ভেবেছিলাম এ বিষয়ে কিছু লিখবো না। কিন্তু না লিখে আর পারলাম না। এ দু’দিন ব্লগ, ফেসবুকে মানুষের লাফালাফি দেখে নিজের জিহাদী মনটারে কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারলাম না। এ ব্লগে ওয়ামী, ওয়ালী নেই। ফারজানা আপু নেই, ত্রিভুজও সক্রিয় নয়। তাই বলে কি আমরা মরে গেছি!
মানলাম গোলাম আজম স্যারকে গ্রেফতার করা হলো, উনার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। কিন্তু দেশের সব সমস্যা কি মিটে গেলো? প্রভা এবং রাজীব কি তাদের হারানো সম্মান ফিরে পেয়েছে? অরুণ চৌধুরী কি তার চাকুরি ফিরে পেয়েছে? নিদেন পক্ষে পরিমল কি নারী সমাজের কাছে ক্ষমা চেয়েছে? এরকম আরো অনেক প্রশ্নই করা যায়, যার প্রত্যেকটির উত্তর ‘না’ হবে। তাহলে এ দরিদ্র দেশটার কী উপকারটা হইলো? প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে, কোটি কোটি মানুষের ঘরে ইন্টারনেট নেই, হাজার হাজার মানুষ গাড়ির অভাবে রোডমার্চে যেতে পারেনি। অথচ বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী স্যারকে গ্রেফতার করা হলো! এক অদ্ভুত উটের পিঠে চলছে চলছে স্বদেশ।
কবি বলে গেছেন, “সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে গেছে!” এর চেয়ে খাঁটি কথা আর কিছুই হতে পারে না। অনেকেই গোলাম আজম স্যারকে খানকির পোলা (সেন্সর করে পড়ে নিবেন) বলে গালি দেন। কিন্তু এতে করে যে স্যারের গালের দাঁড়িকে অপমান করা হয়, সে খবর কারো আছে? কখনো কখনো স্যারকে শুয়োরের বাচ্চা বলা হয়। এতে করে কি স্যারের মাথার টুপিকে অবমাননা করা হয় না? স্যারকে বেজন্মা সারমেয় বললে কি স্যারের গায়ে পাঞ্জাবিকে লাঞ্ছিত করা হয় না? নতুন প্রজন্মকে এসব কে শেখাবে, কে বুঝাবে? ওদের ব্রেইনটাতো ওয়াশ করে ফেলেছে ইসলামের শত্রুরা। আবারো বলতে বাধ্য হচ্ছি, “সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে গেছে।“
স্যারকে গ্রেফতারের পর আজ সারাদিন এ জেলা থেকে ওই জেলা ছুটে বেড়িয়েছি। কই, কোথাওতো সড়ক ব্যবস্থার কোন উন্নতি দেখলাম না। দেখলাম না শীতার্ত মানুষদের কষ্ট লাঘবের দৃশ্য। এমনকি দেশের বেকার সমস্যা পর্যন্ত দূর হয়নি! অবাক হয়ে একের পর এক জেলা ঘুরেছি আর দেখেছি, অথচ স্যারকে গ্রেফতারের কোন সুফলই পেলাম না। আবারো কবিতার দু’টি লাইন না বলে পারছি না। “তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা...!” স্বাধীনতা কি পেলাম? স্বাধীনতা যদি পেয়েই থাকি, তাহলে স্যার এখন বন্দী কেন? এর জন্যই কি আমাদের খালু ফুফারা একাত্তরে জীবন দিয়েছেন? এসব প্রশ্ন করলে অনেকেই রাজাকার বলে গালি দেন। মানলাম, রাজাকার একটি গালি। কিন্তু এসব প্রশ্ন করলেই রাজাকার বলতে হবে?
১৯৭১ সালে কি মানবাধিকার কমিশন ছিলো? মিজানুর রহমান ছিলেন? ছিলেন না। তাহলে তখনকার মানবাধিকার রক্ষার বিষয় আসছে কেন? এখনতো কমিশনও আছে, মিজানুর রহমানও আছেন। এখন কেন গোলাম আজম স্যারের মতো মানুষদের প্রতি মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে? ড. জাফর ইকবাল স্যার এর জবাব দিবেন?
