somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধদিনের গল্প শুনি-০১

১৭ ই জুন, ২০১২ রাত ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
যুদ্ধদিনের গল্প শুনি




(লেখাটি মূল ঘটনা হতে সামান্য সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত)


ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ । হঠাৎ একদিন প্রচন্ড বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠল কৈবল্যধামের কাছের একটি এলাকা । খোঁজ নিয়ে জানা গেল মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা পেট্রোল ট্রেন উড়িয়ে দিয়েছেন । এই কাজের নেতৃত্ব যিনি দিলেন তাঁকে খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, তিনি সাধারন চেহারার মাঝারী উচ্চতার হালকা-পাতলা গড়নের একটি ১৮/১৯ বছরের ছেলে, নাম বাহার । ভাল নাম রইসুল হক।

বড় বড় চোখের সেই কিশোর দীর্ঘদিন রয়েছেন একইরকম, মুখে তাঁর সারাক্ষন হাসি, শুধু ওজন বোধহয় বেড়েছে কিছুটা; চলুন তাঁর মুখেই শুনি যুদ্ধ দিনের গল্পগুলো ।

৭১-এ তিনি কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরে । পরেও দীর্ঘদিন সেখানেই চাকুরী করেছেন, তবে পরিবর্তীত হয়েছে পরিচয়, আগে নিজে ছিলেন বাবার বড় সন্তান, আজ তিনি নিজেই সন্তানের বাবা।

তাঁর জন্ম নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার অধীন চরকাকরা গ্রামে । পিতা মোঃ জিয়াউল হকের সাত ছেলের মধ্যে তিনি প্রথম । পিতাও চাকুরীরত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরে, তাই ছোটবেলা থেকেই বন্দরে যাতায়াত ছিল বাহারের । বাবার সাথে ছোটবেলা থেকেই তিনি অভয়মিত্রঘাট, নিমতলা, নিউমুরিং কলোনীতে বসবাস করে আসছেন । পড়াশোনা করেছেন মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুল, বন্দর হাই স্কুল, ও হালিশহরের বেগমগজান স্কুলে যেখান থেকেই তিনি ১৯৬৮ সালে পাশ করেন ম্যাট্রিকুলেশন । ছাত্র জীবনে কোন সংগঠন করতেন না, তবে তাঁর এলাকায় তখন ছাত্রলীগের প্রাধান্য ছিল। ছাত্রলীগের নুরুল আলমের কথাও আজও স্মরণ করেন তিনি ।

১৯৬৮ সালেই ভর্তি হন চট্টগ্রাম সিটি কলেজে । হতে শুরু করেন রাজনৈতিক ভাবে সচেতন ।
কোন ছাত্র সংগঠনে সক্রিয় না হলেও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সভায় যান, মন দিয়ে শোনেন, আর সবার বক্তব্য । অনেক সভায়ই তখন যোগ দিয়েছিলেন যার কিছু কিছু আজও স্মরনে আছে তাঁর।

এম এ আজিজের মুক্তির দাবিতে প্যারেড ময়দানে বিশাল সমাবেশ হয়েছিল । বন্ধু বান্ধবদের সাথে তাতে অংশ নিয়েছিলেন, এটাই ছিল তাঁর প্রথম কোন বড় সভায় যোগদান । ভালো লেগেছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষন । পশ্চিমাদের অত্যাচারের কাহিনী শুনে এরপর ধীরে ধীরে জাতীয়তাবাদী চেতনায় তিনি প্রভাবান্বিত হতে শুরু করেন ।

নির্বাচনের পূর্বে তিনি হঠাৎ আওয়ামী বিরোধী বক্তব্য শোনেন তখনকার সমাজতন্ত্রী নেতা মতিয়া চৌধুরীর মুখে লালদিঘীর জনসভায়, দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যান তিনি । মতিয়া বলেন, ৬ দফা শুধু সাম্রাজ্যবাদের দলিল । সমাজতন্ত্রের মাধ্যমেই গরীব-মেহনতি জনতার মুক্তি সম্ভব বলে দাবি করেন মতিয়া। তবে বাঙ্গালীদের স্বার্থের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের বক্তব্যই বাহারের কাছে সঠিক মনে হয় ।

নির্বাচনে পাড়ার ছেলেদের সাথে ঘোরেন, ভোট দেন এম এ আজিজের পক্ষে । নির্বাচন পরবর্তী কালে একজন আওয়ামী নেতা, ডাকসু’র তৎকালীন ভিপি আ স ম আবদুর রব তাঁদের ওখানে এসে ভাষন দেন, যেই ভাষনের কথাগুলো আজও স্মরণ আছে তাঁর, “জনগনের অধিকার আদায়ের জন্য আপনাদের ভোট দিয়ে এম.এন.এ. করা হয়েছে, যদি তাঁদের অধিকার রক্ষা করতে না পারেন তা হলে গলায় গামছা বেঁধে আপনাদের ভোট ফিরায়ে নেয়া হবে”----এই কথায় বেশ আলোড়িত হন বাহার।

১লা জানুয়ারী ১৯৭১, রেসকোর্সের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুনলেন বাহার, ৪ঠা জানুয়ারী রমনা গ্রীনের সভায়ও অংশ নেন, যা ছিল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভা । কোন সঙ্গঠনে সরাসরি জড়িত না হয়েও তিনি অংশ হয়ে গেলেন বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের আন্দোলনের কর্মী । ১লা মার্চ ইয়াহিয়ার বেতার ভাষন শুনে তিনি জনগনের উত্তেজনা দেখেন । আর নিজে উপলব্ধি করলেন
“আমি বাঙ্গালী, আমার পরিচয় প্রথমত এটাই” ।

২৪ মার্চ । দিনটি বাহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । এতদিন সভা শুধু শুনেছেন, এইবার নিজেই নামলেন সভা সংগঠনে । এদিন সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে জনসভা হবে তাঁর কলোনী নিউমুরিং-এ । মঞ্চ ঠিক করতে হবে । এলাকার শামসুদ্দিন, সাত্তার প্রমুখের সাথে সভার আয়োজন করেন তিনি, দাঁড়ান মঞ্চের পাশে ।

সভায় বক্তব্য দিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান, এম এম মজিদ। মজার ব্যাপার হল, সভায় উপস্থিত সবাই কিন্তু আওয়ামী লীগ সমর্থক নন, শামসুদ্দীন করতেন ছাত্র ইউনিয়ন । বাহারও আওয়ামী লীগ করতেন না। কিন্তু এটা তখন কিন্তু লক্ষনীয় বিষয় ছিল না, আজ সেটা লক্ষনীয় ।

