somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইন্দ্রজাল কমিকস: ফিরে এসো শৈশব

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছেলেবেলার দিনগুলো কেমন যেন মায়াময়। সে মায়াময়তা স্বপ্নের জগতের কিম্বা সেই সময়ের পরিবেশের তা আজ আর ঠিক করে বুঝতে পারা যায় না। তবে সেই সময়টার মদিরতা আজও চোখ বুজলে আমি টের পাই। সবারই কি তাই হয় ? আমার বেশ কিছু সিনিয়র এবং জুনিয়র বন্ধুদের সঙ্গে কথা ব’লে আমার মনে হয়েছে আমাদের ঐ সময়কার ছোটো বেলাটা প্রায় একই রকম ছিল। দুটো পাটকাঠির দুটো মাথা সুতোলি দিয়ে বেঁধে আর মাঝখানে একটা পাটকাঠি আটকে দিয়ে মাছ গাড়ি তৈরী করে চালানো ; পাটকাঠির আগায় কাঁঠালের আঁঠা লাগিয়ে ফড়িং ধরা, এইরকম আরো কত কি।

একটু বড় হয়ে ক্লাস ফাইভে যখন হাইস্কুলে ভরতি হলাম শুরু হল আবার এক অচেনা জগৎ। সবাই অপরিচিত। আমি মুখচোরা লাজুক। তবু ধীরে ধীরে বন্ধুর সংখ্যা বাড়তে লাগল। তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। অনেকেই পরিচিত। তবু কয়েকজনের মধ্যে কি একটা গোপনীয়তা চলে। ব্যাগ থেকে ব্যাগে চলে আরো কোনো একটা গোপনীয়তা। প্রথমে খুব একটা লক্ষ্য করিনি। কিন্তু খুব দ্রুতই এই গোপন দলের সদস্য সংখ্যা বাড়তে লাগলো। এক সময়ে আবিষ্কার করলাম আসলে দোষাবহ কিছু নয়। বইদের লেন দেন। তবে আমার পরিচিত বই নয়। যেমনটা আমি এর আগে দেখেছি।



******** বেতাল : প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা কিংবদন্তী ******


আমি দেখেছি অক্ষরে ছাপা বই। আর এগুলো ছবিতে ছাপা বই। নাম ইন্দ্রজাল কমিকস। তবে বইগুলো লেনদেনের কিছু শর্ত ছিল। বই এর বদলে বই। অর্থাৎ একটা বই পড়তে নিলে আর একটা বই পড়তে দিতে হবে। আমি গরীব স্কুল মাস্টারের ছেলে (তখন শিক্ষক দের মাইনে খুব কম ছিল)। বই পড়তে ভালোবাসি বলে বাবা সাধুজন পাঠাগারে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। নিত্য নতুন বই কিনে পড়াবার মতো স্বাচ্ছন্দ্য আমাদের ছিলো না। অথচ আমি বই গিলে খাই। মাকে লুকিয়ে পড়ার বই এর মধ্যে লাইব্রেরী থেকে আনা গল্পের বই। বাবার চোখে ধরা না খেলেও মা মাঝে মধ্যেই ধরে ফেলত। কখনো বোঝানো চলত-পড়ার সময়ে এগুলো না পড়তে, কখনো আবার ধোলাই।



************স্বপ্নের জাদুকর : ম্যানড্রেক ************



কিন্তু লাইব্রেরীতে তখন অনেক বই পাওয়া গেলেও এইগুলোতো আর পাওয়া যেত না। তাই যে বন্ধু এই লেনদেনের অংশীদার তার পাশে বসে কিম্বা তার কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে ‘ক্ষণিকের অতিথি’র মতো হয়ে পড়তাম। বই বিনিময় ছাড়া ওরা তো পড়তে দেবে না। কয়েকটা দিন চেষ্টা করলাম আমার জন্মদিনে পাওয়া কয়েকটা বই নিয়ে লেনেদেনে অংশীদারিত্ব পাওয়ার। কিন্তু তখন ওই বই আর কে পড়বে! সবাই ছবিতে গল্পই পড়তে চায়। অন্যকে কী বলব, আমিও তো তাই চাই। অথচ আমি পড়তে দিচ্ছি আমার রবিনহুড। তাদের অতো পড়ার টাইম নেই। আর ছবিতে গল্প টানে তো অনেক বেশি।



