somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ ৭ মে জননেতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী।

০৬ ই মে, ২০১২ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জননেতা শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার
শ্রদ্ধাঞ্জলি
মোঃ মুজিবুর রহমান
জননেতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি ছুঁয়ে গেছেন সকল স্তরকে ও সব কিছুকে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের মানসপটে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার নিত্য ও সদা বিরাজমান। আজ ৭ মে জননেতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা জেলার (বর্তমানে গাজীপুর জেলা) পুবাইল ইউনিয়নের হায়দরাবাদ গ্রামে আহসান উল্লাহ মাস্টার জন্মগ্রহণ করেন।
আহসান উল্লাহ মাস্টারের শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের হায়দরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষা জীবন শেষ করে টঙ্গী হাইস্কুলে ভর্তি হন। তখন থেকেই টঙ্গীতে ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। ১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে রাজপথে নামে ছাত্র-ছাত্রীরা। সে সময়ে টঙ্গীতে যে আন্দোলন হয়েছিল সেই আন্দোলনে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র আহসান উল্লাহ রাজপথে নেমে পড়েন। অংশগ্রহণ করেন মিছিলে। তখন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। আহসান উল্লাহ ১৯৬৫ সালে টঙ্গী হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত তৎকালীন কায়েদে আজম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারী কলেজ) একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত বাঙালীর মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা যখন রাজপথে, তখনও ভাওয়ালের এই সন্তান আহসান উল্লাহ রাজপথের একজন সাহসী সৈনিক। রাজনীতির লড়াকু সৈনিক হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠতে থাকে। তিনি পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে রাজনীতি চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৬৮ সালে তথাকথিত আগরতলা মামলায় বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অভিযুক্ত করে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বাঙালীর স্বাধিকার আন্দোলনকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত করে। ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনার জন্য তহবিল সংগ্রহ করার নিমিত্তে টঙ্গী-জয়দেবপুরের জন্য যে কমিটি গঠিত হয়েছিল, সেই কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন আহসান উল্লাহ মাস্টার। তিনি কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে ‘মুজিব তহবিল’-এর জন্য প্রতিটি কুপন ১০ পয়সা করে বিক্রয় করেন। ১৯৬৯ সালে ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। আহসান উল্লাহ ১৯৭০ সালে ডিগ্রী পাস করেন। টঙ্গীর নতুন বাজারে অবস্থিত টঙ্গী হাইস্কুল আউচপাড়ায় স্থানান্তর হওয়ার পর টঙ্গীর নোয়াগাঁও-তে এমএ মজিদ মিয়া হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠার জন্য যে ক’জন শিক্ষানুরাগীর অবদান ছিল তাদের মধ্যে আহসান উল্লাহ একজন। স্কুলটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে তিনি ঐ স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক (১৯৭৭-১৯৮৪) ও প্রধান শিক্ষকের (১৯৮৪-২০০৪) দায়িত্ব যোগ্যতার সঙ্গে আমৃত্যু পালন করেন।
১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুরের ক্যান্টনমেন্টের বাঙালী সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে ঢাকা থেকে আসা পাকিস্তানী বাহিনীকে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়ার জন্য জনতাকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং ডাক দেন বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করার। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে আটক হন এবং নির্যাতিত হন। আহত অবস্থায় আহসান উল্লাহ মাস্টার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়া থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে ডাঙ্গা, পুবাইল, টঙ্গী, ছয়দানাসহ বিভিন্ন স্থানে গেরিলাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বিকেলে দেশ শত্রুমুক্ত হয় ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয়। আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় ভাস্বর হয়ে থাকবে।
তিনি শিক্ষকদের নেতা ছিলেন। টঙ্গীর শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের সব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে সবার প্রিয়ভাজন হয়েছেন। কিন্তু আমাদের ট্র্যাজেডি হচ্ছে যে স্কুলে তিনি প্রধান শিক্ষক, সেই স্কুলের বিজ্ঞান ভবনের সামনে ২০০৪ সালের ৭ মে কুচক্রীমহল গুলি করে হত্যা করে তাঁকে। ঐ প্রিয় শিক্ষকের গড়া স্কুল রক্তাক্ত হলো তাঁর নিজের রক্ত দিয়ে।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন জননেতা ও রাজনৈতিক নেতা এবং গণমানুষের নেতা। রাজনীতি যখন পেশী ও অর্থশক্তির হাতে বন্দী, তখন এই ব্যতিক্রমী জননেতার নীতি ও আদর্শ অনুকরণীয়। টঙ্গীর শিক্ষক সমিতির নেতা হিসেবে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের সব কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে শিক্ষকদের কাছে প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। তাঁর ঘাতকরা বিচারিক আদালত থেকে শাস্তি পেয়েছে এবং আইনগত চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় দেশবাসী। অন্যদিকে জননেতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার যে অসুস্থ রাজনীতি ও অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, সেই অসুস্থ রাজনীতির দূরীকরণ ও অপশক্তিকে সমাজ থেকে নির্মূল করা যায়নি। আজ সেই অসুস্থ রাজনীতি ও অপশক্তির বিরুদ্ধে শুভবোধের জাগরণ ঘটুক শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, কাজী আজিমউদ্দিন কলেজ, গাজীপুর
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চারুকলায় আগুনে পুড়ে গেল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উদ্‌যাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফ আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে একটি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও আরেকটি শান্তির পায়রা।



আজ শনিবার সকালে চারুকলা অনুষদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ এক অন্যরকম প্রতিবাদ!

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৫

মার্চ ফর গা'জা কে কেন্দ্র করে সব বিবাদ বিভেদ ভুলে পুরো পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জমায়েতের রেকর্ড এখন বাংলাদেশের। লাখো লাখো জনতার স্লোগানে আকাশ বাতাস কেঁপে উঠছে। পুরো বিশ্বের চোখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা
March for Gaza | ঢাকা | ২০২৫

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
আল্লাহর নামে শুরু করছি
যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী,
যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন।

আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডক্টর ইউনুস জনপ্রিয় হয়ে থাকলে দ্রুত নির্বাচনে সমস্যা কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪১



অনেকেই ডক্টর ইউনুসের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা বলছেন। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় নির্বাচন। আদালত যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল করেছে সেহেতু ডক্টর ইউনুস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডিসেম্বরে নির্বাচন : সংস্কার কাজ এগিয়ে আনার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৯


ড. ইউনূস সাহবে কে বুঝি পাঁচবছর আর রাখা যাচ্ছে না। আজ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সাথে মত-বিনিময়ের সময় ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন কে সামনে রেখে তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারের এগিয়ে আনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×