আমাদের দেশের মানুষের কিছু বিশেষ আচরন আছে, যা দিয়ে অন্যান্য দেশের মানুষ বা বিদেশী জাতি থেকে সহজেই আলাদা করা যায়। এই আলাদা ধরনের চিন্তা-ভাবনা ও মনোভাব গুলো, সেটা ভালো না খারাপ সেই বিচারে যাবো না। আমি বাংলাদেশী এই মানুষদের অ্যাটিটিউড নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি।
১) এলাকার বয়স্ক ও মুরুব্বীগন নিজে থেকে যুবক/বয়সে ছোটদের সালাম দিবেন না, তবে তারা অন্যের থেকে সালাম পাওয়াকে অধিকার মনে করেন
যদিও ইসলাম ধর্মানুযায়ী আগে সালাম দেয়ার রীতি আছে, কিন্তু এলাকার মুরুব্বীগন এটা ভেবে বসে থাকেন, তারা সবার থেকে সালাম পাওয়ার যোগ্য, তারা ছোটদের সালাম দিলে তাদের জাত চলে যাবে।
২) ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা মানেই ভালোবাসা
কিছু আত্মীয়/প্রতিবেশী আছেন, এরা মনে করেন ব্যক্তিগত বিষয়ে হুট করে প্রশ্ন করার অধিকার তাদের আছে। এইটা তাদের ভালোবাসার প্রকাশ। যেখানে সেখানে হঠাৎ "কত টাকা বেতন পাও?", "বিয়ে করবা কবে?", "বাচ্চা নেও না কেন?", "মোটা হয়ে যাইতেছো কেন?", "চুল বড় রাখছো কেন" ইত্যাদি প্রশ্ন করা মানেই কেয়ারিং সম্পর্ক।
৩) চোখের নিচে কালো দাগ, মানে ছেলে গাঞ্জা খায়
শারীরিক অসুস্থতা কিংবা লেখাপড়ার কারনে রাত জাগার কারনে কিংবা অনিদ্রাজনিত কারনে চোখের নিচে কালো দাগ পরে নাই এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল। তবে সমাজে বৃহৎ একটা অংশ মনে করে এরা নিয়মিত গাজাঁ/ইয়াবা সেবন করে।
৪) কোন পুরুষ এর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ইভ টিজিং, হ্যারাসমেন্ট করা মানে অবশ্যই পুরুষ দোষী।
প্রমান না থাকুক বা বিচার শেষ না হোক, সমাজ এই ক্ষেত্রে অভিযুক্ত পুরুষকে ভিলেন ধরে নেয় এবং অভিযোগকারী যদি নারী হয় সেক্ষেত্রে তার প্রত সহমর্মিতা ঢেলে দেয়।
৫) মেয়ে বোরকা/হিজাব পরে না, তাই সে হ্যারাস/রেপ/টিজিং এর শিকার হলে এইটা স্বাভাবিক
এই বিষয় নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নেই। ফেসবুক/ইন্সটাগ্রামে অপরিচিত মেয়েদের ছবিতে "Kanke Mage Hegab Koi?" কমেন্ট কারী পর্দাসচেতন মানুষগুলো দেখলেই সমাজের চিত্র বোঝা যায়।
৬) কেউ আমাকে কিছু ব্যবহার করতে না দিলে সে অহংকারী
কারও প্রিয় বাইসাইকেল/মোটরসাইকেল, ক্যামেরা, জামা/কাপড় ধার চেয়ে না পেলেই আমরা তাকে অহংকারী হিসেবে ধরে নেই। অথচ এটা কখনোই ভাবি না, অন্যের শখের ও যত্নের জিনিষ আমার চাওয়া উচিৎ কি না!
৭) বাবা-মা (ও পরিবারের মুরুব্বি) এর নেয়া সিদ্ধান্ত সবসময় সঠিক
বাবা-মা বা পরিবারের অন্য মুরুব্বীগন যে সিদ্ধান্ত নেন, তার উপরে কথা বলতে নেই। কেননা তারা সবসময় সঠিক, এবং তাদের দ্বারা কখনো কোন ভুল হতেই পারে না।
৮) যে কোন সময়ে কেউ কে ভিডিও কল দেয়া যেতে পারে
পরিচিত/অপরিচিত কাউকে হুট করে যে কোন সময় ভিডিওকল দেয়া যেতেই পারে। তারা অনলাইনে আছে মানে আমার সঙ্গে খাজুরে গপ্পো করার মতো ফ্রি আছে। এছারা ফোন না রিসিভ করলে বা কেটে দিলে বারবার ফোন দেয়া যেতেই পারে।
৯) ঘুষ দেয়া কোন অপরাধ না
যদিও অনেকে এখন নিজের+অন্যের ঘুষ নেয়াকেও অপরাধ হিসেবে মনে করে না, কিন্তু ঘুষ দেয়া একদম স্বাভাবিক ব্যাপার। নিজের সুবিধার জন্য বা কোন কাজ দ্রুত করিয়ে নিতে বাড়তি কিছু পয়সা খরচ করা কোন অপরাধই না।
১০) বেড়াতে গিয়ে বাড়ি/ঘর ঘুরে দেখা ও কোন জিনিষে হাত দেয়া স্বাভাবিক আচরন
অনেক মানুষ আছেন, যারে মনে করেন প্রথমবার/অনেকদিন পর কোন আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গেলে বিভিন্ন ঘরে ঢুকে ঘুরে ঘুরে দেখা, শোপিস/রিমোট বা অন্যান্য জিনিষ হাতিয়ে দেখা খুবই ছিমপোল ব্যাপার।
--------------------
আমার আত্মীয়/প্রতিবেশীদের এমন আচরন করতে দেখলে আমার বিরক্তি ধরে যায়। জানি না, অনেকের কাছেই হয়তো বিষয়গুলো স্বাভাবিক। যাই হোক, এটা আমার প্রথম পোষ্ট। প্রায় এক বছর আগে একাউন্ট খোলা হলেও পোষ্ট করিনি তখন। পরে কোভিড-১৯ এর সময়ে পেশাগত সমস্যা ও পরিবারকে নিয়ে ব্যস্ততায় আর একাউন্টটি ব্যবহার করিনি। আশা করি এখন থেকে নিয়মিত ব্লগে সময় দেবো।
নোটঃ আমার সহ-ব্লগার, ভক্ত, আশেকানদের বলছি, তোমরা সবাই আমারে স্যার ডাকবা
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৯