somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাচ্চাদের ডোরেমনের হাত থেকে রক্ষা করা যায় কী করে?

০১ লা মার্চ, ২০১২ দুপুর ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অমর একুশের বইমেলা এলেই টিভি চ্যানেলগুলো বিকাল বেলা বইমেলার চিত্র সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে। সেখানে লেখক-পাঠক-প্রকাশকদ-দর্শনার্থীদের সাক্ষাতকার নিয়ে থাকে সেইসব চ্যানেলের সঞ্চালকগণ। সেখানে বাচ্চাদের প্রশ্ন করা হয়, "কী বই কিনেছো?" অধিকাংশ বাচ্চাই প্রথম যে বইটির নাম বলে সেটি হলো "ডোরেমন"। এইটা আদৌ কোনো বই কিনা জানি না তবে বইমেলায় এটি একদম ভরে গিয়েছিল। ডোরেমন বস্তুটা কী তা আমার জানা ছিল না। পত্রিকায় একটা কলাম পড়ে প্রথম জেনেছিলাম এটি একটি কার্টুন যা ডিজনি চ্যানেলে দেখানো হয়। জাপানি এ কার্টুনটির ভাষা প্রথম দিকে ইংরেজি থাকলেও পরে তা হিন্দিতে ডাব করে দেখানো শুরু হয়। তখন থেকে শুরু হয় বিপর্যয়। আমি লক্ষ করি আমার ছোট ছোট চাচাত, ফুপাত ভাইবোনরা কীভাবে ডোরেমন দেখে। আত্নীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে যাদের বাসায় ছোট বাচ্চা আছে তারাও নাকি পাগলের মতো ডোরেমন দেখে। এ কার্টুন না দেখলে তারা খায় না। দেখতে না দিলে রাগ করে, জেদ করে। তারা আসলে গোগ্রাসে হিন্দি ভাষায় ডাবিংকৃত কার্টুনটি গিলতে থাকে।

সেদিন আমার এক আত্মীয় বললেন একটা ঘটনার কথা। এক বাচ্চাকে বড় একজন হাত দিয়ে ধরেছে আদর করার জন্য। তখন সেই বাচ্চা নাকি বলেছে, "মুঝে ছোর দো, মুঝে ছোর দো।" সে বাচ্চার বাবা-মার থেকে জানা যায় যে বাচ্চা সারাদিন ডোরেমন দেখে। এরকম ঘটনা আরো শোনা যাচ্ছে ইদানিং। বাচ্চারা ক্রমশ হিন্দিতে কথা বলতে আগ্রহী হচ্ছে। সেই সাথে ডোরেমনের কাহিনী নিয়েও আপত্তি তুলেছেন অনেকে। এখানে দেখা যায় যে ছোট ছেলে নবিতা বাড়ির কাজ নিজে না করে রোবট ডোরেমনকে দিয়ে করায়। নবিতা নাকি বড়দের সাথে বেয়াদবিও করে। বাচ্চাদের কাছে নবিতা একটা আইডলে পরিণত হচ্ছে। তারা আশা করছে যে তাদেরও যদি একটা ডোরেমন থাকতো। মানে আমাদের শিশুরা এখন দ্বিমুখী সংকটে পড়েছে। একদিকে হিন্দি ভাষার আগ্রাসন অন্যদিকে নবিতার মতো কাজে ফাঁকি দেয়া ও বড়দের সাথে বেয়াদবি করার শিক্ষা। যদিও কার্টুনের শেষে দেখানো হয় যে নবিতা তার ভুল বুঝতে পারে কিন্তু প্রথম চৌধুরী সেই অনেক আগেই বলেছিলেন, "ব্যাধিই সংক্রামক স্বাস্থ্য নয়"।

