বীণা খুবই আধুনিক ভাবনার মেয়ে ছিলো; কিন্তু সে সন্ধ্যার পর ভুতের ভয় পেতো। স্কুলের কোন অনুষ্ঠান কিংবা নিমন্ত্রণে উপস্হিত থাকার কারণে সন্ধ্যা হয়ে গেলে, বীণাকে ঘর অবধি দিয়ে আসা লাগতো; সে বট, অশ্বথ ও তেতুল গাছের নীচ দিয়ে হাটতো না। আমি ঠিক করলাম, মাঝরাতে তার জানালার পাশে বিছানার সাদা চাদর জড়ায়ে এক মিনিট দাঁড়াবো। তার রুমে দাদীও থাকে, গরমের সময় সবার জানালা খোলা থাকে। ওদের বাড়ী আমাদের বাড়ী থেকে আধা কিলোমিটারের চেয়ে একটু বেশী।
শুক্লপক্ষের চাঁদ হেলে পড়েছে, আমি মাঝরাতে ওদের কাছারীর পাশ দিয়ে, উঠান হয়ে ওর জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তার রুমটা ঘরের সর্ব দক্ষিণে, বাড়ীর পুকুরের উত্তর পাড়ের সাথে লাগানো। জানালা খোলা, জানালার সাথে তার পড়ার টেবিল লাগানো, টেবিলের পরেই ওর খাট; আবছা আলোতে যতটুকু বুঝা যায়, সে জানালার দিকে মুখ করে ঘুমাচ্ছে; আমি নিজকে চাদরে ঢেকে জানালায় দাঁড়ায়ে হাত নাড়লাম কয়েকবার, কোন খবর নেই। আমি কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে, আশপাশের অবস্হা বুঝলাম, সব চুপচাপ। পাশেই পাটিপাতা গাছ, ১টা ডাল নিয়ে তার গায়ে সুড়সুড়ি দেয়ার দরকার; আমি ডাল ভাংগার চেষ্টা করছি, এমন সময় ওদের উঠান থেকে ওর ৩/৪ চাচা ও চাকর ছেলের চীৎকার শুনলাম,
-বাড়ীতে ডাকাত পড়েছে, ডাকাত পড়েছে, আপনার সবাই আসেন, আমাদের বাড়ীতে ডাকাত পড়েছে, আমাদের বাঁচান।
আমার মাথা ঘুরে গেলো, ডাকাত কোথা থেকে আসলো এই সময়ে? বুঝলাম ডাকাত মাকাত কিছু না, কেহ হয়তো আমাকেই দেখেছে, মনে করেছে ডাকাত; দিলাম দৌঁড়; পুকুরের পাড় হয়ে, মাঠের আনাচ কানাচ হয়ে দৌঁড়াচ্ছি যাতে কেহ না দেখে; ক্রমেই গ্রামে শোরগোল শুনা যাচ্ছ, ২/৪ জন হারিকেন ও টর্চ নিয়ে সেইদিকে যাচ্ছে; এই ধরণের কোন কিছু আমার মাথায় আসেনি আগে। আমি কাছারীতে পৌঁছে শুয়ে পড়লাম; ভয় লাগছে কেহ দেখলো না'তো?
আমাদের বাড়ীর লোকজনও উঠে গেছে; আমার ১ চাচা বের হলেন, তিনি যাবার সময় আমাকে ডাকলেন; আমি বললাম, আসছি। আমি উঠে ঘাটের কাছে দাঁড়ালাম, পুরো গ্রামে হৈচৈ, লোকজন ডাকাডাকি করছে। কিছুক্ষণ পর আমার মা এলেন, বললেন,
-তুই যাচ্ছিস না? গিয়ে দেখে আয়, মনে হয়, সাহাদের বাড়ীতে কিছু ঘটেছে।
আমি ধীরে সুস্হে রওয়ানা হলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২২ রাত ১২:১৭