somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবর্তনবাদ তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা – ৮

০৯ ই নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুধুমাত্র এই পৃথিবীর বুকেই মিলিয়ন মিলিয়ন প্রকারের জীব-জন্তু ও উদ্ভিদ প্রজাতি আছে। এ পর্যন্ত কত মিলিয়ন প্রজাতি যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে তার সঠিক কোনো হিসাব নাই। তাদের মধ্যে হাজার হাজার প্রকারের ফল-মূলের গাছ আছে। হাজার হাজার প্রকারের ফুলের গাছ আছে। হাজার হাজার প্রকারের ফল-ফুল-বিহীন গাছ আছে। লক্ষ লক্ষ প্রকারের মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী আছে। হাজার হাজার প্রকারের কীট-পতঙ্গ আছে। হাজার হাজার প্রকারের সরীসৃপ আছে। হাজার হাজার প্রকারের পাখি আছে। হাজার হাজার প্রকারের অস্তন্যপায়ী প্রজাতি আছে। হাজার হাজার প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রজাতি আছে। পাশাপাশি মানুষ তো আছেই। প্রাণী জগত ও উদ্ভিদ জগতের মধ্যে এক প্রজাতি থেকে অন্য এক প্রজাতি বিভিন্ন দিক থেকে যে কতটা আলাদা – তা সহজেই অনুমেয়। বুদ্ধিমান মানুষ-সহ বিভিন্ন পশু-পাখির শরীর যে কতটা জটিল ও সূক্ষ্ম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত – সেটাও সবারই জানা। প্রজাতিগুলোর শারীরিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য একই রকম বা সমসত্ত্ব তো নয়-ই বরঞ্চ একে-অপর থেকে অসাধারণভাবে আলাদা। মানুষ-সহ প্রায় প্রত্যেকটি পশু-পাখির স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্যও বিদ্যমান।

উপরের বিষয়গুলো নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই যে কোনো যুক্তিবাদী মানুষ মেনে নিতে বাধ্য হবেন যে, একটিমাত্র অণুজীব থেকে "এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন" এর মাধ্যমে এত কিছু বিবর্তিত হওয়া অসম্ভব। পরিবেশগত কারণে প্রজাতিগুলোর মধ্যে একটু-আধটু এদিক-সেদিক হতেই পারে – যাকে বলে ক্ষুদ্র পরিবর্তন। যেমন গায়ের রঙ ও আকার-আকৃতির পরিবর্তন। তবে প্রত্যেকটি প্রজাতির জন্য আলাদা আলাদা অরিজিন লাগবে – অনেক ক্ষেত্রে আবার একই সাথে এক জোড়া পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ লাগবে। একটি মাত্র অরিজিন থেকে এত কিছু বিবর্তিত হতেই পারে না। আর প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগতের প্রত্যেকটি প্রজাতির জন্য যদি আলাদা আলাদা অরিজিন লাগে তাহলে যে কোনো যুক্তিবাদী মানুষ স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, মিলিয়ন মিলিয়ন প্রজাতির আলাদা আলাদা অরিজিন এমনি এমনি উদ্ভব (!) হওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।

এই দিনের আলোর মতো সত্যকে মেনে নিতে না পেরে এবং যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে হতভম্বতা এড়াতে খুব জোরে-সোরে প্রচার চালানো হয়েছে এই বলে যে, সকল প্রকার প্রজাতি একটিমাত্র অরিজিন থেকে বিবর্তিত হয়েছে! কিন্তু এটি আদৌ কোনো প্রমাণিত সত্য নয় – প্রমাণ করাও আসলে অসম্ভব। অতএব, বিবর্তনবাদ তত্ত্বের একদম মূলেই বিশাল কল্পনা ও প্রতারণা রয়ে গেছে, যেটি অনেকেই হয়তো ভেবে দেখেননি। কোনো রকম প্রমাণ ছাড়াই সকল প্রকার জীব-জন্তু ও উদ্ভিদের অরিজিনকে যেহেতু অতি সরল একটি জীবের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে সেহেতু অনেকেই হয়ত বিশ্বাস করা শুরু করেছেন যে, অতি সরল একটি জীব এমনি এমনি উদ্ভব হতেও পারে! আর তা-ই যদি হয় তাহলে স্রষ্টারও কোনো দরকার নেই! আলাদীনের প্রদীপের মতো "অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রাকৃতিক নির্বাচন"-ই সবকিছু করবে! আহ্‌! কত সহজ-সরল সমীকরণ! কিন্তু তাদের এই প্রতারণা যারা ধরতে পেরেছেন তারাই কেবল বুঝতে পারবেন সমীকরণটা আসলে কত জটিল!

ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে প্রমাণ করতে হলে জীবাশ্ম দিয়েই প্রমাণ করতে হবে। কারণ একটি প্রজাতি থেকে ভিন্ন একটি প্রজাতির ধাপে ধাপে বিবর্তনের যে গাল-গল্প শুনানো হচ্ছে সেগুলো আসলে অতীত ঘটনা। এই অতীত ঘটনাগুলোকে প্রমাণ করতে হলে জীবাশ্ম ছাড়া অন্য কোনো যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক পন্থা নেই। এই বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে পেরে নিও-ডারউইনিজম এর নামে যা করা হচ্ছে তা হচ্ছে:

- বিভিন্ন কলা-কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিবর্তনবাদকে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিকুলামের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন এসে দাবি করা হচ্ছে এই বলে যে, বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু বিবর্তনবাদ পড়ানো হয় সেহেতু বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অবশ্যই সত্য হবে! বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিষয় পড়ানো হলেই নাকি সেটি এমনি এমনি সত্য হয়ে যাবে!

- বিবর্তনবাদকে জীববিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত করে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, এন্টি-বায়োটিক, মেডিসিন, ক্যান্সার, ডিএনএ, ও জীববিদ্যার উপর গবেষণাকে বিবর্তনবাদের নামে চালিয়ে দিয়ে বিবর্তনবাদকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা নির্ভরশীল একটি তত্ত্ব হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।

যাহোক, জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, অ্যান্টি-বায়োটিক, মেডিসিন, ক্যান্সার, ডিএনএ ইত্যাদির উপর গবেষণা বা গবেষণালব্ধ ফলাফলকে কেউ অস্বীকার করেন বলে মনে হয় না। তবে এগুলো যে বিবর্তনবাদের পক্ষে কোনো প্রমাণও নয় তার ব্যাখ্যা ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। যেমন হাইটেক ও বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে ল্যাবে ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে মিউটেশন ঘটিয়ে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করে কোনো ভাবেই সিদ্ধান্তে পৌঁছা যাবে না যে, বানর জাতীয় কোন প্রাইমেটস থেকে মন্থর গতিতে মানুষ বিবর্তিত হয়েছে কিংবা অস্তন্যপায়ী প্রজাতি থেকে মন্থর গতিতে স্তন্যপায়ী প্রজাতি বিবর্তিত হয়েছে। শিয়ালের বাচ্চাকে বারংবার কুমিরের বাচ্চা বলে চালিয়ে দিলেই তো আর শিয়ালের বাচ্চা সত্যি সত্যি কুমিরের বাচ্চাতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে না!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৭
৩৮টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×