৫) বিদ্যালয়ের নিয়মগুলো কে তৈরি করেছে?
বেশীরভাগ বেসরকারি বিদ্যালয়ের
নিয়ম প্রস্তুত বা তা পালনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে অভিভাবকদের চাহিদা।
যেমন ধরুন, ভিকারুন্নেসায় কোন শিক্ষার্থী মোবাইল নিয়ে গেলেও যদি কোন স্টেপ না নেয়া হত, তাহলে শিক্ষকরা অভিভাবকদের রোষানলে পড়ত, অথবা বলত স্কুলটা ভালো না। আবার অনেক স্কুল আছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা সবাই মোবাইল ব্যবহার করে, কিন্তু অভিভাবকদের প্রেশারও নাই, বিদ্যালয়েও মোবাইলের বিষয়ে কঠোরতা নাই।
আমার একটা স্কুলের এক শিক্ষক চাকরি ছেড়ে দিয়ে এমন একটা স্কুলে জয়েন করেছিল যেখানে ছেলেরা লম্বা চুল রাখলে পানিশমেন্ট দেয়া হয়। উনি নতুন স্কুলে জয়েন করেই সেই স্কুলের নিয়ম কঠোরভাবে পালন করা শুরু করলেন।
তবে নিয়ম তৈরিতে কারো ভুমিকা সম্পর্কে জেনারালাইজড কোন স্ট্যাটমেন্ট দেয়া কঠিন।
এমনও স্কুল আছে যেখানে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। তবে যেই এরিয়ার স্কুল সেই এরিয়ার অভিভাবকগণ যদি সচেতন থাকেন, তাহলে নিয়ম তৈরি এবং ইমপ্লিমেন্টেশনে অভিভাবকরাই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে শুধু আর্থিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে।
আমি আসলে বুঝাতে চেয়েছি স্কুলের কোন নিয়ম এবং তা পরিপালনের ক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করে সব দোষ কোন একজন শিক্ষকের উপর চাপিয়ে দেয়া উচিৎ না।
তাই বলে কি শিক্ষকরা দোষী হতে পারে না? অবশ্যই দোষী হতে পারে।
শিক্ষকদের দোষেরও কমতি নেই।
যাই হোক, ভিকারুন্নিসার কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা বলার পর আমার ফাইন্ডিংসগুলো মজার।
1) বিদ্যালয়ে মোবাইল নেয়ার নিয়ম না থাকলেও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা মোবাইল নেয় এবং সেটা টিচাররা জানে।
2) অভিভাবকরা নিয়মগুলো পছন্দ করে।
3) শিক্ষার্থীরা নিয়ম ভাঙ্গতে পারলেই খুশী।
4) শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রম আহামরি ধরনের কিছু না।
5) ক্লাস থ্রী থেকেই কোচিং ক্লাস করানো প্রায় বাধ্যতামূলক। প্রতি শুক্র এবং শনিবার কোচিং ক্লাস করানো হয় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনেই।
6) ছুটির দিনে কোচিং ক্লাস করানোর সময়ে স্কুল ড্রেস পরে আসা বাধ্যতামূলক।(খুব সম্ভবত কোচিং এর বিষয়টাকে আড়াল করার জন্য)
7) উপরের ক্লাসে টিচাররা শিক্ষার্থীদের সাথে মোটেও বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করে না।
৮) একজন অভিভাবক ক্ষোভের সাথে বললেন , শিক্ষকরা নিজেদেরকে কি জানি কি মনে করে, অভিভাবকদের সাথে মোটেও সহযোগিতামূলক আচরণ করে না। মোটেও সময় দেয় না। কথাই বলতে চায় না।
ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি চিন্তা করে দেখলাম এই সমস্যা শুধু ভিকারুন্নিসার না, এটা প্রায় সব স্কুলের সমস্যা।
খবরে পড়লাম, ভিকারুন্নিসার নিয়ম কানুনে না-কি ব্যাপক পরিবর্তন আসছে, নাম পরিবর্তনের হাস্যকর প্রস্তাবও আছে।
কোয়ালিটির পরিবর্তন আনার কথা শুনতেছি না। আর তাছাড়া শুধু একটা স্কুলে পরিবর্তন এনে কি লাভ? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে শুধু একটা স্কুলকে গুরুত্ব পাওয়া ঠিক না
৬) ও, আচ্ছা, হ্যাঁ, কি যেন বলছিলাম ভিকারুন্নিসার ছাত্রী অদ্রিতি অধিকারীর আত্মহত্যা নিয়ে? কি যেন কথা হচ্ছিল, সব কিছু না-কি উল্টাইয়া ফালানো হবে?
তো শুধু ভিকারুন্নিসাতে উলটানো হবে? না-কি অন্য স্কুলগুলোতেও?
এদেশের বেশীরভাগ স্কুল ভিকারুন্নিসা টাইপ ৮/১০ টা স্কুলের চেয়ে ম্যালা ম্যালা পিছাইয়া আছে, তো সেগুলার প্রতি নজর দিবেন?
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার একটা বালিকা বিদ্যালয়ের কথা মনে আছে (সেসিপে থাকাকালীন নিয়ন্ত্রনাধীন ছিল),
সেখানে নিয়মের থোরাই কেয়ার,
৯৯% মেয়ে সামর্থ্যের অভাবে খালি পায়ে স্কুলে আসত,
স্কুল ড্রেস- হেঃ হেঃ,
মোবাইল কেনা বা নকল-ফকলের কথা বাদ দেন, খাইতে বা খাওয়াইতে না পাইরা মেয়ে জাতিকে তাড়াতাড়ি বিয়ের পিড়িতে বাসানোই সেই এলাকায় মূখ্য।
এখানে একজন আত্মহত্যা করে, অনেকখানে অনেক অনেক হত্যা হয়।