দেশের একমাত্র ছিটমহলটির নাম কি? এটি কোথায়?- এ ধরনের সাধারণ-জ্ঞান প্রশ্নের উত্তরে কোনে ভাবনাচিন্তার অবকাশ নেই এখন আর।
ক'দিন ধরে খবরের শিরোনামে স্ক্রল করেছে ছিটমহল, দুদেশের আমলারা খাসমহলে বৈঠক করেছেন দীর্ঘদিন। মিসির আলীর অমিমাংসীত রহস্যের মতো এটি ভেস্তে গেছে বারংবার।সবশেষ কনক্লুশন, ফারাক্কা ইস্যু পেনডিং, ছিটমহল এন্ডিং।
খবরে-পত্রিকায় যা প্রকাশিত, তার ধুন্দুমার ফিরিস্তি দেয়ার চেয়ে বরং অন্যপথে যাওয়াই শ্রেয়; যে পথে পথকাঁটা শুকনো ডালে ফুটিয়েছে অনাঘ্রাত হলুদ ফুল, যে পথে হাঁটেনি পথিক বহুকাল। আজ লোকালয়ে উম্মুক্ত সে পথ যেনো মৃদুঘায়ে চলা কোনো বয়সীবনিতার আক্ষেপ; কতদিন হাঁটা হয়নি ইস-স।
দুরন্ত কিশোর বন্দি ছিলো ছিটমহলে। ছিলো ছিটের ভিতরে ছিট(একটু বিশদভাবে বলি, বাংলাদেশের ভিতরে ইন্ডিয়ার ভূখন্ডকে 'ছিট' বলে।তদ্রুপ ইন্ডিয়ার ভিতরে বাংলাদেশের অংশকে 'ছিট' বলে।এই ছিটমহলের ভিতরেই আবার যখন বিপরীত ঘটে, মানে অভ্যন্তরে যখন সে দেশের অংশ পড়ে সেটাকে বলে ছিটের ভিতর ছিট।)। এ যেনো জলবেষ্টিত কোনো দ্বীপ, সেই দ্বীপের মধ্যে দীঘি। সেই জলদীঘির সীমানা ঘোঁচানো হয়নি বহুকাল। আজ এতদিনে আমমহলের চাওয়াপাওয়ার বাধ ভেঙেছে খাসমহলের সিদ্ধান্তে, ছিটমহল চুক্তির বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
তিন বিঘা করিডোরটি রয়ে গেছে সেভাবেই।রয়েছে দহগ্রাম ছিটমহলটি। ঠিক যেমনটি রেখেছিলেন মুজিব-ইন্দিরা। চব্বিশ ঘন্টা করিডোর সুবিধা যুক্ত হয়েছে তাতে।সেই করিডোর ধরেই চলে নিয়মিত চলাচল।চলে এম্বুলেন্স, চলে ফায়ার ব্রিগেড।চলে সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে সুবিধাভোগীদের বিস্তর কৌশল!
একপাশে কাটাতারের বেড়া দিয়ে মোড়ানো নিছিদ্র ইন্ডিয়া,নিরাপত্তার নির্মল প্রলোভন। আরেক পাশে নগ্নবক্ষ উম্মুক্ত বাংলা।বুক উজার করে কাছে ডাকে আয়। বিভাজনের এই ক্ষনে, যে যেদিকে খুশি বেছে নিতে পারে মাতৃভূমি।চিনে নিতে পারে স্বীয় মায়ের আঁচল, গুছিয়ে নিতে পারে ঘর।
এতদিনের বন্দীত্বমোচনের প্রাক্কালে উচ্ছ্বসিত হল ছিটমহলবাসী; কেমন উচ্ছ্বাস?
আমি হয়তো এক ঝলক সেদিন দেখেছি সেটা।উপজাতিদের নিয়ে পার্বত্য চুক্তির শোভাযাত্রা সে যাত্রায় না দেখলেও এখানে দেখেছি; এ যেনো অনেকটা স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস।শৈশবে নিপীড়ীত কোন বৃদ্ধার চোখের ছানিতে খচখচ করে ওঠে সেই দিনগুলো। বিডিআর বিএসএফ-এর সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমণের সব দায় যেন তাদের'ই।গুলিতে ছিন্ন লাশও পায়নি কোনোদিন নাগরিক সমমান(সম্মান তো অনেক দুর!) ।
যে 111টি ছিটমহল বাংলাদেশ পেল অথবা 51টি হাতছাড়া হল, তার বেশিরভাগই লালমনিরহাট জেলায়।বিস্তৃত সীমানার কাঁটাতার কেড়ে নিয়েছে ছিটমহলবাসীদের নাগরিক অধিকার কিংবা আনুগত্যের বিনিময়ে অনুমিত রাজনৈতিক সুযোগগুলো।ইলেকশনের মৌসুম এদের আসেনা তেমন,যেমন আসে সীমানালঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তের উপর লঘুপাপে গুরুদন্ড আরোপ; বন্যা খরায় আসেনা তেমন ত্রান, যেমন আসে হুহু করে উথালপাথাল বান।
যাক সেসব কথা। সুখের দিনে যেমন দূঃখের দিনগুলোকেই মনে পড়ে ঘুরে ফিরে, ছিটমহলবাসীও আজ সেই-সে-মতন। একটু সময় তারা নিক; আজ সকালে তারা রাতভোরে দেখা স্বপ্ন দেখুক বা না দেখুক, নষ্টালজিয়ায় ডুবে যাবে সাতসকালেই। সোনামাখা রোদ ছুঁয়ে তারা মিশে যাবে আমজনতায়। মিশে যাবে জীবন-জীবিকার অন্বেষনে দেশ-দেশান্তর।
চিরচেনা দেশের মাটিতে বৈধতার বিশ্বাস ভর করুক তাদের দেহমনে। উম্মুক্ত আলয়ের সাথে যুক্ত হোক মুক্ত ছিটমহলগুলো।মুক্ত হোক জনবল, যুক্ত হোক শক্তি। এই আমাদের চাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:০১