রুবাইদা গুলশান। ব্লগে যিনি পরিচিত "নীল মনি" হিসেবে। লেখিকা হিসেবে অপেক্ষাকৃত নবীন, কিন্তু তাঁর লেখায় মেলে অসাধারণ মুন্সিয়ানার পরিচয়। "অরণ্যের গুঞ্জন" তাঁর লেখালেখির সুবিশাল বৃত্তে ৪র্থ মলাটবদ্ধ পরিবেশনা। অমর একুশে বইমেলা ২০১৬-তে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘অন্তরালের বর্ণফুল’ প্রকাশিত হয়। ২০১৭ সালে বের হয় কবিতার বই ‘বিভ্রমে নীলাম্বরী’। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় গল্প গ্রন্থ ‘সেফটিপিন’। এই গ্রন্থটির জন্য তিনি গেল বছর নজরুল একাডেমি কর্তৃক ‘শেখ ফজলল করীম’ সাহিত্য সম্মাননা পেয়েছেন।
মোট ১৭টি ছোট গল্প নিয়ে "অরণ্যের গুঞ্জন" তাঁর স্বকীয় বেশিষ্ট্যের একটি অভাবনীয় উচ্চারণ! গতানুগতিক সস্তা বিনোদন দেয়ার প্রচেষ্টা থেকে বেরিয়ে এসে পাঠকদেরকে ভাবনার জগতে হারিয়ে যেতে সুতীব্র আকর্ষণে বিমোহিত করার প্রয়াস পেয়েছেন সম্পূর্ণ নিজস্ব ভঙ্গিমায়। তাঁর ব্যতিক্রম লিখনশৈলীর সাথে পাঠকদেরকে তিনি আগেও হাতে ধরে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন; যা এই বইটির ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। পাঠকদের মন ও মানসিকতাকে প্রবলভাবে আলোড়িত করার পারঙ্গমতা তাঁর স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। গোটা সমাজ ও সুসংস্কৃতির প্রতি তাঁর অপূর্ব মমত্ত্ববোধ, মানুষের জন্য তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা, সর্বোপরি সমাজের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোকে মলাটবন্দি গল্পের ভেতর দিয়ে তুলে ধরার প্রয়াস সুস্পষ্ট সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তাঁকে সমাজ সংস্কারক লেখিকা হিসেবে অভিহিত করলে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। অপরদিকে মানুষের জীবনে প্রতিনয়ত ঘটে যাওয়া সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-ভালোবাসা, সমাজ-সংসারের বিভিন্ন হৃদয়স্পর্শী ঘটনাগুলো ছাপার অক্ষরে তুলে আনার আয়াসসাধ্য প্রচেষ্টার জন্য তিনি অবশ্যই প্রবল প্রশংসার দাবিদার। তাঁর লেখাগুলো সমাজেরই দর্পণ। মানুষের জীবনের আলো এবং অন্ধকারময় জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মুগ্ধতা অনিঃশেষ। আসুন দেখি তিনি পাঠকদের জন্য কেমন আকর্ষণ তাঁর লেখায় সন্নিবেশ করেছেন-
বইয়ের প্রথম গল্পের নাম 'অনুমান'। গল্পটি পড়ার পর পাঠক একেবারেই হতচকিত হয়ে যাবেন। আমাদের ভাবনার পরিধি যে কত সংকীর্ণ তা এই গল্পে সুনিপুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। গল্প পড়ে পাঠক নিজেকে যাচাই করার প্রয়াস পাবেন। মানুষ সম্পর্কে আমাদের ধারণা সুস্পষ্টভাবে বদলে যাবে।
'সাপ' গল্পটি আমাদের সমাজেরই বহুল সংঘটিত দুর্বলের ওপর সবলের ভয়াবহ পীড়নের চালচিত্র। দুর্বলের ওপর নিপীড়ন আবহমান কাল থেকে হয়ে আসছে। সমাজের সবল লোকদের অন্ধকারময় চারিত্রিক দিকের ওপর গল্পটিতে বিশেষ আলোকপাত করা হয়েছে।
'উপহার' গল্পটিতে সমাজের প্রতিষ্ঠিত বিবাহিত পুরুষদের নৈতিকতা বিসর্জনের অপচেষ্টাকে সুন্দরভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরুষরা নিশ্চিতভাবে এ গল্পটি থেকে সুশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন।
'বউ' গল্পটিতে প্রৌঢ় একজন লম্পট লোকের করুণ পরিণতির কথা উঠে এসেছে।
আর 'রূপকথা' গল্পটি এ দেশের হাজারও বেকার যুবকদের জন্য আলোকবর্তিকা হিসেবে অবিস্মরণীয় মাইলফলক হয়ে থাকবে।
এভাবে প্রায় প্রতিটি গল্পই পাঠকদের অন্তরের উৎসমূলে এমনভাবে প্রবিষ্ট হবে যে পাঠক এককথায় বিস্মিত, শিহরিত, বিমুগ্ধ এবং বিমোহিত হতে বাধ্য হবেন। এখানেই লেখিকার মূল সার্থকতা।
আরও বেশ কয়েকটি হৃদয়গ্রাহী গল্প স্থান পেয়েছে বইটিতে। সবগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করার সুযোগ নেই। তবে পাঠকদের বলব- আপনারা বইটি পড়ুন। আশা করি বইটি পড়ে নিজের জীবনের সাথে সম্পর্কিত অনেক ভাবনার খোরাক পাবেন।
সবশেষে লেখিকার উত্তরোত্তর সাফল্য আর সমৃদ্ধি কামনা করছি। আল্লাহ তাঁর লেখার হাতকে আরও শক্তিশালী করুন।
বইটি প্রকাশ করেছে দেশ পাবলিকেশন্স। প্রচ্ছদ করেছেন তৌহিন হাসান। বইমেলার ৩৮৮-৩৮৯ নং স্টলে পাওয়া যাবে ‘অরণ্যের গুঞ্জন’। বইটির মূল্য ১৫০ টাকা।
নীল মনি'র ব্লগ https://www.somewhereinblog.net/blog/neelmoni
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:২৯