গতকালকের এ পোস্টটাতে ছড়া প্রস্তুতকালে অনেকেই র' মেটেরিয়াল যোগান দিয়েছিলেন। জনস্বার্থে এবং দেশ ও জাতির জ্ঞাতার্থে এখানে পুস্তিকাকারে তা পুনর্মুদ্রিত করা গেলো
সায়েম মুন :
আমার বাড়ির পাশে ছিল ছোট্ট এক নদী
সেই নদীতে সাঁতার কাটতাম আমি নিরবধি
কালপুরুষ :
তখন আমার বই ছিল না, দাদুর গলা ধরে
সন্ধ্যাবেলা কাটিয়ে দিতাম চাঁদের ছড়া পড়ে।
এখন আমি অনেক বড় নইতো ছোট খোকা
বউয়ের কাছে তবুও আমি হয়ে গেছি বোকা।
অতি চালাকের গলায় দড়ি যখন ডেকে বলি
ঝাঁঝ দেখিয়ে বলে আমায় বাপের বাড়ি চলি।
মান অভিমান মিটিয়ে যখন পাশাপাশি বসি,
দুজন মিলে এই জীবনের হিসেব শুধুই কষি।
আর কি ফিরে পাবো সেই হারিয়ে যাওয়া দিন,
মনটা ছিল প্রজাপতি আর ভাবনাগুলো রঙিন।
সৈয়দ জামাল :
এমন ছড়া আমার মনে বাজিয়ে দিল বীণ
আবার আমি চাইছি ফিরে ছোট্টবেলার দিন
রাগ ইমন :
আমার এখন মন টেকে না ইটপাথরের ঘরে
মন ছুটে যায় কিশোরবেলার ধু-ধু তেপান্তরে
তোমরা কি কেউ সঙ্গে যাবে? জলদি বলো নাম
বেরিয়ে পড়ো, বেরিয়ে পড়ো, ঐ দেখা যায় গ্রাম
গাঁয়ের পাশে ছোট্ট নদী, নদীর পাশে বন
এক পা এগোই, দুই পা পিছোই, মনের উচাটন!
বুক ভরেছে নদীর জলে, চোখ ভরেছে মেঘে
আমার অতীত ডাকছে আমায়, ধুম মায়া আবেগে
ইটপাথরের শেকড় আমার উপড়ে গেলো আজি
খুব বুঝেছি কবি, সবি তোমারই কারসাজি
কেমন তুমি ছন্দ টানে চললে নিয়ে আমায়
ভাসলে আমি, ডুবলে আমি, এখন কে আর থামায়?
যাই চলো যাই, এবার না হয়, হলেম গ্রামান্তরি
এই পাথুরে নগর জুড়ে ইচ্ছে পালের তরী!
সিরিয়াস :
ইচ্ছেপালের তরী ভাসুক ইচ্ছেনদীর জলে
একটা ঘুঘু উঠুক ডেকে নগরকোলাহলে,
দূর সময়ে ওপারে এক একলা কিশোর ডাকে
জোনাক জ্বলা রাতের ঘ্রাণে কেবল বিভোর থাকে
আমাকে নাও আমলকি গাছ, আমাকে নাও ঘুড়ি
শালিক পাখির ডানা হয়ে রৌদ্র মেখে উড়ি।
সবুজ অঙ্গনের পুরো ছড়াটিরই আদল পাল্টে ফেলা হলো : পুনর্মিলন
তখন আমার অল্প বয়স, কতোই বা আর হবে
মা-চাচি আর খালা-ফুপুর কোল ছেড়েছি সবে
যখন আমি তোমার মতো ছোট্ট ছিলাম নিজে
ইচ্ছে হলেই ঘুরে বেড়াই বাবার কাঁধে চড়ে
সকালবেলা বিছনাখানি থাকতো রোজই ভিজে
ওসব এখন বলতে গেলে লাজ নামে চোখ ভরে
ছোট্ট হলেও বলতে পারি কাজের ছিল ধুম
যেমন ধরো, নাওয়া-খাওয়া-খেলনা এবং ঘুম
তখন আমার বই ছিল না, দাদুর গলা ধরে
সন্ধ্যাবেলা কাটতো মজার চাঁদের ছড়া পড়ে
তোমরা কি কেউ কাগজ দিয়ে নাও বানাতে পারো?
উড়োজাহাজ? ঢাউস-ঘুড়ি? কত্তো কিছু আরো?
গাছের ডালে, কিংবা ধরো ঘরের পাটাতনে
দোলনা বেঁধে দোল খেয়েছো আপন মনে মনে?
আমার ছিল ঘরের পাশে ছোট্ট চিকন খাল
তার পানিতে ভেসে গেছে আমার বাল্যকাল
পূবের ধারে ছোট্ট পুকুর, ঠাণ্ডা ছিল জল
বর্ষাতে তায় লগ্গি ফেলে খুঁজতে হতো তল
একদিন এক বকের বাসা হঠাৎ দিয়ে হানা
পেয়েছিলাম চোখ-না-ফোটা একটি ছোট ছানা
ডোবার ধারে ডাহুকপাখির বিষম আনাগোনা
ধানের শিষে ফাঁদ পেতেছি, কিংবা মাছের পোনা
তোমার কি ভাই লাটিম ছিল? আর কী ছিল, বলো?
বড়শিতে কি মাছ ধরেছো? ঝাঁকিজাল, বা পলো?
আমার ছিল উদোম গায়ে নাচনতোলা দিন
ধানের ক্ষেতে সবুজ দুপুর, বিকেলটা রঙিন
এসব কথা শুনে তোমার ইচ্ছে হতে পারে
সেই যে ছিল সোনার জীবন- কোথায় পাবো তারে?
কেমন তোমার দিন কেটেছে? কোন্ গাঁয়ে? কোন্ দেশে?
কোথায় তোমার মায়ার জীবন ঘর বেঁধেছে শেষে?
আমার এখন মন টেকে না ইটপাথরের ঘরে
মন ছুটে যায় কিশোরবেলার ধু-ধু তেপান্তরে
তোমরা কি কেউ সঙ্গে যাবে? জলদি বলো নাম
বেরিয়ে পড়ো, বেরিয়ে পড়ো, ঐ দেখা যায় গ্রাম
তোমরা ভাবো- আমিও আবার গ্রাম দেখেছি নাকি?
মিথ্যে না তা- মনের ভেতর গ্রামেই পড়ে থাকি
খুব বুঝেছি খুব বুঝেছি তোমাদের কারসাজি
জলদি করো, দোস্তি মানো, দোস্তিতে হও রাজি
অবাক মধুর ছন্দদোলায় চলতে থাকো সবে
ভুলে যাওয়া নিজ ঠিকানায় আবার দেখা হবে
কৃতজ্ঞতা :
সায়েম মুন, কালপুরুষ, সৈয়দ জামাল, রাগ ইমন, সিরিয়াস
এবং
রাজসোহান, অ নু, নস্টালজিক, রোদ_ছায়া, আবদুল্লাহ আল মনসুর, শৈল্পিক ভাবনা এবং জাতি জানতে চায়
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:১২