************ফ্ল্যাশ গর্ডন : তখনকার সায়েনস ফিকশনের নায়ক ************



কিন্তু অভিব্যক্তি বাদ, যোগ্যতমের উদবর্তন বলেও তো কিছু কথা আছে তাই না ? পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে যে চলতে পারবে সেই টিকে যাবে। আমার এক বন্ধু ছিলো। ওর পারিবারিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিলো না। কিন্তু ওকে দেখতাম নিত্য নতুন ছবির গল্প বই লেনদেন করতে। আমি জানি, আমার তাও একটা দুটো বই কেনার মতো ক্ষমতা থাকলেও ওর তো কিনতে পারার কথা নয়, তবে ও এতো বই পাচ্ছে কোথা থেকে! একটু চেপে ধরতে, একটু আব্দার করতে ও রহস্যটা ভাঙলো। ধরা যাক ও আমাদের একজন বন্ধুর কাছ থেকে একটা বই নিয়েছে পড়তে । পড়বার পর আর এক বন্ধুর কাছে থেকে আর একটা বই নিল পড়তে, বিনিময়ে আগের বইটা এই বন্ধুকে পড়তে দিল। সুতরাং নিজের সংগ্রহের ভাণ্ডার খুব বেশি না হলেও চলছে।



************গোয়েন্দা রিপ কার্বি : কোন রহস্যের সমাধান করতে পারেন না ! ************



এবার আমিও সেই পথে পথিক। আমার চোখের সামনে তখন বেতাল, গুরান, বনের রহস্যময় গাছ বাড়ি, খুলিগুহা। আর অন্যায়ের দমন, অরণ্যের প্রবাদ। ম্যানড্রেক, লোথার ,কেউটে ,থেরণ। কতরাত চেষ্টা করেছি ম্যানড্রেক যেমন মানসিক যোগাযোগ করে থেরণের সঙ্গে সেইরকম আমার কোনো বন্ধুর সঙ্গে মানসিক যোগাযোগ করতে। ফলাফল জিরো। আমার কাছে ম্যনড্রেকের মতো থেরনের সঙ্গে যোগাযোগ করার মতো আশ্চর্য ঘনক ছিল না, আবার এখনকার মতো আর মোবাইলও ছিলো না।



************ বাহাদুর : বাবা দুদ্ধর্ষ ডাকাত হলেও বাহাদুর সেই পথ থেকে সরে এসে মানব কল্যানে নিয়োজিত ************



আমার সবচেয়ে মানসিক খিদে মিটতো ফ্লাস গর্ডনের গল্পগুলোতে । মহাকাশ, এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহতে যাতায়াত, এমনকি সময় থেকে সময়ান্তরে যাবার আশ্চর্য সব কাহিনী।

আমাদের অত গোপনীয়তার কারণ পরে বুঝতে পেরেছিলাম। স্যারদের হাতে পড়লে বইগুলোর পঞ্চত্ব প্রাপ্তি, আর ফেরত পাওয়া যাবে না। আর আমার সেই বন্ধুটাও ভালোই বিপদে পড়েছিলো। ওর কাছে থেকে একজন বই নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। নিজের বই হলে তাও সহ্য করা যায়। অন্যের বই ফেরত না দেওয়া নিয়ে যেমন বেশি কথা শুনতে হয়েছিল তেমনি ওই গরীব বেচারিকে বই কিনে ফেরত দেওয়া লেগেছিল।

এই ইন্দ্রজাল কমিকস্ই আমাকে একটা ঘটনায় অনেক বড় করে তুলেছিল। আমার এক বড় লোক বন্ধুর সঙ্গে আমার খুব ভাব ছিলো। ও আমাকে লেনদেন ছাড়াও পরের দিকে বই পড়তে দিত। আমি ওর কাছ থেকে একটা বই নিয়েছিলাম। আমার বইটা পড়া হয়ে গিয়েছিলো। দিনটা ছিলো রবিবার। নতুন বই পেতে গেলে সোমবার স্কুল খোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমার তখন নেশা চেপেছে আর একটা নতুন বই পড়বার। আমার বাড়ি থেকে ওদের বাড়ি মিনিট পনেরো কুড়ির হাঁটা পথ। চলে গেলাম ওদের বাড়ি। আমার বন্ধু আমাকে হতাশ করে নি। আর একটা বই দিয়ে দিয়েছিলো পড়ার জন্যে। কিন্তু আমি তখন শুনতে পাচ্ছি ওর মায়ের গলা: ‘কোথা থেকে সব বাইরের ভিখিরি লোক জন ধরে নিয়ে আসবে। চোর কিনা ঠিক আছে, এতো বলি ছেলেটাকে এইসব বন্ধুগুলোকে বাড়িতে ঢুকতে না দিতে , কে শোনে কার কথা।’

খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সে দিন। আমার বন্ধু অবশ্য আমাকে বার বার বলছিল কিছু মনে না করার জন্যে, ওর মা ওই রকমই। আমি হাসতে চেষ্টা করেছিলাম যেন কিছুই হয়নি। হাসিটা তখন বিকৃত হয়ে কান্না চাপতে চেষ্টা করছিলো।





সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৬
১১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×