এটি একজন আমেরিকান দরিদ্র কালো মেয়ের কাহিনী।
আমি তখন নিউইয়র্ক শহর থেকে ১১০ মাইল উত্তরে এক গ্রামে বড় একটি কোম্পানীতে কাজ করতাম; শনি, রবিবারে নিউইয়র্ক শহরে গিয়ে কিছু ছেলেমেয়েকে চাকুরীর ট্রেনিং দিতাম। কিছু পরিচিত লোকজন ছিলেন সেখানে, খেয়েদেয়ে, আড্ডা দিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত গভীর হয়ে যেতো; আমি পাহাড়িয়া পথে ফিরতাম।
একরাতে পাহাড়ের মাঝখানেই দেখি আমার গাড়ীতে গ্যাসোলিন কম; ভালো যে, আমি তখন মোটামুটি নীচের দিকে নেমে আসছি; সমতলে নামলেই ১টি গ্যাস ষ্টেশন আছে; আমার অফিসও সেখানে; কিন্তু বাসা তখনো ১৫ মাইলের মতো দুরে; বেশী রাতে আমি কোথায়ও থামতে চাইতাম না। বাধ্য হয়ে গ্যাস ষ্টেশনে থামলাম, এলাকা চুপচাপ, ষ্টোরের ভেতরে ক্যাশিয়ার আছে। আমি গ্যাস নেয়ার সময়, কোন এক পাম্পের পেছন থেকে একজন মেয়ে বেরিয়ে এলো; আফ্রিকান আমেরিকান মেয়ে, পরনে ময়লা জিন্স ও টি-শার্ট; সে হ্যালো বলার পর, কিছু একটা বলার জন্য আমার মুখের দিকে চেয়ে আছে; আমি বললাম,
-বল।
-আমার গাড়ীটার গ্যাসোলিন শেষ হয়ে গেছে, পয়সা নেই, আটকে গেছি।
-গাড়ী কই?
সে আংগুলের ইশারায় ষ্টোরের পাশে পার্ক-করা একটা গাড়ী দেখালো; গাড়ীটা হাল-আমলের মার্সেডিজ।
-ওটি তোমার গাড়ী?
-হ্যাঁ।
-দেখতো তোমার কাপড় চোপড়ের সাথে উহার কোন মিল আছে কিনা? যার মার্সেডিজ থাকে, তার কাছে ক্রেডিটকার্ডও থাকে।
সে চুপ হয়ে গেলো। আমি বললাম,
-তোমার বলা উচিত ছিলো যে, এখান থেকে আধামাইল দুরে রাস্তার পাশে রেখে এসেছ গাড়ীটা; এবং তোমার হাতে গ্যাসোলিন নেয়ার জন্য ২/১ গ্যালন ক্যাপাসিটির একটি পাত্র থাকার দরকার ছিলো।
-আমি সারাদিন তেমন কিছু খাইনি; দাদীর সাথে থাকি, দাদী রুটি, আলু ও ক্যানফুড খেয়ে দিন কাটিয়ে দেয়, আমার গলা দিয়ে নামে না।
-তুমি থাক কোথায়?
-২ ব্লক দুরে।
-এত রাতে এখানে একা আসা বিপদজনক; বেশী রাতে অনেক খারাপ মানুষ বের হয়, তোমাকে নিয়ে যেতে পারে। ভেতরে গিয়ে ১টা স্যান্ডউইচ ও সোডার অর্ডার দাও, আমি গ্যাস নিয়ে ভেতরে আসছি।
ভেতরে সে স্যান্ডউইচের জন্য অপেক্ষা করছে; আমি বললাম,
-চাকুরী করলে তো তুমি দাদীকে নিয়ে ভালোই চলতে পারতে।
-আমার জুতা,কাপড় কিছুই নেই, কাজ খুঁজতে যাবো কিভাবে?
-কারখানার ২নং গেইটে একটি লন্ড্রি আছে, দেখেছো?
-আমি চিনি।
-কালকে, বিকেল ৪/৫টায় ওটার সামনে দাঁড়াইয়ো; শতশত সাদা মেয়ে কাপড় দিতে ও কাপড় নিতে আসবে; তোমার সাইজের মেয়েদের বলিও যে, তুমি কাজ খুঁজতেছ, তোমার জুতা ও কাপড় নেই; ওরা তোমাকে ২/৪ বছরের জুতা, কাপড় দিয়ে দেবে।
মেয়ের হাতে ৫ টা ডলার দিয়ে বেরিয়ে এলাম; প্রায় ২ মাস পেরিয়ে গেছে, ঐ পথে যাওয়া আসা আছে, মেয়েটা আর চোখে পড়েনি। একদিন কাজ শেষে ঘরে ফেরার সময়, আমাদের এলাকায় ১টি কেনটাকি ফ্রাইড চিকেনের ড্রাইভ -ইনে সামান্য অর্ডার দিলাম। ক্যাশিয়ারের জানালায় টাকা দেয়ার সময়, ক্যাশিয়ার হ্যালো বলার পর, আমাকে বলছে,
-মি: আমার দিকে তাকিয়ে দেখো!
-দেখছি, তুমি বেশ সুন্দরী।
-তুমি আমাকে চেননি; মনে আছে গ্যাস ষ্টেশনে রাতে আমাকে চাকুরীর কথা বলেছিলে? আমি এখানে চাকুরী পেয়েছি।
-তুমি ক্যাপ ট্যাপ পরে এত সুন্দরী হয়ে গেছ যে, তোমাকে চেনা সোজা ব্যাপার নয়। খুবই ভালো খবর।
সে টাকা নিবে না; বললো, নিজের পকেট থেকে দেবে; আমি জোর করলাম, নিলো না। বললো,
-সময় পেলে আসিও, আমি সপ্তাহে ৬ দিন বিকেলে কাজ করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:৪৭