বনানী একটা দোকানে মাঝেমাঝে চা খাই। এক শনিবারে দেখি দোকান বন্ধ। পরেরদিন জিজ্ঞাসা করলাম
- মামা গতদিন দোকান বন্ধ ছিলো যে?
মামা মন খারাপ করে উত্তর দিলো
- শনিবারে কাষ্টমার কম থাকে, দোকান খুললে লস হয় মামা।
আমিতো অবাক! বললাম
- মামা আপনার লাভ কম হইতে পারে। কিন্তু লস হওয়ারতো কোন সুযোগ নাই!
মামা রসিক মানুষ। দীর্ঘশ্বাস ফালায়ে বললেন
- এই দেশে আপনি বড় অচল মামা। আপনি বুঝবেন না।
পাশের চা দোকানদার দাঁত কেলায়ে হাসলেন। চোখের সামনে একজন অচল মানুষ দেখাটা কম সৌভাগ্যের বিষয় না। হাসি দিয়া বললেন
- মামা দোকান খুললেই আড়াইশো দিতে অয়। এলা বেচাবিক্রি অওক আর না অওক।
আমি আকাশ থেকে পড়লাম। একটা ফ্লাস্ক আর দুইটা বিস্কিটের প্যাকেট নিয়া ফুটপাথে যার ব্যবসা। তার উপরও ২৫০ টাকা চাঁদা!
ভাবলাম বিষয়টা নিয়া রিপোর্ট করা যায় কি না। কিন্তু ক্যামেরার সামনে কেউ কথা বলবে না। শুধু যে ব্যবসা বন্ধ হয় যাবে, এই ভয়ে তা না। পরে খুন খারাবি হয়ে যাবে এই ভয়ে।
গতদিনের প্রথম আলোতে দেখলাম, বাসে তল্লাশির নামে আসলে পুলিশ নিজেই ছিনতাই করতেছে।
উপরের এই দুইটা ঘটনা কেন বল্লাম? এই যে একটার পর একটা খুন হচ্ছে। অপরাধী ধরা পরতেছে না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হইতে পারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাউল করিম স্যারকে কে বা কাহারা রাজপথে গলা কেটে মারলো, তা পুলিশ কীভাবে ধরবে? তনু'র হত্যাকারীদেরই কীভাবে ধরবে?
ঘটনা কিন্তু তা না। রাষ্ট্র একটা যন্ত্রের মত। এর বিভিন্ন অংশ আছে। একটা হইলো গোয়েন্দা অংশ। তাদের কাজই গোপনে ওঁত পেতে থেকে অপরাধী ধরে ফেলে। এমন আরো অনেক অনেক অংশ আছে। হাজার বছরের অভিজ্ঞতায় এই অংশগুলা সেট করা আছে।
একটা চকলেট যে এক টাকা দিয়ে কিনেন, একটা সিগারেট যে এগারো টাকা দিয়ে কিনেন। সব জায়গা থেকে একটা অংশ চলে যায় রাষ্ট্রের কোষাগারে। এই টাকা দিয়েই রাষ্ট্রের সব কয়টা অংশ চলে, সরকারী চাকরীজীবিদের বেতন হয়।
সমস্যা হইলো, রাষ্ট্রযন্ত্রটা কাজ করতেছে না। প্রত্যেকটা অংশ ভুলে গেছে তার কাজ কী। যেমন পুলিশ ভুলে গেছে, তাদেে কাজ অপরাধ করা না, অপরাধী ধরা। যে মেধা, শ্রম দেবার কথা অপরাধীদের পিছনে। এই মেধা এখন নষ্ট হচ্ছে চায়ের দোকান থেকে আড়াইশো টাকা করে চাঁদা তোলায়। এই মেধা এখন নষ্ট হচ্ছে বন্দুক দেখিয়ে বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে তার কাছ থেকে সব হাতিয়ে নেওয়ায়।
আর যন্ত্র যারা চালায় তারা সহজ ভাষায় বলে দিচ্ছেন, এইটা উগ্রবাদীদের কাজ, চরমপন্থীদের কাজ। কথা হইলো, উগ্রবাদী, চরমপন্থী তারা কি অদৃশ্য! তাদেরকে কি পুলিশ ধরারা ক্ষমতা রাখে না? একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ফু দিলেই তৈরী হয় না। লক্ষ লক্ষ মানুষ থেকে তাকে জ্ঞানের আলোয় আলাদা হইতে হয়। একজন অভিজিৎ হইতে গেলে আঁধারের যাত্রীদের পথ দেখানোর মত শক্তিশালী মশাল থাকতে হয়।
আহমদ ছফার সেই বিখ্যাত উক্তিটার কথা বারবার মনে পড়ে। আওয়মিলীগ যখন হারে, তখন গোটা দেশটাই হেরে যায়। আর তারা যখন জিতে তখন শুধু আওয়ামীলীগই জিতে। কে জিতলো, কে হারলো তা বড় প্রশ্ন আসলে এই মুহূর্তে না। সবচাইতে বড় শংকার কথা হচ্ছে, দেশের আলোগুলা একে একে নিভে যাচ্ছে । অন্ধকার বড় খারাপ জিনিস। এতে হিংস্রতা বেড়ে যায়। পশুকে হিংস্র বলার কোন মানে হয় না। পশু শুধু ক্ষুধা নিবারনের জন্য হিংস্র হয়। আর মানুষের সবচাইতে নিষ্ঠুর দিক হইলো, মানুষ অন্ধকার পেলেই আদিম আনন্দ পাবার জন্য হিংস্র হয়ে উঠে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আলোগুলা বাঁচান। এখন বিচার চাওয়ারও সময় নাই। শুধু সমানের দিনগুলাতে আর যেন আলো না নিভে যায়, এইটা বলাটা বেশী জরুরী।