আজকে আমার জন্মদিন। আজ থেকে আঠারো বছর আগের কোনো এক বৃষ্টির রাতে, বলা নেই কওয়া নেই, অনেকটা হুট করেই জন্ম নিয়ে ফেললাম। রাতের বেলা ওয়া ওয়া কান্নার আওয়াজ শুনে আশে-পাশের প্রতিবেশিরা আমাদের বাড়িতে এসে দেখে, বাড়িতে আনন্দের খই ফুটছে। বাড়ির প্রথম ছেলেসন্তান জন্মের খবর পেয়ে আমার মায়ের মতে দুনিয়ার সবাই খুশি। জন্মের প্রায় দের সপ্তাহ পর নিজ সন্তানের জন্মের খবর পেয়ে আমার বাবা খুশি হলেন, সুদূর দুবাই থেকে। তারপর এক এক করে কেটে গেছে আঠারোটি বছর। জীবনের আঠারোটি বছর যে হেলায় খেলায় কাটিয়ে দিতে পারলাম, এতে আমি মহা খুশি। জন্মের পরপর যদি মরে যেতাম? অথবা মায়ের পেট থেকেই মরা হয়ে বের হতাম? তখন এত্ত সুন্দর পৃথিবীটা দেখা হতোনা। রাতের জোনাকীদের সাথে চোখাচোখি হতোনা। চাঁদের সাথে লুকোচুরি খেলতে গিয়ে, দেবদারু গাছের আড়ালে লুকানো হতোনা। জানতেই পারতাম না, পৃথিবী নামের আজব একটা জায়গা আছে। যেখানে মানুষেরা কাঁদে আর হাসে। যেখানে ভালোবাসাদের জয়জয়কার।
হয়তোবা, আগামী বছরের এই দিনে আমি আর আমার জন্মদিন সম্পর্কে কিছু বলতে পারবো না। যদি মরে যাই? তখন তো কেও একবার মনে করেও দেখবেনা, আজকের এই দিনে কোনো এক হতভাগার জন্ম হয়েছিলো, আমাদের এই পৃথিবীতে।
আমার বাসায় কারও মনেই নেই, আজকে যে আমার জন্মদিন। কোনোদিনই ছিলনা। কোনোদিনই আমাদের বাসায় কারও জন্মদিন পালন করা হয়না। তাই জন্মদিন-টন্মদিন নিয়ে কেও তেমন একটা মাথাও ঘামায় না। আমি কোনোদিনই কোনো জন্মদিনের কেক কাটিনি, কোনো কোলাহলপূর্ণ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। আমি ফুঁৎকারে মোমবাতি নিভাইনি কোনোদিন। আমার মোমের আলো নিভে যাওয়ার সাথে সাথে করতালির বন্যা বয়নি কোনোদিন। কেও জন্মদিনের গিফট দেয়নি। রাত বারোটায় কেও ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়নি। জন্মদিন উপলক্ষে, লাল-নীল মেসেজ আসেনি মোবাইলে। কোনোদিনই না।
কয়েকটা বছর আমার জন্মদিন গেছে, যখন জন্মদিন পার হয়ে যাবার দু’দিন পর মনে পরতো, পরশু না আমার জন্মদিন ছিল!
নিজের জন্মদিন নিয়ে নিজেই যখন মাথা ঘামাই না, তখন অন্যেরা মাথা ঘামাবে কি ছাই?
তবে যাইহোক, এবারের জন্মদিনটা আমার কাছে একটু অন্যরকম। যেমন, ফেসবুক আর ব্লগে অধমের জন্মদিন সম্পর্কে একটা পোষ্ট দিলাম। অনলাইন অথবা ভার্চুয়াল বন্ধুদের সাথেই না হয় এবারের জন্মদিনটা উপভোগ করলাম।
আর হ্যা। আমি একটা প্ল্যান করেছি, আজকে একটা ছোট্ট জন্মদিনের কেক কিনবো। আর কয়েকটা ছোট্ট ছোট্ট রঙ-বেরঙের মোম কিনবো।
তারপর।
রাতের বেলা আমার ঘরের দরজা বন্ধ করবো। পড়ার টেবিলটার ওপর আস্তে করে কেকটা রাখবো। খেয়াল রাখতে হবে, বাসার সাদা ধবধবে বিড়ালটাও যেন আমার ঘরে আসতে না পারে।
তারপর।
আলতো করে মোমগুলো জ্বালিয়ে দেব। কিছুক্ষণ হাসি হাসি মুখে এদিক-সেদিক তাকাবো।
তারপর।
যখন ফুঁ দিয়ে মোমগুলো নিভিয়ে দেব, তখন মোমের আলোতে আমার চোখ দু’টো চকচক করবে।
তারপর।
কেকটা কেটে-কুটে নিজেই সবটা সাবার করে দেব।
তারপর।
কল্পনা করতে থাকবো, মশা-মাছিরা ভন ভন আওয়াজ না করে আজকে আমাকে বলছে,
“হ্যাপি বার্থ ডে সোহাআআআআআগ! হ্যাপ্পি বার্থ ডে টু ইউ...!!”