সভা চলাকালীন অবস্থায়ই মিছিল আর নির্দিষ্ট করে মাপে কাটা লোহার রড হাতে হাজির শ্রমিক মিছিল । তাঁদের উদ্দেশ্য সোয়াত জাহাজ ঘেরাও করা । তাদের উত্তেজনায় মিছিল করা হল সংক্ষিপ্ত। মিছিলের সাথে বাহার গেলেন ৩নং জেটিতে । হঠাৎ শুরু হল গোলাগুলি । তিনি চলে এলেন পাড়ার ছেলেদের সাথে পালিয়ে, তাঁর আগে কিছুক্ষন ঢিল ছোঁড়াছুঁড়ি করেছিলেন। নিহত-আহতের সংখ্যা বলতে পারেন না বাহার ।

২৫ মার্চ এলাকার ছেলেরা বৈঠকে বসলেন নিউমুরিং প্রাইমারী স্কুলে। ২৬ মার্চ বন্দরের ওয়েলফেয়ার ইন্সপেক্টর মোজাফফর সাহেব দুপুরে সবাইকে ডাকেন তাঁর বাসার সামনে। জানান বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন । তিনি রেডিও আনলে রেডিওতে জ্বালাময়ী ভাষন শোনা যায় এম এ হান্নানের গলায়, তিনিই প্রথম বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষনা দেন। বাহার সেখানেই এই ঘোষনা শুনলেন।
এলাকার সব যুবক তখন আবেগে-উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছেন, পারলে তখনই যুদ্ধে যেতে উদ্যত। হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ, কলোনীর একদিকে কর্ণফুলী নদী, অন্যদিকে বঙ্গোপসাগর। দুইদিক থেকেই কামানের গোলা ও শেল ছুঁড়তে শুরু করল পাকিস্তানী বাহিনী। এলাকার ছেলে-বুড়ো আতঙ্কিত । খালি হাতেই পাহারায় বসলেন পাড়ার ছেলেরা । বাহার সারা রাত কাটালেন এক বাসার ছাদে, খালি হাতে। ২৭ মার্চ বাহারের পরিবারের সাথে আরও পরিবার আশ্রয় নেন মেহের আফজাল হাই স্কুলে, যা পরিনত হয় শরণার্থী শিবিরে। এলাকার লোকজন খাবার দিয়ে সহায়তা করেন। বেশিরভাগ লোকজন পালাতে থাকেন এলাকা ছাড়তে।

স্কুলে এ সময় বেশ কিছু বাঙ্গালী ইপিআরের সেনা সদস্য আসেন, কেউ কেউ রাইফেল হাতে খালি গায়ে। কেউবা সামরিক পোশাক গায়ে দিয়ে। তাঁদের যেতে সাহায্য করেন অনেকে, অনেকে তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন । এইদিন-ই সন্ধ্যাবেলা, বেতারে মেজর জিয়াউর রহমানের কন্ঠ শোনেন বাহার, জিয়াউর রহমান নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষনা দিয়ে প্রথম ভাষনটি দেন। চিন্তিত হন বাহার, আশেপাশের সবাইও বেশ অবাক-প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেন বাহার। ২৮ মার্চ মেজর জিয়া তাঁর ভাষন পরিবর্তীত করে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন আর সমগ্র জাতিকে যুদ্ধে অংশগ্রহনের আহবান জানান। বাহার তখনও ঐ স্কুলেই রয়েছেন। একজন বাঙ্গালী অফিসারের এই ঘোষনায় জনগন আবারো যুদ্ধের নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে, প্রতিরোধ যুদ্ধের আশা-আকাঙ্খায় উদ্দীপ্ত হয়, যেই চেতনা ২৫ মার্চের গনহত্যার পর কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল।

কিন্তু ২৮ মার্চ পরবর্তী সময়ে এলাকার নিয়ন্ত্রণ পাক বাহিনীর হাতে চলে যায়। তবে অত্যাচারের মাত্রা কিছুটা কমে আসে। বাহারের পরিবার আবার কলোনীতে ফিরে এলেও বেশীরভাগ পরিবার চলে যেতে শুরু করে গ্রামের পথে নিরাপদ আশ্রয়ে। যুদ্ধে যাওয়ার পথ খুঁজতে থাকেন বাহার। অবশেষে বাহার ও সাত্তার মে মাসের শেষ দিকে ভারতের পথে রওয়ানা দেন। যদিও তাঁর বাকি বন্ধুরা তাঁদের সাথে আসেন নি। দুপুরে যাত্রা করেন নিউমুরিং কলোনী থেকে, বাসে করে নামেন মিরসরাই।
গ্রামের পথে পার হন মিরসরাই, স্থানীয় জনগন পথ বলে দেন তাঁদের।মুহুরী নদী পার হয়ে এক বাড়িতে পৌঁছেন, যা ছিল সীমান্তের একেবারে কাছেই। সকালে বাড়ির লোকজন তাঁদের সীমান্তে পৌঁছে দেন। ওপারে তাঁরা পৌঁছেন শ্রীনগর অভ্যর্থনা ক্যাম্পে । ওখানে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোফরানুল হক (পরে ডাক্তার) নামে একজন ব্যাক্তি। সকালের নাস্তা শেষে তাঁরা আরো অনেকের সাথে রওয়ানা হন মনু বাজারের পথে। বাহন একটি জীপ।

মনু বাজার ক্যাম্পে তাঁদেরকে গ্রহন করেন জিতেন্দ্র প্রসাদ নাথ মন্টু, যিনি ছিলেন মিরসরাই আওয়ামী লীগের নেতা। তিনি তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত হতে পারছিলেন না, পাক অনুচর ভেবে শঙ্কিত ছিলেন। যেহেতু তাঁদের কেউই কোন সংগঠনের সাথে জড়িত নন, তাই তাঁরা পড়লেন বিপাকে। পরে বাহার ভয় পেয়ে গেলেন। শেষ চেষ্টা হিসেবে বললেন এম এ হান্নানের নাম, বললেন তাঁকে হান্নান চিনবেন। সাবরুমে হান্নানের কাছে তাঁকে নিয়ে গেলেন মন্টু, যিনি তখন একটি বট গাছের নিচে বসে আরও লোকের সাথে আলাপ করছিলেন । হান্নান, বাহারকে চিনলেন ও তাঁকে ও সাত্তারকে যুদ্ধে নিতে অনুরোধ করলেন। তারপর তাঁদের পাঠিয়ে দেয়া হল হরিণা ক্যাম্পে।

