somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জোনাকী জীবন (১)

১২ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালে হাঁটতে হাঁটতে রাঁচীরোড স্টেশন পর্যন্ত চলে গিয়েছিল তৃষা। এই রাস্তা ধরে সোজা চলে গেলে হাজারিবাগ। উল্টোদিকে গেলে একটা গাঢ় সবুজ পাহাড় পেরুলেই রাঁচী। ঠিক মাঝখানে এই রামগড়। রামগড়ের ঠিক মাঝ বরাবর অজস্র বড় বড় পাথরের ফাঁকফোকর দিয়ে বয়ে চলেছে দামোদর। এখানকার লোকেরা দামোদরই বলে। তৃষা প্রথমবার এসে এটাকে একটা পাহাড়ী নদী ভেবেছিল। সকালে এবং বিকেলের নরম আলোয় জলের অজস্র ছোটবড় ধারায় ঘেরা পাথরের ওপর বসে থাকতে বেশ ভালোই লাগে। আজও ইচ্ছে ছিল নদীর দিকেই যাবে। কিন্তু রাস্তায় নামতেই দেখা হয়ে গেল শোভনের সঙ্গে। রামগড় গ্লাস ফ্যাক্টরির অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শোভনের সঙ্গে তৃষার জামাইবাবু সুবীর বোসের সম্পর্কটা কিছুটা ভাই-ভাই, কিছুটা বন্ধুর। শোভনের চেয়ে অবশ্য সুবীর কিছুটা বড়-ই।
সুবীরের এখানে একটা সেরামিক ফ্যাক্টরি আছে। খুব বড় নয়, আবার খুব ছোটও নয়। এই সেরামিক ফ্যাক্টরি থেকে ফায়ার ব্রিক তৈুর হয়। সারা দেশের নানান পাওয়ার প্ল্যান্টে আর স্টীল ইণ্ডাস্ট্রিতে এই ব্রিকের চাহিদা রয়েছে। এই ফ্যাক্টরি থেকেই সুবীরের ভাগ্য বদলে গেছে। এখন প্রচুর টাকার মালিক। হৃদয়টাও অবশ্য অনেক বড়।
গ্লাস ফ্যাক্টরির অধিকাংশ কর্মচারীই বাঙালি। এদের মধ্যে অনেকেই বৃটিশ আমল থেকেই এখানে বসবাস করছে। কেউ সরকারি চাকরিসূত্রে, কেউ বা রেলওয়ের কর্মচারী হিসেবে এখানে বসবাস শুরু করেছিল। এক সময়ে রাঁচী ধানবাদ বোকারো হাজারিবাগ গিরিডি জামশেদপুর অহ্চলে প্রচুর বাঙালির বাস ছিল। অনেকেই এখন আর নেই। তবুও এখনো যারা রয়ে গেছে তাদের সংখ্যাও খুব কম নয়। এইসব প্রবাসী বাঙালিরা প্রায় সকলেই পরস্পরকে চেনে। এই চেনা-চিনির সূত্রেই সুবীরের সঙ্গে শোভনের ঘনিষ্ঠতা।
তৃষার দিদি এষাকে নিয়ে সুবীর এই রামগড়ে পালিয়ে এসে বিয়ে করে ঘর বাঁধে। সদ্য সেরামিক ইঞ্জিনিয়ার সুবীর রামগড়ের একটা কোল রি-ফ্যাক্টরিতে সামান্য চাকরি সম্বল করে এষাকে নিয়ে আসার অল্প কিছুদিন পরে একটা ছোট্ট সেরামিক ফ্যাক্টরির চিফ ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি পায়। নামেই চিফ। আসলে জনা কুড়ি প্রায় লেবারের মাথায় বসে ধীরে ধীরে ফ্যাক্টরির চেহারা বদলে দেবার স্বপ্ন নিয়ে ঢুকেছিল সুবীর। শেষপর্যন্ত কয়েকবছর যেতে না যেতেই পাঞ্জাবী মালিক ইন্দর সিং ফ্যাক্টরিটা সুবীরকে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেশে চলে যাওয়াতেই সুবীরের বরাত ফিরল। পৈতৃক বিষয় সম্পত্তির যতটুকু নিজের বলে ছিল সবকিছু বিক্রি করে এই ফ্যাক্টরি কিনে প্রচণ্ড লড়াইতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নিষ্ঠা শ্রম আর একাগ্রতার ফল ফলতে দেরি হয়নি। কিন্তু একদিকে যখন স্বপ্ন হচ্ছিল দারুণভাবে তখন অন্যদিকে তৈরি হচ্ছিল এক দারুণ শূন্যতা! বিদেশ বি-ভূঁইয়ে এষার গোটা দিন আর রাতেরও অনেকটাই কাটছিল একা। এককিত্বের যন্ত্রণায় অস্থির এষা মাঝে মাঝেই ক্ষোভে ফেটে পড়তো। সুবীর প্রাণপণ বোঝাবার চেষ্টা করতো কিছুদিন পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এষা বিশ্বাস করতে পারেনি। ক্রমশ:ই সে তার মানসিক স্থিরতা হারিয়ে ফেলছিল। মাঝে মাঝে ভীষণরকম ভায়োলেন্ট হয়ে উঠতো। এষার পরিবার এষাকে ত্যাগ করেছিল। সবকিছু মিলে মিশে এক দুর্বিষহ অস্থিরতার মধ্যে থাকতে থাকতে এষা সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেল।
যথাসাধ্য চেষ্টা করেও এষাকে মানসিক দিক থেকে সুস্থ করে ঘরে রাখতে পারেনি সুবীর। তীব্র একটা আতঙ্ক তাকে তাড়িয়ে বেড়াতো--হয়তো কোনোদিন ঘরে ফিরে দেখবে এষা সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে! বাধ্য হয়েই রাঁচীর মেন্টাল অ্যাসাইলামে পাঠাতে হলো এষাকে। আজও প্রতি রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুবীর রাঁচীতেই কাটিয়ে আসে। বাকি দিনগুলোয় ডুবে থাকে নিজের কাজের মধ্যে এবং মদ্যপানে!
অবশ্য মদ্যপানের মধ্যেও তার একটা আভিজাত্যের চেহারা ফুটে ওঠে। ছোট সেন্টার টেবিলের ওপর দামী হুইস্কির বোতল (কখনো স্কচের), সুদৃশ্য বেলজিয়ান কাটগ্লাস, এক প্লেট বাদামী রঙের ভাজা সল্টেড কাজু বাদাম সাজিয়ে নিয়ে বসে। মিউজিক সিস্টেমে বাজতে থাকে রবিশঙ্কর বা আমজাদ আলি কিংবা ভি জি যোগ! কখনো কখেনো দেবব্রত বিশ্বাস কণিকা রেজওয়ানার রবীন্দ্র সঙ্গীতও বাজে। একেবারে একলা। নেশায় মাতাল হয়ে আজ পর্যন্ত কখনো প্রগলভ হয়ে ওঠেনি। বিন্দুমাত্র অশালীন আচরণ করেনি। বলতে গেলে গোটা সময়টাই প্রায় চোখ বুঁজে থাকে। দেখলে মনে হয় কোথায় যেন তলিয়ে গেছে। এই রকমই চলেছে আজ প্রায় বছর সাতেক।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৫:০০
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×