যেহেতু শিশুদের মধ্যে ডোরেমনের ব্যাপক চাহিদা সেহেতু বইমেলায় বিক্রেতারা বই আকারে ডোরেমন বের করে দোকান ভরিয়ে রাখছে এবং বইমেলায় আগত বাচ্চারা ডোরেমন কেনার জন্য বায়না ধরছে। শেষ-মেশ হাসিমুখে ডোরেমন কিনে বাড়ি ফিরছে। আমাদের অভিভাবকগণ এক্ষেত্রে চরম অবহেলার পরিচয় দিচ্ছেন। আর জাতিগতভাবে আমরা তো আমাদের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল না। ব্রিটিশ বেনিয়ার জাত আমাদেরকে শাসন করার কারণেই কিনা জানি না আমরা খুব ভাল বণিক হয়ে উঠেছি। সংস্কৃতি, তরুণ প্রজন্ম গোল্লায় যাক, আমরা বেকুশের বইমেলায় ডোরেমন বেচব। একুশের বইমেলায় সৃজনশীল বাংলা সাহিত্যের বই বিক্রি হওয়ার কথা। সৃজনশীল ও মননশীল শিশু সাহিত্য কি আমাদের কম আছে? না। ওসব বড্ড সেকেলে। আমাদের প্রকাশক-বিক্রেতাদের অল্প সময়ে অনেক লাভ করতে হবে। তাই ডোরেমন বেচা ছাড়া গতি নেই। বইমেলা চলাকালীন বাংলা একাডেমী ঘোষণা দিল যে ডোরেমন বইমেলায় বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু এ ঘোষণা পরেও আমি বইমেলায় দেদারসে ডোরেমন বিক্রি হতে দেখেছি।

ডোরেমন যে চ্যানেলে দেখানো হয় অর্থাৎ ডিজনি চ্যানেলে নাকি প্রতিদিন ১০ ঘন্টা শুধু ডোরেমনই দেখানো হয়। আর বাচ্চারা প্রায় ১০ ঘন্টা ডোরেমন দেখে প্রতিদিন। বাংলার চেয়ে হিন্দি তাদের অধিক প্রিয় হয়ে পড়ছে। হিন্দিতে কথা বলতে তারা সাচ্ছ্বন্দ্যবোধ করছে। যে ভাষা বেশি শুনবে সেটির প্রতি তারা আগ্রহী হয়ে পড়বে এটিই স্বাভাবিক। শিশুদের দোষ দেয়া যায় না। তাদের মা-বাবাদের উচিত ডিজনি চ্যানেলটি অয়ান ফাইন মর্নিং লক করে দেয়া। এতে বাচ্চা দু-তিনদিন জেদ করবে বটে, কিন্তু পরবর্তীতে ঠান্ডা হয়ে আসবে। আসলে বাসার বড়রা যদি সারাদিন হিন্দি সিরিয়াল দেখে তখন শিশুও হিন্দি কার্টুন দেখার অধিকার অর্জন করে ফেলে। অনেক সময়ে মা-বাবা অভিযোগ করে যে বাচ্চা সারাদিন টিভি দেখে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করে জানা যায় তারাও সারাদিন টিভি দেখে। তাহলে বাচ্চারা তো টিভি দেখাই শিখবে, সেটিই স্বাভাবিক। সন্ধ্যায় বাচ্চা পড়তে বসবে আর বড়রা মহানন্দে হিন্দি সিরিয়াল দেখবে আর আশা করবে যে বাচ্চা তিভির প্রতি আগ্রহ না দেখিয়ে পড়াশুনা করবে তাহলে সেটা মহা অন্যায় ও অবান্তর ব্যাপার হবে।

ভারত বর্তমানে বাংলাদেশে সিকিম বা নেপাল বানাতে চাইছে এবং সে ব্যাপারে ইতোমধ্যে তারা ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে। সেজন্যে শিশুদের ডোরেমনসহ অন্যান্য হিন্দি কার্টুন দেখা বন্ধ করার পাশাপাশি আমাদেরকেও কিউকি সাস ভি কাভি বাহুথি আর দাদাগিরি, মীরাক্কেল এসব দেখা বন্ধ করতে হবে।
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×