লেফটেন্যান্ট মাহফুজের নিকট থেকে প্রশিক্ষন নেন বাহার। মাহফুজ ছিলেন পরবর্তীতে দুইবার বীর বিক্রম উপাধি পাওয়া যোদ্ধা, জিয়া হত্যায় জড়িত থাকার কারনে তাঁর ফাঁসি হয় ১৯৮১ সালে।
এমনকি বাহারের সহযোদ্ধা ও সঙ্গী সাত্তারও পরবর্তীতে সেনাবাহিনীতে আত্মীকরনের পর মেজর পদে উন্নীত হন, এবং মাহফুজের সাথে অনুরূপ ভাবেই জিয়া হত্যায় সক্রিয় ভাবে অংশ নেন। তাঁরও ফাঁসি হয়। এ এক আজব দেশ। সহ-মুক্তিযোদ্ধারাই একজন আরেকজনের প্রাণনাশের খেলায় মত্ত।

বাহার ৭/৮ দিনের স্বল্পকালীন ট্রেনিংয়ে গ্রেনেড ছোড়া ও রিভলবার চালানো শিখলেন। তাঁর কমান্ডে একটি গ্রুপ গঠিত হয়। সদস্যদের মাঝে ছিলেন তাঁরই বন্ধু শামসুল ইসলাম। ওমর ফারুককে কমান্ডার করে আরেকটি গ্রুপ গঠিত হয়। বাহার কে দায়িত্ব দেয়া হয় শহরে আতঙ্ক তৈরি করার।
আগ্রাবাদ, বন্দর এলাকায় গ্রেনেড ছুঁড়ে আতঙ্ক তৈরি করতে তাঁকে বলা হয়, দেয়া হয় ৪৮ রাউন্ড গুলি, ১২টি গ্রেনেড, আর একটি রিভলবার।

গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে শ্রীনগর দিয়ে ঢোকেন বাহার। মধ্যরাতে পৌঁছান মুহুরি নদীর তীরে। ব্রীজের গোড়ায় পাক বাহিনীর ক্যাম্প, ব্রীজ থেকে তাঁরা ৫০০/৬০০ গজ দূরে। ব্রীজের গোড়া থেকে নিয়মিত আসছে টর্চের আলো, তবে এতদূর পৌঁচছে না ।

গভীর রাত, নদী পার হতে গিয়ে বেকায়দায় পড়লেন দলের সদস্যরা। তীরে নৌকা বাঁধা, তবে মাঝি নেই, দলের কেউই নৌকা বাইতে পারেন না। বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকাটাও নিরাপদ নয়।মাঝি বিহীন নৌকাতেই উঠে বসলেন সবাই। নদীর স্রোত তখন ভাটির দিকে। বাহার ভাবলেন নৌকা খুলে দিলে ভাটির দিকে ভেসে চলে যাবে, যা ভাটি অঞ্চলের যোদ্ধাদের জন্য নিরাপদ। স্রোতের অনুকূলে নৌকা বেশ জোরেই ছুটলো, বাঁধন খুলে দেয়ার পর। কিন্তু অপর পারে ঠেকতে আবার বিপত্তি। বেশ দূরে ঠেকল নৌকা। একেবারে খাড়া পারে ভিড়ল। নামা বেশ কষ্টকর। বাহার কোন মতে উপরে উঠলেন। দু জন উঠতে গিয়ে পড়ে গেলেন। পার বেয়ে সাঁতরিয়ে আবার উঠলেন পাড়ে।

বাহাররা তখন মিরসরাই থানায়। এখানকার জনগন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তিনি জানেন। গভীর রাতে এক বাজারে উঠলেন তাঁরা দলবলসহ। এক দোকানীকে ডেকে তোলেন। তাকে বললেন আমরা মুক্তিযোদ্ধা, শহরে যাবো। দোকানী সাথে সাথে তৈরী হয়ে নেন। বাহারসহ দলটিকে নিয়ে যান এক বাড়িতে, বাড়িটি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ হোসেনের জনৈক আত্মীয়ের। তাঁরা সেখানেই রাত কাটালেন।
সকালে ঐ বাড়ির লোকজন তাঁদের নাস্তা করান। সকাল ১০টার দিকে দু’জন যোদ্ধাকে বাজারে পাঠান বাহার, সিগারেট আনতে আর পরিস্থিতি যাচাই করে আসতে। সাথে দেন দুটি গ্রেনেড, নিরাপত্তার খাতিরে ব্যবহারের জন্য। বিস্ময়কর হলেও সত্য, এই দু’জন আর ফিরে আসেন নি। তবে যুদ্ধের প্রথম দিকে এমন হতো। বাকিদের নিয়ে বাহার যাত্রা করেন শহরের পথে। হেঁটে প্রথম আসলেন জোরারগঞ্জ। বাসে উঠে শহরে আসেন। বাসে অস্ত্র সহই উঠেছিলেন তৈরি ছিলেন, যেকোন পরিস্থিতির জন্য। এখনও বাহার ভাবেন, সেদিন বোকার মতই ঝুঁকি নিয়েছিলেন, বাস চেকিং হলে ধরা পড়লে রেহাই পেতেন না। যা হোক, পথে কোন বিপদ হয়নি। শহরের দেওয়ানহাটে এসে নামলেন। যেহেতু তাঁদের আশ্রয়স্থল পূর্ব নির্ধারিত ছিল না, তাঁরা ঠিক করলেন সহযোদ্ধা শামসুলের বড় ভাইয়ের বাসায় উঠবেন। বাসাটি আগ্রাবাদ শিশু হাসপাতালের কাছেই। বহুতলা সরকারী কলোনীতে।

অস্ত্রসহই সে বাসায় উঠেন। তবে শামসু’র বড়ভাই ভয় পেয়ে যান। ওখানে তখন মিলিটারীদের আনাগোনা। শিসু হাসপাতালে পাঞ্জাবীদের সামরিক ছাউনি। যে কোন মুহূর্তে বিপদ হতে পারে। কোন মতে রাত কাটান ওখানে। পরে দেখা করেন চকবাজারে শাহজাহান খানের সাথে। ওনার কাছেই অস্ত্র হস্তান্তরের কথা তাঁকে বলা হয়েছিল, চট্টগ্রামের ছাত্রনেতা সাবের আহমেদ আসগরীর পক্ষ থেকে। একটি চায়ের দোকানে অস্ত্র হস্তান্তর করেন বাহার। পরে বন্ধুকে সাথে নিয়ে শহর ‘রেকি’ করে আসেন, কিছু জায়গা নির্দিষ্ট করেন গ্রেনেড নিক্ষেপের জন্য। অবস্থান নির্নয় করে শাহজাহানের কাছে গেলে শাহজাহান অস্ত্র/গ্রেনেড দিতে অস্বীকার করেন। সমস্যায় পড়েন বাহার। বেশী জোরাজুরি করলে বিপদ হবে বুঝতে পারেন বাহার। কিন্তু কি করবেন তখন ? ফিরে আসেন শামসু’র বড় বাহিয়ের বাসায়, সাথে অস্ত্র না থাকায় এইবার বড় ভাই আশ্বস্ত হলেন। ইতিমধ্যে আরও এক সঙ্গী দলত্যাগ করেন। রইলেন শুধু বাহার ও শামসু।