একাত্তরে শেখ মুজিব সাহেব যদি বিশেষ বিবেচনায় কিছু ছোট অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতে পারেন, তাহলে সভ্যতার উৎকর্ষতার এ সময়ে গোলাম আজম স্যারদের ক্ষমা করার মতো সাহস কেন শেখ হাসিনা দেখাতে পারেন না? আমরা শেখ মুজিবের ঘরে এমন সন্তান আশা করেছিলাম? আমাদের আশা ভরসা নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছে, তারাই প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার আগে চাই।
সাধারণ মানুষতো অনেক পরের বিষয়, সরকারের মন্ত্রীরাই কী পরিমান মানবেতর জীবন যাপন করছে! মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, দীপু মনিরা একটা দামি শাড়ি পর্যন্ত পরতে পারছে না। আমাদের মা বোনদের কথা না হয় নাই বললাম। এসব নিয়ে সরকারের কোন মাথাব্যাথা নাই। ৪০ দিন আগের বিষয় নজরে পড়ে না, ৪০ বছর পুরোনো বিষয় নিয়ে টানাটানি লাগিয়েছে।
ভেবেছিলাম ছাত্রলীগের কথা বলবো না, এখন আর না বলে পারছি না। ছাত্রলীগ গত তিন বছরে যা গণহত্যা চালিয়েছে, একাত্তরের নয় মাসে কি এর অর্ধেকও হয়েছে? হয়নি। তাহলে বিচারের নামে এ প্রহসন কেন? একাত্তরের সময় কোন ফেলানীকে কাঁটাতারে ঝুলতে হয়েছে? হয়নি। তাহলে বৃদ্ধ স্যারের প্রতি কেন এই বর্বরতা। এর একটা প্রশ্নের জবাবও ড. জাফর ইকবালের কাছে নেই। অথচ সরকার বিচার বন্ধ করছে না।
এসব ভাবলে কেবল দু:খই হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় “লাথি মেরে ভাঙরে তালা, আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা!” কিন্তু মনের আগুন মনেই জ্বলছে, জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে নির্যাতিতের মন। এ দেশটাকে নিয়ে স্যারের কত স্বপ্ন ছিলো, কত প্রত্যাশা নিয়ে ভাষা আন্দোলন করেছিলেন। আজ স্যার উর্দুর পাশাপাশি বাংলাতেও কথা বলতে পারেন, কিন্তু শেখ হাসিনা বাংলার পাশাপাশি উর্দুতে কথা বলেন না! এরকম লক্ষ কুটি সমস্যা নিয়ে আমরা বসবাস করি। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এসব নিয়ে ভাবেন না, উনি ভাবেন নির্বাচন কমিশন নিয়ে! ধিক এ রাষ্ট্রযন্ত্রকে, ধিক দেশের বিচার ব্যবস্থাকে।
কথা শেষ হয়েও হয় না। সরকার এখনো আমিনীর মতো ভন্ডকে দেশ থেকে তাড়াতে পারেনি! চ্যানেল আইতে বাচ্চাদের দিয়ে অশ্লীল প্রেমের গান গাওয়ানো হয়! এখনো শরীফুদ্দিনের গানে চিত্রনায়িকা ময়ুরী মডেল হয়! এ দেশের টিভিতে ক্যাটরিনা কাইফ তার অপুষ্টির রান দেখিয়ে টাকা কামাচ্ছে! এখনো ভিনা মালিককে নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো নিউজ করে বেড়াচ্ছে! প্রতিদিন মেইলে শতশত স্প্যাম এসে জড়ো হয়!- হাজার হাজার সমস্যা থেকে মাত্র এ ক’য়টা বললাম। আপনারা বিচক্ষণ, আপনাদের জ্ঞান দিয়ে বিচার করে দেখুন এর কোন একটিও কি সরকার সমাধান করতে পেরেছে? সমাধানের একটা প্রমাণও যদি দেখাতে পারেন, তাহলে আমি আর কোনদিন স্যারের কথা বলে আপনাদেরকে বিরক্ত করবো না। কথা দিলাম।