ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে একটি ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি প্রায় বিশ মিনিট ধরে। লম্বা রেইনকোট আর চওড়া কার্নিসের হ্যাট পরা থাকায় ভিজে চুপচুপে হওয়ার হাত থেকে রেহাই পেলেও শরীরের পুরোটা শুকনো নেই। ফাঁকফোকর দিয়ে এক-দু'ফোঁটা পানি চুঁইয়ে চুঁইয়ে ভেতরে ঢুকে অস্বস্তির সৃষ্টি করছে।
আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে চাই। একঘন্টার লোডশেডিংয়ের সময় প্রায় হয়ে এসেছে। যদিও লোডশেডিং হলেও এলাকাটায় একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার হবে না। সিটি কর্পোরেশনের ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো জ্বলতেই থাকবে; তবে আমার কাজের জন্য কিছুটা সুবিধা অবশ্যই পাব। পকেটে হাত দিয়ে ছোট্ট লেদারব্যাগটার স্পর্শ নিলাম। এই ছোট্ট ব্যাগে কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আছে যা আমার পেশায় খুবই দরকারি জিনিস।
রাত ঠিক একটায় বিদ্যুৎ চলে গেল। মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়ে এগিয়ে গেলাম বাড়িটার দিকে। এই আবাসিক এলাকাটা এখনও তেমন ঘিঞ্জি হয়ে ওঠেনি। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাড়িঘর উঠছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুটি বাড়ির মাঝামাঝি জায়গা ফাঁকা রয়ে গেছে। আমার জন্য এটাও একটা সুবিধা। অবশ্য আমাকে এ কাজের জন্য ভাড়া করা লোকটা মোটামুটি আরও কিছু সুবিধার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছে।
গেট ভেতর থেকে বন্ধ। বাড়ির পেছনে চলে এলাম। দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে একটু আন্দাজ করার চেষ্টা করলাম কতটুকু উঁচু। ফুট সাতেক হতে পারে। সাত ফুট উঁচু দেয়াল টপকানো আমার জন্য কোন ব্যাপারই নয়। হাতে শক্ত আর মোটা চামড়ার গ্লাভস পরে নিয়ে ছোট্ট একটা লাফ দিলাম। উপরে কাচ গাঁথা থাকলেও হাতে তেমন কিছু অনুভব করলাম না। দোল খেয়ে দেয়ালের উপর উঠে আবছা অন্ধকারেই চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম।
কেউ থাকার কথা নয়, তারপরও অভ্যাসবশত তীক্ষ্ণ চোখে এদিকওদিক চেয়ে নিশ্চিত হয়ে নিলাম। এ পেশায় সাবধানতার মার নেই। এতদিন ধরে সাবধানে কাজ করার কারণেই পুলিশ আমার টিকিটিও ছুঁতে পারেনি।
মাটিতে নেমে নিঃশব্দ পায়ে পুরো বাড়িটা চক্কর দিলাম। তারপর আস্তে আস্তে কিচেনের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। জানি এটায় তালা দেয়া নেই, শুধু ছিটকিনি মারা। এ ব্যাপারটা বাড়ির মালিকই আমাকে জানিয়ে রেখেছে।
ছোট্ট লেদার ব্যাগটা থেকে অত্যন্ত খাটো একটা শাবল বের করে ছিটকিনির পাশের ফ্রেম এবং দরজার সরু ফাঁকে স্থাপন করলাম। ফাঁকটা খুবই সরু, শাবলের মাথা ঢুকতে চাইছে না। গায়ের জোরে চেপে ঢুকিয়ে দিলাম মাথাটা। তারপর গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে চাপ দিলাম।
একসময় ছিটকিনি থেকে আলগা হয়ে খুলে এল দরজাটা। নিঃশব্দে ঢুকে পড়লাম কিচেনের ভেতর। দরজা ভেজিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চোখে অন্ধকার সইয়ে নিলাম। রেইনকোট আর জুতো জোড়া খুলে নিয়ে রেইনকোটটা একটা হুকে আটকে তারপর আস্তে আস্তে পা বাড়ালাম। বেডরুম বাদ দিয়ে গোটা বাড়িটা সার্চ করলাম নিঃশব্দ পায়ে। তারপর বেডরুমের দরজায় কান পাতলাম। কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। আস্তে করে হাতলে মোচড় দিলাম। ভেতর থেকে তালা লাগানো। অবশ্য এমনই থাকার কথা।
ব্যাগের পকেট থেকে সরু একটা তামার তারের টুকরো বের করে তালায় ঢুকিয়ে দিলাম। আস্তে আস্তে অনেকক্ষণ কসরত করার পর মৃদু ক্লিক শব্দ করে খুলে গেল লক। ধীরে ধীরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আলতো মোচড় দিতেই খুলে গেল দরজা। নিঃশব্দে ভেতরে প্রবেশ করে দরজা ভেজিয়ে দিলাম।
আগামী পর্বে সমাপ্য।
ছবিঃ গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:১৪