বাহার বুঝতে পারেন না, কি করবেন। কি জবাব দেবেন কমান্ডারের কাছে। কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন। শামসু বুদ্ধি দেন অন্য সেক্টরে গিয়ে যুদ্ধ করতে। এতে আশ্বস্ত হয়ে নোয়াখালী সেক্টরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন দুই বন্ধু। কিন্তু মাঝপথে সীতাকুন্ড পর্যন্ত আসতেই সিদ্ধান্ত বদলালেন বাহার। ভাবলেন, এইভাবে চলে যাওয়া মানে বিশ্বাসঘাতকতা। তিনি ঠিক করলেন আবার ক্যাম্পেই ফিরে যাবেন। নামলেন বাস থেকে। সেটা জোরারগঞ্জ। আবার আগের পথ ধরে বহু কষ্ট করে ফিরলেন হরিনা ক্যাম্পেই। এইবার আর কারো কাছে নয়, সোজা একেবারে সেক্টর কমান্ডারের কাছে চলে গেলেন পরামর্শের জন্য। সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান, তাঁর তাঁবুর বাইরে হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জি পরা অবস্থায় বসা, চোখে সানগ্লাস। বাহার গিয়ে সালাম দিলেন। বললেন তাঁর ব্যর্থ মিশনের আদ্যোপান্ত।


প্রথমেই মেজর জিয়া ঘটনা শুনে রেগে আগুন। মিলিটারী কায়দায় চিৎকার করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে শুরু করলেন। গালাগালির একটি অংশ আজও মনে আছে বাহারের, “YOU B….S, তোমরা ছাত্ররা বাংলাদেশ-স্বাধীন কর, স্বাধীন কর শ্লোগান দিয়েছ, আর এখন যুদ্ধের ময়দানে কেউ পালাচ্ছ, কেউ কাউকে সাহায্য করনা, নিজেরা যুদ্ধ করতে পারো না, এখন কি চীন থেকে যোদ্ধা আনবো……… ?”

জিয়া ডাকলেন তাঁর কোয়ার্টার মাস্টারকে। তাঁদেরকে নিয়ে কোয়ার্টার গার্ডে দিতে বলেন। তাঁরা দুজন তো ভয়ে কাঁপছেন। নিয়ে চললেন দুজনকে। হঠাৎ আবার পিছন থেকে গর্জে উঠলেন জিয়া। বললেন ‘এদিকে আসো’ । এইবার বাহারের অবাক হবার পালা। মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে দিলেন মেজর জিয়া করমর্দনের জন্য। তারপর বললেন, “I CONGRATULATE YOU, BRAVE BOYS, তোমরা প্রথমবার শত্রুর ব্যুহ্যে ঢুকেছো, এবং জীবিত ফিরে এসেছ, এবং কিছু করতে না পেরেও পালিয়ে যাওনি আবার ফিরে এসেছ, দ্বিতীয়বারে তোমরা নিশ্চয়ই সফল হবে’।” তাঁর এই সেনা নায়কোচিত ব্যবহারে মুগ্ধ হলেন বাহার ও শামসু। এইবার জিয়া নতুন নির্দেশ দিলেন কোয়ার্টার মাস্টারকে বললেন তাঁদের খাবার-বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে।

একদিন পর বাহার চলে যান হরিণা যুব শিবিরে। সেখানে চান্দগাঁও এর যোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলমের পাশে থাকার সুযোগ পান, যিনি শহরে অপারেশন শেষে ফিরেছেন। ঐ ক্যাম্পের ছাত্র প্রতিনিধি আবু মোহাম্মদ হাশেম, যিনি চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি। বাহারের সাথে পরিচয় হতে তিনি বাহারকে দিলেন একটি বই, নাম, “ভিয়েতনামের গেরিলা যুদ্ধ” লেখক উইলফ্রেড বার্চের্ট। এই রাজনৈতিক বইটি বাহারকে স্বাধীনতা যুদ্ধে দারুনভাবে অনুপ্রানিত করে। আরও বই তাঁকে দেন হাশেম তাঁর উৎসাহ লক্ষ্য করে। তখন পর্যন্ত বাহারের আর কোন কাজ ছিল না ক্যাম্পে খাওয়া-দাওয়া আর বই পড়া ছাড়া।

একদিন ক্যাম্পে এলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের একজন মিজানুর রহমান চৌধুরী। তিনি ক্যাম্পের ছাত্র-যুবকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। যখন তাদের কিছু বলার আছে কিনা জানতে চাইলেন, তখন বাহার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “আমরা যুদ্ধ করতে এসেছি, ট্রেনিং চাই। কিন্তু সে ব্যবস্থা হচ্ছে না। ক্যাম্পে বৈষম্য চলছে, নেতারা আরামে আছেন, আমরা কষ্টে আছি। এর প্রতিকার চাই।”
বাহারের বক্তব্যে ছাত্র-যুবকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। অনেকেই খুশী হলেন, তবে নেতাদের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন।



সভায় ছিলেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাবের আহমদ আসগরী। তিনি বাহারের বক্তব্য শুনেছেন। সভা শেষে তাঁকে ডেকে এনে তাঁর রুমে বসিয়ে চিড়া ও গুড় খেতে দিলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, বৈষম্য জাতীয় শব্দ কোথায় শিখেছেন। বাহার বললেন মতিয়ার ভাষণ শুনে বৈষম্য, সমাজতন্ত্র ইত্যাদির কথা শুনেছেন। বাহারকে তিনি এইসব শব্দ ব্যবহার করতে নিষেধ করলেন। যে কোন সমস্যায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেন।

পরদিন সকালে ছাত্রলীগ নেতা আবু মোহাম্মদ হাশেম তাঁকে ডেকে এনে লুঙ্গি ও জামা দিলেন। দুপুরে ডাকলেন এস এম ইউসুফ, আরেক প্রভাবশালী নেতা। বাহারকে মিষ্টি দিয়ে পরোটা খাওয়ালেন, এক প্যাকেট সিগারেটও দিলেন। বাহার তখনো বুঝতে পারেন নি, তাঁকে এতোটা খাতির কেন করা হচ্ছে। এর মাঝে একবার আগরতলায়ও বেড়াতে যান। থাকেন কংগ্রেস ভবনে। আরেকবার তাঁকে পাঠানো হয়েছিল বিলোনীয়া সিমান্তে সেনাবাহিনীর সাথে একটি ট্রেন আক্রমণ করতে।

