কতদিন ধরে কত পথ চলেছি,
আজো ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের ঘ্রাণ
মধ্যরাতে জেগে ওঠে ।
দেড় লাখ নারীর হারানো সম্ভ্রম হয়ে ওঠে-
আঁধার গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা
বেশ্যা নারীর পায়ের ধুলো ।
আজ ত্রিশ লক্ষ বোকা মানুষের মাংস পচা ঘ্রাণ-
ধোঁয়ার সাথে আজকের যুবসমাজ বুকে পুড়ে নেয়।
আজ হাতে হাত মিলিয়ে ভাষণ দেয় ঐতিহাসিক রাজাকারেরা।
আজ যখন কিছু কষ্টে শিষ্টে বেঁচে থাকা,
অপ্রয়োজনীয়, খেটে খাওয়া হাজার খানেক মানুষ ;
দেয়াল চাপা পড়ে মরে,
তখন ওই আমার সাদাপাকা-উকুন ধরা-জটাচুলের পাগলি মা
খিলখিল করে হেসে ওঠে ।
বলে, "মর, তোরা আরো মর ।
পরদেশীর গুলিতে ত্রিশ লাখ,
দেয়াল চাপা পড়ে এগারশ,
বোমায় হাজার হাজার,
আর প্রতিদিনের যুদ্ধে শত শত,
তোরা মর, আরো মর ।"
বিচার, আইন, সংবিধান,রাজনীতি ...
মা এই কথাগুলো শুনলে খেপে যায় ।
আমার দিকে কাদা ছুড়ে মারে ।
চিৎকার করে, কাদে,আবার হাসে,
বলে, "তোরা সব মরবি!
লোভ তোদের বাঁচতে দেবে না ।"
মার কথা শুনে ভয় হয় ।
বেড়িয়ে পড়ি রাস্তায় ।
রাতের আঁধারে দেখা হয়
চকচকে ছুরি হাতে একদল মানুষের সাথে ।
তবে এরাই কি সেই চার দশক আগের বেয়োনেটধারী পরদেশী?
কখনো দেখি রাস্তার পাশের
ছিন্ন কাথা গায়ে মানুষগুলোকে।
তবে এরাই কি সেই একাত্তরের উদ্ধ্বাস্তু মানুষগুলো?
দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি
কিছু অপর্যাপ্ত বসনা নারীদের ।
কখনো কখনো আর্ত চিৎকার শুনি ।
আবার মুখচেপে ধরা গোঙ্গানীর আওয়াজ !
সেই বীরাঙ্গনা নারীদের মিল পাই ওদের সাথে।
স্টেজে দাঁড়ানো কিছু রাজাকারের বড় গলা শুনি-
পশুর চিৎকারের মত মনে হয় ।
হরতালের কাচ ভাঙা জলন্ত গাড়ি, জলন্ত মনির,
রক্তাক্ত বিশ্বজিৎ,
পঙ্গু লিমনকে দেখি।
অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়া পিশাচগুলোকে দেখি ।
মনে পড়ে ' অপারেশন সার্চ লাইট' -এর কথা ।
আমার পাগলি মায়ের কাছে তো এই যুদ্ধের গল্পই শুনেছি!
তবে কি যুদ্ধ আবার শুরু হলো?
নাকি সেই একাত্তর থেকে এখনো চলছে?
আমি ভয় পাই -
তাকিয়ে থাকি অনাগত সূর্যোদয়ের দিকে-
কখন সূর্য উঠবে!
কখন আসবে যুদ্ধমুক্ত নতুন ভোর!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৩৩