এরপর একসময় আর সবার মতো আমিও ঢাকার বাসিন্দা হই। ঢাকায় তখন হাইরাইজ বিল্ডিং হাতে গোনা। বড় বড় বিল্ডিং দেখি আর কোনটা কত তলা তা গুনে বেড়াই। তখনো ঢাকা শহর এতো জঘন্য হয়ে উঠেনি। স্কুল শেষে নিজেই বাসে করে পুরো ঢাকা শহর টহল দেই। ঢাকা শহর বড় হয়, সাথে সাথে আমিও বড় হই। মতিঝিলে চব্বিশ তলা বিল্ডিংটা আর অত বড় মনে হয় না। তখন উঠে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বত্রিশ তলা বিল্ডিং। ঢাকা বাড়ে, আর কমে তার সৌন্দর্য্।
এখন কেউ যদি বলে তার প্রিয় শহর ঢাকা, তাহলে নির্ঘাত এখন মানুষজন তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাবে। ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম, দিনের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে লোড শেডিং, রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনা, চারিদিকে শব্দ দূষণ সবমিলিয়ে ঢাকা কে পৃথিবীর অনন্য এক শহর বানিয়ে রেখেছে। যে কারনে ঢাকা পৃথিবীর দ্বিতীয় নিকৃষ্টতম শহর। তাই সেধে কেউ ঢাকা শহরের মতো শহরকে তার প্রিয় শহর বলতে চাইবে না।
এটা ঠিক যে আমাদের এই ঢাকা এখন প্রায় বসবাসের অযোগ্য। তারপরও একটু ভিন্ন চোখে যদি দেখি, ঢাকা শহরটাকে ঐতিহ্যের শহর, সুন্দর একটা শহর হিসেবে কি দেখতে পারি না? দেশের বাইরে থেকে যখন কেউ আমাদের দেশে আসে, প্রথমেই সে কিন্তু ঢাকা শহরটাকে দেখতে চায়। তাদের কাছে গুলিস্তানে রিক্সার জ্যামটাকেই কিন্তু মার্ভেলাস মনে হয়। ঢাকাকে তো আর একদিনে ভ্যানকুয়েভার বানিয়ে ফেলা যাবে না, তাই একটু ভিন্ন চোখে ঢাকা শহরটাকে দেখার জন্য সহব্লগার রোহান আর কয়েনকজন মিলে সপ্তাহ খানেক আগে ঢাকা ট্যুরে বের হয়েছিলাম ছবি তোলার জন্য। কেউ কেউ নাক সিটকালো, ঢাকা ট্যুর!!! এই জঙ্গলে কি ছবি তুলবে?
ঢাকাকে, আরো ছোট করে বললে পুরান ঢাকা এলাকাটাকে একটু ভিন্ন ভাবে দেখার প্রয়াস ব্লগারদের সাথে ভাগাভাগি করছি।

১.এটাকে চিনিয়ে দেবার কিছু নেই। ইন্টারনেটে এমন ছবি অনেক দেখেছি। তবে কার্জন হলকে ঢাকার প্রতীক না বললে ভুলই হবে। আমরা যখন ছবি তুলছিলাম একই সময় এক চীনা দম্পতিও ইয়া বড় লেন্স আর ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলছিলো। একটু লজ্জ্বাই পেলাম আমার সাধারন ক্যামেরাটা নিয়ে।

২. তিন নেতার মাজার। আমার মতে এটা একটা অসাধারন স্থাপত্য। কিন্তু কোথাওই এটাকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না।

৩. চারশো বছরের পুরনো ঢাকার ছবিতে এই গেটটির ছবি আছে। অবাক লাগে চরশো বছর এই গেটটির বয়স।

৪. দোয়েল চত্বর। আশির দশকে টিভি নাটক কিংবা সিনেমা সব কিছুতেই একবার এটাকে দেখানো চাই।

৫. আর একবার কার্জন হল এলাকা ঘুরে এলাম।

৬. জগন্নাথ হলের মাঠে। হয়তো আগামী দিনের শাকিব-তামিমরাই এখানেই আছে।

৭. এরা সবাই আমাদের দেশের জন্য কোন না কোন অবদান রেখেছেন। ভাস্কর্য থাকলেও কারো পরিচয়ই দেয়া নেই।

৮. বসন্তে লালবাগের কেল্লার ভেতরটা অসাধারন লাগে।

৯. লালবাগ কেল্লার আরো একটা ছবি।

১০. পুরাতনের মাঝেও নতুন প্রাণের শুরু।

১১. লালবাগ কেল্লার পুরো এলাকা এক নজরে।

১২. আহসান মন্জীল। ঢাকার একটি অবশ্য দ্রষ্টব্য স্থান।

১৩. পুরনোর স্থাপনায় রঙের খেলা।

১৪. শিখা চিরন্তন এলাকা থেকে তোলা ছবিটা।
ইন্ডিয়ান চ্যানেলগুলোতে একটা এ্যাড দেখে খুব ভালো লাগে। এক বিদেশী এসেছে ইন্ডিয়ায়। ঘুরে বেড়াচ্ছে, জঙ্গলে যাচ্ছে, বাঘের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, ইন্ডিয়ার এক শহরে যাওয়ার পর লোকজন তার গায়ে হোলির রং ছিটিয়ে দিলো। আর পরের দৃশ্যে দেখা গেলো, সেই বিদেশী ভদ্রলোকও আর সবার সাথে হোলি খেলায় মেতে উঠলো। এ্যাডটা ইনক্রেডেবল ইন্ডিয়ার। তারা তাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে এভাবেই ছড়িয়ে দিয়েছে। আজকাল তাই ভারতের বাইরেও ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে রমরমা ব্যাবসা।
স্যাটেলাইটের কল্যোণ আমরা আজ গরে বসে আগ্রা - দিল্লী কিংবা লাহোরের অসাধারন সব মুঘল স্থাপত্য দেখি আর মনে মনে তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করি। অথচ খুব কাছেই হয়তো আছে এমন সব স্থাপনাকে আমরা দেখি না। উপেক্ষা করে চলি কিংবা হয়তো সেভাবে মুগ্ধতার দৃষ্টি নিয়ে দেখি না। কারন আমরা এখনো আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি আর ইতিহাসকে মার্কেটাইজ করতে পারিনি। ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে পারিনি। আমাদের যা আছে তা বিশ্ববাসীকে সেভাবে দেখাতে পারিনি। বন্যা আর ঘুর্ণিঝড়ের বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর কাছে 'বিউটিফুল বাংলাদেশ' বলে কি আমরা তুলে ধরতে পারি না?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১০ বিকাল ৪:৪২