১০-১২ দিন পর ক্যাম্পে আসলেন ব্রিগেডিয়ার রব। শিলচর ট্রেনিং সেন্টারের জন্য রিক্রুট করতে। রব সাহেব গায়ে ধাক্কা দিয়ে গায়ের জোর পরীক্ষা করলেন, বাহার ও শামসু নির্বাচিত হলেন। কিন্তু হঠাৎ একটি ছেলে তাঁর কানে কানে বলল, “সাবের ভাই আপনাকে লাইন ছেড়ে আলাদা দাঁড়াতে বলেছেন”।

বাহার লাইন ছেড়ে দাঁড়ালেন। সাবেরের সাথে দেখা হতে সাবের বললেন তাঁকে এই ট্রেনিংয়ে নয়, আরও উচ্চতর ট্রেনিংয়ে পাঠাবেন। ততদিনে বাহারের সাবেরের উপর বিশ্বাস জন্মেছে। বাহার শামসুকে বিদায় দিয়ে আসলেন। শামসু গেলেন শিলচরে।

সপ্তাহখানেক পর সাবেরের আহবানে জামা-কাপড় নিয়ে বাহার বেরিয়ে আসেন। সাবের তাঁকে বলেন, তাঁকে ক্যাম্পের বাইরে যেতে হবে। একটি চায়ের দোকানে তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে। দোকানটি হরিণা বাজারে। কিন্তু ক্যাম্প থেকে ইচ্ছা করলেই বের হওয়া যায়না। বাহারের অনুমতি লাগবে। সাবেরের কাছ থেকে একটি ঔষধের স্লিপ নিয়ে গেটে সেন্ট্রিকে ঔষধের কেনার জন্য দোকানে যাবেন বলে বের হন বাহার, তাঁর কাপড়-চোপড় তখনও সাবেরের রুমেই।

হরিণা বাজারে পৌঁছে তিনি চায়ের অর্ডার দিলেন। দেখলেন আরও ৪/৫ জন যুবক দাঁড়িয়ে। তিনি কাউকে চেনেন না, তবে হাবভাবে বুঝে নিলেন এরাও একই পথের পথিক। কিছুক্ষণ পর সাবের আসেন একটি জিপ গাড়ী নিয়ে, সঙ্গে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি জালালউদ্দীন আহমেদ। সবাইকে গাড়ীতে উঠতে বললেন। বাহার বসলেন ঐ দু’জনের মাঝখানে। রাত কাটালেন এক পেট্রোল পাম্পে, পেট্রোল শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা সেখানে আসেন, কিন্তু কর্মচারী না থাকায় সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। সকালে পেট্রোল নিয়ে তাঁরা রওয়ানা দেন। সকাল ১১ টায় তাঁরা পৌছলেন আগরতলার শ্রীধর ভিলায়। রাতে জালালের সঙ্গে কথা হওয়ায় তাঁর কাছ থেকে আওয়ামী লীগের আরো নেতাদের সমবন্ধে জানতে পারেন বাহার। জানেন আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকীর কথা।সকালে শ্রীধর ভেলায় পৌঁছেই পেয়ে যান আ স ম আবদুর রব কে। মুখ ভর্তি দাঁড়ি, মাথার লম্বা চুল, হাতে বালা। দেখতে তাঁকে লাগছিল শিখদের মতো। তিনি যুবকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তাঁর দুটি কথা আজও মনে আছে বাহারের :
১) আমাদের দেশ আমাদেরকেই স্বাধীন করতে হবে। ভারতের সাহায্যের আশায় বসে থাকলে চলবে না। আমরাই আমাদের সোনার দেশ স্বাধীন করবো, অন্য দেশের সৈন্য দিয়ে নয়।
২) তোমরা যুদ্ধ পরিচালনা কর, মনে রেখো, স্বাধীন দেশের প্রোশাসন চালানোর দায়িত্ব তোমাদেরকেই নিতে হবে।
এর একদিন পর গাড়ী নিয়ে এসে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের উদয়পুরের কাছে এক বি এস এফ ক্যাম্পে।

ক্যাম্পে তাঁরা রইলেন ৬/৭ দিন। এখানে রব ছাড়া কাউকে চিনতেন না, বাহার। আরও অনেক নেতা আসতেন বি এল এফ –এর। এদের মধ্যে পরে অন্যদের কাছ থেকে চিনতে পারেন শেখ ফজলুল হক মণি, এম এ মান্নান, স্বপন চৌধুরীদের।

একদিন সকালে সেনাবাহিনীর গাড়ী এসে ৩০/৪০ জন যুবককে তুলে নিয়ে গেল, বাহারও ছিলেন তাঁদের মধ্যে। দীর্ঘ ২ দিন ২ রাত চলার পর তাঁরা এলেন ধর্মনগর রেল স্টেশনে। রাত ২.৩০-এ তাঁরা ট্রেনে উঠলেন। প্রায় ৩ দিন যাত্রার পর পৌঁছেন হাফলং। এখানে তাঁদের অভ্যর্থনা জানান ভারতীয় সৈন্যরা। পাহাড়ের ভিতরে এই স্টেশনটি। উঁচু পাহাড়ি পথ বেয়ে পৌঁছেন, হাফলং ট্রেনিং সেন্টারে।

শুরু হল ট্রেনিয়ের দিন। ট্রেনিং সেন্টারটি আকাশের প্রায় কাছাকাছি। মেঘ ভেসে বেড়ায় এখনে।
বহুদূরে পর্যন্ত কোন জনবসতি নেই। দূরে দেখা যায় বরফ চূড়া। সম্ভবত সেটা ছিল ভারতের
SPECIAL SECURITY BRANCH- এর কোন ট্রেনিং সেন্টার। অচেনা এক পরিবেশ। প্রতিদিন সকালে এক লাইনে দাঁড়িয়ে কোরাসে জাতীয় সংগীত গাওয়া। মগ ভর্তি শুধু চা খাওয়া, তারপর পিটি (PHYSICAL TRAINING)। থিওরিটিক্যাল ক্লাস, প্র্যাকটিকাল ক্লাস। নিয়মমত খাওয়া, ঘুম এইভাবে তাঁদের নিয়মতান্ত্রিক জীবন প্রায় এক মাস চলল। প্রশিক্ষন দিতেন উচ্চপদস্থ ভারতীয় অফিসাররা। ছিল মোটিভেশনাল ট্রেনিংও। গানের জন্য প্রতি ব্যারাকে সাউন্ড বক্স লাগানো ছিল। বাহার পেতেন দৈনিক ১০ টাকা ভাতা। ট্রেনিং শেষে হল পরীক্ষা, বাহার অধিকার করলেন দ্বিতীয় স্থান।

