আগের পর্ব:
সমুদ্রে যাপিত জীবন-১ ( মোবাইল পর্ব )


সমুদ্রে যাপিত জীবন - ২ ( চীন দেশে জ্ঞানার্জন পর্ব )




আরো আগেই ইচ্ছে ছিল লেখার কিন্ত ব্যস্ততার কারনে হয়ে উঠছিলনা ।এবার ধারাবাহিক ভাবে লেখার ইচ্ছে পোষন করছি ।শিক্ষানবিশ হিসেবে মাত্র একবছর জাহাজে কাটিয়েছি , এখনো পাড়ি দিতে হবে বহুদুর ।আপাতত এই এক বছরের যাপিত জীবন-ই তুলে ধরব আপনাদের সামনে ।
## একাডেমিতে থাকাকালিন একটা কথা শুনতাম '' mariner is not only a proffesion ,but also a lifestyle'' জাহাজে গিয়ে এর মর্মার্থ উদ্ধার করেছি । প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডিউটিতে যাওয়া ,জাহাজেই খাওয়া-দাওয়া-ঘুম , বিনোদন , প্রথাগত ৯-৫টা চাকরি নয় বরং নির্দিষ্ট সময় ( ৪-৬ মাস ) এর জন্য জাহাজে থাকা , যে কোন ইমার্জেন্সি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকা ।রাত মানেই বিশ্রাম নয় বরং কারো কারো জন্য নতুন দিনের শুরু হওয়া ( জাহাজে সাধারনত সেকেন্ড অফিসারের ডিউটি শুরু হয় রাত ১২টা থেকে )।জাহাজে দিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রতিটি মুহুর্তই কেউ না কেউ জেগে থাকে ।
এই এক বছরের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য দিন হচ্ছে ঈদের দিনটি ।
২৩ বছরের এই জীবনে এবারই প্রথম বাবা- মা কে ছেড়ে ঈদ করেছি ।অন্য রকম এক অনুভুতি কিছুটা দুঃখমিশ্রিত , কিছুটা হতাশা , কিছুটা আনন্দের ।আমাদের জাহাজে অফিসার-ক্রু মিলে প্রায় ২৮ জন ছিলেন, তার মধ্যে আমি ও আমার অন্য ৩ ব্যাচমেট ছিলাম নতুন ।আমাদের জাহাজ তখন ছিল সিংগাপুর স্টেইটে ,প্রেয়ার রুমে ঈদের নামাজ পড়ে সবার সাথে কোলাকুলি করে একে অন্যের কেবিনে ঘুরে বেড়িয়েছি............ঈদের সময় বন্ধু, পাড়া-প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঘুরতে যাওয়ার মত ।দুপুরের পার্টি শুরু হল আমাদের ( আমরা ৪ জন শিক্ষানবিশ )জাহাজে প্রথম ঈদ উদযাপনের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে । এরপর খাওয়া - দাওয়া ,হই-চই করে প্রিয় মানুষদের অভাব ভুলে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করা ।তারপর যথারীতি আবার নিজ নিজ রুটিন বাঁধা ছকে ফিরে যাওয়া ।
ঈদের দিন জাহাজের ডেকে
এ কথাগুলো শুনে কিছুটা যান্ত্রিক জীবন মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে আসলে ততটা নয় ।এই কর্মব্যস্ত জীবনেও সমুদ্রচারীরা নিজেদের মধ্যে আড্ডা , রস-রসিকতা , আবেগ বিনিময়ের মাধ্যমে একে অন্যকে সাহস জোগায় ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১:২১