somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃত্ত ভাঙার খেলা (২)

১৩ ই এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৫:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কঙ্কনা কিন্তু সকাল আটটার মধ্যেই এসে গেছে। শুধু তাই নয়, দিদির দায়িত্বজ্ঞানহীনতার লজ্জা গায়ে মেখে মাকে যথাসাধ্য সাহায্য করেছে।
--আমাকে কিছুই বলেনি। একটা ফোনও যদি করতো--কিছুই বুঝতে পারছি না--
দৃশ্যত:ই বিভাসকে বেশ হতাশ দেখাচ্ছিল। বাড়ি ভর্ত্তি লোকজন যে যার মতো সিদ্ধান্তে পৌঁছুচ্ছে।
--দিদি কালীঘাটে গেছে বলে আমার মনে হয় না। অন্য কোথাও--
--কোথায়? তুমি জানো?
--জানি না। তবে দিদি চিরদিনই এ রকম আশ্চর্য সব কাণ্ড করে সকলকে ভীষণভাবে দিশেহারা করে তোলে। তোমাকে বিয়ে করাটাও তো এ রকমই আশ্চর্য ঘটনা--
--তার মানে?
--মানে ওর চরিত্রের একেবারে বিপরীত মেরুর একটা লোককে যখন বাবার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো, আমি বিভাসকে ভালোবাসি--ওকে বিয়ে করবো, শুনে বেশ কয়েক মিনিট বাবা কোনো কথাই বলতে পারেনি। তুমি লক্ষ্য করোনি? অনেকক্ষণ পরে তুমি মঞ্চ থেকে প্রস্থান করার পর বাবা দিদিকে বলেছিল, বিয়ের মতো একটা সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে দিদির আরো কিছুটা সময় নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। কিন্তু দিদির তখন ভাবার সময় ছিল না--
--আমি তো এসবের কিছুই জানি না!
--দু'চার মাসের মধ্যেই দিদি বুঝেছিল তুমি ঠিক সেই মানুষ নও যার স্বপ্ন দিদি দেখতো। আমি বুঝেছিলাম, কিন্তু এসব কথা তোমাকে বলতে আমার মায়া হতো। আমার কিন্তু খুব ভয় করছে বিভাসদা--
অসম্ভব দুটো সুন্দর চোখ মেলে বিভাসের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কঙ্কনা। বিভাস শেষ শরতের ঝকঝকে নীলাকাশের দিকে তাকালো। এক টুকরোও মেঘ নেই। চারিদিকে উজ্জ্বল সোনালি রোদ। বাড়ি ভর্ত্তি কলহাস্যমুখরিত স্বজন পরিজন। নতুন গৃহ সেজেগুজে তৈরি। বসবাসেরও শুভমুহূর্ত এসে গেছে। যার ইচ্ছাতেই মূলত: এই নতুন বাড়ি তারই কোনো হদিশ নেই! কতক্ষণ বিভাস নিজেকে এইভাবে লুকিয়ে রাখবে?
--পুজোপাঠ আজ বন্ধ রাখতে বলবো?
বিভাসের গলায় একজন হতাশ ভেঙে পড়া মানুষের কাতরতা ফুটে উঠলো। কঙ্কনা বললো--
--সে কি! তাই আবার হয় নাকি? পুজো কেন হবে না?
--জয়ন্তী ছাড়া গৃহপ্রবেশের পুজো--
--তোমার মা-বাবা পুজোয় বসবেন। কি আর করা যাবে বলো? এত লোকজন এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে--এঁদের সকলকে ফেরাতে পারবে?
--কিন্তু সবাই যখন জানতে চাইবে জয়ন্তী কোথায় গেল--আমি স্বামী হয়েও জানি না এটা কেমনভাবে নেবে সকলে?
--সে যা হোক কিছু বললেই হবে। জরুরি কাজে বাইরে গিয়ে আটকে গেছে--
--জয়ন্তী এমন একটা কাজ ঠিক আজই কেন করলো বলোতো? পারিবারিক মানসম্মানের কথাটাও একবার ভাবলো না!
--গত কাল-পরশুর মধ্যে ওর সঙ্গে তোমার ঝগড়া-ঝাঁটি হয়নি তো?
--তোমার কি মনে হয়, আমি ঝগড়ুটে?