প্রশিক্ষন প্রাপ্তদের তিন ভাগে ভাগ করা হল : ১)প্ল্যানিং গ্রুপ ২) বিস্ফোরন ৩) আর্মস গ্রুপ। তিনটি ভিন্ন বিষয়ের উপর এইবার ট্রেনিং। বাহার ট্রেনিং নেন বিস্ফোরেণের উপরে। মোট সাতদিন। এরপর পরীক্ষায় ভাল করলে তাঁকে আবার প্ল্যানিংয়ের উপরও পরীক্ষা নেয়া হয়। আবার বাহার ফিরে আসেন ধর্মনগর হয়ে উদয়পুর ট্রানজিট ক্যাম্পে। আবার সেখানে তাঁদের সাথে কথা হয় আবদুর রবের। তিনি তাঁদের বলেন যুদ্ধের সাথে সাথে তাঁদের সংগঠনের কাজও করতে হবে।

কিন্তু ঝামেলা বাধল দল গঠন নিয়ে। বাহার যদিও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের ছেলে, তাই রব তাঁকে ওখানে পাঠাতে চাইলেও বাহারের সাফ কথা তিনি থাকবেন চট্টগ্রামের অপারেশনে। এই নিয়ে রব, বাহারকে বকাবকিও করলেন। কিন্তু বাহার তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের জন্য যে গ্রুপ করেছিলেন এম এ মান্নান ও স্বপন চৌধুরী, ঐ গ্রুপেই নেয়া হল বাহারকে। তাঁদের দলনেতা আবদুল আজিজ। উপনেতা তোফাজ্জল হোসেন। অন্যদের সাথে বাহারও একজন সদস্য। আছেন আনোয়ার, মাহবুব, মাহতাব আরও কত নাম না জানা মুক্তিযোদ্ধা।

গ্রুপে আর্মস দেয়া হল। ৩০৩ রাইফেল, এস.এম.জি. এস.এল.আর., স্টেনগান আর গ্রেনেড। বাহার পেলেন ৩০৩ রাইফেল। কিন্তু এই ভারী অস্ত্র বাহার নিতে পারছিলেন না। কষ্টে তাঁর চোখে পানি আসল। এম এ মান্নান বাহারের কষ্ট দেখে তাঁকে একটি এস.এম.জি. দিতে বাধ্য হলেন।

দলটি ঢুকল বাংলাদেশে। শ্রীনগর দিয়েই। সাবের এগিয়ে নিয়ে আসলেন। মুহুরী নদী পার হয়ে দেখা হল হাবিবের সাথে। এই হাবিব ’৯২য়ে ক্যান্সারে মারা যান। হাবিবের দায়িত্ব ছিল তাঁদের মিরসরাই নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু একজন খবর আনলেন রাতে পাক বাহিনী মিরসরাই নামবে। নামা মানে ঘরবাড়ী জ্বালানো, অহেতুক মানুষ হত্যা করা। তাই ওখানে যাওয়া নিরাপদ না ভেবে তাঁরা চলে যান সোনাগাজী থানার দিকে। রাতে এক চরে নৌকা থামিয়ে রাত কাটান। খাবার আনিয়ে নেন এক রাখাল ছেলের মাধ্যমে। রাতে হঠাৎ গোলাগুলির শব্দে সবাই তটস্থ। পাহারা দিতে বসে যান রাইফেল হাতে। পরে সকাল হলে বোঝেন গোলাগুলি দূরে হয়েছিল কাছে নয়।

সকালে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি।। এর মধ্যেই নৌকা নিয়ে সবাই গন্তব্যে পাড়ি দেন। সাথে আরো নৌকা নিয়ে আরও মুক্তিবাহিনীর দল একসাথে হয়। সবাই পৌঁছেন সীতাকুন্ডে। ওখানে নৌকা বেঁধে তাঁরা সবাই যান একটি বাড়িতে, যেখানে তাঁদের জন্য রান্না হয়েছিল। দীর্ঘদীন পর দেশের মাটিতে দেশের খাদ্য পেয়ে বাহারের মনে হল রাজভোগ খাচ্ছেন।

খাওয়া-দাওয়ার পর তাঁরা ফিরে আসেন নৌকায়। নৌকা নিয়ে আসলেন বাঁশবাড়িয়াতে। এখানে তাঁদের অভ্যর্থনা জানান যে ব্যাক্তি তাঁর নাম মোজাফফর। তাঁর অধীনেই রাখা হয়েছিল সব অস্ত্র।
সবাই আলাদা হয়ে এইবার আসেন শহরে। বাহার আসেন বাসে করে দেওয়ানহাটে। সেখান থেকে গেলেন কবির তোরণ। কারন সেখানেই ছিলেন শহর কমান্ডারদের একজন জনাব মাহফুজ। বাহার রিপোর্ট করলেন তাঁর কাছে। আগেরবারের চেয়ে বিশাল পার্থক্য বাহার লক্ষ্য করেন এইবার যোদ্ধাদের মতিগতি থেকে। বুঝতে পারেন যুদ্ধ এখন চলছে অনেকটা সুশৃঙ্খলভাবে। পরে ওখান থেকে বাহার আসলেন পাহাড়তলীর বার কোয়ার্টারে। তাঁর দলের অন্যরা এখানে ছিলেন। বাহারকে দায়িত্ব দেয়া হল অস্ত্র আনতে, যা ছিল বাঁশবাড়িয়াতে, মোজাফফরের কাছে।

মোজাফফরের সাথে অস্ত্র বোঝাই নৌকা নিয়ে সাগরের ভিতর দিয়ে ঘুর পথে হানাদারদের নজর এড়িয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে গভীর রাতে পৌঁছলেন সরাইপাড়ার পশ্চিম পার্শ্বে। মাঝি এ স্থান চেনে। সরাইপাড়ার আবুল কাশেমের দায়িত্ব ছিল সত্র বুঝে নেবার। বাহার একবার টর্চ জ্বালিয়ে আলোর সংকেত দিলেন। প্রতুত্ত্যরে পেলেন একই রকম সংকেত। কাশেমের সাথে ছিল ফারুক, রহিম, মঞ্জু, কামাল প্রমুখ। সবাই মিলে কাঁধে করে টুঁ শব্দটি না করে অস্ত্র নামালেন নৌকা থেকে।

