আগের পর্বের পর..................
সমুদ্রে যাপিত জীবন-১ ( মোবাইল পর্ব )
আরো আগেই ইচ্ছে ছিল লেখার কিন্ত ব্যস্ততার কারনে হয়ে উঠছিলনা ।এবার ধারাবাহিক ভাবে লেখার ইচ্ছে পোষন করছি ।শিক্ষানবিশ হিসেবে মাত্র একবছর জাহাজে কাটিয়েছি , এখনো পাড়ি দিতে হবে বহুদুর ।আপাতত এই এক বছরের যাপিত জীবন-ই তুলে ধরব আপনাদের সামনে
## একবছর সময়টির শেষ ভাগ কাটিয়েছি চীনে ড্রাই-ডকে ।প্রতিটি জাহাজকে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর রিপেয়ার ও মেইন্টেনেন্স এর জন্য ড্রাই-ডক করতে হয় । আমার সৌভাগ্য আমি ক্যাডেট লাইফেই ড্রাই-ডক দেখার চান্স পেয়েছি । ড্রাই - ডকিং এর গল্প পরে এক সময় করব । প্রায় দেড় মাস ছিলাম চীনে । এ সময় ঘুরেছি বেশ কিছু জায়গায় ।আমার ৮-৫টা ডিউটি ছিল । সারাদিন ডিউটির পর রাতে সবাই মিলে ঘুরতে বের হতাম । আমাদের ড্রাই-ডকটি গুয়াংজু শহরের কাছাকাছি ছিল ।এখানে একজন সাহাবীর মাজার ও চীনের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদটি অবস্থিত যা দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে ।চীনাদের সবচেয়ে বড় উৎসব চাইনিজ নিউ ইয়ার যা ২২শে জানুয়ারি তে ছিল । ইংরেজী নববর্ষ তেমনটা উৎযাপন না করলেও চাইনিজ নববর্ষ পালন করা হয় বেশ বড় করে ।সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে এ সময় ।নিউ ইয়ারের কিছু আগ হতেই ছুটি শুরু হয়ে যায় । ব্যস্ত ড্রাই-ডকটি যেন মুহুর্তেই মৃত্যুপুরি ।বাইরের তাপমাত্রা মাত্র ৩ডিগ্রী থাকা সত্তেও চাইনিজ নিউ ইয়ার উদযাপন করতে আমরা যাই এক চীনা পরিবারের বাসায় ।
পরিবারটির প্রধান ছিল আমাদের জাহাজের একজন সাপ্লায়ার ।চাইনিজ নিউ ইয়ারের সময় চীনা পরিবারগুলো একত্রিত হয় ।পরিবারের ছেলে হয়ত কাজ করে শত মাইল দুরের অন্য কোন
প্রভিন্সে ,সারা বছর যার কোন দেখা নেই , নিউ ইয়ার সেখানে পুনর্মিলনীর উপলক্ষ্য নিয়ে আসে অনেকটা আমাদের ঈদের মত ।দিনটা বেশ মজায় কেটে ছিল শুধু খাওয়ার পর্বটা ছাড়া ।চীনে গিয়ে চপস্টিকে খাওয়াও রপ্ত করেছি তবে সমস্যা ছিল অন্যখানে ।শুরুতে পরিবারটি আমাদের আপ্যায়ন করে বিভিন্ন ফল দিয়ে।তখনি ক্যাপ্টেন স্যার বলে ছিলেন , বেশি করে খেয়ে নাও । পরে এই কথার মাজেজা বুঝতে পেরেছি ।মি. কিং (পরিবারটির প্রধান ) জানতেন আমরা সবাই মুসলিম ।তাই, কোন হারাম খাবার রাখেন নি মেন্যুতে ।ভাত, সব্জি,মুরগি,চিংড়ি,স্কুইড আর হাঁসের মাংস পরিবেশন করা হয় আমাদের ।
কিন্তু তাদের মশলা বিহীন সিদ্ধ মাংস ও সবজি যে আমার রুচে না ।করুন নয়নে তাকিয়ে খালি ভাত আর কিছু সিদ্ধ আলু তুলে নিলাম ।মনে মনে ভাবছি দেশে যে এতদিন কত চাইনিজ খেলাম ওইগুলান কই ?
এক ঘন্টা যাবৎ খাবার অভিনয় করে গেলাম । তবে আমদের মাঝে কয়েক জন বেশ উপভোগ করল । খাওয়া শেষে পরিবারটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও ফটোসেশন করে বিদায় নিলাম আমরা ।
চলবে................
বিঃদ্রঃ খুব সম্প্রতি সামুতে দুই বছর পূর্ণ হল........যারা বিভিন্ন সময় আমার ব্লগে এসে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন তাদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ রইল..........।