্ষন করা যেত না তাই তাদের শুকনো মাংস,মাছ আর রুটি দিয়েই কাজ চালাতে হতো।এর ফলে দেখা দিত ভিটামিন সি এর ঘাটতি এবং স্কার্ভি রোগ। নাবিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ত আবার মৃত্যুও হতো।ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি হয় এবং লেবুতে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি আছে জানার পর অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যায়। লেবু জাতীয় ফলের (Citrus fruits)ভিটামিন সি তাদের এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছিল।ব্রিটিশ নাবিকরা এই লেবুর বদৌলতেই দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রে ঘুরে বেড়াতে সক্ষম হয়েছিল।আরো সক্ষম হয়েছিল দূরদূরান্তের দেশ দখল করে উপনিবেশ গঠন করতে।
সাইট্রাস ফ্রুট
হেমলক (Poison hemlok):
সকলেই আমরা জানি একজন বিখ্যাত দার্শনিক কে জোর করে বিষপান করতে বাধ্য করা হয়েছিল।সক্রেটিসের মহাপ্রয়ানের সাথে সাথেই সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেছিল পয়জন হেমলক নামক গাছটি।এর পাতা বীজ মূল সবকিছুতেই রয়েছে বিষাক্ত এলকালয়েড যা অধিক পরিমানে শরীরে প্রবেশ করলে মৃত্যু ঘটে।এই বিষ আসলে মারাত্বক নিউরোটক্সিন যা স্নায়ু অবশ করে মানুষকে প্যারালাইজড করে দেয়।ফুসফুস এবং হার্টের মাসল অচল হয়ে গেলে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু ঘটে।এই গাছের আসল নাম কনিয়াম ম্যাকুলাটাম(Conium maculatum)।
পয়জন হেমলক
ছবিতে সক্রেটিসের হেমলক পান
মশলা(Spices):
দক্ষিন এশিয়া ছিল মসলার ভান্ডার।কলম্বাস নতুন মশলার খোঁজে ভারতবর্ষ খুঁজতে গিয়েই আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন।(কেমনে সম্ভব!!কই ভারত আর কই আমেরিকা!!)
টেনেটুনে ব্লগটিকে হয়ত আরো লম্বা করা যেত কিন্ত আজ এখানেই শেষ করছি।এই দুইটি সিরিজ লিখতে গিয়ে নতুন করে অনুভব করলাম আমাদের এশিয়া মহাদেশ প্রাচীন কাল থেকেই প্রাকৃতিক সম্পদে কত সমৃদ্ধ ছিল।কিন্ত দিনেদিনে চিট,বাটপাড় এবং চোরের দল সম্পদ লুণ্ঠন করে সোনার মহাদেশ কে এলুমিনিয়ামের মহাদেশে পরিনত করেছে।যা তারা আমাদের কাছে শিখেছে,নিয়েছে তা আমাদের এখন টাকা দিয়ে তাদের কাছে কিনতে হয়।আফসোস!!!
তথ্যসূত্র:উইকিপিডিয়া, ছবি:ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৮