শত শত বছর ধরে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষকে গ্রাস করে আছে ধর্ম নামক এক 'অদৃশ্য শক্তি'। পূর্ব পুরুষের সৃষ্ট ধর্মধারনার প্রতি অগাধ "বিশ্বাস" মানুষের মাঝে জন্ম দিয়েছে এক অদৃশ্য দানবের। দানবকে কেউ সম্মান জানাই না, ভয় পায়। এই শক্তিকে ভয় না পেলেও সম্মান জানানো প্রত্যেকেরই নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু কতিপয় 'নীতিহীন' নাস্তিক প্রকাশ্যে সেই ধর্মকে কটাক্ষ করছেন, ধর্মগ্রন্থের প্রতিটা বানীকে খন্ড বিখন্ড করছেন, আর অবলা ধর্মপন্থীরা তার প্রতিউত্তর দিতে গিয়ে মুখ দিয়ে "সূরা গালাগাল" টাইপের পবিত্র বানী আওড়াচ্ছেন। নাস্তিকদের এই ধর্মবিরোধী কর্মকান্ড আসলে কতটা যুক্তিযুক্ত ?
নাস্তিক লেখকেরা কেন এত ধর্ম বিরোধী ? ধর্ম নিয়ে তাদের কেন এত কূট ক্যাচাল ? অনেকে হয়তোবা সোজা উত্তর দিবেন, "তারা নাস্তিক তাই ধর্মের বিরুদ্ধে লাগেন"। কেউ কেউ বলেন, "ধর্ম নিয়ে নাস্তিকরা এত মাথা না ঘামিয়ে তারা যদি দেশের সার্বিক সমস্যা সমাধানের দিকে বেশি নজর দিতেন তবে দেশ-সমাজের উন্নয়নে আমরা হয়তো আরো একধাপ এগিয়ে যেতাম। অযথা ব্লগ-মিডিয়া-আড্ডাতে 'অদৃশ্য এক ইশ্বর' নিয়ে টানাটানির মানেটা কি ? সময়ও নষ্ট হয়, সাথে সাথে মাথাটাও আওলাইয়া যায়।"
ধর্মতে যারা বিশ্বাস করেন, তাদের অধিকাংশই সাধারন মানুষ। এই মানুষগুলোকে অবগা করা ঠিক নয়, তাদের ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করাটাও অনুচিত। জন্ম থেকে যে নিয়ম তারা দেখে আসছে, তার উপরই তাদের বিশ্বাস থাকাটা স্বাভাবিক। চোখের সামনে সেই বিশ্বাস চুরমার হয়ে গেলে মানুষ উতলা হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে তারা 'সূরা গালাগাল' পাঠ করেন। কিন্তু এক শ্রেনীর নাস্তিক তাতে মোটেও ব্যথিত হন না, বরং নতুন উদ্যোমে নতুন "বিশ্বাস" খন্ডন করতে থাকেন। কিন্তু এইভাবে সাধারন ধর্মপন্থীদের খেপানো আসলে কতটুকু শোভনীয় ?
'পাবলিক সেন্টিমেন্ট' ধর্মপন্থী রাজনীতিকদের কাছে অতিগুরুত্বপূর্ন শব্দ। দেশের বামপন্থীরা সবসময় দেশের সার্বিক সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। দেশের সম্পদ রক্ষা আন্দোলনেও তাদের একটা বড় ভূমিকা অনেকেরই হইতো দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কিন্তু তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি করেন বলেই 'দানব' রুপীভাবটা তাদের মাঝে দেখা যায়না। অন্যদিকে, ধর্মপন্থীরা এখন পর্যন্ত দেশে যতগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করেছে, তার সবগুলোই ধর্ম সম্পর্কিত। তারা টিপাইমুখ বিরোধী আন্দোলন করেছে "বিধর্মী ভারত" কে মূল এজেন্ডা বানিয়ে। আমেরিকার বিরোধিতা করেছে ঠিকই, কিন্তু ইসলামিক ইরান-সিরিয়া সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে। সৌদিতে বাংলাদেশী হত্যা হয়েছে, তার কোন প্রতিবাদ তারা করেননি। বরং তাদের ধর্মপন্থী কর্মীরা সেটাকে ইসলামী আইনের বাস্তবায়ন হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, কিন্তু "সৌদির রাজতন্ত্র" ইসলামের কোন আইনের বাস্তবায়ন তা তারা প্রকাশ করতে পারেননি। তারা "সবার আগে দেশ" নীতিতে বিশাসী নন, কারন "সবার আগে ধর্ম" নীতিটাই তাদের "পেটনীতি"র যোগান দেয়। শুধু ইসলাম পন্থীরা নয়, সকল ধর্মপন্থীরাই মানবস্বার্থের আগে ধর্ম স্বার্থ বেশি দেখেন।
এই সত্য ব্যপারগুলো কিন্তু সাধারন মানুষের কাছে পৌছায় না । তারা যে অন্ধকারে ছিল, সেখানেই থাকে। নাস্তিকদের কূটক্যাচালও তাদের মাঝে আলো জ্বলাতে পারেনা, ধর্মেও হয়তো পারেনা 'উপযুক্ত' প্রতিনিধির অভাবে !!
তাও-কনফুশিয়ান-শিন্টো থেকে শুরু করে ইসলাম-খৃষ্ট পর্যন্ত সকল ধর্মের মুল কথা শান্তি। আজকাল নাস্তিকরাও নিজেদের মানবতাবাদী-শান্তিবাদী হিসেব পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। কিন্তু শান্তির জন্য-মানুষের জন্য এত এত যুক্তি-পাল্টা যুক্তি, খন্ডন-পাল্টা খন্ডন করে কি কোথাও শান্তি আনা আদ্য সম্ভব হয়েছে ? ফিলিস্তিন-আরাকান-দক্ষিন সুদান থেকে সার্বিয়া- তামিল পর্যন্ত সবজায়গায় রাজ্য ভাগ হয়েছে বহুবার, দেশ ভাগ হয়েছে বারবার, কিন্তু পৃথিবীর কোথাও শান্তি আনা সম্ভব হয়নি।
ধর্ম নিয়ে নাস্তিকদের নীতিহীন কর্মকান্ড, সাধারন ধর্মপন্থীদের বুকে আঘাত হানে। তাতে মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়না, নির্লজ্জতার সাথে সাথে উলঙ্গও হয়ে যায়। শান্তিবাদ সেখানে মরিচীকার মতো আরো কয়েকধাপ পেছায়। আমি এসব বিষয় বলার পর ধর্মপন্থীরাতো বটেই এবং কতিপয় নাস্তিকেরও চক্ষুশূল হয়ে যাব হয়তো। কিন্তু তাতে কারো সমাধান মিলবে না। সবাইকে একই রেখায় দাড় করাতে হলে "মানষের জন্য শান্তি" নীতির কোন বিকল্প নেই।