এসএসসি এর আগে লাস্ট ক্লাস। আমাদের যে স্যার রসায়ন পড়াতেন, মনে পড়ে না কখনও তিনি পড়ার বাইরে অন্য কোন বিষয়ে কোন কথা বলেছেন কি-না। আসলে ক্লাসেই এসেই তিনি সিলেবাসে চলে যেতেন। পড়াতেনও ভালো, তাই কোন ভূমিকারও প্রয়োজন পড়ত না কখনও।
কিন্তু শেষ ক্লাসের দিন!! বিদায় - শুভেচ্ছা - দোয়া - সালাম- উপদেশ শেষ হল। এরপর বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বললেন, "আমি তোমাদেরকে কখনও অন্য কোন বিষয় নিয়ে কিছু বলি না, তবে আজ একটা গল্প বলবো।"
এতটুকু বলে উনি মাথা নিচু করে রইলেন, কিছু ভাবলেন মনে হয়। তারপর মাথা উঠিয়ে বলা শুরু করলেনঃ (তার মতো করে বলছি)
" আমি যখন ক্লাস সেভেন/এইটে পড়ি তখনকার কথা। আমাদের এক ক্লাসমেট বন্ধু আরেক ক্লাসমেট বন্ধুর প্রেমে পড়ে। একপক্ষীয় না। দুইজনই বিষয়টাতে রাজী ছিল। আমরা বন্ধুরা তাদেরকে বেশ সাহায্যও করি। তো আমরা বন্ধুরা একই স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করি। বেশ কয়েকজন (তারাও) একই কলেজেই ভর্তি হই। ঐ দুইজনও একই কলেজে ভর্তী হওয়ায় তাদের প্রেম আরো গভীর হয়। এরপর তারা একই সময়ে ইন্টার পাশ করে, আবার একই বছরে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতেই ভর্তি হয়। ইউনিভার্সিটি লাইফেও তারা সুন্দর সময় কাটায়। তাদের মধ্যে কখনও ঝগড়া ঝাটি, সাময়িক ব্রেকাপ এগুলো হয়নি। মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের মধ্যে কোন বিষয়ে কখনও কোন মতদ্বৈততাও হত না। সুখী এবং আইডল জুটি ছিল তারা।... সব বিষয়েই যে তারা একমত ছিল, তা না!! বলার মত একটাই ছিল যে তারা একই ছাত্র সংগঠনের দুইটা আলাদা অংশকে {ছাত্রলীগ(সাঃপাঃ) এবং (মঃইঃ), এখন যতটুকু মনে পড়তেছে} সাপোর্ট করত। শুধু এই বিষয়ে মতপার্থক্য ছাড়া আর কখনও কোন বিষয়ে তাদেরকে তর্ক করতেও দেখিনি। আসলে ঐ রাজনৈতিক তর্কাতর্কিও ছিল সাময়িক সময়ের। এই রাজনৈতিক মতপার্থক্যটা মোটেও তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন ধরণের প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এভাবেই আনন্দের সাথে তাদের ইউনিভার্সিটি লাইফ শেষ হয়। ক্লাস সেভেন/এইট থেকে প্রেম। অনেক শক্ত প্রেম ছিল। সারাজীবন একসাথে থাকার কথাও দেয়া ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় লাইফ শেষ হওয়ার পর পরই মেয়েটা তার প্রেমিকের অজ্ঞাতে চুপিসারে আমেরিকা প্রবাসী এক ছেলেকে বিয়ে করে এবং বিদেশে চলে যায়। না, তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়নি। সে স্বেচ্ছায় বিয়েটা করে। "
এতটুকু বলে স্যার আবার মাথা নীচু করে থাকে চুপ থাকে কিছুক্ষণ।
এরপর আবার শুরু করলেনঃ
"তোমরা এখনও খুব ছোট, প্রেম- ভালোবাসা, সম্পর্কে জড়ানো এসব হয়তো এখনও তোমাদের বুঝেও আসবে না। এই গল্পটা আর এর শিক্ষাটা তোমাদের ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। সতর্কতার সাথে জীবনের সিদ্ধান্তগুলো নিও। "
আমরা আসলেই তখন খুব ছোট, বয়েজ স্কুলে পড়ি। ফিমেল জেন্ডার একটা রহস্যময় বিষয়। রোমান্টিক গল্পের বই পড়া হয়, সেখানে বিরহও থাকে, তবে গল্প-উপন্যাসে বেঈমানী থাকে না। তাই প্রেমের গল্পটা শুনতে শুনতে কথা না রাখার বিষয়টাকে ছ্যাকা খাওয়া হিসেবে ট্রীট করে আমাদের কেউ কেউ মুখ টিপে হাসাহাসিই করছিলাম। গল্পের নায়ক প্রেমিকবরকে আমরা লুজার হিসেবেই করুনা করছিলাম। গল্পটা থেকে স্যার কি শিক্ষা দিতে চাচ্ছেন, তা তখনও কেউ গুরুত্বের সাথে নিচ্ছিল না। নিবে কিভাবে? মনে পড়ে না ওই সময়ে ক্লাসের কারো প্রেম ছিল!!
যাই হোক, স্যার গল্প শেষ করে তখন আমাদের উপদেশ দিচ্ছিলেন। বলছিলেন যে তোমরা ছোট বাচ্চা, কিন্তু পরে আর কখনও এই উপদেশটা দেয়ার সুযগ পাবো না, তাই আজই বললাম। কিন্তু স্যারের এতটুকু গল্প আমাদের সন্তুষ্ট করছিল না। তাই আমরা স্যারকে জিজ্ঞাস করলাম তারপর কি হয়েছে? ছেলেটার?
স্যার আর কিছু বলতে চাইলেন না, বললেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ না।
কিন্তু আমরা বার বার জিজ্ঞাসা করার পর বললেন" কি আর হবে, এসব জানতে পারার পর ছেলেটা প্রায় দুই বছরের মত মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিল। অনেক চিকিৎসা করানোর পর ভাল হয়। কিন্তু ভালো হলেও সে বিয়ে সাদী করতে একেবারেই ইচ্ছুক ছিল না। বেশ কয়েকবছর চেষ্টার পর আমরা বন্ধুরা জোর করে তাকে একটা বিয়ে দিতে সমর্থ হই। "
"আর মেয়েটার কোন খবর?"
"নাহ্, ওর কোন খবর আমরা নেই না। যতটুকু শুনেছি, সে ভালোই আছে।"
## ক্লাসের অন্য বন্ধুদের কথা জানি না, আমার হঠাৎ মনে হল, এটা স্যারের নিজের গল্প না তো!!!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:১৭