বিভাসের প্রশ্নের ভঙ্গি দেখে এই সঙ্কট মুহূর্তেও হেসে ফেললো কঙ্কনা। বললো--
--হলে বোধহয় একটু ভালো হতো। এতো শান্ত নিপাট ভালোমানুষ দিদির স্বপ্নে ছিল না বিভাসদা। সব মেয়ে পছন্দও করে ন। একটু রাফ-টাফ্ টাইপের হলে হয়তো--। জানি তোমার খুব খারাপ লাগছে, কিন্তু এটাই সত্যি এবং অবশ্যই আমি দিদির পছন্দ সমর্থন করি না--
--তোমার দিদির কোনো অ্যাফেয়ার-টাফেয়ার কিছু--
--যদি কিছু হয়েও থাকে তবে তা বিয়ের পর তোমার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভালোমানুষীর জন্যেই হয়ে থাকতে পারে--
সিঁড়িতে পায়ের শব্দ। মা আর কল্যাণী। মা মৃন্ময়ী বললেন--
--আর তো দেরি করা যায় না বিভাস। পুরুতমশাই বলছেন সময় পেরিয়ে যাচ্ছে--
--আর আধঘন্টাটাক অপেক্ষা করতে বলো মা--এর মধ্যে নিশ্চয়ই এসে যাবে--
--আমার তো বেশ চিন্তাই হচ্ছে। রাস্তাঘাটের যা অবস্থা--
--মাসিমা, আপনি আর মেসোমশাই তো পুজোয় বসতে পারেন--
জয়ন্তীর কাণ্ডজ্ঞানের ওপর বিন্দুমাত্র ভরসা না রেখেই কথাটা বললো কঙ্কনা। ও জানে এমনটা ঘটাতেই জয়ন্তী কোথাও চলে গেছে নিশ্চয়ই। অস্বস্তিকর আর কিছু ভাবতে চাইছিল না কঙ্কনা। অসম্ভব অপ্রত্যাশিত কিছু করে বসা জয়ন্তীর পক্ষে একটুও কঠিন নয়। আজ পর্যন্ত বাড়ির সকলকে শিহরিত করার মতো অনেক কাণ্ড ঘটিয়েছে বলেই ভেতরে ভেতরে বেশ দুশ্চিন্তাই হচ্ছিল তার। একটা এলোমেলো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই কঙ্কনা চাইছিল মাঙ্গলিক ব্যাপারটা ভালোয় ভালোয় মিটে যাক। কিন্তু মৃন্ময়ী বললেন--
--না না, তা কি করে হয়--যার ইচ্ছেয় এই বাড়ি, পুজোয় তারই বসা উচিত। না হয় আরো কিছুক্ষণ দেখাই যাক--
--তুই কি রে দাদা, সকাল থেকে তোর বউ কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তুই তার কিছুই জানিস না? বৌদির আবার আজকের ব্যাপারটা মনে আছে তো?
এই প্রশ্নের কোনো যুক্তিসঙ্গত উত্তর হয় না। বিভাসের অসহায় অবস্থাটা মৃন্ময়ী অনুভব করলেন। তিনি ইশারায় মেয়েকে চুপ করতে বলে মেয়েকে নিয়েই নীচে চলে গেলেন।
গোটা বাড়িটাই এখন বিরাট একটা বিদ্রূপের মতো বিভাসকে গিলতে আসছে। গত কয়েকমাস যাবৎ এই বাড়ির পেছনে বিভাস সর্বস্ব পণ করেছিল। হাড়ভাঙ্গা এই পরিশ্রমের কোনো প্রয়োজনই ছিল না তার। শুধুমাত্র জয়ন্তীর খেয়াল আর জেদের কারণেই এই বাড়ি শেষপর্যন্ত তৈরি হতে পেরেছে। মনের মতো করে বাড়িটাকে সাজাতে যা যা করণীয় জয়ন্তীর চাহিদা অনুযায়ী তা করেছে। বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়েই সকলে বিভাসের রুচি এবং পছন্দের তারিফ করেছে মুক্ত কণ্ঠে। সে সব শুনে যার আনেন্দে খুশিতে ঝলমল করে ওঠার কথা তারই কোনো হদিশ এই মুহূর্তে নেই!
--আর কতো অপেক্ষা করবে? আমার মন বলছে দিদি ইচ্ছে করেই কোথাও চলে গেছে। এমন কিছু একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যার জন্যে আর ওর পক্ষে এখানে আসা সম্ভব হচ্ছে না--
--সিদ্ধান্ত! তার মানে কি বলতে চাইছো তুমি?
কঙ্কনার আশঙ্কার শব্দগুলো আমূল নাড়িয়ে দিল বিভাসকে। কঙ্কনা বিভাসের উদ্বেগ পুরোপুরি টের পাচ্ছিল। বিভাসের প্রশ্নের উত্তরে বললো--
--ঠিক ঠিক জানি না ব্যাপারটা। তবে আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে দিদির জীবনে এমন কেউ একজন এসেছে যার জন্যে হয়তো--
কঙ্কনার কথা শেষ হওয়ার আগেই বিভাসের ভাই প্রবাল একটা খাম নিয়ে এল বিভাসের কাছে--
--এই খামটা একটা লোক দিয়ে গেল তোকে দেওয়ার জন্য। বললো খুব জরুরি। আর হ্যাঁ, পুরুতমশাই কিন্তু আর দেরি করতে রাজি হচ্ছেন না--
--ঠিক আছে আমি দেখছি।
হাত বাড়িয়ে খামটা নিল বিভাস। খামের ওপর জয়ন্তীর হাতেই বিভাসের নাম লেখা।
(চলবে)
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×