কিন্তু লাইন করে ফেরার পথে একটা বিশাল ঝামেলা করে ফেললেন বাহার নিজেই। সামনের জনকে না জানিয়েই বসলেন প্রস্রাব করতে। দীর্ঘ সময়ের টেনশনে তাঁর এই রকম হয়েছিল বলে তাঁর নিজের ধারনা। আর উঠে তিনি কাউকেই খুঁজে পান না। অন্যরা দ্রুত পদক্ষেপে চলে গেছেন। জোরে ডাকাডাকিও করা যায়না। বাহারের হাতে তখন একটা করে স্টেনগান, রিভলবার, এস.এল.আর। পথ ঘাট এমনিই চেনেন না, তার উপরে রাত। তিনি হাঁটতে হাঁটতে আসলেন একটি পুলের উপর, যা কিনা খালের উপর। হঠাৎ দেখেন পাক সৈনিকদের পাহারা। দ্রুত নেমে আসেন নিচে। পুলের এই পাড়ে ঝোপের অভাব নেই। সেখানেই লুকিয়ে রইলেন বাকি রাত। কিছু করার নেই। সকাল হলে পর পথ ঘাট একটু একটু করে চিনতে শুরু করলেন। ঐ ঝোপেই অস্ত্র লুকিয়ে রেখে চলে আসলেন মঞ্জুদের বাড়ি। কাসেমকে অস্ত্রের কথা কিছু না জানিয়ে তিনি আবার কবির তোরণে এসে মাহফুজকে বলেন অস্ত্রের কথা। মাহফুজ খুব খেপে উঠে একচোট বকা শোনালেন। তবে অস্ত্রের জন্য নয়। সামনের জনকে না বলে প্রস্রাব করতে বসার জন্য। নিয়মের প্রতি সতর্ক হতে বলেন তিনি। বাহার আবার ঐখানে ফেরত যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি বাদ সাধেন। বাহার একবার প্রানে বেঁচে এসেছে এটাই অনেক, তিনি বললেন। পুলের ঐপারেই মিলিটারী ক্যাম্প। একজন ধরা পড়া মানে অনেকের ধরা পড়ার পথ তৈরি করা। তাই তিনি বাহারকে অস্ত্রের মায়া ত্যাগ করতে বলেন। তাছাড়া তাঁর নিজের কমান্ডে তখন যথেষ্ট অস্ত্র আছে।

কিন্তু বাহার জিদ ধরলেন। তাঁকে অনুমতি দিতেই হবে। জোয়ান বয়স তখন তাঁর। মাহফুজ অতিরিক্ত কাকুতি-মিনতি শুনে রাজী হলেন। বাহার ফিরে আসলেন সরাইপাড়া। সাথে জামাল ও মঞ্জুকে নিয়ে রাত একটু বাড়তেই তিনি রওয়ানা হলেন, অতি সন্তর্পণে পৌঁছালেন ঐ যায়গায়। কাভার দিলেন বাকিরা। বাহারের সৌভাগ্য ওখানেই আবার অস্ত্রগুলো পেয়ে গেলেন, ফিরে আসলেন নিরাপদে।

ফিরে আসলে পর মাহফুজ তাঁর পিঠ চাপড়ে দেন। মাহফুজ নিজে ছিলেন বি এল এফ-এর একটি গ্রুপের নেতা। শহরের যৌথ কমান্ডের একজন কমান্ডার। তিনি বাহারকে ডেকে দায়িত্ব দিলেন রেলপথে ট্রেন উড়ানোর। দায়িত্বটা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ, তাছাড়া বাহার ছিলেন অল্পবয়সী। তাই তাঁকে দায়িত্ব দিতে মন সায় দিচ্ছিল না মাহফুজের। কিন্তু বাহারের প্রশিক্ষন আর সাহস আর দৃঢ়তা দেখে রাজী হলেন। শুধু উড়ানো নয়, সমস্ত পরিকল্পনাই করা হয়েছিল বাহারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। ট্রেন নির্বাচন, সময় নির্ধারণ, স্থান নির্বাচন, যোদ্ধা বাছাই, অস্ত্র কোনটা নেয়া হবে-----সবই বাহার ঠিক করলেন। তিনি বুঝতে পারলেন তাঁকে একজন কমান্ডারের মতই অপারেশনের সমস্ত দায় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

কাজ শুরু করলেন তিনি। চলে গেলেন কাট্টলী। একজন পূর্বনির্ধারিত আওয়ামী লীগ সমর্থক এক নেতার বাসায় উঠলেন। মাহফুজই এই আশ্রয় ঠিক করে দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, শহর কমান্ডের অনতম একটি ঘাঁটি এই কাট্টলী, যার উপর দিয়েই ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ গেছে। এই ঘাঁটিটি ছিল একটি BASE ঘাঁটি। ঐ এলাকার সমস্ত যোদ্ধাদের উপর নির্দেশ ছিল বাহারকে যেন সহযোগিতা করা হয়।

বাহার প্রতিদিন একবার যান রেললাইনে, হাঁটেন উত্তর-দক্ষিণ বরাবর। যান পাহাড়ের দিকেও। ঢাকা ট্রাঙ্ক রোডের পাশে বসেন চা হাতে। এই সবই ছিল “রেকি”র অংশ। তাঁর সাথে ছিলেন শফি ও মুসা নামে আরো দুজন স্থানীয় যোদ্ধা। এইভাবে প্রায় ৭ দিন কাটে।

একটি পেট্রোল ট্রেন প্রতিদিনই সন্ধ্যায় ৬টার দিকে কৈবল্যধাম পৌঁছে। এর কাছেই রয়েছে, একটি ব্রীজ। প্রায় ৬.৩০-এর দিকে ট্রেনটি উঠে ব্রীজে। এই ব্রীজ সহ ট্রেনটি উড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন বাহার। পাশে দু’একটি ঝুপড়ি ছাড়া আর কোন লোকালয় নেই। বিকেলেই পাহাড় থেকে গরু-বাছুর সহ চলে আসে রাখালরা। তাই বিস্ফোরণে আর কারও কোন ক্ষতি হবার আশঙ্কা নেই।

