প্রিয় আজকে Brithday Boy, দুই বছর হয়ে গেলো!
মনেতো হয় মাত্র ঐদিনের ঘটনা। টেষ্টে পজেটিভ আসলো। তিনি বললেন
- আগামী দিন গিয়া চাকরীতে রিজাইন দিবো।
আমি বললাম
- আচ্ছা দিও।
বাধা দিলে তিনি হয়ত একটা জবাব দিতেন। এই জবাবটা দেওয়ার সুযোগ পাইলেন না। নিজে থেকেই যুক্তি দিয়া বললেন
- বুঝো না, আমার এইম ইন লাইফ ছিলো বাচ্চাকাচ্চা নিয়া সুখে থাকবো। চাকরী বাকরী করবো, এমন এইম ইন লাইফতো ছিলো না। আমার বাচ্চারে আমি এখন থেকেই টাইম দিতে চাই।
অফিসে গিয়া রিজাইন দিলেন। এমডি স্যার হচ্ছেন দুনিয়ার দুইজন ভালো মানুষের মধ্যে একজন। হাসি দিয়া বললেন
- তুমি তো মেটারনিটি লিভ নিলেও পারো
তিনি মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারমানে লিভ টিভে তার কাজ নাই। তার দরকার রিলিফ। এমডি স্যার পরে বললেন
- আচ্ছা ঠিক আছে। যেদিন আবার তোমার মনে হবে অফিস করবা, জাষ্ট এসে জয়েন করে ফেলবা।
প্রিয় পেটে থাকা অবস্থাতেই শুরু হইলো যত্ন নেওয়া। তিনি ফল ফ্রুট খান না। অথচ রুটিন করে ফল খাওয়া শুরু করলেন। তিনি স্বল্পাহারী ছিলেন। শুরু করলেন বেশী বেশী খাওয়া।
প্রিয় হবার আগে, আমার সখ ছিলো একটা মেয়ে'র। আমি মেয়ের নাম রাখবো অবাচী অরুণ। ডাক্তার বেশ কয়েকবার বললেন ছেলে হবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস হয় নাই। প্রিয় হবার মাত্র কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে মনে হইলো, আচ্ছা যদি ছেলে হয়! তখন দেখা যাবে আমার পুত্রের নাম রাখবে আরেকজনে! এই সুযোগ আমি কেন দিবো? ছেলে আমার, নাম রাখবো আমি নিজে।
একজন বললেন - তুই তখ্যপ্রযুক্তির লোক, ছেলের নাম রাখ তথ্য। আমি বললাম দাঁত ভাঙ্গা নাম আমি জীবনেও রাখবো না। আমি ভাবনা শুরু করলাম, নামটা এমন হইতে হবে যেন মানুষজন নামটা শোনার পরে স্পেশালি মনে রাখে। হয়ত কোন কারনে একটা যাত্রা দেরী হচ্ছে। কেউ একজন বললো
- দেরী করছি কেন আমরা?
তখন কেউ একজন যদি বলে উঠেন
- __ আসুক তারপর রওয়ানা দিবো।
সবার কানে যেন ___ নামটা লেগে থাকে। তারপর ভাবলাম, আমারে এক জীবনে কেউ ভালোবাসে নাই। পুত্রের নাম এমন নাম রাখবো যেন মেয়েরা নাম ধরে ডাকলেই আমার ছেলে তা এনজয় করে। আচ্ছা প্রিয়তম রাখলে কেমন হয়? হঠাৎ করেই মনে হইলো, ছেলের নাম রাখবো প্রিয়। আর ওকে পড়াবো কম্বাইন স্কুলে, যেখানে ছেলে-মেয়ে একসাথে পড়ে।
প্রিয় হইলো। সারা দিন রাত কান্না করে। ডাক্তার বললো, এদেরকে কলিক বেবি বলে। তিন মাস পার হোক, তারপর দেখি। এই তিন মাস প্রিয় তিন ঘন্টা করেও ঘুমাইতো না। তার মা অঘুমা করতে করতে পাগলের মত হয়ে গেলো। মনে হইতো, আহারে তিন মাস কবে পার হবে? তিন মাস গেলো, কান্না থামে না। ডাক্তার বললো, ছয় মাস দেখেন। ছয় মাস পরে কান্না কিছুটা কমলো।
এরপর আবার কান্না শুরু। ডাক্তার বললেন, মনে হয় ক্রিমি জাতীয় সমস্যা, কিন্তু এক বছরের আগেতো ক্রিমির ঔষধ দেওয়া যায় না। শুরু হইলো চিন্তা, এক বছর কবে যাবে? এক বছর গেলো। এরপর যখন কান্না করে, তখন মুরুব্বীরা বললেন, আরেকটু বড় হোক তখন বলতে পারবো কোথায় ব্যথা। প্রশ্ন হইলো, কত বড় হইলে বলতে পারবে? সবাই বললো, দুই বছর হোক।
দুই বছর হওয়ার আগেই প্রিয় মোটামোটি পন্ডিত হয়ে গেলো। সব বরতে না পারলেও সব বুঝাইতে পারে। ঐদিন আমি বাসায় আসলাম, শুরু করলো বিচার দেওয়া
- বাবা, বাবু উপয়ে বিম, মাম্মা বিমবিম।
আমি স্পষ্ট বুঝে গেলাম। বাবু ডায়নিং টেবিলের উপর উঠেছিলো। নামতে গিয়ে পড়ে গেছে। মাম্মা উল্টা বিম বিম করে মাইর দিছে।
আজকে প্রিয়'র দ্বিতীয় জন্মদিন। এখন শুধু চিন্তা করি, আমি না থাকলে প্রিয় কবে নিজের মত করে বাঁচতে শিখবে?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:২৬