১) আজ বাচ্চাটার ক্লাস ওয়ানের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু। সকালে নিয়ে যাচ্ছিলাম, বললো "বাবা, কেমন যেন ভয় ভয় লাগতেছে।"
বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া আমার জন্য খুব আনন্দের একটা ব্যাপার। বাপ বেটা মজা করতে করতে স্কুলেতে যাই। কিন্তু ছেলের মুখে পরীক্ষা নিয়ে ভয় দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। যতই চেষ্টা করি তার উপর পড়ার প্রেশার যেন না আসে, কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে না। স্কুলের শিক্ষকরা ইংরেজী পাঠ্যবই ছুঁয়েও দেখে না। বাইরের ইংরেজী বই পড়ায়, সেখান থেকেই পরীক্ষায় আসে। অন্ততঃ ইংরেজী পড়ানোর বিষয়ে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কিছুই জানে না বলেই তাদের ধারণা। আর তাই বোর্ড থেকে দেয়া ইংরেজী বইটা অচ্ছুৎ। শিক্ষার্থীদেরকে ইংরেজীতে জাহাজ বানানোর একটা গভীর আকাঙ্ক্ষা (??) নিয়ে রাখে স্কুল গুলো।
পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কি কিছুই জানে না ভেবেছেন? অবশ্যই জানে, কিন্তু এতে তারা মোটেও অপমানিত হন না। রাজধানীর স্কুলগুলো পরিদর্শন করে এসব অনিয়ম, অতিরিক্ত চাপ কমাতে স্কুল প্রশাসনকে প্রেশার দিবে এরকম সাহস প্রাথমিক শিক্ষার মন্ত্রণালয়ের আছে বলে মনে হয় না।
যাই হোক, বাচ্চাকে সাহস দিলাম না, বরং বললাম, "আরে এসব কিছুই না বাবা। কি হবে?" মনে মনে বললাম, তুমি আমার কলিজার টুকরা বাবা, তুমি আমার আদরের বাবাটি হয়েই থাকবে।
২) পরীক্ষার হলে ছেলেটাকে রেখে বাইরে আসলাম। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের মা-য়েরা এসেছে বাচ্চাকে স্কুলে দিতে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাতে। একজন দরীদ্রা এক মায়ের কাছে টাকা চাইছে, এই বলে "অনেক কষ্ট করছো, তোমার মেয়ের পরীক্ষা ভালো হবে।''
দরীদ্রা দুইটা মোক্ষম অস্ত্র ছুড়েছে, এক. অনেক কষ্ট করা আর দুই. সন্তানের ভালো চাওয়া। দুইটা হৃদয়ে বিঁধবে কনফার্ম।
এটা সত্য যে বাচ্চাদের শিক্ষা-দীক্ষা নিয়ে বেশী পরিশ্রম মায়েরাই করে। আমার বেলাতেও যেমন সেটা সত্য ছিল, আমার সন্তানের বেলাতেও সেটা অনেক সত্য। আমার বাচ্চার পুঁথিগত জ্ঞানের ৯০% বাচ্চার মা, মানে আমার স্ত্রীর কারণেই হয়েছে। প্রি-প্রাইমারীতে তো আমি বাচ্চাকে একদিনও পড়াইনি। আনন্দের সাথে যতটুকু পড়ে, তাই সই, এই ম্যান্টালিটি নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু বাচ্চার মা হাল ছাড়েনি। একনিষ্ঠতার সাথে ছেলেটার পড়ালেখার প্রতি নজর রেখেছে। আজ তাই বাচ্চার কোন পুঁথিগত বুদ্ধিমত্তা টের পেলে আমি মনে মনে হলেও বাচ্চার মা-কে ধন্যবাদ দেই।
তো সকালের গল্পে আসি। দরীদ্রা যে মায়ের কাছে ভিক্ষা খুঁজছিলেন, তাকে তার কষ্টের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। তাতেই মহিলার চোখে মুখে আনন্দ। ব্যাগ খুলতে লাগলেন, টাকা দিয়ে কিছু দোয়া কিনবেন, পরিশ্রমের সাথে দোয়া যোগ হয়ে যেন ভালো ফল আসে।
৩) পরীক্ষা কেমন হয়েছে তার খোঁজ নিতে গিন্নীকে দুপুরে কল দিলাম। বাচ্চা ফোন ধরে জানালো পরীক্ষা খুউউব ভালো হয়েছে। কিন্তু বাচ্চার মা বললো " কিসের ভালো হয়েছে! রেজাল্ট দিলে বুঝা যাবে কত্তগুলো ভুল করে এসেছে।" পড়ালেখা করে বা ভালো পরীক্ষা দিয়ে বাচ্চার মা-কে খুশী করা বাচ্চার কম্ম না, বুঝলুম। শুধু রেজাল্টই সব।
কিন্তু আমি বেজায় খুশী। বাচ্চা যখন খুশীমনে দিনের পরীক্ষা শেষ করেছে, এই-ই বেশ।