ট্রেনটির একটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেন বাহার। ইঞ্জিনের সামনে দুইটি বগী। সম্ভবতঃ সম্ভাব্য আক্রমণ হতে রক্ষার্থেই এই ব্যবস্থা। অপারেশনের পর যোদ্ধারা যাতে জনমানুষের সাথে মিশে গিয়ে পালানোর সুযোগ পায়, তাই এমন দিন ঠিক করেন বাহার অপারেশনের যেদিনটি ছিল স্থানীয় হাটবার। ঐদিন নিকটস্থ বাজারে মোটামুটি লোক সমাগম ঘটে। বাহার পরিকল্পনার খুঁটিনাটি নিয়ে আলাপ করলেন মাহফুজের সাথে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে আসলেন। অপারেশোনে তিনি নিলেন তাঁর দলেরই উপ-অধিনায়ক তোফাজ্জলকে। তবে তোফাজ্জল তাঁর অধীনে একটি অপারেশনে যেতে অস্বীকৃতি জানালেন না। নিলেন তাঁর গ্রুপের আনোয়ারকেও। কাট্টলীর স্থানীয়দের থেকে নিলেন ইমতিয়াজ উদ্দিন পাশা, বেলাল, বাদল ও মুসাকে। অস্ত্র ও বিস্ফোরক যা চাইলেন মোটামুটি সবই পেলেন।

অপারেশনের দিন সবাই একত্র হলেন বিকেল পাঁচটায়, কাট্টলীতে। সবাইকে নির্ধারিত অস্ত্র ও বিস্ফোরক ভাগ করে দেয়া হল। একেক পথে একেক জন গিয়ে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছান নির্ধারিত যায়গায়। দলকে দুই ভাগ করে চারজনকে পাহারার দায়িত্ব দেন বাহার। পুল হতে ২০০/৩০০ গজ দূরে চারদিকে দাঁড়ান এরা। স্টেনগান হাতে তাঁরা দাঁড়ালেন কভার দিতে।

বিস্ফরক নিয়ে মূল দলে তিনিসহ আরেকজন। গেলেন ব্রীজের কাছে। প্রায় ৫.৩০-এ লাগানো শুরু করেন বিস্ফোরক। কিন্তু মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে হঠাৎ। চেয়ে দেখলেন, আধঘন্টা আগেই ট্রেনটি পৌঁছে গেছে, কিছুক্ষনের ভিতরেই ব্রীজের উপর দিয়ে যাবে। দ্রুত লাগানোর কাজ শেষ না করলে ট্রেন চলে যাবে। তাই আবার মাথা ঠান্ডা করে দ্রুততার সাথে কিন্তু নিখুঁত ভাবে রেললাইনের খঁজ আর ব্রীজের গার্ডারে লাগাতে শুরু করলেন বিস্ফোরক। ট্রেন তখনও স্টেশনে। মাথা ঠান্ডা করে সহযোদ্ধার উৎসাহে তিনি স্থাপন করলেন T & T Slab, G.C. Slab, Plastic Explosive. ভুললেন না, রেললাইনের পাতের ভিতর লাগাতেও। কাজ শেষ করতে সময় লাগল, প্রায় ১৫ মিনিট। তাঁর ভাগ্য যে এর মধ্যে ট্রেন ছেড়ে আসেনি স্টেশন। বিস্ফোরকের শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হয় Primer & Cordex, আবার তাতে দ্রুততাও বাড়ে। বিস্ফোরকে পুল সুইচ লাগালেন বাহার। রেল লাইন থেকে ১০০ গজ দূরে পর্যন্ত টেনে নিলেন কর্ড। ওখানে বসে টান দিয়ে ঘটাবেন বিস্ফোরণ।

সব কাজ সেরে হাতে সুইচ নিয়ে একটি ঝোপের পাশে বসলেন। অন্যদের চলে যেতে নির্দেশ দিলেন। ৬টার দিকে আধঘন্টা আগেই ট্রেন ছেড়ে দিল স্টেশোন থেকে। ইঞ্জিনের আগে ছিল দুটো মালগাড়ী।
ঐ দুটিকে চলে যেতে দেন বাহার। গাড়ীর ইঞ্জিনের সম্মুখভাগ পুলের উপরে উঠতেই প্রস্তুতি নেন সুইচে টান দেয়ার। মাঝখান পর্যন্ত আসতেই সুইচে টান দিলেন।

প্রচন্ড এক বিস্ফোরণ। আশপাশের অনেক দূরের মানুষরাও চিৎকার দিলেন। বাহার তখন দুই হাত দিয়ে কান ঢেকে বসে আছেন। কানের পর্দা যেন ফেটে যাবার উপক্রম। ইঞ্জিন সশব্দে দুই ভাগ হয়ে কাত হয়ে পড়ল। সামনে-পিছনের গাড়িগুলো লাইনে নেই, শত শত নুড়ি-পাথর লাল হয়ে আকাশের দিকে উঠে গেছে। প্রায় দুই মিনিট স্তব্ধ হয়ে বসে থাকার পর বাহার সম্বিত ফিরে পান। উঠে দাঁড়িয়ে দিলেন পিছন ফিরে ভোঁ-দৌড়। কাট্টলী পর্যন্ত পৌঁছাতে গিয়ে কত বার যে ডিগবাজী খেলেন তার ইয়ত্তা নেই। হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েও আবার দৌড়ান। শান্ত হন প্রধান সড়কে এসে। চলে আসেন Post-Operation Meeting Place-এ। অন্যরাও ফিরে এসেছেন নিরাপদে। শুধু দুজন আবার অস্ত্র ফেলে আসেন বিইস্ফোরণের পর এক ঝোপে।


ঐ অপারেশনে পেট্রোল ট্রেনটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। মারা যায় প্রায় ১০ জন সৈন্য। আহত হয় অনেকে। বিনষ্ট হয় পাকবাহিনীর অস্ত্র-শস্ত্রের চালান। ধ্বংস হয় একটি রেলসেতু, রেললাইনের বড় অংশ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা। জনগন ও হাসপাতাল এবং সরকারী সূত্র হতে প্রাপ্ত হানাদারদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরো বেশী ছিল বলে পরবর্তীতে জানা যায়।
শহরতলীতে সন্ধ্যায় ট্রেন অপারেশন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এইভাবে বাহারের নেতৃত্বে বড় একটি অপারেশন সফলভাবে শেষ হল। বস্তুতঃ রইসুল হক বাহার চট্টগ্রাম শহরের অসংখ্য অপারেশনের সঙ্গে জড়িত একটি নাম। মূলত প্ল্যানিং ও বিস্ফোরনের কাজে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। আর এতে করে পাকবাহিনীর যাতায়াত ব্যবস্থায় বিপুল সমস্যা সৃষ্টি হয়।

তথ্যসূত্র : বাঙ্গালী জাতির মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ, আন্দোলন-অপারেশন সিরিজ-৩
ডা. মাহফুজুর রহমান কর্তৃক সম্পাদিত।
প্রকাশনায় : বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র।


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:১৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×