খোঁচা মারার একটা বদ অভ্যাস আমার আছে। ঠিক কবে, কখন থেকে এ অভ্যাস আমি রপ্ত করলাম তা এখন আর মনে করতে পারছি না। সম্ভবত বিদ্যালয় জীবন থেকেই এ বিষয়ে আমার হাতেখড়ি ঘটে। আমাদের একটা গ্রুপ ছিল যাদের প্রধান কর্ম ছিল বিভিন্ন মানুষকে খোঁচানো।
খোঁচানো বিষয়ে অনুশীলন করতে করতে এমন অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছি যে এখনও সুযোগ পেলেই একে ওকে খোঁচা মেরে দেই।
চতুর্থ শ্রেনীতে ইসলাম শিক্ষা ক্লাসে হঠাৎ করে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আমার দিকে এগিয়ে এসে সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন। কোনো বাক্য ব্যয় না করে তিনি তার দু'হাত দু'দিকে যথাসম্ভব প্রসারিত করে ফেললেন। এরপর দু' হাতের বিপরীত দিকে প্রসারণের ফলে যে স্থিতি শক্তি হাতদু'টো অর্জন করলো সেটি গতি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে এক হওয়ার জন্য পরস্পরের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা এক হতে ব্যর্থ হলো। কারণ তাদের এক হওয়ার মাঝখানে বাধা পড়লো আমার মাথা।
একক সময়ে দু' হাতে চড় খাওয়ার বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হলাম আমি। চোখে সর্ষে, জবা, রজনীগন্ধা, গোলাপ থেকে শুরু করে পরিচিত সব ফুল দেখা শুরু করলাম। সম্বিত ফিরে পাওয়ার পর দেখলাম স্যার নিজের আসনের দিকে হাঁটা দিয়েছেন। সর্ষে ফুলের আশেপাশে মৌমাছির বিচরণের ফলে সৃষ্ট ভোঁ ভোঁ শব্দ শুনতে লাগলাম অনেকক্ষণ।
নিজ আসনে ফিরে গিয়ে স্যার দৈত হাতের চড় কার্যের শানে নুযুল ব্যাখ্যা করলেন। "ক্লাসে গালে হাত দিস কেন? কীসের এত চিন্তা তোর? বাসায় কি বউ-বাচ্চা রেখে এসেছিস?"
আমি তো হতভম্ব। সহপাঠীদের কাছ থেকে জানতে পারলাম ক্লাসে গালে হাত দিয়ে বসে থাকা স্যার যারপরনাই অপছন্দ করেন। পুরা মফিজ হয়ে গেলাম।
তা যা বলছিলাম। খোঁচাখুঁচির কথা। শুধু অন্যদের না, আমি নিজেকেও খোঁচা দিতে অতি অভ্যস্ত। ক্লাসে বসে কপাল, কপোল, নাসারন্ধ্র, ওষ্ঠ-অধর, কর্ণ অনবরত না খোঁচালে আমার পেটের ভাত হজম হয় না। সম্প্রতি ক্লাসে স্বীয় অভ্যাস চর্চা করছিলাম।
শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ক্লাসের পরে তার কক্ষে দেখা করার দাওয়াত দিলেন। আমিও দাওয়াত কবুল করে ফেললাম। ক্লাসে শেষে দাওয়াত রক্ষা করতে গেলাম তার কক্ষে। বুঝিয়ে বললেন, ক্লাসে বসে এরকম মুখমন্ডল খোঁচাখুঁচি করা মোটেও শোভনীয় কর্ম নয়।
কথা পূর্ব দিকে সূর্য উদিত হওয়ার মতো সত্য। জায়গামতো প্রয়োজনীয় আদবকেতা মেনে চলা অতি জরুরী। মেনে না চললে সাড়ে সর্বনাশ।
বিদ্যালয়ের সেই শ্রদ্ধেয় শিক্ষক গত হয়েছেন অনেকদিন হলো। স্যারের কথা মনে পড়লে এখনও খুব খারাপ লাগে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ আমাদের অনেক কিছুই শেখাতে চেষ্টা করেন সেই শিশু বয়স থেকেই।
স্কুলের অচ্ছুত শিক্ষকদের জয় হোক।